শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ | ৭ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

তলে তলে সংগঠিত হচ্ছে জামায়াত

প্রকাশ্য রাজনীতিতে দেখা না গেলেও তলে তলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশব্যাপী নিজেদের সংগঠিত করছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে নীরবে। গত কয়েক বছরে জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করেনি। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলটি। যদিও রাজনৈতিক দল হিসেবে সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে অনেক আগে।

জামায়াতের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনটিকে এখন ভিন্ন কৌশলে ভিন্ন নামে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন দলটির নেতারা।

জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের নানা দমন পীড়নের পরও সক্রিয় জামায়াত ইসলামী। দলটি তার নিজস্ব গতিধারা বজায় রেখেই সামনে এগিয়ে যাবে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত তারা প্রকাশ্য রাজনীতিতে কিছুটা নিষ্ক্রিয় থাকবে। মিছিল-মিটিং বা সভা-সমাবেশের মতো কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাবে না। শুধু সংগঠন গোছানোর কাজে মনোযোগ দেবে। অস্তিত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নাম পরিবর্তনের চিন্তা করছে। তবে কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীত ভুলের জন্য প্রয়োজনে ক্ষমা চেয়ে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের চেতনায় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে চায় জামায়াতের তরুণ নেতারা। তাদের যুক্তি হচ্ছে, তখন যুদ্ধাপরাধের তীর আর তাদের বিদ্ধ করতে পারবে না, বরং লাভবানই হবে। কারণ শত প্রতিকূলতার মাঝেও দলটির সেই সাংগঠনিক ক্ষমতা ও দক্ষতা এখনো অটুট রয়েছে।

২০ দলীয় জোট, দলের নিবন্ধন ও নতুন নামে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। যখন কোনো কিছু বলার মতো হবে, তখন অবশ্যই জানানো হবে। এমন কিছু হলে তো আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই করব। এ বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে দলের সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।’

পরবর্তীতে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম এর সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বেশকিছুদিন আগে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বিএনপি জোটের সঙ্গে তারা আর নেই ৷ তবে যুগপৎ আন্দোলন হতে পারে ৷ তিনি জামায়াতের এই জোটে না থাকার জন্য বিএনপিকেই দায়ী করেছেন ৷ কিন্তু কয়েকজন জামায়াত নেতা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেছেন, ‘ডা. শফিকুর রহমান এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে জোট প্রসঙ্গে কথা বলেছেন ৷ দলের আমীরের এটা অফিসিয়াল বক্তব্য হলে তো আমরা প্রেস রিলিজ দিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানাতাম।’

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জোটে থাকা না থাকার বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জোটে থাকলেও এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আছি। আর জোটে না থাকলেও তো এই সরকারের বিরুদ্ধেই যুগপৎ আন্দোলন করতে রাজপথে আছি।’

জানা যায়, রাজনৈতিক দল হিসেবে আদালত কর্তৃক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয় ২০১৩ সালের ১ আগস্ট। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন সময়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হচ্ছে, যদিও এখন পর্যন্ত সরকারের তরফে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তাই নিবন্ধন বাতিল হলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সক্রিয় রয়েছে। তবে নিবন্ধন না থাকায় তারা দলীয় ব্যানার ও প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। অবশ্য বেনামে বা স্বতন্ত্র পরিচয়ে বা অন্য রাজনৈতিক দলের ব্যানারে জামায়াতের নেতারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সেই দিক বিবেচনায় নিয়েই জামায়াত কৌশলগত কারণেই এখন প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেই। কিন্তু অন্য রাজনৈতিক দলের ব্যানারে দলের নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন।

মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের প্রত্যেকটি জেলা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামী তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা একেক এলাকায় একেক কৌশলে কাজ চালাচ্ছে। কোথাও সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে, আবার কোথাও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জামাযাতে ইসলামী।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিচার শুরু হয়। যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শুধু দেশের বিরোধীতাই করেনি, পাক বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধাপরাধে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামানসহ অনেকের মৃত্যুদণ্ড হয়। একই অপরাধে এখনো একাধিক জামায়াত নেতা কারাগারে বন্দি আছেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতাদের বিচারের রায়ে দেওয়া পর্যবেক্ষণে আদালত জামায়াতে ইসলামীকেও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ কারণে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তবুও রাজনীতিতে জামায়াত আছে বিএনপির ছত্রছায়ায়। এটা আরও পরিষ্কার রাজনৈতিক মহলের সমালোচনা, বিভিন্ন মহলের চাপ কোনো কিছুতেই বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াত কেউ কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়েনি। সমালোচনা বরং একে অপরকে কাছে টানছে। কৌশলগতভাবেও জামায়াত বিএনপির তুলনায় অনেক এগিয়ে। তাই বিএনপিকে জামায়াতীকরণ করার কাজ তারা এগিয়ে নিতে পেরেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচারণায় থাকাও জামায়াতের আরেকটি কৌশল। ইতিবাচক-নেতিবাচক যে কোনো বিষয়েই আলোচনায় থাকতে চায় জামায়াত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের প্রভাবশালী একজন নেতা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ভিন্ন নামে জামায়াত ইসলামী একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়ে আজ থেকে প্রায় দুই বছর পূর্বে আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বিষয়টি তখন আটকে যায়। তবে সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে আবারো বৈঠক করা হয়। সেই বৈঠকে বেশকিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিছু কাজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে নেতাদের।’

