লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামিকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ আটে জায়গা করে নিল ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। মার্কিন মুলুকে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে আটলান্টার মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামে রোববার (২৯ জুন) অনুষ্ঠিত ম্যাচে প্রথমার্ধেই সবকিছু গুছিয়ে নেয় পিএসজি।

ম্যাচ শুরুর আগে মায়ামির গোলাপি জার্সিতে গ্যালারিতে উৎসবের আমেজ থাকলেও খেলার শুরুতেই তা রূপ নেয় নিরবতায়। তৃতীয় মিনিট থেকেই পিএসজি আক্রমণ শুরু করে। পঞ্চম মিনিটে জোয়াও নেভেসের দুর্দান্ত হেডে এগিয়ে যায় ফরাসি ক্লাবটি।

৩৯ মিনিটে নেভেস তার দ্বিতীয় গোলটি করেন ফ্যাবিয়ান রুইজের পাস থেকে। এরপর ৪৪ মিনিটে মায়ামির ডিফেন্ডার টমাস এভিলেস আত্মঘাতী গোল করে বসেন। বিরতির আগে যোগ করা সময়ে হাকিমি গোল করে স্কোরলাইন দাঁড় করান ৪-০।

পিএসজি পুরো ম্যাচে দাপট দেখিয়ে বল দখলে রাখে ৬৭ শতাংশ সময়। গোলের উদ্দেশ্যে নেয় ১৯টি শট, যার মধ্যে ৯টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে মায়ামি মাত্র ৭টি শট নিতে পেরেছে এবং কেবল ৩টি ছিল অনটার্গেট।

 

মেসির জন্য এই ম্যাচ হয়ে ওঠে হতাশার। সাবেক ক্লাব পিএসজির রক্ষণভাগ বারবার তার পথরোধ করে। একটি হেড দারুণভাবে প্রতিহত করেন পিএসজির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা। আরেকটি বড় সুযোগ পান সুয়ারেজ, তবে মেসির বানানো বল থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধে ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা উসমান দেম্বেলেকে নামান কোচ এনরিকে, যদিও তিনি ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারেননি।

ফলে প্রথমার্ধেই ম্যাচের নিয়তি নির্ধারিত হয়ে যায়। পিএসজি পরে আর কোনো গোল না পেলেও মেসির মায়ামিকে চূড়ান্তভাবে ছিটকে দেয় বিশ্বকাপ থেকে। এই জয়ে শেষ আটে উঠেছে লুইস এনরিকের দল। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে বায়ার্ন মিউনিখ কিংবা ফ্ল্যামেঙ্গো।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে তিনটি আবাসিক ভবন ধসে পড়েছে। স্থানীয় সময় রোববার (২৯ জুন) ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে শহরের ১৯০০ ওয়েস্ট ব্রিস্টল স্ট্রিট এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ফিলাডেলফিয়া দমকল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রধান ড্যানিয়েল ম্যাককার্টি জানান, একই সারিতে অবস্থিত তিনটি আবাসিক ভবনে পরপর বিস্ফোরণ ঘটে এবং মুহূর্তের মধ্যেই সেগুলোতে দাউদাউ করে আগুন ধরে যায়। ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণের ফলে ভবনগুলো সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়ে।

উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত দুজন নারীকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ম্যাককার্টি।

পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত করে যে, এই দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। তবে নিহত ব্যক্তির পরিচয় বা বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

ম্যাককার্টি আরও জানান, বিস্ফোরণের পরপরই ধসের ঘটনা ঘটে, যার ফলে আশপাশের আরও অন্তত পাঁচটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিস্ফোরণের উৎস ও কারণ এখনো নিশ্চিত নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে দুর্ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে চলমান উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে দমকল বিভাগ ও অন্যান্য জরুরি সেবা সংস্থাগুলো।

