
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিবাচক অগ্রগতি ধরে রাখতে চাই
২৯ মে ২০২৩, ০১:১৮ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:০৪ এএম

বাংলাদেশ এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের সঙ্গে অনেক বেশি সংযুক্ত। অর্থনীতি, বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যে স্তরে পৌঁছেছে, সেটি ধরে রাখতে হলে বৈশ্বিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা নিশ্চিত করতে হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমুন্নত রাখার ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
আমাদের ভাবমূর্তি দেশের শক্তির বড় আধার। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ইতিবাচক ঐকমত্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। আমরা যদি ইতিবাচক অগ্রগতি ধরে রাখতে চাই এবং বৈশ্বিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত থেকে এগোতে চাই, তাহলে দেশের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের যে চর্চা করি, তার মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে।
বৈশ্বিক পর্যায়ের সঙ্গে এর সাযুজ্যও ঘটাতে হবে। আমরা নিজেদের যেভাবে দেখি এবং বাইরের বিশ্ব আমাদের যেভাবে দেখে, তার মাঝে যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে, মার্কিন নতুন ভিসা নীতি তা আমাদের মনে করিয়ে দিল। আমরা এই ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কী করতে পারি? কী করলে কী হবে? পরিণতি কোন দিকে যাবে, এই সিদ্ধান্ত থেকে তার আভাস পাওয়া যায়।
আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ঘাটতির বিষয়টা প্রকাশ্যে না এলে ভালো হতো। তবে মার্কিন এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টিকে ইতিবাচক দেখা যেতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে সহায়তার জন্য এই পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। এখন পর্যন্ত সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একে ইতিবাচক ঐকমত্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। তবে আমরা যেন মার্কিন এই সিদ্ধান্তকে নিজেদের রাজনৈতিক বিতর্ক বা বিভাজনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করি, সেটাই বাঞ্ছনীয় হবে।
দুই দশক ধরে সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের কেন্দ্রে। বিভিন্ন দেশ সন্ত্রাসবাদ দমনের কৌশলকে পুঁজি করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এর সুবিধা নিয়েছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক চর্চা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান এবং ২০২০ সালের ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই এর প্রতিফলন ঘটেছে।
এমন এক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরের পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে বাইডেন প্রশাসন মনোযোগ দিচ্ছে। হোয়াইট হাউসের কাছে বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচন, মানবাধিকার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক এই মূল্যবোধগুলোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান সমানভাবে মনোযোগ দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বিষয়গুলোকে কীভাবে সাড়া দেব, কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেব, সেটা বড় প্রশ্ন।
ভবিষ্যতের দিকে তাকালে দেখি, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পর যে সরকার আসবে, তারাই বাংলাদেশকে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে যাবে। গত ৫২ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে সম্পর্ক রেখেছে বাংলাদেশ, তার একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে। এখন যে সহযোগিতা বাংলাদেশ পাচ্ছে, ভবিষ্যতে তার পুনর্বিন্যাস হবে।
আমাদের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেক কিছু পেতে হবে। সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মৌলিক পুনর্বিন্যাস হবে। এই কাজটা কঠিন এবং এটি সরকারের একক কাজ নয়। জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে এটি করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নাগরিকরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।
এম. হুমায়ুন কবীর: সাবেক রাষ্ট্রদূত
আরএ/

যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানব কল্যাণে কাজ করার আহবান প্রধানমন্ত্রীর
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৫১ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:০৩ পিএম

