রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ | ১৫ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ফিরে পড়া ছোটবেলার বই

বই আমার প্রিয়তম শেষ আশ্রয়, জগৎ যখন শূন্য হয়ে যায় তখনও তার বুক থাকে পূর্ণ।

বয়সে বড় হয়ে গেলেও, কিংবা বয়স বেড়ে গেছে বলেই হয়তো এখনো আমি ছোটদের বই পড়ি। ছোটদের বই মানে ছোটদের জন্য লেখা বই, যদিও ওগুলো আদৌ ছোটদের জন্য লেখা কি না, নাকি বড়দের জন্যই, সে প্রশ্ন জাগে মনে মাঝে-মধ্যেই। কারণ এসব বইয়ে এমন কিছু বিষয় থাকে, যা বড়দেরই বোঝার কথা, ছোটদের নয়। অবশ্য কথাটা এভাবে বলাও যায় না, বড়রা ছোটদের চেয়ে বেশি বোঝে এমন কোনো প্রমাণ আসলে নেই। ছোটদের জগৎটা আলাদা, তাদের বোঝা-পড়ার ধরন আলাদা, আলাদা মানে তো এই নয় যে, তারা কম বোঝে! বরং ব্যাপারটা এইরকম যে, তারা একভাবে বোঝে, বড়রা অন্যভাবে।

ছোটরা বোঝাপড়ার জন্য নিজেদের কল্পনার রং অবাধে মিশিয়ে নেয়, বড়দের কল্পনার জগৎ যেহেতু বাস্তবতার আঘাতে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু ও ক্ষুদ্র হয়ে আসে তাই তারা ততটা রং মেশাতে পারে না। যেমন, ধরা যাক, ছোটদের একটা উপন্যাস ছোট্ট রাজপুত্র’র কথা, যেটি লিখেছিলেন অঁতোয়ান দ্য স্যাঁৎ-একজ্যুপেরি (Antoine de Saint-Exupéry), আজ থেকে প্রায় আশি বছর আগে। এই উপন্যাসে ভিন্ন এক গ্রহ বা গ্রহাণু থেকে ছোট্ট এক রাজপুত্র আসে পৃথিবী ভ্রমণে, তার আগে সে বেড়িয়ে আসে আরো কয়েকটি ছোট ছোট গ্রহ থেকে যেগুলোতে মাত্র একজন করে লোকের বাস। উপন্যাসে ফুল কথা বলে, সাপ কথা বলে, শেয়াল কথা বলে; মোট কথা মানুষ ছাড়াও প্রাণীজগৎ ও জড়জগতের নানা সদস্য কথা বলে। ওই রাজপুত্র অবলীলায় তাদের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যায় যেন এটা নিতান্তই মামুলি ব্যাপার। আমরা, মানে বড়রা, যখন ওটা পড়ি তখন মনে হয়, এ নিছক রূপকথা, ওগুলো কি আর সত্যিই কথা বলতে পারে? কিন্তু একজন ক্ষুদে পাঠক কখনো ভাববে না যে, ওরা কথা বলতে পারে না, বরং ভেবে নেবে সত্যিই ওদের ভাষা আছে। ফলে তাদের বোঝার ধরন যে আমাদের চেয়ে অন্যরকম হবে তাতে আর সন্দেহ কী? একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, শিশুরা অনবরত বস্তুজগতের নানান জিনিসের সঙ্গে কথা বলে চলে, বিশেষ করে তাদের খেলনাদের সঙ্গে। কখনো আমার এরকম মনে হয়, ওগুলো কি তাদের ভাষা বোঝে? নইলে এরকম একতরফা আলাপ কতক্ষণ চালিয়ে যাওয়া যায়?

