ইসরায়েলের গোপন ‘বায়ো ওয়েপন’ কেন্দ্রে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত অন্তত ৮৬

ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যে ইরান ভয়াবহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায়। ‘অপারেশন অনেস্ট প্রমিস ৩’-এর ২০তম ধাপে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী একযোগে একাধিক দূরপাল্লার তরল ও কঠিন জ্বালানির ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল দেশটির গোপন ‘জীবাণু গবেষণা কেন্দ্র’, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সামরিক ঘাঁটি, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ‘ফার্স নিউজ’ জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল এবং সফলভাবে বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, তেল আবিব, নেস সিয়োনা, হাইফা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত হানে। এই হামলায় নেস সিয়োনায় অবস্থিত ‘ইসরায়েলের জীবাণু গবেষণা কেন্দ্র’ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, যা নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক চলছিল। ইরান বলছে, এই কেন্দ্রটিতে সামরিক উদ্দেশ্যে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র তৈরির গোপন কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
নেস সিয়োনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আওতায় পরিচালিত হয় এবং বর্তমানে এটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন শমুয়েল ইয়িৎসহাকি। এখানে শত শত পিএইচডি ডিগ্রিধারী বিজ্ঞানী কাজ করছেন, যারা মূলত গোপন সামরিক প্রকল্পে গবেষণা করেন। ডাচ অনুসন্ধানী সাংবাদিক কারেল নিপ দাবি করেছেন, এই গবেষণাগারে নার্ভ গ্যাস, পক্ষাঘাত সৃষ্টিকারী রাসায়নিক, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করা হয়—যদিও ইসরায়েল দাবি করে এটি শুধুই প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক গবেষণা।
ইরান এই হামলাকে ‘অত্যাচারী শক্তির বিরুদ্ধে নিপীড়িত জাতির জবাব’ বলে উল্লেখ করেছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী আচরণের প্রতিক্রিয়ায় এই কৌশলগত জবাব দেওয়া হয়েছে বলে জানায় তেহরান।
এই হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ৮৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে দু’জনের অবস্থা মাঝারি গুরুতর, ৭৭ জন হালকাভাবে আহত এবং চারজন তীব্র মানসিক উদ্বেগে ভুগছেন। তেল আবিবের ইচিলভ মেডিকেল সেন্টার জানিয়েছে, জরুরি কক্ষে যেসব আহত এসেছেন তাদের মধ্যে দুটি শিশুও ছিল।
এছাড়া, মধ্য ইসরায়েলের বি’র ইয়াকোভ এলাকায় একটি রাস্তায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একজন ব্যক্তি মাঝারি আহত হন। উত্তরাঞ্চলের হাইফা শহরে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিকল হয়ে নিজ এলাকােই আঘাত হানে, এতে তিনজন সামান্য আহত হন। বিস্ময়করভাবে, ওই সময় কোনো সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়নি।
ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, রবিবার সকালের হামলায় ইরান থেকে অন্তত দুটি ধাপে মোট ২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিস্ফোরণের পর তেল আবিব, হাইফা ও নেস সিয়োনা শহরের বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরে যায় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই পাল্টা আক্রমণ শুধু প্রতিশোধের বার্তাই নয়, বরং ইসরায়েলের গোপন অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণেরও একটি কৌশল হতে পারে। ফলে এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
