শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ | ১৩ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

‘মে দিবস’ শ্রমিক আন্দোলনের প্রেরণা

৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম আর ৮ ঘণ্টা জীবন বিকাশের জন্য বিনোদন চাই। দাবিটা ছিল স্পষ্ট আর লড়াই ছিল সরাসরি। লড়াই করেছিল শ্রমিকরা কিন্তু দাবিটা ছিল সকল মানুষের। মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য কাজ যেমন দরকারি, জীবনের ও সমাজের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য অবসরটাও তেমনি প্রয়োজন। বিশ্রাম বা অবসরের দাবিসহ ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতেই গড়ে উঠেছিল মে দিবসের রক্তাক্ত সংগ্রাম তার ১৩৭ বছর পালন করছে শ্রমিক শ্রেণি।

আন্দোলন ছাড়া অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না আর অধিকার ছাড়া মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ কথা শ্রমিকরা জীবন ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝেছে বারবার। এখনো দেখছে কি এক যন্ত্রণাময় জটিলতায় পড়েছে সারা পৃথিবী। একদিকে উন্নয়ন তুঙ্গে উঠছে অন্যদিকে শ্রমিকের জীবনের অনিশ্চয়তা তীব্র হচ্ছে। একদিকে কাজ না পাওয়া অন্যদিকে কাজ পেলেও ৮ ঘণ্টা কাজ করে মানসম্মত জীবনযাপন করা যাবে এমন মজুরি কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
মে দিবসের ইতিহাস এক গতিময় সংগ্রামের ইতিহাস। ফরাসি বিপ্লব ভেঙেছিল দীর্ঘদিনের সামন্তবাদি সমাজের স্থবিরতা। সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতার স্লোগান তুলে মানুষের চিন্তাকে উন্নত মানবিক স্তরে উন্নত করেছিল। কিন্তু জনগণের মনে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শ্রম শোষণের তীব্রতা তো কমলোই না বরং বহুগুণ বেড়ে গেল। শিল্প বিপ্লব উৎপাদন বৃদ্ধির নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে, গ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ কৃষক শিল্প কারখানায় এসেছে, সৃষ্টি হয়েছে বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের। একদিকে বেড়েছে উৎপাদন অন্যদিকে বেড়েছে শ্রমিকদের উপর কাজের চাপ। একের পর এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, নতুন যন্ত্রপাতির ব্যবহার উৎপাদনের বহুমুখী বিকাশ ঘটিয়েছে। ফলে সমাজের সমৃদ্ধি, ধনীদের বিলাসিতা বৃদ্ধি পেয়েছে পাশাপাশি শ্রমিকদের কর্ম ঘণ্টা বেড়েছে, বেড়েছে দারিদ্র্য। জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে ১৬/ ১৮ ঘণ্টা কাজ করা শুধু নয়, নারী ও শিশুদের কারখানায় পাঠাতে বাধ্য হতে লাগলো শ্রমজীবী মানুষরা। মালিকরা মুনাফা বাড়াতে শ্রম ঘণ্টা বাড়ানোর জন্য শ্রমিকদের উপর যে চাপ প্রয়োগ করতো তা শ্রমিকদের জীবন একেবারে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা সর্বত্রই তাই কর্ম ঘণ্টা কমানোর দাবি জোরদার হয়ে উঠছিল। ১৮৩২, ১৮৩৯, ১৮৪৮, ১৮৫৭, ১৮৭৫ সালে বড় বড় শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকরা তাদের দাবিতে যেমন রাজপথে নেমে এসেছিল, মালিকরাও তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সে সব আন্দোলনকে দমন করেছে। ১৮৮৬ সালে ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের দাবি তাই কোনো তাৎক্ষণিক দাবিতে গড়ে উঠা আকস্মিক আন্দোলন ছিল না। এটা ছিল দীর্ঘদিনের বঞ্চনা থেকে মুক্তির আশায় শ্রমিক শ্রেণির লড়াইয়ের অংশ। ৮ ঘণ্টা কর্ম সময়ের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে ও ৪ মে আন্দোলন এবং শ্রমিক নেতাদের ফাঁসির ঘটনায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ভয় না পেয়ে শ্রমিকরা আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠে। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ইন্টারন্যাশনাল সোশালিস্ট কংগ্রেস ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। ১৯১৯ সালে আইএল ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবস ও ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ঘোষণা করা হয়।

