শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫ | ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Dhaka Prokash

এমআরটি-২, ৪: ঋণের ফাঁদ ও পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান

রাজধানীর যানজট কমাতে চারদিকে চলছে মেট্রোরেলের (এমআরটি-৬ লাইন) বিশাল কর্মযজ্ঞ। ইতোমধ্যে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল যাতায়াত শুরু করেছে। নভেম্বরে যাবে মতিঝিল পর্যন্ত। মেট্রোরেল-১ এবং মেট্রোলাইন-৫ এর কাজও চলছে। নতুন করে কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এমআরটি-২ এবং ৪ এর কাজ।

এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। তবে ঋণের ফাঁদ ও পরিশোধের সক্ষমতাও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেলের (এমআরটি-২ ও ৪) কাজ শেষে হবে ২০৩০ সালে। এ প্রকল্প তাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ হচ্ছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণ ফাঁদ ও পরিশোধের সক্ষমতার ব্যাপারটি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। কারণ, কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প শুরু হয়েছে, এসবই বিদেশি ঋণ। আবার ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে সব কিছু ওলটপালট করে দিচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ ধেকে বলা হচ্ছে আর্থিকভাবে সমস্যা থাকলেও সামাজিকভাবে লাভবান হবে দেশ। তাই রাজধানী ও এর আশেপাশের যানজট কমাতে দেশের স্বার্থে মেট্রোরেল দরকার।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফোলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বাংলাদেশের অবকাঠামো ও ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বেশি করে বিনিয়োগ করতে হবে। আর্থ-সামাজিকভাবে এর ইতিবাচক দিক আছে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’

কিন্তু সম্পদ আহরণে সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ‘এর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কারণ ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত ৯ শতাংশের কাছে। আবার বাজেট ঘাটতি ৪ শতাংশের উপরে। সব মিলে বলা যায় পাবলিক এক্সপেন্ডিচার (জনগণের খরচ) বেশি নয়। এজন্য উন্নয়নের সঙ্গে সম্পদ আহরণে লক্ষ্য থাকতে হবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ করে উন্নয়নে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের ঋণ চাপে যাতে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, অনেক দেশ ঋণ ফাঁদে পড়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের অনিশ্চয়তার আলোকে আমাদের অর্থ ব্যয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সাশ্রয়ী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

এবার নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণে বিদেশি ঋণ ধরা হয়েছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য মেগা প্রকল্পে বিদেশি ঋণের কিস্তিু শিগগিরই পরিশোধ করতে হবে। এর সক্ষমতা কতটুকু রয়েছে বাংলাদেশের সেই প্রশ্নও করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পে আমাদের ঋণ আছে, নিতে হচ্ছে। এটা সত্য। তবে তা সহনীয় মাত্রায়। পরিশোধ সক্ষমতা আছে বলেই বিদেশিরা আমাদের ‍ঋণ দিচ্ছে। জাইকা আমাদের পরম বন্ধু। তারা সব সময় পাশে থাকে। এজন্যই রাজধানীর যানজট কমাতে আগ্রহ দেখিয়েছে, ঋণ দিয়েছে।

ঢাকার যানজট পাশের জেলাতেও কী ছড়িয়ে যাচ্ছে। এজন্য নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এক সঙ্গে ঋণ পরিশোধের চাপে পড়বে না দেশ? অর্থনৈতিকভাবে প্রভাব পড়বে না। এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘দেখেন অর্থনৈতিকভাবে চাপে পড়লেও সামাজিকভাবে লাভবান হবে দেশ। কারণ, সাধারণ মানুষ নিরাপদ ও সহজে যাতায়াত করতে পারবে মেট্রোরেলে।’

রাজধানীর চারটি রুটে শুধু মেট্রোরেলেই এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিদেশি জাইকার ঋণ ৮৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ইতিমধ্যে মেট্রোরেল-১ এ মানুষ যাতায়াত শুরু করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে মতিঝিলও যাবে মেট্রোরেল।

