পুরো নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা দিলে ভালো হতো: ইসি রাশেদা

২১ মে ২০২৩, ০৬:১৯ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ০৩:১৪ পিএম


পুরো নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা দিলে ভালো হতো: ইসি রাশেদা

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, নতুন আইনে ফলাফল ঘোষণার পরও একই ক্ষমতা চেয়েছিল ইসি। সেটা সম্ভবত সরকার দিচ্ছে না। তবে কেন্দ্রের ভোট ফল প্রকাশের পরও বাতিল করতে পারবে কমিশন। সুতরাং ইসির ক্ষমতা খর্ব হয়নি বরং কিছুটা বেড়েছে। তবে ফল ঘোষণার পরও পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা দিলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আরও সহায়ক হতো।

তিনি বলেন, ‘প্রচলিত আইনেই ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত গাইবান্ধার মতো একটি আসনের পুরো ভোট বন্ধ করতে পারবে ইসি। এই আইনের কোনো পরিবর্তন হয়নি বা হচ্ছে না।’

রবিবার (২১ মে) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ইসি রাশেদা সুলতানা। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সম্পর্কে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান।

রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নির্বাচন বন্ধ করার জন্য প্রধান অনুচ্ছেদ হলো ৯১ এর ‘ক’। একটা নির্বাচনে তিনটা পর্যায় আছে- নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচন চলাকালীন, নির্বাচন পরবর্তী; এই তিনটা ধাপের মধ্যে ৯১-এর ক প্রযোজ্য নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন চলা পর্যন্ত। সেখানে কমিশনের একটা ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেই ক্ষমতায় কমিশন অনিয়ম কারচুপি হলে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। এটা তো এক্সিসটিং আইনে আছেই।

এই ইসি বলেন, ‘আমরা যেটা এখানে এসে দেখলাম, নির্বাচনের ফলাফলের তিনটা পর্যায় আছে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে একটা রেজাল্ট দেন, এই রেজাল্ট চারটা কপি করা হয়। একটা প্রার্থীদের জন্য, একটা সাঁটানোর জন্য, একটা রিটার্নিং কর্মকর্তার জন্য, আরেকটা কপি করতে হয়। এগুলো করার পর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠান। সেই রেজাল্ট হলো প্রাইমারি রেজাল্ট, চূড়ান্ত নয়। ওটার উপর কে জিতল তার কার্যক্রম শুরু হবে না। শুরু হবে তখন, যখন কমিশন থেকে গেজেট হবে।’

তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণার পর কমিশনে ফলাফল পাঠানোর পর অনেক সময় কিছু অভিযোগ আসে। কিন্তু এই অভিযোগের বিষয়ে কমিশনের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। সেই অভিযোগের বিষয়ে কমিশন কিছু করতে পারে না। তাকে গেজেটটা করে দিতে হয়। যদি বড় ধরনের কোনো অভিযোগ থাকে, যে সত্যিকার অর্থেই বড় কোনো অনিয়ম ঘটে গেছে সেটা রেখেই যদি একটা গেজেট করে দেওয়া হয়, তখন কিন্তু যারা অভিযোগ তোলেন তাদের একটা কষ্ট থেকে যায়।

কমিশনের প্রতি একটা অনাস্থা থেকে যায় যে আমরা একটা অভিযোগ দিলাম, কমিশন যাচাই-বাছাই কিছু না করে রিটার্নিং কর্মকর্তা যে রেজাল্ট দিল সেটাই তারা বাস্তবায়ন করে ফেলল। একটা ক্ষোভ কিন্তু তৈরি হয়। একটা নির্বাচন করছেন, কাজেই তার কথাটা তো আমলে নেওয়া উচিত। এই জায়গাটাতেই আমরা চিন্তা করলাম যে একটা ‘শূন্যতা’ আছে। কমিশনের হাতে কোনো সুযোগ নেই। আমরা সেখানেই একটা নতুন প্রস্তাবনা পাঠালাম সংশোধনীতে, যেটা মন্ত্রিপরিষদে গেছে, যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পাঠালাম ৯১-এর ‘ক’, তার সঙ্গে ক-এর ক বলে একটি উপ-অনুচ্ছেদ যোগ করতে হবে। সেখানে কোনো অনিয়মের তথ্য বা অভিযোগ আসলে কমিশন সেই গেজেট নোটিফিকেশনটা স্থগিত রাখবে। এরপর তদন্ত করে যদি অভিযোগটার সত্যতা প্রমাণিত হয় যে আসলেও বড় ধরনের অনিয়ম হয়ে গেছে, সেখানে তখন কমিশন সুনির্দিষ্টভাবে যে জায়গাটায় অনিয়ম হয়েছে সেই জায়গাটার, যে কেন্দ্র বলেন বা যে আসনটার ভোট বাতিল করার জন্য চাচ্ছিলাম, মন্ত্রিপরিষদ ওখানে পুরো আসনের (এন্টায়ার শব্দটা) কথাটা বাদ দিয়ে সেটা খণ্ড করে আংশিকভাবে একটা অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা পুরোটা কপি এখনো দেখিনি।’

রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘বিভ্রান্তি যেটা হয়েছে, অনেকে মনে করছেন যে ৯১ (ক)-তে যে ক্ষমতাটা ছিল, নির্বাচন চলাকালীন নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার যে সুযোগটা সেটা বোধহয় খর্ব হয়েছে। বিষয়টা তা নয়। আমি যতটুকু বুঝি, ওটা তো হবেই না। কেননা, আমরা তো ওটা চাইনি। সেখানে প্রস্তাবনা হলো ৯১ (ক) এর সঙ্গে ক (ক) বলে আরেকটা উপ-অনুচ্ছেদ যোগ দেওয়া। রিটার্নিং অফিসার ফলাফল প্রকাশের পর থেকে গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টা অনিয়ম হলে যেন ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই ক্ষমতাটা চাওয়া হয়েছে।’

গাইবান্ধার মতো ভোট বন্ধ করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু বুঝি যে আমরা পারব। কারণ আমরা ৯১ (ক) নিয়ে কোনো প্রস্তাবই দিইনি। যেটা প্রস্তাবনা যায়নি, সেটা তো বাতিল হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।’

তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধায় আমরা যখন সিসি ক্যামেরায় নানা ধরনের অনিয়ম দেখছিলাম। গোপন কক্ষের মধ্যে ভোটার ভোট দেওয়ার আগেই অন্য কেউ দিয়ে দিচ্ছেন। ওখানে আসলে কোনো ভোটারই ভোট দিতে পারছে না। তখন আমরা ৯১ (ক) অনুচ্ছেদের ক্ষমতা বলে নির্বাচনটা বন্ধ করেছি। এখন আমরা চাচ্ছি এক বা একাধিক কেন্দ্র হোক বা যত কেন্দ্রেই হোক, রিটার্নিং কর্মকর্তার ফলাফল ঘোষণার পর এবং গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে অভিযোগ আসলে সেটা যেন তদন্ত করে বন্ধ করতে পারি। সেখানে নতুন করে ভোট হবে।’

এনএইচবি/এমএমএ/

 


বিভাগ : জাতীয়

বিষয় : ইসি