
বিশেষ প্রতিবেদন
বিশেষ প্রতিবেদন
পর্যটন নগরী এখন দুর্ভোগের নগরী!

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ প্রতিনিয়ত সমুদ্র দর্শনে যান কক্সবাজারে। সমুদ্র সৈকত এখন দেশেরও ব্র্যান্ডিং নির্দেশ করে। কোনো দেশের পর্যটন নগরী কতটুকু সুন্দর এবং কতটা আকর্ষণীয় তার অনেকাংশই নির্ভর করে সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আবাসন সুবিধার উপর। আর এ ক্ষেত্রে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত অনেকটাই পিছিয়ে।
কক্সবাজারের রাস্তা, পরিবহন ব্যবস্থা এতটাই নাজুক–কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতেও পারেন না। তবে সরকার পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে নান্দনিক করতে অনেকগুলো পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের প্রেক্ষাপটে মধ্য নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি হচ্ছে পর্যটকদের জন্য উত্তম সময়। এ সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ পরিবার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে যান কক্সবাজারে। বিশেষ করে ৩১ ডিসেম্বরকে ঘিরে বড় একটা জমায়েত হয়ে থাকে সেখানে। যদিও মহামারি করোনার কারণে গত বছর সেই আয়োজনে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। তবে এবার করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই মুহূর্তে কক্সবাজারের বড় অন্তরায় সেখানকার অবকাঠামোর উন্নয়ন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও শহরের অধিকাংশ রাস্তায় সংস্কার কাজ চলমান থাকায় একদিকে ধুলা অন্যদিকে খানাখন্দ পুরো কক্সবাজারের চিত্র পাল্টে গেছে।
তবে এই উন্নয়ন ভোগান্তি কিছুটা ডিসেম্বরের শেষ দিকে কমতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেটিও পুরোপুরি সম্ভব হবে না বলেই জানান তারা।
সড়ক পথে যারা কক্সবাজার যান তাদের অধিকাংশই কলাতলি পয়েন্টে নেমে থাকেন। কলাতলি থেকে লাবণী, সুগন্ধা বিচ এলাকায় যেতে যে সড়ক সেটির কিছু অংশের কাজ শেষ হলেও এখনো পুরোপুরি প্রস্তত নয়।
অন্যদিকে, বিমানবন্দর এলাকা থেকে কলাতলি, লাবণী ও সুগন্ধা বিচ এলাকায় যেতে হলে রাস্তার বেহাল দৃশ্য যে কারও ভ্রমণ আনন্দ বিষিয়ে তুলবে। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই রাস্তা খুড়াখুড়ির দৃশ্য দেখা যাবে। এসব এলাকায় চলাচলের জন্য যে ফুটপাত উন্নয়ন করা হয়েছে, তার মাত্র অর্ধেক কাজ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ না হওয়ায় ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘ্নে হাঁটা যাচ্ছে না। ফুটপাতে একটু পরপরই কার্পেটিং না করে ফাঁকা রাখা হয়েছে যেকারণে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গেলে কখনো ড্রেনে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে দীর্ঘসময় রাস্তায় আটকে থাকতে হয়।
কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের একাংশ চলে যান বার্মিজ বাজারে। সেখানে সড়ক উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় কোনো বাহনেই সেখানে সহযে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যেতে চাইলে তার আগে শরীর ব্যথার ওষুধ কাছে রাখতে হবে। সঙ্গে বাড়তি ভাড়াও গুণতে হবে। রাস্তা খনন করে এমন অবস্থায় রাখা হয়েছে, রাতের অন্ধকারে কেউ সেখানে গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
কক্সবাজারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আমাদের অংশের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণা যে, কক্সবাজারের সব উন্নয়নমূলক কাজ আমরা করছি। তাই গালিটা আমাদেরই খেতে হয়। আসলে আমরা তো একটা মাত্র রাস্তার কাজ করছি, সেটি ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজ চলছে পৌরসভা তাদের উন্নয়নমূলক কাজ করছে তারা দ্রুত শেষ করতে না পারলে আমরা তো কিছু বলতে পারি না। বেশিরভাগ ঠিকাদার দেখা যাচ্ছে, সময়মতো কাজ করতে পারছে না। এজন্য তাদের চাপ প্রয়োগ করা ছাড়া আর তো কিছু করতে পারি না।’
নুরুর রহমান নামে এক পর্যটক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘কক্সবাজার শহর সম্পর্কে খুবই নেতিবাচক ধারণা। এত নোংড়া অবকাঠামো, এত খারাপ রাস্তা এটা আমি চিন্তাও করতে পারিনি। একটা পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারকে আরও আধুনিক এবং স্মার্ট হওয়া উচিত। রাস্তা দিয়ে আসতে আমার শরীর খারাপ হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তা অস্বাভাবিক খারাপ। এখানে কেউ আয়েশ করতে এলে তাকে আগে দুইদিন বিশ্রাম নিতে হবে। তা ছাড়া শহরে চলাচল করার জন্য ভালো মানের কোনো পরিবহনও নেই।’
কক্সবাজারের বাসিন্দা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. ইছহাক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘গত দুই বছর করোনাতে এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। এখন পর্যটকদের জন্য ভরা মৌসুম। এ সময়ে পর্যটক আসছেন অথচ কেউ শহর ঘুরে দেখতে পারছেন না শুধু রাস্তার বেহাল দশার কারণে। বার্মিজ বাজারের পাশে যে সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে তা পুরোপুরি ঠিক হতে আরও দুই বছর লাগতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তার খুড়াখুড়ির কারণে আমাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য সময় এই মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকার শুটকি বিক্রি হতো। এখন ১০ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছি না। কারণটা হচ্ছে শুধু রাস্তাঘাট। পর্যটকরা আসতে পারছেন না। তা ছাড়া রাস্তা এতটাই উঁচু করা হচ্ছে যে, সব বাজার রাস্তার নিচে পড়ে যাচ্ছে।’
কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার (ট্যুরিস্ট) মো. জিললুর রহমান ঢাকাপ্রকাশকে জানান, পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সদা প্রস্তুত। এখানে একজন পর্যটক নামার সঙ্গেই তাদের স্বাগত জানিয়ে একটি খুদে বার্তা পাঠানো হয়। ‘আগের চেয়ে কক্সবাজার এখন অনেক বেশি নিরাপদ এটা আমার কথা না পর্যটকদের সাথে কথা বললেই জানবেন।’
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, কক্সবাজারকে প্রমোট করা দরকার। এখানকার পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা উন্নত করতে হবে। তা এখনো হয়ে উঠেনি। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি হলে সামগ্রিক চিত্রই পাল্টে যাবে।
এসএম/এসএ/এমএমএ