শ্রমিক এবং শ্রমশক্তির গুরুত্ব কি তা সমাজের চারদিকে তাকালেই বুঝতে অসুবিধা হয় না। প্রকৃতিতে যা আছে তা দিয়ে অন্য প্রাণীর চললেও মানুষের চলে না । তাই সে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বস্তুর উপর শ্রম প্রয়োগ করেই তার প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করে । শ্রমশক্তি প্রয়োগ করা থেকেই শ্রমিক নামের উৎপত্তি। শ্রমিক কাজ করে একই সঙ্গে নিজের ও সমাজের জন্য। মানুষ যা খায়, যা পরে, তার বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এমনকি মানুষের ভাষাও শ্রমের মাধ্যমে এবং শ্রমের প্রয়োজনে সৃষ্ট। শ্রমের ফলে মানুষ শুধু নিজের প্রয়োজন মেটায় না, উদ্বৃত্ত সৃষ্টি করে । এই উদ্বৃত্ত আত্মসাৎ করার ফলেই একদল সম্পদশালী হয় আর বাকিরা নিঃস্ব হয়। অর্থনীতিবিদরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন কেন এই ঘটনা ঘটে? উইলিয়াম পেটি, অ্যাডাম স্মিথ, রিকারডো দেখিয়েছেন শ্রমের ফলে মুল্য তৈরি হয় পরবর্তীতে কার্ল মাক্স দেখালেন কীভাবে উদ্বৃত্ত মূল্য তৈরি হয়। ১৮৪৮ সালে মার্ক্স- এঙ্গেলস কম্যুনিস্ট মেনিফেসটো আর পরবর্তীতে মার্ক্স ক্যাপিটাল লিখে দেখালেন এ যাবত কালের লিখিত ইতিহাস একদিকে যেমন শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস অন্যদিকে মানুষের বিকাশের ইতিহাস। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ, শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ যা ঘটেছে শ্রমের ফলে তা থেকে কি বঞ্চিত হবে শ্রমজীবী মানুষ? জীবিকার জন্য দিনের ১২/১৪/১৬ ঘণ্টা যদি হাড় ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় তাহলে শ্রমজীবী মানুষ কিভাবে তাদের জ্ঞান ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে। আর বিপুল সংখ্যক মানুষকে বঞ্চিত রেখে সমাজের সুষম বিকাশ কি সম্ভব হবে? যন্ত্রের বিকাশ কি মানুষের শ্রম সময় লাঘব করবে না? কতক্ষণ কাজ করলে একজন মানুষ তার জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে পারে? এ সব প্রশ্নের উত্তর পেতে গিয়ে শ্রমজীবী মানুষের দাবি উচ্চারিত হয়েছিল ৮ ঘণ্টা কাজ, এটাই হবে কর্ম সময়। কিন্তু মজুরি যদি ন্যায্য না হয় তাহলে জীবন-যাপনের জন্য শ্রমিকদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য হতেই হবে। শ্রমিক শ্রেণি এটাও দেখছে যে যত গণতন্ত্রের কথা বলা হোক না কেন শোষণমূলক ব্যবস্থা বহাল রেখে ৮ ঘণ্টা কর্ম সময় এবং ন্যায্য মজুরি আদায় করা সম্ভব নয়।

শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রম শোষণ যে বন্ধ হয় না বরং নতুন নতুন পদ্ধতিতে শ্রমিককে শোষণ করতে থাকে তা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বাজার সংকট, বাজার দখল করতে বিশ্বযুদ্ধ ও আঞ্চলিক যুদ্ধ, আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো সবই তো বিশ্ববাসী দেখছে। ফলাফল হিসেবে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে বিপুল সম্পদের পাহাড় জমছে। ৮ জন অতি ধনীর হাতে বিশ্বের অর্ধেক মানুষের সম্পদের সমান সম্পদ দেখলে বুঝতে অসুবিধা হয় না শোষণ কত আন্তর্জাতিক রূপ নিয়েছে। আফ্রিকার কয়লা, লোহা, মধ্যপ্রাচ্যের তেল, ল্যাতিন আমেরিকার কফি আর এশিয়ার শ্রমিক সবই তো শোষণ লুণ্ঠনের জালে আবদ্ধ। করোনা মহামারির সংক্রমণ আর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নামে রোবট নির্ভর শিল্প, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সবই বৈষম্যকে প্রকট করে তুলছে। অল্প শ্রমিক দিয়ে অধিক উৎপাদনের নতুন নতুন পদ্ধতি শুধু বেকারত্ব বাড়াচ্ছে না, ক্রয় ক্ষমতাও কমিয়ে দিচ্ছে। বিপুল বিনিয়োগ, তীব্র বেকারত্ব, যাদের কাজ আছে তাদের দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, বিশাল বৈষম্য আজ বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলছে। এর মধ্যে আবার যুক্ত হয়েছে যুদ্ধের দামামা।

বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। ৭ কোটি ৩৪ লাখ শ্রমজীবীদের দেশ। করোনা মহামারির পর বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। এখন আবার যুদ্ধের বলি হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ, দ্রব্যমুল্যের কষাঘাতে জর্জরিত হচ্ছে শ্রমজীবীরাই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নামে যে নতুন শ্রম পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে তাতে উৎপাদন বাড়বে বিপুল কিন্তু এর ফলে বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়বে পাল্লা দিয়ে। আউট সোরসিং এর নামে চাকুরির নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্ব হারাচ্ছে শ্রমজীবীরা এবং প্লাটফর্ম ইকনমি ও গিগ ইকনমি নামক নতুন ধরনের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে কর্মক্ষেত্রে আর শ্রমিকদের জীবনে নেমে আসছে অনিশ্চয়তা। অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজের ধরন ও শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, ফলে দেশের ৪৩ সেক্টরের মজুরি বোর্ড দিয়ে সকল শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। নতুন নতুন যে সব কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে শ্রম আইন ও বিধি দ্বারা সেসব খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মে দিবসের চেতনায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, গিগ ইকনমি, প্লাটফর্ম ইকনমির যুগে শ্রমিকের কাজের নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা, কর্ম সময় আর ন্যায্য মজুরির আন্দোলন গড়ে তোলা আরও অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।

রাজেকুজ্জামান রতন: সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)

আরএ/

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা চায় ইউক্রেন

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে সংগৃহীত গম বাংলাদেশে আমদানি হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করতে যাচ্ছে ইউক্রেন। একই সঙ্গে এই গম আমদানিতে জড়িত বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বানও জানাবে দেশটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের ভারতস্থ রাষ্ট্রদূত ওলেক্সান্ডার পোলিশচুক জানান, বাংলাদেশ সরকারকে বারবার সতর্ক করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি। তার ভাষায়, "আমরা একাধিকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো জবাব পাইনি। ফলে এখন বিষয়টি ইইউতে তোলা হবে।"

রাষ্ট্রদূতের দাবি, রাশিয়ার কিছু কোম্পানি ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চল থেকে শস্য সংগ্রহ করে তা রাশিয়ার উৎপাদিত গমের সঙ্গে মিশিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করছে—যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেআইনি এবং 'অর্থনৈতিক লুটপাটের' শামিল।

রয়টার্সের হাতে থাকা নথিতে বলা হয়, ইউক্রেনের নয়াদিল্লি দূতাবাস এ বছর বাংলাদেশ সরকারের কাছে একাধিক চিঠিতে ১.৫ লাখ টনের বেশি ‘চুরি করা গম’ রপ্তানির বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ার কফকাজ বন্দর থেকে এই গমগুলো আমদানি করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল কৃষিভূমি ও ক্রিমিয়া দখল করার পর থেকেই ‘চুরি করা গম’ রপ্তানির অভিযোগ করে আসছে কিয়েভ। ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। তবে রাশিয়ার দাবি, ওই অঞ্চল এখন তাদের ভূখণ্ড এবং সেখানকার শস্য রপ্তানি বৈধ।

