লুঙ্গি-গেঞ্জি-মাস্ক পরে ছদ্মবেশে বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত
এক অভূতপূর্ব নাটকীয়তায় দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই, লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মাস্ক পরে গভীর রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছান তিনি। একে ‘নিরাপদ দেশত্যাগের গোপন অভিযান’ বললেও অত্যুক্তি হবে না। রাষ্ট্রপতির মতো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির এমন ছদ্মবেশে দেশত্যাগের ঘটনা জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
বুধবার রাত প্রায় ১২টা ৪৫ মিনিট। আবদুল হামিদের ব্যক্তিগত গাড়ি পৌঁছায় শাহজালালের ভিআইপি টার্মিনালে। সেখানে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি থামিয়ে আরোহীদের পরিচয় জানতে চান। চালক জানান, গাড়িতে রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার। তখনও স্পষ্ট করা হয়নি, তিনি নিজেই গাড়িতে রয়েছেন। কিছুক্ষণ পর এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এসে তার পরিচয় নিশ্চিত করেন এবং জানান, তার বহির্গমনের অনুমতি রয়েছে।
আবদুল হামিদ প্রথমে লুঙ্গি, গেঞ্জি এবং মাস্ক পরে ছিলেন, যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কক্ষের ভেতর নিয়ে যাওয়ার আগেই গাড়ির মধ্যেই তিনি ছদ্মবেশ থেকে বেরিয়ে সাধারণ প্যান্ট-শার্ট পরে নেন। এমন গোপনীয়তা সাধারণত কোনো গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা মিশন বা নিরাপত্তা-হুমকির সময় দেখা যায়, অথচ এবার তা ঘটল সাবেক একজন রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে।
সব ধরনের নিরাপত্তা ও ইমিগ্রেশন প্রটোকল এড়িয়ে, কোনও রকম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই আবদুল হামিদকে বিমানে তুলে দেওয়া হয় থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে (TG340)। বিমানটির অবস্থান পরিবর্তন করে ভিআইপি টার্মিনালের কাছে এনে রাখা হয় যাতে তাকে সরাসরি বিমানে নেওয়া যায়। তিনি বিমানে ওঠার পর কিছু সময় পর তার ছেলে রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক ডা. এনএম নওশাদ খানও বিমানে ওঠেন।

তিনি দেশ ত্যাগ করেন কূটনৈতিক মর্যাদার ‘লাল পাসপোর্ট’ (নম্বর D00010015) ব্যবহার করে, যেটি তার রাষ্ট্রপতি থাকার সময় ২০২০ সালে ইস্যু করা হয়েছিল। এই পাসপোর্টটির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত। উল্লেখযোগ্যভাবে, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হলেও আবদুল হামিদের পাসপোর্ট বাতিল হয়নি, যা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিমানবন্দরের একাধিক নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও কেউ কোনো বাধা দেননি। পুলিশ, এভসেক, সিভিল এভিয়েশন কিংবা ইমিগ্রেশন—সব পক্ষই ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এমনকি ইমিগ্রেশনের নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তিকে সরাসরি উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়, কিন্তু আবদুল হামিদের ক্ষেত্রে সেটাও অনুসরণ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ইমিগ্রেশন অফিসারদের সামনে হাজির করা হয়নি—কারণ অনেকেই ছিলেন ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানে।
তথ্য অনুযায়ী, আবদুল হামিদের টিকিট ছিল দিল্লি পর্যন্ত, যদিও ফ্লাইটের রুট ব্যাংকক হয়ে। ১৬ জুন তার ফিরে আসার একটি টিকিট কনফার্ম করা রয়েছে। তবে আদৌ তিনি ফিরবেন কি না—তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে।
এখনো পরিষ্কার নয়, কেন সাবেক রাষ্ট্রপতির এমন গোপন ও নাটকীয় প্রস্থান ঘটল। অনেকেই বলছেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত নিরাপদ বহির্গমন—সম্ভবত নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় তার ভূমিকার কারণে। আবার কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, তিনি হয়তো কোনো বিশেষ মিশনে বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যেই দেশ ছাড়লেন। তবে সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য এখনো আসেনি।