কিন্তু রাজধানীতে প্রবেশ করতে নারায়নগঞ্জ থেকেও যানজট লেগে থাকছে। তাই সরকার এবার মেট্রোরেল-২ লাইনে গাবতলী থেকে নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত ৩৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার মেট্রোরেল করার উদ্যোগ নিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও আন্ডারগ্রাউন্ডে এ লাইন করতে খরচ ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা।

এর মধ্যে ঋণ ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে। গাবতলী. ঢাকা উদ্যান-মোহাম্মদপুর-জিগাতলা-নিউমার্কেট-ঢাকা মেডিকেল-গুলিস্তান-মতিঝিল-কমলাপুর-মান্ডা-সাইনবোর্ড-নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত। বাস্তায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

এ ছাড়া, মেট্রোরেল-৪ নামে লাইনটি ধরা হয়েছে কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ি-চট্রগ্রাম রোড-কাঁচপুর-মদনপুর পর্যন্ত। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনে খরচ ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ ধরা হয়েছে ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। বাস্তায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুলাই পর্যন্ত।

প্রকল্পটি দুইটি বাস্তবায়ন করতে অর্থের সরবরাহের ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তা যাচাই-বাচাই করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এসে স্বাক্ষর করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তবে ইআরডি সূত্র জানায়, সাধারণত যেকোনো প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য প্রস্তাব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সবার কাছে পাঠানো হয়। অনেকে রাজি হলেও আমরা আমাদের দিকটা বিবেচনা করি। কারণ, মেট্রোরেলে এ পর্যন্ত জাপানি ঋণদাতা সংস্থা জাইকা মেট্রোরেলে ঋণ দিয়েছে। তাই এবারও আশা করা যায় জাইকা এগিয়ে আসলে তাদের ঋণে আগ্রহ দেখানো হবে। তারা নিশ্চিতা দিলে সার্বিক ব্যাপারে আলোচনা করে ঋণ চুক্তি হবে। একই সঙ্গে ডিপিপি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা করিশনে পাঠানো হবে।

সূত্র জানায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাজধানীতে মেট্রোরেল বাস্তবায়ন করতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি গঠন করেছে সরকার। এর আওতায় এমআরটি-৬সহ আরও কয়েকটি রুটের কাজ চলছে। এর মধ্যে রাজধানীর যানজট কমাতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল বা এমআরটি-৬ চলাচল শুরু করেছে। নভেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত চলবে। প্রথমে প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার কথা। কিন্তু পরে মতিঝিল পর্যন্ত সম্প্রসারণ করায় খরচ বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। এর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের জুলাই মাসে। জাইকার ঋণ সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকার ব্যয় করছে।

এ ছাড়া, মেট্রোরেল-১ প্রকল্পটির কাজও শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। তা শেষ হবে ২০২৬ সালে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এতে জাইকার ঋণ হচ্ছে সাড়ে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে, ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোলাইন-৫ এর কাজও শুরু হয়েছে। তা ২০১৯ সালের জুলাইতে শুরু হয়েছে, শেষ হবে ২০২৮ সালে। এতে জাইকার ঋণ হচ্ছে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির আওতায় চলমান তিন মেট্রোরেলে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। এতে জাইকার ঋণ হচ্ছে ৮৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে।

উল্লেখ্য, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোপথ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানীর বুকে প্রস্তুত হবে আরও তিনটি মেট্রোরেল পথ। রাজধানীর যানজট কমিয়ে মানুষের যাতায়াত সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগে ২০১২ সালে সায় দেয় সরকার।

সূত্র জানায়, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ৬ ধাপে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে পরিকল্পনার প্রথম ধাপে গঠন করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। উড়াল ও পাতাল রেলপথ মিলিয়ে ৬ ধাপে রয়েছে, এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫ এ দুই রুট রয়েছে নর্দার্ন ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪।

উড়াল-পাতাল মিলিয়ে এমআরটি লাইন-১ এর আওতায় নির্মাণ হবে প্রায় ৩১ কিলোমিটার রেলপথ। ২০১৯ সালে এমআরটি লাইন-১ এর অনুমোদন দেওয়া হয়। লাইনটি বিমানবন্দর থেকে নতুনবাজার, কমলাপুর হয়ে পূর্বাচল পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এটি বিমানবন্দর ও পূর্বাচল এই দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশে বিমাবন্দর অংশে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। এই অংশে মোট ২০ কিলোমিটার পথে পাতালে স্টেশন হবে ১২টি। বিমানবন্দর রুটই হবে বাংলাদেশের প্রথম পাতাল রেল।

আর পূর্বাচল অংশে ১১ কিলোমিটার রুট হবে নতুনবাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো। এই অংশের পুরোটাই উড়াল এখানে স্টেশন হবে নয়টি। এর মধ্যে সাতটি স্টেশন উড়াল পথে আর বাকি দু’টি নদ্দা ও নতুনবাজার এলাকায় পাতাল স্টেশনের সঙ্গে মিলে থাকবে। নতুনবাজার স্টেশনে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের সঙ্গে আন্তঃলাইন সংযোগ থাকবে। নদ্দা ও নতুন বাজার স্টেশন আন্তঃসংযোগ রুট ব্যবহার করে বিমানবন্দর রুট থেকে পূর্বাচলে যাওয়া যাবে।

২০২৮ সালের মধ্যে রাজধানীর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল-পাতাল মিলিয়ে মোট ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথ নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে উড়াল এবং ৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হবে পাতাল। মোট ১৪টি স্টেশনের ৯টি উড়াল পথে আর ৫টি স্টেশন থাকবে পাতাল পথে। এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন রুট নামে পরিচিত এই অংশের সার্ভে কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে।

আরইউ/এমএমএ/এএস

Header Ad
Header Ad

চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার

ছবি: সংগৃহীত

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করা চক্রের মূলহোতা মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইনকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে গত বুধবার (১২ জুন) ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি এর টিএইচবি (মানব পাচার প্রতিরোধ) শাখা।

সিআইডি বলছে, আকর্ষণীয় বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যায় একটি চক্র। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে। ওই যুদ্ধে অংশ নিয়ে কয়েকজন নিহতও হয়েছেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় হওয়া মানব পাচার আইনের মামলায় আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আলমগীরের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার আমতলী মাঝেরপাড়া গ্রামে।

তিনি বলেন, সিআইডি প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, এই চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠান। সেখানে তাদের ওমরাহ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেন।

ওই সুলতান তাদের দাস হিসেবে রাশিয়ার সেনাদের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখানে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। যুদ্ধে অংশ নিতে না চাইলে তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার বন্ধ করে দিয়ে তাদের মানসিক শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন।

সিআইডি জানিয়েছে, যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির নিহত এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামের একজন গুরুতর আহত হন। রাশিয়ায় পাঠানো ১০ জনের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন (২৪) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরে তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কাছে তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী ঝুমু আক্তার ঢাকার বনানী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন।

তদন্তে সিআইডি আরও জানতে পারে, ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। রাশিয়ায় নিয়ে তাদের জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানাজানি হওয়ায়, তারা রাশিয়ায় যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে সেখান থেকে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। তাই তারা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছেন না এবং দেশে ফিরতেও পারছেন না।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সিআইডি নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন ওরফে তামান্নাকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। ফাবিহা জেরিন ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার।

সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

অভিযান তদারকির সঙ্গে যুক্ত সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার আলমগীর ২০০৮ সালে ছাত্র ভিসায় রাশিয়ায় যান। সেখানে বিয়ে করে তিনি ওই দেশের নাগরিকত্ব পান। এ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ থেকে তিন ক্যাটাগরির ভিসায় ৫০ জনকে রাশিয়ায় নেন। গত এক বছরে ১১ জনকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে কাজ করার কথা বলে নিয়ে যান। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে তাদের ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করেন। সেখান থেকে পাওয়া টাকাও বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে ফিরিস্তি দিয়ে আলমগীর কেড়ে নেন।

