ইবনে সিনা হাসপাতালে রাশিয়ান কিশোরীর শ্লীলতাহানি, ওয়ার্ডবয় গ্রেফতার
ঢাকাপ্রকাশ ফাইল ।
রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রাশিয়ান কিশোরী শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, ওই রাশিয়ান কিশোরীর রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা। তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই ঘটনা ঘটে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় হাসপাতালের একজন স্টাফ আবুল কাশেমকে আসামি করা হয়েছে। তাকে ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের ডিসি জসিম উদ্দিন।
মামলার এজাহারে জানানো হয়, রুশ কিশোরীর ডান হাতের বগলের নিচে একটি ফোঁড়ার অস্ত্রোপচারের জন্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টায় কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওই নারী রুশ কর্মকর্তা।
এজাহারে নারী রুশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সেখানে ডাক্তারের পরামর্শ মতে আমার মেয়েকে ভর্তি করা হয়। ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এলেন এবং তার সাথে নীল ইউনিফর্ম পরা আবুল কাশেম ছিলেন। ডাক্তার আমার মেয়ে পলিনা কে ফোঁড়া দেখাতে বললেন। ফোঁড়াটি যেহেতু সংবেদনশীল জায়গার কাছাকাছি ছিল তাই আমার মেয়ে বিব্রতবোধ করছিল জায়গাটি উন্মুক্ত করতে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, কর্তব্যরত ডাক্তার বাংলায় তারপাশে থাকা নীল গাউন পরা ব্যক্তিকে (আবুল কাশেম) একজন নার্সকে ডাকতে নির্দেশ দিলেন।’
নার্স আসার পর রুশ কিশোরী তার ক্ষতস্থান দেখায়। এজাহারে বলা হয়েছে, সেই সময় নীল গাউন পরা ব্যক্তিটি (কাশেম) ঘর থেকে বের না হয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।
এজাহারে নারী রুশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তখন কর্তব্যরত ডাক্তার কিংবা নার্স কেউই তাকে (কাশেম) রুম থেকে বের হতে নির্দেশ দেয়নি। এরপর ডাক্তার আমাকে বললেন যে তিনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে যাচ্ছেন এবং তখন উপস্থিত সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। প্রায় ১০ মিনিট পর ওই নীল গাউন পরিহিত ব্যক্তিটি (কাশেম) একা ফিরে আসেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ডাক্তার জিজ্ঞাসা করেছেন পলিনার আগে ফোঁড়া ছিল কি না। আমি উত্তর দিলাম যে 'হ্যাঁ', এবং তখন তিনি সেটা ঠিক কোথায় সেটা দেখাতে বললেন। পলিনাকে আবার তখন কাপড় খুলতে হয়েছিল এবং স্বভাবতই তার প্রাইভেট পার্ট সামান্য উন্মুক্ত ছিল।’
এজাহারে বলা হয়, পরে আবারও কাশেম ফিরে আসেন এবং ফোঁড়ার স্থানে মলম লাগানোর কথা বলেন। পরে রাত প্রায় ৩টায় তিনি আবারও ফিরে আসেন। এ সময় জানান, ফোঁড়ার স্থান মুছে দেন। এ সময় কাশেম কিশোরীর শরীরের স্পর্শকাতর অংশে স্পর্শ করেন বলেও অভিযোগ করা হয় এজাহারে। সেই সময় চলে গেলেও আবারও ভোরে ফিরে আসেন কাশেম।
এজাহারে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু তিনি অস্ত্রোপচারের অনুরূপ ইউনিফর্মে ছিলেন, একজন ডাক্তারের সাথে এসেছিলেন এবং পরে রোগ নির্ণয়ের সাথে সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমরা সেই মুহুর্তে অনুমান করতে পারিনি যে তিনি আসলে একজন চিকিৎসা কর্মী নন। এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনি আবার মশার স্প্রে নিয়ে আসেন এবং তিনি আমাদের পানি লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করেন। তাকে আমার সন্দেহ হচ্ছিলো কারণ মেডিকেল স্টাফরা এই জাতীয় কাজ করে না। আমি তাকে চলে যেতে বললাম, আমরা তার ক্রমাগত উপস্থিতিতে অত্যন্ত ক্লান্ত এবং বিরক্ত ছিলাম।’
রুশ নারী কর্মকর্তা এজাহারে আরও বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৬টায়, ঐ ব্যক্তি (কাশেম) আমাদের ঘুম থেকে তুলে বললেন যে আমাদের ফোঁড়ার চিকিৎসা করা দরকার। তার হাতে শুধু অ্যালকোহল প্যাড ছিল। গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে, তিনি আমাকে বারান্দায় যেতে বললেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি থাকলে তার চিকিৎসা কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। তাকে অদ্ভুত ও নার্ভাস লাগছিল এবং তারপর আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছিলাম। তখন আমি জোরে জোরে বললাম তাকে বের হয়ে যেতে এবং এখানে যাতে সে না আসে। আমি তাকে জোরে চিৎকার করে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে চাইলে তিনি আমার হাত ধরতে শুরু করলেন, "দুঃখিত এবং "না, না, না" বলে চিৎকার করলেন। তিনি আমার হাত এত জোরে চেপে ধরলেন যে এটি একটি ক্ষত রেখে গেছে। আমি তাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে জোরে জোরে ইংরেজিতে বলেছিলাম আর কখনো এখানে আসবেন না।’
এ ঘটনার পরে ইবনে সিনা মেডিকেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা রুশ নারী কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন বলে জানানো হয়েছে এজাহারে। পরে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে অন্য আরেকটি হাসপাতালে চলে যান।