যা বলছিলাম সেই প্রসঙ্গে ফিরি। আমি ছোটদের জন্য লেখা বইগুলো এখনো পড়ি। বলাইবাহুল্য যে, আনন্দ পাওয়ার জন্যই পড়ি, পাইও, প্রভূত আনন্দ পাই, কিন্তু সঙ্গে আরো কিছু পাই। লক্ষ করে দেখি, ছোটবেলায় এই বইটি বা এরকম কোনো বই পড়ে যা মনে হয়েছিল, এখন অন্যরকম মনে হচ্ছে। এই বইয়ের ব্যাখ্যা আমার কাছে পাল্টে যাচ্ছে। এই যে ভিন্ন অর্থ নিয়ে বহুকাল পরে একটি লেখা নতুনরূপে ধরা দেয়, এটাই হলো লেখকের শক্তিমত্তা। এও মনে হয় যে, ছোটদের জন্য যারা লেখেন, তারাই জগতের সবচেয়ে শক্তিমান শিল্পী। কারণ, তাকে ছোটদের মন বুঝতে হয়, ছোটদের ভাষা বুঝতে হয়, ছোটদের কল্পনা বুঝতে হয়, যদিও তিনি নিজে বড় হয়ে গেছেন এবং সম্ভবত ছোটদের মনটি হারিয়ে ফেলেছেন। সত্যিই কি হারিয়েছেন? পড়তে গেলে মনে হয়, তার আসলে দুটো মন, একটি শিশুদের মতো সরল ও কল্পনার রঙে রাঙানো, অন্যটি বড়দের মতো বিদঘুটে।

কোনো-কোনো সময় নতুন কোনো বই পড়তে ইচ্ছে করে না। হয়তো নতুন এক জগৎ ওই বইয়ের ভেতরে অপেক্ষা করে আছে, নতুন কোনো উপলব্ধি, ইঙ্গিত বা ইশারার সঙ্গে হয়তো দেখা হয়ে যাবে ওই বইটি পড়লে, তবু ইচ্ছে করে না। নতুন বইয়ের গন্ধে লোভ সামলাতে না পেরে ভেতরে ঢুকে প্রতারিত হবার অভিজ্ঞতাও তো কম নয়! হয়তো খুব নামিদামি স্বাস্থ্যবান কোনো বই পড়তে পড়তে শেষ পৃষ্ঠায় গিয়ে মনে হয়েছে–যতটা সময় ব্যয় করলাম তা অপচয়ই হয়ে গেল। আবার কোনো কোনো বই পড়তেই পারিনি, মানে পাঠযোগ্যই মনে হয়নি। এরকম অর্ধপঠিত বইয়ের সংখ্যাও কম নয়। তাই নানা কারণে মন যখন বিমূঢ় হয়ে থাকে, কিংবা বিষণ্ন, কিংবা অস্থিরতায় ভুগি, হতবাক হয়ে থাকি কোনো কারণে, তখন নতুন কোনো বই হাতে তুলে নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। তখন ভালো লাগে পুরনো কোনো প্রিয় বই পড়তে। একজন পাঠক যখন তার পঠিত একটি বই আবার তুলে নেন হাতে, পড়ার জন্য, বুঝে নিতে হয়–ওই বইয়ের ভেতরে এমনকিছু আছে যা তাকে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। ওই ধরনের বই পড়লে হৃদয় এক অনির্বচনীয় অনুভূতিতে ভরে ওঠে, কোমল আর মায়াময় হয়ে ওঠে মন, মানুষকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, জীবন ও পৃথিবীর দিকে নতুন চোখে তাকাতে ইচ্ছে করে, জগৎকে আরো বেশি বাসযোগ্য মনে হয়। এ এক অপ্রকাশযোগ্য অনুভূতি। একে কেবল আধ্যাত্মিক অনুভূতির সঙ্গে তুলনা করা চলে। কিন্তু মুশকিল হলো- এই বইগুলো ইতিমধ্যেই কয়েকবার পড়া হয়ে গেছে আমার। নানা সময়ে ফিরে ফিরে গেছি তাদের কাছে, ফলে এতটাই পরিচিত তারা যে, কোন পৃষ্ঠায় কী আছে তাও যেন চোখের সামনে ভাসে। আমার সংগ্রহে যে বইগুলো আছে তার মধ্যে ওরকম প্রিয় বইয়ের সংখ্যা কম নয়। আমি যখন ঘুরে ঘুরে ওগুলো দেখতে থাকি, ভাবি হাতে তুলে নেবো কি না, তখন যেন দেখতে পাই কোথাও কোথাও উজ্জ্বল সব পঙক্তি আবেদনময়ীর ভঙ্গিতে শুয়ে আছে বইটির অমুক পাতায়, কোথাও বা বিষণ্ন কোনো পঙক্তি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে ওইখানে, কোথাও-বা রাগী কোনো পঙক্তি চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। পঙক্তিগুলো যেন রক্তমাংসের মানুষ একেকটা, অনুভূতিময়, প্রকাশোন্মুখ। হ্যাঁ এভাবেই বই পড়ি আমি। এতটা গভীর ভালোবেসে। বই আমার প্রিয়তম শেষ আশ্রয়, জগৎ যখন শূন্য হয়ে যায় তখনও তার বুক থাকে পূর্ণ।