বিশ্ব নেতাদের যুদ্ধ-সংঘাতের পথ পরিহার করে শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (সেপ্টেম্বর ২২) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বহুপাক্ষিক কূটনীতিকে জোরদারকরণ, জাতিসংঘের উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ পালন করার জন্য প্রচেষ্টা ও সাহসী বক্তব্য, এবং বৈশ্বিক সঙ্কট উত্তরণে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবমূখী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এবং সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসেকে সাধুবাদ জানান। একই সঙ্গে ক্ষতার সঙ্গে ৭৭তম অধিবেশন পরিচালনা করার জন্য তিনি তাঁর পূর্বসূরি সাবা কোরোসিকেও ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এ বছর সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: আস্থার পুন:নির্মাণ এবং বিশ্বব্যাপী সংহতির পুনরুজ্জীবন: আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরও জোরদার করে ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি এবং এর আওতাধীন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনের মাধ্যমে সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। আমি মনে করি, বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা ও জটিলতার প্রেক্ষাপটে এবারের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কার্যকারিতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও বৈধতা নিয়ে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর ফলে একটা শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অর্জিত সাফল্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
করোনা মহামারি ও জলবায়ু সঙ্কটের প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য, অর্থায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন-লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে ।
জটিল এই সন্ধিক্ষণে বৈশ্বিক সংহতি রক্ষার্থে আস্থার পুনঃনির্মাণ এবং পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে আপনার আহ্বান আমাকে এই পরিষদে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ভাষণের একটি বিশেষ উক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়।
তিনি বলেছিলেন, কোট: ‘‘সাম্প্রতিককালে গোটা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে আমাদের আরও ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে আমাদের মধ্যে মানবিক ঐক্যবোধ-ভ্রাতৃত্ববোধের পুনর্জাগরণ। পারস্পরিক নির্ভরশীলতার স্বীকৃতিই কেবল বর্তমান সমস্যার যুক্তিসঙ্গত সমাধান ঘটাতে সক্ষম। বর্তমান দুর্যোগ কাটাতে হলে অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার।
এ প্রসঙ্গে, আগামী বছর ‘সামিট অব দ্য ফিউচার’ আহ্বান করার উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করছি, এই প্রক্রিয়াটি ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।
সবার জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অভিন্ন সঙ্কট মোকাবিলায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এজন্য আমাদের অবশ্যই বিভাজন, সঙ্কীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতা বেছে নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে আমরা মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভূক্তিমূলক ও আধুনিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছি। তাঁর দেখানো পথে বাস্তবমূখী নীতিগ্রহণ, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হতে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পেরেছি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ থেকে ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি।
সহাস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমরা এসডিজি অর্জনে অবিচলিত অগ্রগতি সাধন করেছি। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। করোনা ভাইরাস, বিভিন্ন মানবসৃষ্ট সঙ্কট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় চ্যালেঞ্জগুলিকে বহুগুণে জটিল করেছে। সে কারণে, এই বছর জাতিসংঘ এসডিজি সম্মেলনের সফল আয়োজন এবং এতে গৃহীত রাজনৈতিক ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বাস করি, এই রাজনৈতিক ঘোষণা ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে।
তাছাড়া, জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাবনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই প্রস্তাবনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছি এবং কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং অন্যান্য দুর্বল খাতে লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা প্রদান করেছি। অসহায় নারী, বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং সমাজের অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারিত করেছি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা পাচ্ছেন। চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ২৬,২৭২ কোটি টাকা (প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবছর, আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যেকোন নাগরিক এই পেনশন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের ০.৪৭ শতাংশেরও কম অবদান রাখলেও বাংলাদেশ জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি। এর সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি, সাহসী এবং উচ্চাভিলাষী সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বাংলাদেশ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সংরক্ষণ এবং জলবায়ু-সহনশীল টেকসই উন্নয়নের পথ অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ সবুজ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বল্প-কার্বন নির্গমন কৌশল প্রণয়ন করছে।
আমরা জলবায়ু অভিযোজনের জন্য ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করেছি এবং আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে এ তহবিলে এ পর্যন্ত ৪৮০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছি। জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের লক্ষ্যে সমুদ্র উপকূলে বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার, গ্রিন বেল্ট এবং বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। আমরা কক্সবাজারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যূত মানুষের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। সেখানে ৪ হাজার ৪০৯টি উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আমার সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার পরিবারের ৫০ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পর সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারকে কাজে লাগানোর জন্য সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশনের বিধানগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন আবশ্যক।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, আমরা 'বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০' বাস্তবায়ন করছি। এর লক্ষ্য হল সমন্বিত ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি নিরাপদ, জলবায়ু সহনশীল এবং সমৃদ্ধ ডেল্টা অর্জন। সরকার "মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা" গ্রহণ করেছে। আমরা ধীরে ধীরে একটি জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে জলবায়ু সহনশীল দেশে পরিণত হতে কাজ করছি।
বাংলাদেশের ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার করছে। আমরা আরও টেকসই শক্তির মিশ্রণের জন্য কাজ করছি। আমরা আশা করি, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের শক্তির ৪০% পুনঃনবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া যাবে।
জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উন্নয়ন চাহিদার কথা বিবেচনা করতে হবে। আমরা ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তহবিলের জরুরি বাস্তবায়ন চাই।
সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা, লবণাক্ততা, নদী ক্ষয়, বন্যা ও খরা-জনিত কারণে জলবায়ু-অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আমি আন্তর্জাতিক সংহতির আহ্বান জানাই।
বিগত কয়েক বছরের আন্তঃসংযুক্ত সঙ্কটগুলি বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি এবং পণ্য মূল্য বৃদ্ধি করেছে। জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি বিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, আমরা প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করেছি। আমরা নিম্ন আয়ের ১ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী দামে চাল ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আমি আমাদের জনগণকে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করতে এবং কোনো জমি অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের বিজ্ঞানীরা খরা, লবণাক্ততা, জলমগ্নতাসহ বিরূপ আবহাওয়া উপযোগী ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা, জাতির পিতা ও বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আমার মা, আমার তিন ছোট ভাই, দুই ভ্রাতৃবধূ, চাচাসহ পরিবারের মোট আঠার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। আমার ছোট বোন এবং আমি বিদেশে থাকায় সেই বর্বরতা থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম। এর আগে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ত্রিশ লাখ দেশবাসীকে হত্যা করা হয়, দুই লাখ নারী নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। আমি নিজে নিপীড়িত এবং যুদ্ধ ও হত্যার নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যুদ্ধ, হত্যা, অভ্যুত্থান ও সংঘাতের ভয়াবহতার কারণে মানুষ যে বেদনা ও যন্ত্রণা সহ্য করে তা অনুভব করতে পারি।
এ বছরের ইউএনজিএর মূল প্রতিপাদ্য, 'আস্থা পুনর্গঠন ও বিশ্বব্যাপী সংহতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা: সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্বের লক্ষ্যে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে ত্বরান্বিতকরণ পদক্ষেপ।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশন ও অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন এবং সেখানে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন সফর শেষ করে তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সেখানে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করবেন এবং অবশেষে ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন।