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে রয়টার্সকে কোনো মন্তব্য দেয়নি। তবে বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বাংলাদেশ কখনোই চুরি করা গম আমদানি করে না। রাশিয়ার অধিকৃত কোনো এলাকা থেকে গম আনার প্রশ্নই ওঠে না।”

Header Ad
Header Ad

খিলক্ষেতে মণ্ডপ সরানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় একটি অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ অপসারণ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার (২৭ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় একটি দুর্গা মন্দির ধ্বংসের অভিযোগে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

তবে প্রকৃত ঘটনা হলো- গত বছর দুর্গাপূজার সময় পূর্বানুমতি ছাড়াই স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন একটি জমিতে অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ স্থাপন করেছিল। পরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ শর্তে অনুমতি দেয় যে পূজা উদযাপন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়োজকরা অস্থায়ী মণ্ডপটি সরিয়ে ফেলবেন। তবে দুঃখের বিষয় হলো, ২০২৪ সালের অক্টোবরে পূজা শেষ হওয়ার পর আয়োজকরা পারস্পরিক শর্ত লঙ্ঘন করে অস্থায়ী মণ্ডপটি সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা সেখানে একটি ‘মহাকালী’ (কালী মূর্তি) স্থাপন করে।

বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পরেও দুর্ভাগ্যবশত তারা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে উপেক্ষা করে মণ্ডপটিকে স্থায়ী করার উদ্যোগ নেয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, মণ্ডপের আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন রেললাইনের উভয় পাশে অবৈধভাবে নির্মিত শত শত দোকান এবং রাজনৈতিক দলের অফিসসহ সমস্ত অননুমোদিত স্থাপনা অপসারণের জন্য একটি পাবলিক বিজ্ঞপ্তি জারি করে। মূলত বিদ্যমান রেললাইনের পূর্ব দিক থেকে ২০০ ফুট দূরে কেবল বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ সেকশন ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের আওতায় আরও দুইটি রেল ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে এবং এ প্রকল্পের আওতায় নতুন লাইন সম্পন্ন করার জন্য এ জমির খুব প্রয়োজন ছিল।

বিগত মাসগুলোতে অবৈধ ভূমি দখলকারীদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলেও তা উপেক্ষা করা হয়। গত ২৪ ও ২৫ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ে অবশেষে সবাইকে সমস্ত অননুমোদিত স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেয়, যার মধ্যে পূজা আয়োজকদের অস্থায়ীভাবে নির্মিত মণ্ডপটি অপসারণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। অবশেষে ২৬ জুন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে খিলক্ষেত এলাকার রেল ট্র্যাক বরাবর সমস্ত অননুমোদিত স্থাপনা শান্তিপূর্ণভাবে উচ্ছেদ করে। উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলাকালীন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে যথাযথ শ্রদ্ধার সঙ্গে অস্থায়ী মণ্ডপের প্রতিমা নিকটবর্তী বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। সরকারি জমি পুনরুদ্ধারের জন্য অননুমোদিত স্থাপনা অপসারণ একটি নিয়মিত এবং আইনসম্মত প্রশাসনিক কার্যক্রম।

যদিও দেশের আইন অনুসারে নির্মিত কোনো ধর্মীয় স্থাপনার সঙ্গে বৈষম্য না করে সমস্ত উপাসনালয়ের পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করে। তবুও কোনো পরিস্থিতিতেই সরকারি জমি দখল করে কোনো ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করা অনুমোদিত নয়। অস্থায়ী মণ্ডপের আয়োজকরা তাদের নিজস্ব অঙ্গীকার লঙ্ঘন করে রেল কর্তৃপক্ষের আস্থা এবং সদিচ্ছাকে স্পষ্টতই কাজে লাগিয়েছেন।

