মার্কিন হামলায় ইরানের সঙ্গে ভারতের বিশ্বাসঘাতকতা তোলপাড়!

ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার ভেতর বড় ধরনের কূটনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে একটি বিস্ফোরক তথ্য। ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলায় ভারত তার আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিয়েছে—এমনই দাবি উঠেছে আঞ্চলিক সূত্রের বরাতে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
এই ঘটনার পর ভারত-ইরান কূটনৈতিক সম্পর্কে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভারতের বিশ্বাসঘাতকতা’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
খবরে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানগুলো গুয়াম দ্বীপ থেকে উড্ডয়ন করে আন্দামান সাগর পেরিয়ে ভারতের মাঝামাঝি অঞ্চল অতিক্রম করে ইরানের সীমানার কাছাকাছি গিয়ে হামলা চালায়। হামলার লক্ষ্য ছিল ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা।
রুট ম্যাপ অনুযায়ী বিমানগুলো ১৫° উত্তর, ১৪৫° পূর্ব (গুয়াম) থেকে ১০° উত্তর, ৯৫°–১০০° পূর্ব (আন্দামান সাগর), এরপর ২০° উত্তর, ৭৫°–৮০° পূর্ব (ভারতীয় আকাশসীমা) অতিক্রম করে ২৫°–৩০° উত্তর, ৬০°–৬৫° পূর্ব (ইরান সীমান্ত) এলাকায় পৌঁছে হামলা চালায়।
আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত যদি সত্যিই মার্কিন বাহিনীকে আকাশসীমা ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকে, তবে তা দক্ষিণ এশিয়ায় নয়াদিল্লির কৌশলগত ভূমিকার নাটকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেহেদী হাসান পলাশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “চীনকে উপেক্ষা করে ইরান চাবাহার বন্দর ভারতের হাতে তুলে দিয়েছিল। অথচ এখন ইরান আক্রান্ত হলে ভারত মার্কিন বাহিনীকে আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিচ্ছে। এটা স্পষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা। যারা চট্টগ্রাম বন্দরের মতো কৌশলগত স্থান বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চান, তাদের জন্য এই ঘটনা বড় সতর্কবার্তা।”
অন্যদিকে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB)-এর ফ্যাক্ট চেক ইউনিট এই দাবিকে ‘ভুয়া ও ভিত্তিহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছে। PIB স্পষ্ট করে জানায়, “অপারেশন মিডনাইট হ্যামারের সময় মার্কিন বাহিনী ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহার করেনি।”
তবে বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় সরকার যদি সত্যিই এই অভিযানে যুক্ত না থেকেও আন্তর্জাতিকভাবে এমন সন্দেহের মুখোমুখি হয়, তাহলে তা ভারতের নিরপেক্ষতা ও আঞ্চলিক নীতির ওপর প্রশ্ন তুলে দেয়।
উল্লেখ্য, ২১ জুন রাতে এক ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, “তেহরান যদি শান্তির পথে না আসে, তাহলে আরও বড় পরিণতি ভোগ করতে হবে।”
এই অভিযানে অংশ নেয় ১৪টি বাঙ্কার-বাস্টার বোমা, দুই ডজনের বেশি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১২৫টিরও বেশি সামরিক বিমান, জানিয়েছেন মার্কিন শীর্ষ জেনারেল ড্যান কেইন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইরান ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, সেটিই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