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে আজ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪০ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:০৩ পিএম

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি মাঠে গড়িয়েও পরিত্যক্ত হয়। সিরিজের লিড নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আজ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে স্বাগতিক বাংলাদেশ।। বৃষ্টির শঙ্কা আছে এই ম্যাচেও।
আজ সকাল থেকে তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলেও ঠিক খেলা শুরুর আগে, শুরুর সময় এবং এক ঘণ্টা পর পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা ৯০ থেকে ৮০ শতাংশ। বেলা ১টা ও দুপুর ২টায় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে ৯০ শতাংশ, আর বিকেল ৩টা নাগদ বৃষ্টির সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ। তবে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগে এবং রাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা কমে যাবে। বিকেল ৪টা ও ৫ টায় ৫০ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তারপর থেকে রাত পর্যন্ত বৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা বেশ কম, মাত্র ২০ %।
কাজেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস সত্য হলে আগামীকাল ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে যেহেতু খেলা শুরুর সময় ৮০ থেকে ৯০% বৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনার কথা বলা আছে, তাই দুপুর ২টায় মানে নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরুর সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সেক্ষেত্রে খেলা শুরু হতে হতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতে পারে। বিকেলেও বৃষ্টির হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ম্যাচ। ৫০ ওভারের ম্যাচের সম্ভাবনা বেশ কম। দুপুরের পর বিকেল থেকে বৃষ্টির তোড় কমে গেলে খেলা শুরু হতে পারে দেরি করে। তাই ৫০ ওভারের ম্যাচ না হলেও ৩৫-৪০ ওভারের খেলা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বেশ।
এই ম্যাচে টাইগাররা পাচ্ছে না তানজিম সাকিবকে। আহত হয়ে তিনি মাঠের বাইরে। তার জায়গায় ডাকা হয়েছে হাসান মাহমুদকে।
বৃষ্টির কারণে প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ার আগে নিউজিল্যান্ডের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ পেয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সৌম্য সরকার। ফিরেছেন তামিম ইকবালসহ আরও কয়েকজন। তবে টিম ম্যানেজমেন্টের আলাদা নজর রয়েছে তামিম, মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্যর ওপর।
বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকবেন ওপেনার তামিম। অবশ্য মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্যকে ফর্ম দেখিয়েই ফিরতে হবে। কিন্তু প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় তাদের ব্যাটিং দেখার সুযোগ পায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট।
৪২ ওভারের পরিত্যক্ত ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ৩৩.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩৬ রান করেছিল। দারুণ বোলিং করেন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান। ছন্দে ফিরেছেন বাঁহাতি পেসার। ৭ ওভারের স্পেলে ২৭ রানের খরচে ৩ উইকেট নেন তিনি। এ ছাড়া বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ৮ ওভারের স্পেলে ৩ মেডেন নিয়ে ২১ রানের খরচে নেন ২ উইকেট। ব্যাটিং করার সুযোগ না পেলেও মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্য বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। মাহমুদুল্লাহ ৪ ওভারে রান দিয়েছেন ২১ এবং সৌম্য ২ ওভারে রান দেন ১৩।

ডেঙ্গু পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্টেও ভয়াবহ ঝুঁকি
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৮ পিএম

রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও রাজধানীর বাইরে হাসপাতালগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর চাপ। অনেক চেষ্টা করেও এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে শয্যা সংকট। রোগী বেড়ে যাওয়ায় নাকাল হচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এসবের মধ্যেই নতুন করে আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে নেগেটিভ রিপোর্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও লক্ষণ সব ডেঙ্গুর মতোই। তাই বিষয়টি বিবেচনা করে নেগেটিভ রোগীদেরও ডেঙ্গুর ‘ট্রিটমেন্ট প্রটোকল’ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও লক্ষণ সব ডেঙ্গুর মতোই। তাই বিষয়টি বিবেচনা করে নেগেটিভ রোগীদেরও ডেঙ্গুর ‘ট্রিটমেন্ট প্রটোকল’ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, এনএস-১ অ্যান্টিজেন টেস্টে পজিটিভ আসে যদি জ্বর আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু, কেউ যদি লক্ষণ দেখা দেওয়ার চার-পাঁচ দিন পর আসেন তাহলে তাকে আমরা ডেঙ্গু আইজিএম পরীক্ষা করতে বলি। এরপর যেটা দেখা যায়, এনএস-১ নেগেটিভ আসা অনেকেরই আবার ডেঙ্গু পজিটিভ আসছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত নন- এমনটি ধরে নিয়ে বাসায় নির্বিকার থাকছেন অনেক রোগী। পরিস্থিতি খারাপ হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। করার কিছু আর থাকছে না। তারা বলেন, অনেক রোগীর এনএস-১ পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, কিন্তু ডেঙ্গু আইজিএম বা আইজিজি পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজিটিভ আসছে।
আমরা নিজেরা যেসব রোগীকে শুরুতে দেখছি, তাদের প্রত্যেককেই এনএস-১ পরীক্ষার পাশাপাশি সিবিসি বা আইজিএমণ্ডআইজিজি পরীক্ষা করাতে বলছি। এরপর ডেঙ্গু নিশ্চিত হয়ে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু, কিছু রোগী সরাসরি চিকিৎসক না দেখিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো এনএস-১ পরীক্ষা করান। সেই রিপোর্টে কোনো কারণে ডেঙ্গু পজিটিভ না এসে নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।
ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ার আরো কিছু কারণ থাকতে পারে। যেহেতু এটি আরএনএ ভাইরাস, সেহেতু এর মিউটেশন হওয়া খুব স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে মিউটেশন হয়ে যদি ভাইরাসটি তার ক্যারেক্টার চেঞ্জ করে ফেলে, তাহলেও পরীক্ষায় নেগেটিভ আসতে পারে। এমন আরো অনেক কারণ আছে, যার কারণে রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পারে। প্রয়োজনে শুধু এনএস-১ পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে হবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে কোন রোগীর কোন পরীক্ষা লাগবে, সেটি রোগীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর না করে চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখতে হবে। তাহলে কোনো সমস্যা হবে না।’
কেউ ডেঙ্গু পজিটিভ কি না, সেটি এনএস-১ টেস্টের মাধ্যমে জানা যায়। তবে, ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার শুরুর দিকেই এ পরীক্ষা করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলছে, জ্বরের প্রথম দিন থেকেই ডেঙ্গু এনএস-১ টেস্টের ফল পজিটিভ আসে। তবে, চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে হলে এটি নেগেটিভ হয়ে যায়। তাই চিকিৎসকরা সাধারণত টেস্টের ফলের সঙ্গে অন্য উপসর্গ ও লক্ষণ মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
আইজিএম বা আইজিজি পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু আরো ভালোভাবে শনাক্ত করা যায়। এ বিষয়ে সিডিসি বলছে, সাধারণত জ্বর হয়ে যাওয়ার চার থেকে পাঁচ দিন অতিবাহিত হলে এবং এর মধ্যে কোনো পরীক্ষা না করা হলে আইজিজি পরীক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে পজিটিভ কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। রক্তে আইজিজি পজিটিভ থাকলে বুঝতে হবে আগে রোগীর সংক্রমণ ছিল। শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু আছে, সেটি বোঝার জন্যও এ পরীক্ষা করা হয়। আইজিজি সূচক স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে শরীর যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি করতে অক্ষম এবং সেক্ষেত্রে সংক্রমণে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর রক্তে আইজিজি পজিটিভ থাকলে বুঝতে হবে আগে রোগীর সংক্রমণ ছিল এবং বর্তমানে সে দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত হয়েছে।
অর্থাৎ রোগী কোনো সংক্রমণের শিকার হয়েছে কি না, রক্তকণিকা স্বাভাবিক রয়েছে কি না বা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কেমন- এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝার জন্য চিকিৎসকরা এ টেস্ট দিয়ে থাকেন।