সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে হেগে পাকিস্তানের আইনি জয়, রায় প্রত্যাখ্যান করল ভারত

ছবি: সংগৃহীত
সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত স্থায়ী সালিশি আদালত (Permanent Court of Arbitration) সম্প্রতি একটি রায় দিয়েছে, যা পাকিস্তান একটি বড় আইনি সাফল্য হিসেবে উদযাপন করছে।
শুক্রবার (২৮ জুন) দেওয়া এই রায়ে বলা হয়— ভারতের একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির বৈধ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে না। রায় অনুযায়ী, সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি তখনই শেষ বলে বিবেচিত হবে, যখন উভয় পক্ষ পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে তা বাতিল করতে সম্মত হবে। কোনো একক দেশ একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে সরে আসতে পারবে না বা স্থগিত করতে পারবে না।
আদালত আরও স্পষ্ট করে জানায়, চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি শুরু হয়ে গেলে, কোনও পক্ষ সেটি থেকে পিছিয়ে গিয়ে বা স্থগিত করে সালিশি কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে না। এতে সালিশি আদালতের এখতিয়ার পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তান এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি ভারতের কিষাণগঙ্গা ও রাটল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাদের আপত্তিকে আরও জোরালো করেছে। পাকিস্তানের মতে, ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তিভিত্তিক নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার একটি চেষ্টা ছিল, যা আদালত নাকচ করে দিয়েছে। ইসলামাবাদের ভাষায়, এটি একটি "বড় কূটনৈতিক ও আইনি জয়", যা তাদের দীর্ঘদিনের অবস্থানকে বৈধতা দিয়েছে।
অন্যদিকে ভারত এ রায়কে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটি কখনও হেগের এই সালিশি আদালতকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং আদালতের গঠনকেই সিন্ধু পানি চুক্তির "গুরুতর লঙ্ঘন" বলে মনে করে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, চুক্তি স্থগিত রাখা একটি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত এবং যতদিন তা স্থগিত থাকবে, ততদিন ভারত চুক্তির কোনো বাধ্যবাধকতা মানতে বাধ্য নয়।
ভারত এই রায়কে "পাকিস্তানের প্ররোচনায় পরিচালিত একটি প্রহসন" হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছে, এটি মূলত সন্ত্রাসবাদের জন্য পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক দায় এড়ানোর একটি নতুন প্রচেষ্টা মাত্র। ভারত মনে করে, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতে ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে সুবিধাজনক অবস্থান তৈরির জন্য এই ইস্যুটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক 'সিন্ধু পানি চুক্তি', যা উভয় দেশের পানি ব্যবহার ও নদী ব্যবস্থাপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক এই রায় চুক্তির ভবিষ্যৎ ও উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
