আলজাজিরার সম্প্রচার নিষিদ্ধের পর এবার দর্শকদের বিরুদ্ধেও হুমকি ইসরায়েলের

ছবি: সংগৃহীত
আলজাজিরা টেলিভিশনের সম্প্রচারকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ আখ্যা দিয়ে এবার দর্শকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ও কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক ইতামার বেন-গাভির।
শনিবার (১৫ জুন) দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তিনি বলেন, “যদি কেউ আলজাজিরা দেখে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পুলিশকে অবশ্যই অবহিত করতে হবে।”
মন্ত্রীর এই বক্তব্য আলজাজিরার সরাসরি সম্প্রচারে প্রচারিত হওয়ার পরই তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। অনেকেই এই বক্তব্যকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছেন।
এর আগে, চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে ইসরায়েল সরকার ‘জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষা’-র কারণ দেখিয়ে আলজাজিরার রিপোর্টার, প্রযোজক, ক্যামেরাম্যান ও অন্যান্য কর্মীদের ওপর দেশজুড়ে সংবাদ সংগ্রহের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মাধ্যমে কার্যত চ্যানেলটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় সম্প্রচার সুবিধা, অফিস ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম।
এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও পশ্চিম তীরে আলজাজিরার সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে দেয়। ফলে পশ্চিম তীরেও চ্যানেলটির সংবাদ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
এই পদক্ষেপগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি এটি সরাসরি আঘাত। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা এবং সেই চ্যানেলের দর্শকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান সভ্যতার মৌলিক নীতিমালার পরিপন্থী।
তবে মন্ত্রী বেন-গাভির তার অবস্থানে অনড়। তিনি দাবি করেছেন, “আলজাজিরা শুধু সাংবাদিকতা করছে না, তারা সন্ত্রাসবাদে উসকানি দিচ্ছে।” যদিও তিনি এই অভিযোগের পক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
বর্তমানে আলজাজিরার কোনো প্রতিনিধি বা ক্যামেরা টিম ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে কাজ করতে পারছে না। তবে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তারা এখনও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী সংবাদ সম্প্রচার অব্যাহত রেখেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু গণমাধ্যম নয়, সমগ্র মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করছে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের সংকটময় পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করতে পারে।