তিনি বলেন, ‘দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলে নিবন্ধন ইস্যুতে আইনগতভাবে যত প্রকারের উদ্যোগ বলেন, পদক্ষেপ বলেন সেটা করেও কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত আসবে না। ফলে জামায়াতে ইসলামীকে স্বতন্ত্র কিংবা অন্য কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আর সেক্ষেত্রে অনেকের মতে বিএনপিই জামায়াতের জন্য সেই নিরাপদ স্থান। তাই যে যাই বলুক, জামায়াতে ইসলামী জোটে আছে, ভোটে আছে এমনকি যুগপৎ আন্দোলনেও থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘সংলাপ ইস্যুতে ২০ দলীয় জোটে সৃষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াত-বিএনপি জোটে থাকা না থাকা এটা জামায়াতের নীতিগত অবস্থান নয়, কৌশলগত। শুধু মাত্র জামায়াত কিংবা বিএনপি নয়, সম্মিলিতভাবেই উভয় দলই রাজনৈতিকভাবে কৌশল নিয়েছে। অবশ্য এটা ঠিক যে, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারও চায় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের বিচ্ছেদ ঘটুক। দুই দলের সম্মিলিত শক্তি তাদের জন্য ভোট ও আন্দোলনের মাঠে বিপজ্জনক, আলাদা হলে ঠিক তার উল্টো। তাই অনেক ক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ে জামায়াতকেই সরকার তাদের গলার কাঁটা হিসাবে দেখছে। এই মুহূর্তে বিএনপিকে সরকার যতটা চাপে রাখতে চায়, জামায়াতকে হয়ত ততটা নয়।’

সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ‘আমাদের কে বলা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত আর জামায়াতকে বলা হয় যুদ্ধাপরাধীর দল, আমিও তা স্বীকার করি। কিন্তু নিবন্ধন বাতিল করলেন অথচ বেআইনি ঘোষণা করলেন না। তার মানে হচ্ছে আওয়ামী লীগ-জামায়াত তলে তলে সম্পর্ক বজায় রাখছে। তাই এখন থেকে আওয়ামী জামায়াত হবে, বিএনপি জামায়াত হবে না।’

অবশ্য জামায়াত এক বিবৃতিতে বলেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও বেআইনি ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে তার কথা ও মর্মবেদনায় জনগণের মধ্যে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, কার স্বার্থে এবং কাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি এ বক্তব্য প্রদান করেছেন?

এদিকে জামায়াত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, জামায়াত যদি নতুন নামে পুনর্গঠিত হওয়ার কথা ভাবে তাহলে হয়তো জামায়াতের একটি বড় অংশ বিএনপিতে বিলীন হবে। কারণ বিএনপি হলো জামায়াতের স্বাভাবিক মিত্র। তা ছাড়া জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি এবং জামায়াতের রাজনীতি সহজে শেষ হচ্ছে না। জামায়াত মাঠ ছাড়বে না। আর্থিকভাবে যতদিন দুর্বল না হবে ততদিন দলটি কৌশলের খেলা অব্যাহত রাখবেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো ভুল বারবার করলেও জামায়াত ভুলের পুনরাবৃত্তি কম করে।

এনএইচবি/আরএ/

Header Ad
Header Ad

নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২১ মার্চ) ভোরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন রায়পুরা উপজেলার মোহিনীপুর গ্রামের আমিন (২৩) ও বাশার (৩৫), যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাম মিয়ার সমর্থক বলে জানা গেছে। নিহত আমিনের পায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁনপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর সালাম মিয়া এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সোহাগের সঙ্গে বিএনপি নেতা সামসু মেম্বারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করেছিলেন সালাম ও সোহাগ।

তবে গত ৫ আগস্টের পর সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকরা এলাকায় ফিরে এলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সালাম মিয়া ও তার সমর্থকরা এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে সামসু মেম্বারের সমর্থকরা তাদের বাধা দেয়।

