রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১১

বিষাদ বসুধা

ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে মোহিনী হঠাৎ বিছানা থেকে লাফিয়ে ওঠেন। ভয়ঙ্কর এক স্বপ্ন। এ রকম স্বপ্ন তিনি আগে কখনো দেখেননি। তিনি স্বপ্নে দেখেন, আজব ধরনের একটি প্রাণী পৃথিবীকে গ্রাস করছে। চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণ যেমনিভাবে হয় ঠিক সে রকমভাবেই পৃথিবী নামক গ্রহটি আজব প্রাণীর পেটে চলে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার পর ভয়ে আতঙ্কে তিনি থরথর করে কাঁপছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ঘুমানোর পরও তার শরীর ঘামে চুপচুপে হয়ে গেছে। মুখাবয়বে ছোপ ছোপ ঘাম জমেছে।

সকালে চা দিতে এসে রহিমাবিবি থমকে দাঁড়ায়। সে মোহিনীর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। তারপর বিস্ময়ের সঙ্গে বলে, কি হএচে আপামণি। আপনের কি হএচে? আপনেরে এই রকম বিধ্বস্ত লাগতেছে কেন আপামণি?

মোহিনী কোনো কথা বলেন না। তিনি চুপচাপ বসে আছেন। রহিমাবিবি তার কাছে এগিয়ে যায়। নরম গলায় বলে, আপামণি আপনেরে এই রকম কেন লাগতেছে। ইহ! ঘরডা তো ঠান্ডা! আপনে এমন কইরা ঘামতেছেন কেন? আপামণি আমারে কন তো!
মোহিনীর দিকে তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে রহিমাবিবি বলে, মুখটা মোছেন আপামণি। চা নেন।
মোহিনীর মুখে কোনো কথা নেই। তিনি যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছেন। স্বপ্নের ঘোর। ঘোরটা কিছুতেই কাটছে না। তিনি যতই ঘোর কাটানোর চেষ্টা করছেন ততই যেন ঘোরের অতলে তলিয়ে যাচ্ছেন। রহিমাবিবি খালা খালা বলে ডাকতে ডাকতে ভেতরের কক্ষের দিকে এগিয়ে যায়। মনোয়ারা বেগম কোনো একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি রহিমাবিবির চিৎকার শুনে বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, কি রে রহিমা! কি হয়েছে? এমন করে ডাকছিস কেন?
খালামণি, আপামণির কি জানি হইচে। আপামণি কেমন জানি করতেছে।
সে কী! কি হয়েছে?
জানি না। তাড়াতাড়ি আপনে গিয়া দেহেন খালামণি।
আনোয়ারা বেগম দৌড়ে মেয়ের কক্ষের দিকে এগিয়ে যান। তার সঙ্গে রহিমাবিবিও দৌড়ায়। মোহিনী তখনো স্থির। তিনি একটুও নড়াচড়া করছেন না। আনোয়ারা বেগম মেয়ের পাশে গিয়ে বসলেন। তার দুই কাঁধে হাত রাখলেন। তারপর নরম গলায় বললেন, মা, মা মোহিনী! কি হয়েছে মা?
মোহিনী ঘাড়টা একটু বাঁকা করে আনোয়ারা বেগমের দিকে তাকালেন। আনোয়ারা বেগম মোহিনীর হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে তার মুখ মুছে দিতে দিতে বললেন, কক্ষটা তো বেশ ঠান্ডা। তারপরও তুই ঘামছিস মা! ঘটনা কি! তোর শরীর খারাপ নাকি?
আনোয়ারা বেগম কপালে, চোয়ালের নীচে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন। শরীর স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক! তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। তিনি বললেন, ঠিকই তো আছে। কি হয়েছে মা? বল তো আমাকে?
মোহিনী কোনো কথা বলছেন না। তিনি কী যেন ভাবছেন। তাকে স্বাভাবিক করার জন্য আনোয়ারা বেগম ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি মগ থেকে কাপে চা ঢেলে মেয়ের হাতে দিয়ে বলেন, নে চা নে মা। স্বাভাবিক হ তো! দেখি, আমার দিকে ফিরে বস।
মোহিনী আনোয়ারা বেগমের দিকে ফিরে বসেন। তারপর চায়ের কাপ হাতে নেন। আনোয়ারা বেগম চা খাওয়ার জন্য বলেন। মোহিনী চায়ে চুমুক দেন। আনোয়ারা বেগম তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন। রহিমাবিবির দিকে তাকিয়ে বলেন, তুই যা। তাড়াতাড়ি নাশতা তৈরি কর। তোর আপা খাবে।