ছোটবেলা থেকে বাছবিচারহীনভাবে বই পড়েছি অনেকগুলো বছর, এবং এভাবে পড়ার একটা সুবিধা পাচ্ছি এই মধ্যবয়সে এসে। পড়তে পড়তে একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হয়ে যায় নিজের অজান্তেই, এরপর যে-কোনো লেখা আর পড়ার দায় থাকে না, কোনো-কোনোটি দু-চারপাতা পড়েই রেখে দেয়া যায়। অবশ্য এটা ভালো না খারাপ তা বলা মুশকিল, কিন্তু এ-কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়–এই স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হওয়ার জন্য যে পরিমাণ পড়তে হয় তাতে ওই রেখে দেয়ার অধিকার জন্মে যায় একজন পাঠকের। এবং আরেকটি ব্যাপারও ঘটে, এই যে স্ট্যান্ডার্ড, সেখানে দু-একজন লেখক দাঁড়িয়ে যান, যাঁদেরকে নির্দ্বিধায় পড়া যায়, বারবার ফিরে ফিরে পড়া যায। এই লেখকদের প্রায় সবাই প্রিয় লেখকে পরিণত হন। তার মানে এই নয় যে, এঁদের বাইরে আর কোনো প্রিয় লেখক নেই বা থাকেন না, কিন্তু ওই ফিরে ফিরে পড়ার ব্যাপারটা সবার ক্ষেত্রে ঘটে না। একজন পাঠক যখন তার পঠিত একটি বই আবার তুলে নেন হাতে, পড়ার জন্য, বুঝে নিতে হয়, ওই বইয়ের ভেতরে এমনকিছু আছে যা তাকে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে।

কিন্তু কেনইবা পুরনো বই ফিরে ফিরে পড়ি বারবার? হয়তো হাজারটা কারণ বলা যায় এ প্রশ্নের উত্তরে, কিংবা কিছু নাও বলা যায়, পড়তে ভালো লাগে, পড়তে ইচ্ছে করে এই কি যথেষ্ট নয়?

যখন আমার মন খারাপ থাকে বা বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে সমস্ত চিন্তা এবং কল্পনা তখন আমি যে বইগুলো পড়ি সেগুলোর প্রায় সবই ছোটদের বই। যেমন ঠাকুরমার ঝুলি কিংবা রুশদেশের উপকথা’র মতো রূপকথার বই। সুকুমার রায় কিংবা শিবরাম চক্রবর্তীর অতি-অসম্ভব আর অদ্ভুত সুন্দর লেখাগুলো। পেটার বিকসেলের গল্পগুলো। তবে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার পড়া বইটি হলো অঁতোয়ান দ্য স্যাঁৎ-একজ্যুপেরির অনবদ্য উপন্যাস লিটল প্রিন্স বা ছোট্ট রাজপুত্র।

