খাবারের অপচয় বান্দার উপর থেকে বরকত তুলে নেয়
ছবি সংগৃহিত
খাবার আল্লাহর বিশেষ এক নিয়ামত। সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার অশেষ কৃপা ও অনুগ্রহ। প্রয়োজনমাফিক খাবার গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই; তবে অপচয় করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। আজকাল বিভিন্ন ভোজের অনুষ্ঠান ও নামীদামি রেস্টুরেন্টে এত এত খাবার অপচয় বা নষ্ট করা হয়, যা বলা বাহুল্য।
অথচ পাশেই কোনো প্রতিবেশী অনাহারে দিনাতিপাত করছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা খাও ও পান করো; আর অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা অপচয়কারীদের শয়তানের ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান স্বীয় রবের চরম অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৭)
‘প্রতিবছর পৃথিবীতে ১৩০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়। নষ্ট হওয়া খাবার সম্পূর্ণ পৃথিবীর মোট খাদ্য জোগানের এক-তৃতীয়াংশ।’ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রতিবছরই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। ফি বছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে নষ্ট খাবারের পরিমাণে কমবেশি হলেও খাবার নষ্ট হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত। অথচ খাবার নষ্ট করা যেমন অমানবিক তেমনি গোনাহের কাজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘(তোমরা) খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ সুরা আরাফ : ৩১
অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, এক শ্রেণির মানুষের অসচেতনতা, অভ্যাস, বিলাসিতা, আভিজাত্য প্রকাশ, প্রদর্শনেচ্ছা ও পরিবহন অব্যবস্থাপনা কারণে প্রচুর খাদ্য অপচয় হয়। খাদ্য অপচয় ইসলামে নিষিদ্ধ। ইসলাম খাবার গ্রহণের বিষয়ে চমৎকার নীতিমালা দিয়েছে। ইসলামের শিক্ষা হলো পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবার খাওয়া, এক-তৃতীয়াংশ পানি এবং বাকি অংশ খালি রাখা। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন। হাদিসে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, ‘হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আহার করতেন, আহার শেষে তিনবার আঙুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, তোমাদের খানার বাসন থেকে কিছু পড়ে গেলে উঠিয়ে পরিষ্কার করে খেয়ে নাও, তা শয়তানের জন্য ছেড়ে দিয়ো না।’ আবু দাউদ : ৩৮৪৫
ভোজনবিলাসী, ভোজনপ্রেমী শব্দগুলো নিজের নামের সঙ্গে লাগিয়ে সুখ অনুভব করেন বহু মানুষ। এমন বিলাসী মনোভাব ও অহংকার অমানবিক কাজ, এগুলো ইসলামি চিন্তার বিরোধী।
অপচয়কারীদের স্বয়ং আল্লাহও পছন্দ করেন না। ফলে অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে মানুষের জীবন থেকে বরকতও কমে যায়। এর ফলে মানুষের ধন-সম্পদ ক্রমে হ্রাস পায়। খাবার নষ্ট করা যেমন অমানবিক তেমনি গুনাহের কাজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন-
‘(তোমরা) খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৩১)
হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন করার পর ওই সম্পদ নষ্ট, অপচয় ও (তা নিয়ে) অহঙ্কার করা এবং গৌরব ও প্রাচুর্যের জন্য প্রতিযোগিতায় নামা- এ সবই মানুষের জন্য হারাম। (সম্পদ) নষ্ট করা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আল্লাহ তোমাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা দিয়ে আখিরাতের ঘর তৈরি করার কথা চিন্তা করো এবং দুনিয়া থেকেও নিজের অংশ ভুলে যেয়ো না৷ অনুগ্রহ করো, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে নষ্টামি করো না৷ যারা নষ্টামি করে, আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না৷’ (সুরা আল-কাসাস : আয়াত ৭৭)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
‘যখন সে কর্তৃত্ব লাভ করে, পৃথিবীতে তার সমস্ত প্রচেষ্টা-সাধনা নিয়োজিত করে নষ্টামি-সাধন এবং শস্যক্ষেত ও মানব-বংশ ধ্বংস করার কাজে৷ অথচ আল্লাহ নষ্টামি মোটেই পছন্দ করেন না৷’ (সুরা আল-বাকারা : আয়াত ২০৫)
মনে রাখতে হবে
ইসলাম সব সময় সমাজের দরিদ্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ভাবার কথা বলে, তাদের পাশে দাঁড়ানোর, তাদের সাহায্যের কথা বলে। নিজের পাড়া-প্রতিবেশী, অভাবী আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য করতে বলে। মানবতার ধর্ম ইসলাম অতিভোজন ও অপচয় থেকে যেমন মানুষকে বিরত থাকার কথা বলে, তেমনি কৃপণতা করতে নিরুৎসাহিত করে। মধ্যমপন্থা অবলম্বন ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও সৌন্দর্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৭)
তাই আসুন, আমরা রাসুলের এই সুন্নতের ওপর গুরুত্বসহকারে আমল করে জীবনকে ধন্য করি। খাবার অপচয় না করে আত্মীয়-স্বজন ও অনাহারী মানুষের পাশে দাঁড়াই। এটা মহান আল্লাহর হুকুম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। আর কোনোভাবেই অপব্যয় কোরো না। (সুরা : ইসরা, আয়াত : ২৬)