রহিমাবিবি চলে যায়। আনোয়ারা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, এবার বল, কি হয়েছে তোর?
ধরা গলায় মোহিনী বললেন, আমি একটা খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছি মা।
বাজে স্বপ্ন! বলিস কি! কি দেখেছিস বলবি আমাকে?
মা, আমি দেখি একটা অদ্ভুত প্রাণী পৃথিবীটাকে গিলে খাচ্ছে। ঠিক চাঁদ সূর্যের যেমন গ্রহণ লাগে তেমনি। প্রাণীটা পৃথিবীকে গিলছে আর সবকিছু ঘোর অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে।
বলিস কী রে!
হ্যাঁ মা। এই স্বপ্নটা দেখে আমার এমন ঘোর লাগছে! আমি কিছুতেই আর ঘোর কাটাতে পারছি না।
আমার মনে হয়, এটা কোনো সতর্কবার্তা। গভীর কোনো সংকট আমাদের সামনে আসছে। করোনা আমাদেরকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে পারে।
আমারও ঠিক এ কথাটাই মনে আসছে মা। কিন্তু ভীষণ একটা ভয় মনের মধ্যে ঢুকেছে। আমরা কি সত্যিই শেষ সময়ের দিকে এসে গেছি! মানে, পৃথিবীর আয়ুস্কাল কি ফুরিয়ে এসেছে?
হতে পারে। নানা ধরনের আলামত দেখা যাচ্ছে। তুই ওঠ মা। আজ অফিসে যাবি না?
আজ ভালো লাগছে না।
আচ্ছা ঠিক আছে। তুই বরং গোসল-টোসল করে আয়। আমরা একসঙ্গে নাশতা করি।
যাচ্ছি মা।
যাচ্ছি না। এখনই ওঠ মা। গোসল করে আয়। দেখবি ফ্রেশ লাগছে।
আমিও তাই ভাবছি। ভালো করে গোসল করে আসি।
তাহলে আর দেরি করিস না মা। অনেক বেলা হয়েছে। ওঠ।
তুমি যাও। আমি উঠছি।
আনোয়ারা বেগম চলে গেলেন। মোহিনী অলস ভঙ্গিতে বিছানা থেকে ওঠেন। একপা দুইপা করে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যান। ওঠার সময় তিনি হাত পায়ে ব্যথা অনুভব করেন। শরীরের কোনো কোনো জায়গায় ব্যথা টের পান তিনি। মনে মনে বলেন, রাতে কি জ¦র হয়েছিল নাকি? এমন ব্যথা লাগছে কেন? হাঁটতে গিয়েও হাঁটু কেমন ভেঙে আসছে। মনটা আবার খারাপ হয় তার। তিনি আবার বিছানার কাছে ফিরে যান। সাবধানে বিছানার ওপর বসেন। হাতপা নাড়াচাড়া করেন। মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এরমধ্যে আনোয়ারা বেগম মোহিনী মোহিনী বলে ডাক দেন। তার ডাক মোহিনীর কানে আসে। কিন্তু তিনি কোনো জবাব দিচ্ছেন না। জবাব দিতে ইচ্ছাই করছে না। এখন তার মাথাটা ঝিমঝিম করছে। শরীরটা আরাম চাচ্ছে। তিনি যে বাথরুম পর্যন্ত যাবেন সেই শক্তিও যেন তার শরীরে নেই। আসলে শরীর সায় না দিলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। মোহিনী এবার আড়াআড়িভাবে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। শোয়া মাত্রই তার চোখে রাজ্যের ঘুম চলে এলো।
আনোয়ারা বেগম নাশতা রেডি করে মোহিনীকে ডাকেন। মেয়ের সঙ্গে একত্রে নাশতা করবেন। রহিমাবিবিকে ডেকে বললেন, দেখ তো তোর আপামণির কি হলো?
রহিমাবিবি আবার মোহিনীর কক্ষে এলো। তাকে শুয়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিয়ে আনোয়ারা বেগমকে ডাকে। খালামণি, খালামণি!
আনোয়ারা বেগম পায়ে পায়ে ছুটে আসেন মোহিনীর কক্ষের দিকে। কাছাকাছি এসে বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, কি হয়েছে! কি হয়েছে রহিমা!
আপামণি আবার ঘুমাই পড়ছে।
আনোয়ার বেগম থ। তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন, থাক। ঘুমাক। চল আমরা যাই।
আনোয়ারা বেগম খাবার ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। তার পেছনে পেছনে এগিয়ে যায় রহিমাবিবি।

