ওহা সে গোলি চলেগি, ইহা সে গোলা চলেগা: মোদির হুঁশিয়ারি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে টানা ১৯ দিন উত্তেজনা, সংঘর্ষ ও প্রাণঘাতী হামলার পর অবশেষে গত শনিবার যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে দুপক্ষ। কিন্তু শান্তির আবরণে লুকিয়ে থাকা উত্তেজনা এখনও বহাল, বরং নতুনভাবে চেহারা নিচ্ছে সামরিক হুঁশিয়ারির।
এমন প্রেক্ষাপটেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির সেনাবাহিনীকে দিয়েছেন সবচেয়ে কড়া বার্তা—"ওহা সে গোলি চলেগি, ইহা সে গোলা চলেগা", অর্থাৎ ওদিক থেকে যদি গুলি আসে, তবে এখান থেকে গোলা ছোড়া হবে।
উত্তেজনার সূত্রপাত ২২ এপ্রিল, যখন জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় জঙ্গি আক্রমণ। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী না করলেও পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় নয়াদিল্লি একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা।
জবাবে ইসলামাবাদও কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়—সিমলা চুক্তি স্থগিত করে, ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং সব ধরনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত করে। এরপর থেকেই সীমান্তজুড়ে রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে, পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ, ড্রোন হামলা এবং বিমানবাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে উভয়পক্ষেই।
চরম উত্তেজনার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এগিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা করেন, ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ উভয় দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে টানা আলোচনায় বসেন। অবশেষে দুই দেশ একটি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ভবিষ্যত আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়।
যদিও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ, তবুও ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, ‘অপারেশন সিন্দুর’ এখনও চলমান, এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তব রূপ এখন থেকে আরও দৃঢ় হবে। সরকারি সূত্রের ভাষায়, পাকিস্তান থেকে আসা প্রতিটি হুমকির জবাব এবার পাল্টা হুমকিতে নয়, পাল্টা আগ্রাসনে দেওয়া হবে।
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের অবস্থানও আরও কঠোর। নয়াদিল্লি জানিয়ে দিয়েছে, এই বিষয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ভারত মেনে নেবে না। একমাত্র আলোচনা হতে পারে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ভারতকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে। এই বক্তব্য ভারতের নীতিগত অবস্থানের বড় একটি ইঙ্গিত।
বর্তমানে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক সংলাপ চালাতে আগ্রহী নয়। শুধু মাত্র সেনাবাহিনীর ডিজিএমও (Director General of Military Operations) স্তরে সীমিত যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে, যা শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতি রক্ষার জন্য। ভারতের মতে, আলোচনার আর কোনও বাস্তবিক ভিত্তি এখন নেই।