পরে দেশীয় অস্ত্র, টেঁটা-বল্লম, দা, ছুরি, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে আমিন এবং টেঁটা ও ছুরিকাঘাতে বাশার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন।

রায়পুরা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আদিল মাহামুদ জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত ও একজন গুলিবিদ্ধসহ আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

Header Ad
Header Ad

বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত খসড়ায় এই নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার ৯৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ মার্চ এ-সংক্রান্ত কার্যপত্রে (খসড়াসহ অন্যান্য বিষয়) স্বাক্ষর করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য) হিসেবে নির্বাচিত এই নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে গণপরিষদ গঠিত হলে তাদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে নতুন খসড়া আইনে তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৯৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সংশ্লিষ্ট খসড়ায় স্বাক্ষর করেন। সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আরও চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছে—

১. মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসে পেশাজীবী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার চালানো ও বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা।
২. মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত ও অন্যান্য সহযোগী।
৩. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিকরা।
৪. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

এই খসড়া কার্যকর হলে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকার অন্তত ১০ হাজার ব্যক্তির পরিচয় বদলাতে হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যারা এতদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিলেন, তাদের নতুনভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গণমাধ্যমকে বলেন, 'বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবল তারাই থাকবেন, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কোনো মর্যাদা কমানো হয়নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।'

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'আইন বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান পরিবর্তন করা যায় না। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং অপচয়মূলক উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। যদি কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'

মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ, কেবল সামরিক যুদ্ধ নয়। এ লড়াইয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঢালাওভাবে এমএনএ, এমপিএ ও গণপরিষদ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।'

খসড়া আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, 'যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা।'

সংশোধনীতে রাজনীতিবিদদের নাম বাদ দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক ও নার্সদের স্বীকৃতি বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যা ইতিহাসকে বিকৃত করার শামিল। মুক্তিযুদ্ধ একটি পরিকল্পিত সংগ্রাম ছিল, যেখানে রাজনীতিবিদরাই মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন।'

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, 'এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধ জাতির ইতিহাসের মীমাংসিত অধ্যায়। এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা অযৌক্তিক।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।'

মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন যাচাই-বাছাই:

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন শুধু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকের স্বীকৃতি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি কার্যকর হলে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যেও অনেকের স্বীকৃতি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান আইনে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধ। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় সাড়া দিয়ে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা।'

কিন্তু নতুন খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।'

এই পরিবর্তনের ফলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর এটি অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এই নতুন খসড়া আইনের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও মর্যাদা সংক্রান্ত ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এটি বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল

বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার বিচার দাবি করে শুক্রবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল করেছে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা। জুমার নামাজ শেষে তারা "নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার" স্লোগানে মুখরিত হয়ে পল্টন মোড়ের দিকে মিছিল করে।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সময়, বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর শাখাও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিলের জন্য সমাবেশ শুরু করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মসজিদের প্রবেশমুখে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন, এবং নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিজিবি সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। এছাড়া, মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করতে পুলিশ সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে আজ বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করা হয়। এর পাশাপাশি, ছাত্রশিবির ও জামায়াতের সদস্যরাও মসজিদ এলাকায় উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০
বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি
বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল
হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড, হাজার হাজার যাত্রী আটকা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ট্রাম্পের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে: হোয়াইট হাউস
ওমরাহ থেকে ফিরে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা বর্ষার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে এক সপ্তাহে ২৪৯ অপরাধী গ্রেপ্তার
ভিজিএফের চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নামে স্লোগান; স্থানীয়দের ক্ষোভ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকিরকে সাময়িক বরখাস্ত
ভিনিসিয়ুসের শেষ মুহূর্তের জাদুতে ব্রাজিলের রোমাঞ্চকর জয়
ইউনূস-মোদি বৈঠকের জন্য দিল্লির কাছে ঢাকার চিঠি
কুমিল্লায় শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৫ জন নিহত, তিনদিনে প্রাণ গেল ৬০০ ফিলিস্তিনির
আত্মপ্রকাশ করলো সাবেক সেনা কর্মকর্তা-আমলাদের ‘জনতার দল’
১৯৪ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি
ভোরে মাঠে নামছে ব্রাজিল, যেমন হবে একাদশ
মার্চে রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ
ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
হামাসের রকেট হামলায় কাঁপল ইসরাইল, বিমান চলাচল ব্যাহত
কবরস্থানের মালিকানা নিয়ে বিরোধে মারামারি, আ.লীগ নেতার মৃত্যু