টিভির সামনে বসে আছেন মোহিনী। তিনি খবর দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। আনোয়ারা বেগম তার পাশে বসে আছেন। রহিমাবিবি তাদের দুজনের সামনে কফি দিয়েছে। কফির ঘ্রাণটা নাকের ভেতরে এক ধরনের সুড়সুড়ি দিচ্ছে। কফি শপের চেয়েও রহিমার হাতের কফি অনেক বেশি মজার। মোহিনী তাকে এই সার্টিফিকেট দিতে রাজি। তিনি বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারলেন না। কফির মগটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলেন। রহিমাবিবি মোহিনীর দিকে বিপুল বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। আপমণির একটা মন্তব্য শোনার অপেক্ষা করছেন তিনি। সেই মন্তব্যটুকুই তার কাছে হাজার টাকার পুরস্কার। এরমধ্যে খবর শুরু হয়েছে। মোহিনী, আনোয়ারা বেগম উভয়েরই গভীর মনোযোগ খবরের দিকে। শুরুতেই করোনা ভাইরাসের খবর। দেশে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার সাতশ’ পঁচাত্তর জন। মারা গেছেন একান্ন জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে মারা গেছে আরো এগারো জন। বিশ্বে প্রতি মিনিটে দশ জন মারা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এরমধ্যেই বিশ্বের ২০১ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে করোনা। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এক লাখ পঁচাত্তর হাজার ছয়শ’ উনসত্তর জন্য আক্রান্ত হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইতালি। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ পাঁচ হাজার সাতশ’ বিরানব্বই জন। ইতালির পর স্পেনের অবস্থান। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে চৌরানব্বই হাজার চারশ’ সতেরো জন। এশিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইরানে। করোনার উৎপত্তি স্থল চীন আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। বাংলাদেশে দ্রুত করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। মাস্ক ব্যবহারের জন্য সরকারি তরফ থেকে বার বার নির্দেশনা জারি করা হলেও অনেকেই তা মানছেন না।
খবর শেষ হওয়ার আগেই রহিমাবিবি বলল, আপামণি আমার কফি কেমন হইচে কইলেন না?
ওহ! সেটা শোনার জন্য তুই বসে আছিস? আমি তো ভাবলাম, তুই খবর শুনছিস!
আনোয়ারা বেগম তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললেন, ও শুনবে খবর! ও ওর কফির প্রশংসা শোনার জন্য বসে আছে।
ওহ! তোর কফি সত্যিই খুব ভালো হয়েছে। কফি শপ তোর কাছে ফেল।
মোহিনীর মুখে প্রশংসা শুনে রহিমাবিবির মুখে হাসি ফোটে। সে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। পারলে সে তার আপামণিকে জড়িয়ে ধরে। এই আনন্দটুকুই হয়তো তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

চলবে...

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৯

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৮

বিষাদ বসুধা: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

Header Ad
Header Ad

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা

তারেক রহমান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুল ও কেক পৌঁছে দেন।

প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান সেলিম ফুলের তোড়া ও শুভেচ্ছা সামগ্রী গ্রহণ করেন।

ফুলেল শুভেচ্ছা পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার সুস্বাস্থ্য ও সফলতা কামনা করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তার এই অনন্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

Header Ad
Header Ad

পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীতে জিয়াউর রহমান স্মরণে আয়োজিত এক স্মারক প্রকাশনা ও আর্কাইভ উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—তারা নির্বাচন বিলম্ব কিংবা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করতে চায়। পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রয়োগযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সংস্কার মানে বাইবেল নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারের মূল প্রবক্তা বিএনপি নিজেই। আমরা এরইমধ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। তাই জাতীয় ঐক্যের নামে একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।”