এই ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুর্ঘটনার ধ্বংসস্তূপের নিচে কেউ আটকে আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে উদ্ধারকারীরা ড্রোন, তাপ শনাক্তকারী যন্ত্র ও প্রশিক্ষিত কুকুরের সাহায্যে তল্লাশি চালাচ্ছে।

নিরাপত্তা ও উদ্ধার অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকা এড়িয়ে চলতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধ জানিয়েছে ফিলাডেলফিয়া কর্তৃপক্ষ।

এশিয়ান কাপ নারী ফুটবলের বাছাই পর্বে দুর্দান্ত সূচনা করলো বাংলাদেশ। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে ৭-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে নজর কাড়লো তহুরা-মনিকার দল।

রোববার (২৯ জুন) মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে প্রথমার্ধেই ৫-০ গোলের লিড নেয় বাংলাদেশ। পুরো ম্যাচজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে লাল-সবুজের মেয়েরা।

খেলার শুরুতেই বাহরাইনের রক্ষণে চেপে বসে বাংলাদেশ। দশম মিনিটেই গোলের সূচনা করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। মাঝমাঠ থেকে আসা এক লম্বা পাসে অফসাইড ফাঁদ ভেঙে সামনে এগিয়ে যান তিনি এবং আগুয়ান গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বাম পায়ের চিপে বল জালে পাঠান।

১৫তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ঋতুপর্ণা চাকমা। স্বপ্না রানীর পাস ধরে ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে বাম পায়ের চমৎকার বাঁকানো শটে গোল করেন তিনি। এরপর থেকেই পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ।

২১ মিনিটে মনিকা চাকমার একটি সুযোগ নষ্ট হলেও ২৪ মিনিটে তিনি আবার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন। ৩২ মিনিটে আফঈদা খন্দকারের ক্রস থেকে তহুরার হেড অফসাইডে পড়ে যায়। এরপর শামসুন্নাহার জুনিয়রের শট বক্সে গিয়েও গোলপোস্টে জায়গা খুঁজে পায়নি।

৪০ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে মারিয়া মান্দা আড়াআড়ি পাস বাড়ান, যা পরিষ্কার করতে ব্যর্থ হয় বাহরাইনের রক্ষণভাগ। জটলার মধ্যে বল পেয়ে কোহাতি কিসকু গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে দেন।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরও দুটি গোল করে বাংলাদেশের মেয়েরা। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে তহুরা খাতুনের জোরালো শট গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়ে জালে জড়ায়। পরের মিনিটেই শামসুন্নাহার জুনিয়রের কাট-ব্যাক থেকে বল পেয়ে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তহুরা।

প্রথমার্ধ শেষে বাংলাদেশ ৫-০ গোলে এগিয়ে ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে একটু গতি কমলেও আক্রমণের ধার ছিল অব্যাহত। ৬০ মিনিটে এক আত্মঘাতী গোলের মাধ্যমে স্কোরলাইন হয় ৬-০। বাংলাদেশের চাপে রক্ষা করতে গিয়ে বল নিজেদের জালেই জড়ায় বাহরাইনের ডিফেন্ডার।

৭৪ মিনিটে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন বদলি খেলোয়াড় মুনকি আক্তার। বক্সে ঢুকে একজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলকিপারের পাশ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন শটে ম্যাচের সপ্তম গোলটি করেন তিনি।

এই জয়ের ফলে বাংলাদেশের মেয়েরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাছাই পর্ব শুরু করলো। আগামী ২ জুলাই তারা মুখোমুখি হবে স্বাগতিক মিয়ানমারের, যারা নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৮-০ গোলে হারিয়েছে তুর্কমেনিস্তানকে।

বাংলাদেশের একাদশ: রুপনা চাকমা, শিউলি আজিম, আফঈদা খন্দকার, শামসুন্নাহার সিনিয়র, কোহাতি কিসকু, মনিকা চাকমা, স্বপ্না রানী, মারিয়া মান্দা, তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র।