‘ঠাকুরমার ঝুলি’র সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল একেবারে ছোটবেলায়। সেই তখন থেকে শুরু করে কতবার যে পড়া হলো সেটি, ইয়ত্তা নেই। এখনো বাচ্চাদের মতো আনন্দ পাই গল্পগুলো পড়ে। বাস্তবতারিক্ত অধিবাস্তবতা আর জাদুবাস্তবতার কী অসম্ভব সুন্দর আর রঙিন এক জগৎই না নির্মাণ করেছিলেন আমাদের পূর্বসুরিরা, কেবল মুখে মুখে গল্প বলার জন্য! এরপর কী করে যেন পেয়ে গিয়েছিলাম ‘রুশদেশের উপকথা’ নামক এক অপূর্ব-সুন্দর বই। প্রথম দর্শনেই ভালো লেগে গিয়েছিল বইটি। কী সুন্দর কাগজ, ঝকঝকে ছাপা, গল্পের সঙ্গে সুন্দর সুন্দর কত ছবি, ভালো না লেগে উপায় আছে? এর আগে কখনো এমন বই তো দেখিইনি! কীভাবে সেটা বাড়ি পর্যন্ত এসেছিল, কে এনে দিয়েছিলেন, তা আর মনে পড়ে না। তবে বইটি পাওয়ার পর নাওয়া-খাওয়া ভোলার মতো অবস্থা হলো আমার। ওটাও রূপকথার বই, তবে মানুষগুলো একেবারেই অচেনা। যে বরফঢাকা দেশটির গল্প ওটাতে ছিল, সেটিও অচেনা। ঠাকুরমার ঝুলি পড়তে গিয়ে যেমন কাউকে কাউকে প্রায় চেনা মানুষের আদলে ভাবতে পেরেছি, এই বই থেকে তা পারা যাচ্ছে না। এই অচেনা মানুষগুলো কী কী করছে সেই কৌত‚হলে আমি প্রায় উত্তেজনায় কাঁপছি। বলাইবাহুল্য, মানুষগুলো অচেনা হলেও তারা যে সত্যি মানুষ তা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহই ছিল না। ঠাকুরমার ঝুলির সব মানুষকেও সত্যি বলে মনে হতো আমার। এবং রূপকথায় যেমনটি থাকে, মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাণীরা–এমনকি বৃক্ষরাও–কথাটথা বলতে পারে, আমার সেটাকেও সত্যি বলেই মনে হতো। তো, ওই রুশদেশের উপকথার ইভান নামের রাজপুত্রটিই আমার ছোটবেলার নায়ক হয়ে ওঠে। আমার প্রথম নায়ক। বলাইবাহুল্য, ইভানের সঙ্গে আমার কোনো মিলই ছিল না, নিজেকে ইভানের জায়গায় কল্পনা করাও ছিল অসম্ভব। কারণ ওই বরফের দেশে, স্লেজগাড়ির দেশে যা যা ঘটে তা আমার দূর কল্পনাতেও ধরা পড়তো না। তবু ইভানকে এত ভালো লেগেছিল কেন? কেন বারবার পড়েছিলাম ইভানের গল্পগুলো? মনে পড়ে না।

সত্যি বলতে কি, রুশদেশের উপকথা পড়ার পর, বিশেষ করে ইভানের সঙ্গে পরিচয় হবার পর, অন্য কোনো রূপকথার বই আমার আর ভালো লাগেনি। অন্য বই যে পড়তাম না তা নয়, তবে বারবার ফিরে যেতাম ওই বইটির কাছে। পড়তাম, পড়তে পড়তে কল্পনায় নিজেকে রাঙিয়ে নিতে চেষ্টা করতাম, আমার নায়ক রাজপুত্র ইভানের সঙ্গে স্লেজগাড়িতে চড়ে হারিয়ে যেতাম বরফ-ঢাকা দেশটির দূর কোনো অচেনা প্রান্তরে। এই কল্পনায় ভরা রূপকথার জগৎটি নিয়ে আমি ভালোই ছিলাম, আনন্দে ছিলাম। এখনো গল্পগুলো পড়লে ছোটবেলার সেই আনন্দের স্মৃতি ফিরে আসে আমার।

আরো কত বইয়ের কথা বলা হলো না! বলবো কখনো, অন্য কোথাও, অন্য কোনো সময়ে।

 

লেখক: কথা সাহিত্যিক

 

 

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স: জানুন কীভাবে পাওয়া যায় অস্ত্র রাখার অনুমতি

ছবি: এআই

সম্প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম-কানুন ও লাইসেন্স পদ্ধতি নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যক্তিগত বা আত্মরক্ষার জন্য বৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র কেনা, রাখা ও ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যা মূলত ১৮৭৮ সালের 'Arms Act' এবং ১৯২৪ সালের 'Arms Rules' আইনের আওতায় পরিচালিত হয়।

কারা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন?

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু নির্ধারিত মানদণ্ড রয়েছে। নিচে উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো তুলে ধরা হলো—

আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক হতে হবে।

আত্মরক্ষার জন্য জীবনহানির আশঙ্কা থাকলে কেবলমাত্র আবেদন করা যাবে।

শর্ট ব্যারেল অস্ত্রের জন্য কমপক্ষে ৩০ বছর বয়স হতে হবে, লং ব্যারেল অস্ত্রের জন্য কমপক্ষে ২৫ বছর বয়স হতে হবে এবং সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭০ বছর।

আবেদনকারীকে অবশ্যই আয়কর দাতা হতে হবে এবং বছরে ন্যূনতম দুই লক্ষ টাকা আয়কর প্রদান করতে হবে।

অনুমোদন পাওয়ার পর দেশীয় কোনো বৈধ অস্ত্র ডিলারের কাছ থেকে বা আমদানি করে অস্ত্র সংগ্রহ করা যাবে।

একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

কীভাবে আবেদন করবেন?

লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারীকে নিজ জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অস্ত্র শাখা থেকে নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এরপর আবেদনপত্র জমা দিয়ে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়—

এসবি রিপোর্ট: পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে।

জেলা প্রশাসকের অনুমোদন: এসবি রিপোর্টের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক আবেদন অনুমোদন করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি পত্র (NOC): এরপর আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় এবং অনাপত্তি পত্র পাওয়ার পরই লাইসেন্স ইস্যু করা হয়।

আবেদনের সঙ্গে যা জমা দিতে হবে:

বৈধ নাগরিকত্বের প্রমাণ (জাতীয় পরিচয়পত্র)

আয়কর সার্টিফিকেটের ফটোকপি

ছয় কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

নির্ধারিত লাইসেন্স ফি

আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম

২০১৬ সালের "আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা" অনুসারে কেবলমাত্র আত্মরক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ নীতিমালায় ব্যক্তিগতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

'টেস্ট ফায়ার' বা পরীক্ষামূলক গুলি চালনার নিয়ম
নতুন অস্ত্র: প্রথমবার অস্ত্র কেনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ‘টেস্ট ফায়ার’ করা যায়।

নবায়নের সময়: পুরনো অস্ত্রের কার্যকারিতা যাচাই করতে লাইসেন্স নবায়নের সময় ‘টেস্ট ফায়ার’ করতে হয়, তাও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে।

অনুমতি: টেস্ট ফায়ারের পূর্বে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

গুলি সংগ্রহের নিয়ম

গুলি কেনার জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতি প্রয়োজন।

গুলির পরিমাণ লাইসেন্সে নির্ধারিত থাকে।

গুলির হিসাব সংশ্লিষ্ট থানা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জানাতে হয়।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলি

লাইসেন্সধারীর নামেই অস্ত্র ব্যবহার: মালিক নিজে ব্যবহার করলে তার নামে লাইসেন্স থাকতে হবে। দেহরক্ষী ব্যবহার করলে তার নামেও লাইসেন্স থাকতে হবে।

অস্ত্র হারালে: তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে।

বিদেশ ভ্রমণে গেলে: আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দিয়ে যেতে হবে।

নির্বাচনের আগে: নির্বাচনকালে লাইসেন্সধারীদের অস্ত্র জমা দিতে হয়।

লাইসেন্স নবায়ন: প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং কঠোর নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত একটি দায়িত্বপূর্ণ অনুমতি। এ সংক্রান্ত আইন ও নির্দেশিকা মান্য করেই একজন নাগরিক অস্ত্রের মালিক হতে পারেন। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও লাইসেন্সের বিষয়টি আইনত সংবেদনশীল হওয়ায় এ বিষয়ে সতর্কতা ও সচেতনতা দুটোই অপরিহার্য।

Header Ad
Header Ad

ভুলবশত ব্যাগে ম্যাগাজিন, বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত: আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ব্যাগে ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং তাঁর লাইসেন্সপ্রাপ্ত বৈধ অস্ত্রের অংশ হিসেবে একটি ম্যাগাজিন ভুলবশত ব্যাগে থেকে গেছে।

রোববার (২৯ জুন) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে আমার একটি লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে অংশ নেওয়ার পর আমার ওপর কয়েকবার হামলা ও হত্যাচেষ্টা হয়েছে। তাই যখন সরকারি প্রোটোকল বা সিকিউরিটি থাকে না, তখন নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়।”

তিনি জানান, মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিতব্য ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে’ অংশ নিতে আজ ভোর ৬টা ৫০ মিনিটের ফ্লাইটে যাওয়ার কথা ছিল। ভোরে তাড়াহুড়োর মধ্যে প্যাকিং করার সময় একটি ম্যাগাজিন ভুল করে ব্যাগে থেকে যায়। স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ার পর সেটি তিনি নিজেই তার প্রোটোকল কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন।