সিআইডি জানিয়েছে, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে রাশিয়ার সরকার দুজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে তাদের লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে।

সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। একই সঙ্গে মানব পাচারের এই নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নিবিড় তদন্ত এবং গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সৎ মা ও দাদিকে গলা কেটে হত্যা

ছবি: সংগৃহীত

সৎ মা ও দাদিকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মো. আল আমিন (২৫) নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চারাবুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত মো. আল আমিন আবদুর রাজ্জাক খানের ছেলে। নিহতরা হলেন—কুলসুম বিবি (১০৫) ও সহিদা বেগম (৫০)। কুলসুম বিবি আল আমিনের দাদি এবং সহিদা বেগম তার সৎ মা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান আল আমিন। পরে স্বজনরা তিন-চার দিন আগে তাকে খুঁজে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। শুক্রবার রাতে তাকে পাবনার একটি মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর কথা ছিল, এমনকি তার জন্য বাসের টিকিটও কাটা হয়েছিল।

এদিন দুপুরে আল আমিনের বড় ভাই তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যের কাছে যান এবং তার বাবা রাজ্জাক খান কাজের উদ্দেশে বাড়ির বাইরে যান। এ সময় বাড়িতে একা পেয়ে সৎ মা ও দাদিকে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেন তিনি। ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান তিনি।

পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, রাজ্জাক খানের ছেলে আল আমিন তার সৎ মা ও দাদিকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছেন। ঘটনার পর তিনি পালিয়ে গেছেন। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

ইসরায়েলের দিকে দুই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের দিকে দুই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। এই হামলায় ইসরায়েলে এক নারী নিহত ও অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ইরান ইন্টারন্যাশনালকে জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ইরান অন্তত ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। তবে ১০টির কম ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হেনেছে।

ইসরায়েলি মিডিয়া বলছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে তেল আবিবের একটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।

টাইমস অব ইসরায়েলের লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাইরেন বাজানো হচ্ছে। অন্যদিকে ইরানেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। রাজধানী তেহরানে বড় বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

ইরান ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তেহরান ও ইসফাহানে অবিরাম হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলি প্রজেক্টাইল ভূপাতিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল এখন ইরানের তেল এবং গ্যাসের অবকাঠামোতে হামলার চেষ্টা করছে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার ভোরে ইরানজুড়ে ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, আইআরজিসির প্রধানসহ ইরানের ২০ জন কমান্ডার নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা, সামরিক ঘাঁটিসহ, ইউরেনিয়াম মজুদের অবকাঠামোতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দুই দেশের মধ্যে এখন পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার
সৎ মা ও দাদিকে গলা কেটে হত্যা
ইসরায়েলের দিকে দুই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান
দেশের উদ্দেশে লন্ডন ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা
ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
শেখ হাসিনা-জয়সহ ২২২ জনের বিরুদ্ধে আরেক হত্যাচেষ্টা মামলা
ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭০, আহত ৩২০ জনের বেশি
বিএনপির আশীর্বাদের চিঠি এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে: নুর
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সোলায়মান জোয়ার্দার মারা গেছেন
ইরানকে সমঝোতায় আসতে হবে, সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৫
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে যা জানালেন আমীর খসরু
বিশ্বের সব দূতাবাস বন্ধ করবে ইসরায়েল
ইরানে ইসরায়েলের হামলায় বাংলাদেশের নিন্দা
ভোটের তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করবে ইসি : খলিলুর রহমান
ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৯
বিরামপুর সীমান্ত দিয়ে ১৫ জনকে পুশইন করল বিএসএফ
রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা
রোজার আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব তারেক রহমানের
সঞ্জয়ের মৃত্যুর খবরে সাইফকে নিয়ে বোন কারিশমার বাড়িতে কারিনা