বাংলাদেশ সব সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে রয়েছে উপাসনালয়ের সুরক্ষা। বাংলাদেশকে তার সমন্বিত ঐতিহ্য বজায় রাখতে কখনও বাধা দেয়নি যেখানে প্রতিটি নাগরিক তার বিশ্বাস বা বিশ্বাস নির্বিশেষে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উন্মুক্ত সমাজে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারে। বাংলাদেশ সবাইকে তথ্য এবং বাস্তবতা উপেক্ষা করে কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

Header Ad
Header Ad

কুমারখালীতে এনসিপির পদ পেলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সমালোচনার ঝড়

আসাদুজ্জামান আলী। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উপজেলা সমন্বয় কমিটিতে যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আসাদুজ্জামান আলী নামে এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। এনসিপির এ পদে একজন প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতার অন্তর্ভুক্তিকে ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক ও সমালোচনা।

গত ২১ জুন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কুমারখালী উপজেলা শাখার ১২ সদস্যের সমন্বয় কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষর করেন। এই কমিটিতেই আসাদুজ্জামান আলীকে যুগ্ম সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আসাদুজ্জামান আলী কুমারখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং এক সময় কুমারখালী পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমারখালী শাখার সদস্য সচিবের দায়িত্বও পালন করেন। তবে নানা অভিযোগে তাকে সেখান থেকেও বহিষ্কার করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আলী ছাত্রলীগে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সময় প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি, মামলা ও ঘুষ বাণিজ্য, সেল্টার বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। এমনকি তার বাবা আবদুর সামাদ পাখির বিরুদ্ধেও অনিয়ম ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আছে।

২০২৪ সালের মার্চ মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়া জেলা শাখার পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নীতি বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আলীকে পদচ্যুত করা হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে এনসিপির কমিটিতে আলীর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের বক্তব্য, অতীতের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড জানা সত্ত্বেও কীভাবে একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এনসিপির মতো একটি দলে নেতৃত্বের জায়গা পেলেন, তা নিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জবাবদিহি প্রয়োজন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আসাদুজ্জামান আলী খান। তিনি বলেন, “আমি আন্দোলনে জীবনবাজি রেখে সক্রিয় ছিলাম। সরকার পতনের আন্দোলনে মাঠে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক।”

তিনি আরও দাবি করেন, প্রতিপক্ষের লোকজন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে চাইছে। “আমার বিরুদ্ধে কেউ কোনো অপকর্ম প্রমাণ করতে পারলে আমি কুমারখালী ছেড়ে চলে যাব,” বলেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা চায় ইউক্রেন
খিলক্ষেতে মণ্ডপ সরানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
কুমারখালীতে এনসিপির পদ পেলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সমালোচনার ঝড়
দেশে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১০ জন
১১ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উইন্ডিজ ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে
গাজায় হামাসের হামলায় ৩ দিনে ১৫ ইসরায়েলি সেনা নিহত
বেনাপোল বন্দরে কাগজপত্রবিহীন প্রায় ২ কোটি টাকার নিষিদ্ধ পণ্য জব্দ
ডেঙ্গুতে আরও দুজনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৫৯
ব্যবসায়ীকে দাড়ি ধরে টানা হেঁচড়া-মারধরের ঘটনায় আসামি নাসিম গ্রেপ্তার
অভিমান ভুলে বুকে জড়িয়ে নিলেন রিয়া মনি, হিরো আলমকে নিয়ে ছুটলেন ঢাকায়
এক মিনিট আগেও অফিস ছাড়তে পারবেন না সরকারি চাকরিজীবীরা
প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে জীবন দিলেন কলেজছাত্রী
সাবেক সিইসি নূরুল হুদা আরও ৪ দিনের রিমান্ডে
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেল বাস, নিহত ১
খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল: স্বীকার করলেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী
জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশি আটক
বন্ধুর বাড়িতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে হিরো আলমের আত্মহত্যার চেষ্টা
বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনায় ভারত প্রস্তুত: রণধীর জয়সওয়ালম  
সুন্দর বিশ্ব তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ: ড. ইউনূস
উড্ডয়নের পর ইঞ্জিনে ত্রুটি, ঢাকায় ফিরল বিমানের ফ্লাইট