আসিফ মাহমুদ বলেন, “শুধু ম্যাগাজিন দিয়ে আমি কী করব? যদি আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে অস্ত্র রেখে আসতাম না। এখানে অবৈধ কিছু ছিল না, কিন্তু এটাকে ঘিরে অনেকে অপ্রয়োজনীয় আলোচনা করছে।”

সংবাদপত্রে খবর চাপা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চাপ দিয়ে সংবাদ সরানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ঘটনার পর আমি ফ্লাইটে ছিলাম। অনেকক্ষণ পরে ইন্টারনেটে এসে দেখি, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে নানা খবর ছড়িয়ে পড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “নাগরিক হিসেবে কেউ যদি নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকেন, তবে নিয়ম মেনে তিনিও অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে পারেন।”

এই ঘটনায় কোনো আইনি জটিলতা তৈরি হয়নি বলে জানা গেছে। তবে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ঘিরে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

Header Ad
Header Ad

মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য এখনও অনেক দূর: আখতার হোসেন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এখনও সম্মিলিত ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

রোববার (২৯ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আজকের আলোচনায় মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য গড়তে পারিনি। বিএনপির আপত্তির কারণে সাংবিধানিক পদের নিয়োগ কমিটি গঠন আটকে আছে। মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের অনমনীয় অবস্থানের কারণেই আলোচনা এগোয়নি।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও সেটি এখন অত্যধিক নমনীয়তায় গড়িয়েছে। কিছু দল যেমন বিএনপি ও তার সহযোগীরা মৌলিক বিষয়গুলোতেও দ্বিমত পোষণ করছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা হলেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না কমিশন। এটা আমাদের উদ্বিগ্ন করছে।”

আখতার হোসেন আরও বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে, বিকেন্দ্রীকরণ থাকবে। যদি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে পূর্বের মতোই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়, তবে এই কমিশনের আলোচনা অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়।”

তিনি স্পষ্টভাবে জানান, “আমরা বলেছি—সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষ আবশ্যক। নিম্নকক্ষে যেমন দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন প্রয়োজন, তেমনি উচ্চকক্ষেও সেটি লাগবে। আর কিছু মৌলিক বিষয় আছে, যা কেউ এককভাবে পরিবর্তন করতে পারবে না।”

এই মন্তব্যের মাধ্যমে এনসিপি স্পষ্ট করেছে—সরকার কাঠামোয় গভীর সংস্কার ও শক্তিশালী বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে আগ্রহী নয়।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স: জানুন কীভাবে পাওয়া যায় অস্ত্র রাখার অনুমতি
ভুলবশত ব্যাগে ম্যাগাজিন, বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত: আসিফ মাহমুদ
মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য এখনও অনেক দূর: আখতার হোসেন
ঢাকায় চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্তে দুদক
বিএনপি–ছাত্রদলের বিরুদ্ধে শিবিরের পরিকল্পিত অপপ্রচারের অভিযোগ নাছিরের
আবাসিক হোটেল থেকে স্বামী–স্ত্রী ও ছেলের লাশ উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিট্যান্স
ইমাম-খতিবদের বেতন ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি
আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে সেই ফজর আলীর ছবি ভাইরাল
জনগণ ও অর্থনীতির স্বার্থে ছাড় নয়, এনবিআর কর্মীদের উদ্দেশ্যে কঠোর বার্তা
ক্লাব বিশ্বকাপে আজ মেসির সামনে সাবেক ক্লাব পিএসজি
অ্যান্টি-এজিং ওষুধেই মৃত্যু? রহস্যে ঢাকা শেফালি জারিওয়ালার অকালপ্রয়াণ
উত্তরায় হোটেল দখলের চেষ্টা, ‘মব সৃষ্টি’র ঘটনায় আটক ৯ জন
সান্তাহারে কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে হাঁটার সময় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত যুবক
ভিজিট ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ সৌদি প্রবাসীদের জন্য সুখবর
আ.লীগ নেতার অপকর্ম বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা চলছে: রিজভী
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ বাতিল করল সরকার
ঢাকায় বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার
সরকার ব্যর্থ হয়েছে: নাহিদ ইসলাম