শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

‘বঙ্গবন্ধু’ ও বাংলাদেশ

ইতিহাসের মহামানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই উপলব্ধি করেছিলেন এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি, একদিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদের হতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে তিনি ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ এবং ’৪৯-এর ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর সংগ্রামের সুদীর্ঘ পথে নেতৃত্ব দিয়ে মহান বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংগঠিত করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে বাংলার মানুষের জন্য ৫টি মৌলিক অধিকার সাংবিধানিকভাবে বিধিবদ্ধ করেন। যার সুফল আজ দেশের মানুষ ভোগ করছেন।

এই ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখটি প্রতি বছর গভীরভাবে স্মরণ করি। দিনটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। ১৯৬৯-এর এই দিনে বাংলার দুঃখী মানুষের বন্ধু, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতাকে জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ’৬৯-এর গণআন্দোলন এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কালপর্বটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ‘ড্রেস রিহার্সেল’। জাতির মুক্তিসনদ ৬ দফা দেওয়াকে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ গণ্য করে বঙ্গবন্ধু মুজিবসহ সর্বমোট ৩৫ জনকে ফাঁসি দেওয়ার লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি করা হয় এবং নির্বিঘ্নে পুনরায় ক্ষমতায় আরোহনের এক ঘৃণ্য মনোবাসনা চরিতার্থে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। আগরতলা মামলার বিচার যখন শুরু হয় তখন আমরা জাগ্রত ছাত্রসমাজ উপলব্ধি করি বঙ্গবন্ধুকে যদি ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয় তাহলে চিরদিনের জন্য বাঙালির কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে। কেননা এই একটি কণ্ঠে কোটি কণ্ঠ উচ্চারিত হয়। তাই আমরা ’৬৯-এর ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডাকসু’ কার্যালয়ে চার ছাত্র সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন এবং ৬ দফাকে হুবহু যুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করি। ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ’৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জমায়েত অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় এবং পূর্ব ঘোষিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। ’৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম, ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের রক্তাক্ত জামা হাতে নিয়ে যে শপথ নিয়েছিলাম, ২৪ জানুয়ারি শহীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন সর্বব্যাপী গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছিল। ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে শপথ দিবসে স্লোগান দিয়েছিলাম ‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করব; শপথ নিলাম শপথ নিলাম মা-গো তোমায় মুক্ত করব।’ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে ১৫ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে সান্ধ্যআইন জারি করা হলে সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহাকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি সেনারা বেয়োনেট চার্জে নির্মমভাবে হত্যা করে পুনরায় সান্ধ্য আইন জারি করলে যথারীতি আমরা সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখি। ২০ ফেব্রুয়ারি সমগ্র ঢাকা নগরীকে মশাল আর মিছিলের নগরীতে পরিণত করলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসে পল্টনের মহাসমুদ্রে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক সকলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রদান করি। সমগ্র দেশ গণবিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়। জনরোষের ভয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান সকল রাজবন্দীকে বিনা শর্তে মুক্তি দিলে দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। প্রিয় নেতাকে কারামুক্ত করার মধ্য দিয়ে শপথ দিবসের স্লোগানের প্রথম অংশ ‘মুজিব তোমায় মুক্ত করব’, এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে হাতিয়ার তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদার মুক্ত করে স্লোগানের দ্বিতীয় অংশ ‘মা-গো তোমায় মুক্ত করব’ বাস্তবায়ন করেছিলাম। বস্তুত, ’৬৬-এর ৮ মে’র গভীর রাতে ৬ দফা কর্মসূচি প্রদানের অভিযোগে দেশরক্ষা আইনে যে মুজিব গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, ৩৩ মাস পর ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি যে মুজিব মুক্তিলাভ করেন-নাম বিচারে এক হলেও, বাস্তবে ওই দুই মুজিবের মধ্যে ছিল গুণগত ফারাক। আগরতলা মামলাটি ছিল সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য অগ্নিপরীক্ষার মতো। সেই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বন্দীদশা থেকে মুক্তমানব হয়ে বেরিয়ে আসেন। ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেই যে, প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানাব। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারেই রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়।

শুরুতেই বলেছি ২৩ ফেব্রুয়ারি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। সেদিনের রেসকোর্স ময়দান যারা দেখেননি তাদের বলে বোঝানো যাবে না সেই জনসমুদ্রের কথা। আমরা যখন সেখানে পৌঁছেছি, তখন রেসকোর্স ময়দানে মানুষ আর মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রেন, বাস, ট্রাক, লঞ্চ-স্টিমার বোঝাই হয়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ মানুষ ছুটে এসেছে। ঢাকার মানুষ তো আছেই। অভিভূত হয়ে পড়লাম। এর পূর্বে এতবড় জনসভা দেখিনি। সেই জনসমুদ্রে লক্ষ লক্ষ লোক এসেছে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে একনজর দেখতে। প্রিয় নেতাকে নিয়ে আমরা মঞ্চে উঠলাম। সেদিন সেই মঞ্চে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রেখেছিলেন। চিরাচরিত প্রথা ভঙ্গ করে আগেই সভাপতির ভাষণ দেওয়ার জন্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলাম, ‘সবার শেষে বক্তৃতা করার কথা থাকলেও আপনাদের অনুমতি নিয়ে আমি আগেই বক্তৃতা করতে চাই।’ দশ লক্ষ লোকের সম্মতি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আগেই বক্তৃতা করি। সেদিন যে ভালোবাসা মানুষের কাছ থেকে পেয়েছি তা বলে বোঝাতে পারব না। বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে বলেছিলাম, ‘প্রিয় নেতা তোমার কাছে আমরা ঋণী, বাঙালি জাতি চিরঋণী। এই ঋণ কোনোদিনই শোধ করতে পারব না। সারা জীবন এই ঋণের বোঝা আমাদের বয়ে চলতে হবে। আজ এই ঋণের বোঝাটাকে একটু হালকা করতে চাই জাতির পক্ষ থেকে তোমাকে একটা উপাধি দিয়ে।’ ১০ লক্ষ লোক ২০ লক্ষ হাত তুলে সম্মতি জানিয়েছিল। তখনই ঘোষিত হয়েছিল, ‘যে নেতা তার জীবনের যৌবন কাটিয়েছেন পাকিস্তানের কারাগারে, ফাঁসির মঞ্চে দাড়িয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন সেই নেতাকে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞ চিত্তে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হলো।’ ১০ লক্ষ লোক তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধ’ উপাধিতে ভূষিত করে লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনি তুলেছিল, ‘জয় বঙ্গবন্ধু।’

বাংলাদেশে অনেক আন্দোলন হয়েছে-ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ। একেকটি আন্দোলনের একেক রকম চারিত্র্য-বৈশিষ্ট্য ছিল। ’৬৯-এর গণআন্দোলনের বৈশিষ্ট্য এমন ছিল যে, তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিচারের কাজ চলছিল। বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে ’৬৮-এর ১৯ জুন বিচারের কাজ শুরু হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাবার জন্য আইয়ুব খান পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। আইয়ুব খানের তথ্যসচিব আলতাফ গওহর ‘আইয়ুব খান’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। সেই বইয়ে উল্লেখ আছে কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ’৬৯-এর গণআন্দোলনের শহীদদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ সেই ষাড়যন্ত্রিক প্রচেষ্টাকে সমাধিস্থ করে এবং আসাদ-মতিউর-মকবুল-রুস্তম-আলমগীর-সার্জেন্ট জহুরুল হক-আনোয়ারা-ড. শামসুজ্জোহার জীবনের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির আন্দোলন সফল হয়। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে নারায়ণগঞ্জের এক জনসভায় দম্ভোক্তি করে আইয়ুব খান বলেছিলেন তিনি আবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হবেন। অথচ ১৭ জানুয়ারি আন্দোলন শুরু হলো, ২০ জানুয়ারি আসাদ শহীদ হলেন, ২৪ জানুয়ারি শহীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হলে সর্বব্যাপী গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং সেই আইয়ুব খান একদিন পরেই বলেছেন ‘আমি আর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না।’ একটি আন্দোলন সাত দিনের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়-ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে, ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে! এর তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ, যাদের রক্ত ঋণে গোটা জাতি ঋণী, তাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ভোলায় নিজ গ্রামে ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেছি। সেই জাদুঘরে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে শহীদ সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারের স্মৃতি, মহান ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলন, শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনকের দুর্লভ সব আলোকচিত্র সেখানে স্থান পেয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। এই বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্ববরেণ্য মহান নেতা। তার কোনো তুলনা হয় না। তিনি জন্মেছিলেন বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তিনি যদি না জন্মাতেন আমরা আজও পাকিস্তানের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ থাকতাম। সেই মহান নেতা তার জীবদ্দশায় সবসময় এই দিনগুলোর কথা সংবাদপত্রে বাণী, বিবৃতি দিয়ে শহীদদের কথা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করতেন। কেননা, তিনি জানতেন ৬ দফা আন্দোলন না হলে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান হতো না; ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান না হলে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে পারতাম না; বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্ত না হলে ’৭০-এর নির্বাচনে পাকিস্তানে আমরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারতাম না; আর পাকিস্তানে যদি আমরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারতাম, তাহলে ৯ মাস যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করতে পারতাম না। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্রসমাজের যে ভূমিকা তা গৌরবোজ্জ্বল।

বছর ঘুরে এমন একটি মধুর দিন যখন ফিরে আসে হৃদয়ের মানসপটে কতো স্মৃতি ভেসে ওঠে। আমরা সংখ্যাসাম্যের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরুর অবস্থান থেকে ‘এক মাথা এক ভোটে’র দাবি তুলে তা আদায় করেছিলাম। ফলে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সংখ্যাধিক্য আসন আমরা লাভ করেছিলাম। এদিনের প্রতিটি মুহূর্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে মনে পড়ে। সেদিন বক্তৃতায় আরও বলেছিলাম, ‘৬ দফা ও ১১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আমরা ফিরে পেয়েছি। তাদের সে রক্ত যেনো বৃথা না যায়, তার জন্য জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রসহ সকল মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য এই আন্দোলন শুরু হয়েছে।’ বক্তৃতা শেষ করে ঘোষণা করেছিলাম, ‘এখন বক্তৃতা করবেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।’ তুমুল করতালির মধ্যে তিনি বক্তৃতা করতে দাঁড়ালেন। চারদিকে তাকিয়ে উত্তাল জনসমুদ্রের উদ্দেশে বললেন, ‘রাতের অন্ধকারে সান্ধ্য আইনের কঠিন বেড়াজাল ছিন্ন করে যে মানুষ ‘মুজিবকে ফিরিয়ে আনতে হবে’ বলে আওয়াজ তুলে গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে তাদের দাবির সঙ্গে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না।’ সংগ্রামী ছাত্র সমাজকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি ছাত্রদের ১১ দফা শুধু সমর্থনই করি না, এর জন্য আন্দোলন করে আমি পুনরায় কারাবরণে রাজি আছি। ছাত্রদের ১১ দফার মধ্যে আমার ৬ দফা দাবিও নিহিত রয়েছে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি যদি এদেশের মুক্তি আনতে ও জনগণের দাবি আদায় করতে না পারি, তবে আন্দোলন করে আবার কারাগারে যাব।’ সেদিন বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘আমি গোল টেবিল বৈঠকে যাব, সেখানে আমার ৬ দফাও পেশ করব, ১১ দফাও পেশ করব।’ তিনি জীবদ্দশায় কোনোদিন ১১ দফার কথা ভোলেননি। তার বক্তৃতায় সবসময় ’৬৯-এর গণআন্দোলনের কথা থাকত। এমনকি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে আছে, ‘১৯৬৯-এর আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পরে যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন। তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গণতন্ত্র দেবেন, আমরা মেনে নিলাম।’

পরিশেষে স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কৃতজ্ঞস্বরে বলেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, তোমরা যারা রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছো, যদি কোনোদিন পারি নিজের রক্ত দিয়ে আমি সেই রক্তের ঋণ শোধ করে যাব।’ তিনি একা রক্ত দেননি-’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতির রক্তের ঋণ তিনি শোধ করে গেছেন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ দিন। যতদিন বেঁচে থাকব হৃদয়ের গভীরে লালিত এ দিনটিকে স্মরণ করব।

তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় সংসদ

 

Header Ad

সুষ্ঠু ভোটের আয়োজনে প্রার্থীদেরও ভূমিকা রয়েছে : ইসি রাশেদা

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীকে দায়িত্বশীল এজেন্ট নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটের আয়োজন সম্পন্ন করতে চাইলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের অবশ্যই প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্বশীল এজেন্ট দিতে হবে, যিনি ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীর পক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোট কেন্দ্রে অনেক সময় অনিয়ম হলেও প্রমাণের অভাবে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে এজেন্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’

আজ শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহরের শহীদ এম, মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে আয়োজিত মত বিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি।


এজেন্ট নিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এজেন্টরাই প্রতিটি কেন্দ্রে অন্যায়–অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করবেন। এজেন্ট শেষ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করবেন এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ফলাফলের তালিকা হাতে নিয়ে তবে কেন্দ্র ত্যাগ করবেন।

রাশেদা সুলতানা বলেন, যাঁরা নির্বাচনী আইন মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আইনি ব্যবস্থা নেবে। প্রভাবশালীরা নির্বাচনে কোনো রকম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না। এখন পর্যন্ত অনেকের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবিরের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমান ও রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।

টাঙ্গাইলে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে গণমাধ্যমকর্মীদের সমাবেশ

উত্তর টাঙ্গাইল সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে গোপালপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত। ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে টাঙ্গাইলে সমাবেশ ও আলোচনা সভা কর্মসূচি পালন করেছে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা। শুক্রবার (০৩ মে) বিকালে উত্তর টাঙ্গাইল সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে জেলার গোপালপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

উত্তর টাঙ্গাইল সাংবাদিক ফোরাম ও গোপালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক সন্তোষ কুমার দত্তের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও কালিহাতী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মিল্টন।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- ফোরামের সহ-সভাপতি আনছার আলী, ভূঞাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক আসাদুল ইসলাম বাবুল, ঘাটাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি খান ফজলুর রহমান, মধুপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম শহীদ, গোপালপু্র প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি কে এম মিঠু,
সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ফোরামের কোষাধ্যক্ষ অভিজিৎ ঘোষ, সাংবাদিক আনোয়ার সাদত ইমরান, মিজানুর রহমান প্রমুখ।

এছাড়াও জেলার গোপালপুর, ভূঞাপুর, ঘাটাইল, মধুপুর, ধনবাড়ী ও কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন মিডিয়ার প্রায় অর্ধশত গণমাধ্যমকর্মী আলোচনা সভা ও সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় বক্তারা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং গ্রামীণ সাংবাদিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করেন।

গণতন্ত্রের জন্য লড়াইকারীদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে : রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আজকে যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে, ভোটাধিকার ফিরে পাবার জন্য লড়াই করছে, তাদের নাম ইতহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’

শুক্রবার সারাদেশে চলমান তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ নগরীর পথচারীদের মাঝে ঢাকা মহানগর উত্তরের তুরাগ থানা বিএনপির পক্ষ থেকে খাবার পানি, স্যালাইন বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, কিয়ামত পর্যন্ত তো আপনারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। আপনাদের যখন বিদায় হবে। তখন যে ইতিহাস লেখা হবে সেই ইতিহাসে দেশের জনগণ আপনাদের মীরজাফর হিসেবে চিনবে। মীরজাফর যেমন নিগৃত হয়েছে আপনারা তেমন হবেন।

তিনি বলেন, বিএনপির লোকজন বিদেশে যাবে কেন? তারা জেলে যাচ্ছে। তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তারপরও তারা এদেশে থেকে গণতন্ত্রের জন্য আদম্য সাহস নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে। এই আন্দোলনের প্রেরণা হচ্ছে খালেদা জিয়া। তিনি বিদেশে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু জনগণকে ছেড়ে তিনি বিদেশে যাননি।

সর্বশেষ সংবাদ

সুষ্ঠু ভোটের আয়োজনে প্রার্থীদেরও ভূমিকা রয়েছে : ইসি রাশেদা
টাঙ্গাইলে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে গণমাধ্যমকর্মীদের সমাবেশ
গণতন্ত্রের জন্য লড়াইকারীদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে : রিজভী
সরকারকে যারা চাপে রাখতে চেয়েছিল তারা নিজেরাই চাপে আছে : ওবায়দুল কাদের
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ২ হাজার
ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন পুলিশ কর্মকর্তা
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার
যেসব অভিযোগে ১১১০ দিন কারাগারে ছিলেন মামুনুল হক
শনিবার যেসব জেলার স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা বন্ধ থাকবে
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি!
নওগাঁয় আ.লীগ নেতার প্রচারে যাওয়া ছাত্রদলের ২ নেতাকে শোকজ
বলিউডের ছবিতে গাইলেন আসিফ আকবর
যাত্রীবাহী বাস উল্টে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ২০
১০ টাকায় টিকিট কেটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী
এসএসসির ফল প্রকাশ ১২ মে
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ
কারামুক্ত হলেন মামুনুল হক
রোমাকে হারিয়ে ইউরোপার ফাইনালে এক পা লেভারকুসেনের
অপহৃত ১২ জেলেকে ছেড়ে দিল আরাকান আর্মি
জাতিসংঘে বাংলাদেশের উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজ্যুলেশন গৃহীত