সালাহউদ্দিন আহমদ জোর দিয়ে বলেন, “কেউ যদি মনে করেন সবাইকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মত মেনে নিতেই হবে, তাহলে ঐকমত্য কখনোই সম্ভব নয়। একতরফা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় বাস্তবতাকে বুঝতে হবে।”

বিএনপি এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না করায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“সরকার যদি সত্যিই নির্বাচন চায়, তাহলে তাদের উচিত দ্রুত সময়সূচি ঘোষণা করা। বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচনের মতো আয়োজন উপযুক্ত নয়; জাতীয় নির্বাচনই এখন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের মহাসমাবেশে এ পদ্ধতি চালুর দাবি তোলে। বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলছে, এটি বাস্তবসম্মত নয় এবং এতে নির্বাচনের স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা আগামী নির্বাচনের আগে একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিতে পারে।

Header Ad
Header Ad

জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম । ছবি: সংগৃহীত

ইসলামপন্থীদের ঐক্যের প্রতি গণমানুষের প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, “যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে জোটবদ্ধ ইসলামি দলই হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ইনশাআল্লাহ, রাষ্ট্রক্ষমতা আমাদের হাতেই আসবে।”

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমরা স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে বহু রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখেছি, কিন্তু ইসলামি দল আজও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারেনি। এর বড় কারণ—আমরা বারবার নেতৃত্ব ও নীতির বাছাইয়ে ভুল করেছি। এবার আর সে ভুল নয়, এবার আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।”

তিনি জানান, শুধু ইসলামি দলগুলো নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে একত্রে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেই ঐক্যই হতে পারে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সেতুবন্ধ।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমি বহু আগেই বলে আসছি—ইসলামপন্থী ভোট এক বাক্সে আনতে হবে। আমরা যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রাখবে এবং ইসলামি শক্তিই হবে এই দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব।”

তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আগামী নির্বাচনে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি’ চালু করতে হবে। যে দল যত ভোট পাবে, তারা তত আসনে প্রতিনিধিত্ব পাবে। এটা এখন জনদাবি—বহু রাজনৈতিক দল এই দাবিতে একমত।”

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বিএনপির উচিত পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চিন্তা করা। এতে করে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে।”

এ সময় তিনি ইসলামী আন্দোলনের সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোর প্রতি দলটির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “সংস্কার প্রশ্নে আমরা আপসহীন। দেরি করা মানেই ২০২৪-এর গণ-আন্দোলনের সঙ্গে বেইমানি। আমরা বিশ্বাস করি, ৭২-এর সংবিধান জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি বধির ছিল, তাই সেটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন অপরিহার্য।”

তিনি আরও বলেন, “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সবসময় শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনমত গঠনে বিশ্বাসী। তবে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে দেশজুড়ে নতুন গণজাগরণ শুরু হবে।”

মহাসমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ও ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে এই বক্তব্য নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের সক্রিয় ও সংগঠিত ভূমিকাই যে এখন আলোচনার কেন্দ্রে, সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো এই বক্তব্যে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা
পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর
খামেনির প্রাণ বাঁচালাম, ধন্যবাদটুকুও দিলো না: ট্রাম্প
পুরস্কার না নিয়ে মনু মিয়ার জানাজায় অভিনেতা খায়রুল বাসার
মা হারালেন ব্যান্ড তারকা তানজির তুহিন
ক্ষমতায় গেলে ১৮ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে বিএনপি: আমীর খসরু
ফিলিস্তিনের মতো সাইপ্রাসও দখলে নিচ্ছে ইসরায়েল!
কালও চলবে এনবিআরের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’
‘এনবিআরের প্রশাসনিক আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই’
সিইসির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
নওগাঁয় ছাত্রদলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নব গঠিত কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত
করোনায় আরও দুইজনের মৃত্যু,  শনাক্ত ৭
এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে: ট্রাম্প
ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে ১৬ দফা ঘোষণা
নতুন রক্তের গ্রুপের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা
সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২
কূটনৈতিক অস্ত্র পানি নিয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান, শঙ্কায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান