শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান

স্বার্থসচেতন লোক একটা।

মালান বলল, আমিই সেই লোক। এরপর দুজনই হাসিতে ফেটে পড়ল। আমার বয়স তখন অল্প। তার সম্পর্কে বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিপরীতধর্মী এমন সব তথ্য পেলাম যে, তার সম্পর্কে আমার নিজের ধারণাই বিভ্রান্ত হয়ে গেল। তাকে আমি ভালোবাসি কি না সে বিষয়েই আর নিশ্চিত থাকতে পারলাম না। শেষে আরেক মহিলাকে বিয়ে করলাম।

কিন্তু আমার প্রেক্ষিত তো আলাদা: আমি তো আর দ্বিতীয় কাউকে বাবা হিসেবে পেতে পারি না।

না, পাওয়া যায় না এবং সেটাই সৌভাগ্যের বিষয়। একজনই যথেষ্ট। আমার অভিজ্ঞতা থেকে সে সিদ্ধান্তই আসে।

ঠিক আছে। যে করেই হোক কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে হবে। তার সঙ্গে দেখা হলে সুযোগ আসতে পারে। আমি তোমার সঙ্গে কথা বললাম, বিশেষ করে কারণ আমার মন বিক্ষিপ্ত ছিল আমার অনুকূলে বয়সের পার্থক্য থাকার কারণে।

হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি।

করমারি মালানের দিকে তাকাল।

মালান বলল, নিজেকে বলো, তিনি বৃদ্ধ হননি। তিনি সেই যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছেন। সেও অনেক দিন হয়ে গেছে।

বেশ কিছু সংখ্যক আনন্দের যোগও আছে তাতে।

হ্যাঁ, তুমি জীবনকে ভালোবাসো। যেহেতু তুমি সেটাই বিশ্বাস করো জীবনকে তোমার ভালোবাসতেই হবে। মালান একটা ছাপা সুতি কাপড়ের ইজি চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ল। একটা অপ্রকাশ্য বিষাদময়তা তার সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল।

ঠিকই বলেছ। আমি জীবনকে ভালোবেসেছি। আমি জীবনের জন্য ক্ষুধার্ত। একই সময়ে জীবনকে ভয়ঙ্কর আর অপ্রবেশ্যও মনে হয়। সে কারণেই আমি বিশ্বাসী, আবার একই সঙ্গে সংশয়বাদীও। হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করতে চাই; আমি চিরকাল বেঁচে থাকতে চাই। একথা বলার পর সে নীরব হয়ে গেল।

পয়ষট্টি বছর বয়সে প্রত্যেকটা বছরই যেন ফাঁসির জন্য অপেক্ষমাণ সময়। আমি শান্তিতে মারা যেতে চাই। মৃত্যু আমাকে আতঙ্কিত করে তোলে। আমি এ পর্যন্ত নিজের মতো করে কোনো কিছুই সম্পন্ন করতে পারিনি।

পার্থিব জীবনকে অনেকেই প্রমাণ করে দেন। তাদের উপস্থিতি দিয়েই তারা অন্যদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন।

হ্যাঁ, অবশ্যই এবং তারা মৃত্যুবরণ করেন।

দুজনই চুপ হয়ে গেল। ঘরের চার পাশে বাতাস যেন আরো জোরে বইতে থাকল।

মালান বলল, জ্যাক, তোমার কথাই ঠিক। যাও, যতদূর অনুসন্ধান করতে পারো, দেখো। এখন তোমার নিজের জন্য তো আর বাবার দরকার নেই। নিজেকে একাই এতদূর নিয়ে এসেছ। এখন যেহেতু তুমি জানো কিভাবে ভালোবাসতে হয়, তুমি তাকে ভালোবাসতে পারো। তবে...., বলেই মালান একটু থেমে গেল। কিছুটা দ্বিধায় থেকে আবার বলল, আমাকে দেখতে এসো। আমার সময় খুব বেশি নেই। আর আমাকে ক্ষমা করে দিও।

তোমাকে ক্ষমা করতে বলো? আমার সবকিছুর ঋণ তো তোমার কাছে।
না, আমার কাছে তোমার তেমন ঋণ নেই। আমি তোমার ভালোবাসার প্রতি মাঝে মধ্যে সাড়া দিতে পারিনি। সেজন্য ক্ষমা করে দিও।

টেবিলের ওপরে ঝুলন্ত প্রাচীন বাতিটার দিকে তাকিয়ে রইল মালান। তার কণ্ঠটা ফাঁকা শোনাল যখন সে করমারিকে তার শেষ কথাগুলো বলল; করমারি চার পাশের জনশূন্যতার বাতাসে বার বার শুনতেই থাকবে সেই কথাগুলো: আমার ভেতরে ভয়ঙ্কর এক শূন্যতা, ভয়ঙ্কর এই বৈরাগ্য আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।

৪. বালকের খেলা

একটা সংক্ষিপ্ত তরঙ্গবিক্ষোভ জুলাই মাসের কড়া তাপের মধ্য দিয়ে জাহাজটাকে গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার কেবিনে অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে জ্যাক করমারি ঘুলঘুলি পথে সমুদ্রের ওপর ভেঙে পড়া সূর্য-রশ্মির প্রতিফলন দেখছে। হঠাৎ লাফিয়ে উঠে জ্যাক কেবিনের ফ্যানটা বন্ধ করে দেয়; বুকের ত্বকে সুরসুরি তৈরি করার আগেই ফ্যানের বাতাসে লোমকূপের ঘাম শুকিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, ঘেমে যাওয়াটা তেমন খারাপ না, ভালোই তো। সরু এবং শক্ত মঞ্চকের ওপর আরাম করে শুয়ে পড়ে সে। বিছানা এরকম শক্তই হওয়া উচিত। বিশাল সেনাবহিনীর অবিরাম মার্চ করে যাওয়া শব্দের মতো জাহাজের গভীর তলদেশ থেকে ইঞ্জিনের চাপা কম্পনের একঘেয়ে ভোঁতা শব্দ ছড়িয়ে পড়ছে। এরকম বড় স্টিমারের তৈরি দিন রাত অবিরাম শব্দ এবং জীবন্ত আগ্নেয়গিরির ওপর হেঁটে বেড়ানোর মতো অনুভূতিও তার বেশ পছন্দ, বিশেষ করে যখন দৃষ্টির সামনে বিশাল সমুদ্রের এই খোলা দৃশ্যপট ভেসে আসে। তবে ডেকের ওপরে খুব গরম পড়েছে। ডেকের যেটুকুর ওপরে ছাউনি আছে সে জায়গাটাতে চেয়ারে ঢলে পড়েছে যাত্রীরা: দুপুরের খাবারের প্রতিক্রিয়া নেশার মতো তাদের কাবু করে ফেলেছে। কিংবা কেউ কেউ ডেকের নিচে চলাচলের রাস্তার দিকে দৌড়ে চলে গেছে দিবানিদ্রার ব্যবস্থা খুঁজতে। দিবানিদ্রা জ্যাকের পছন্দ নয়। আলজিয়ার্সে থাকাকালীন নানি তাকে তার সঙ্গে দুপুর বেলা ঘুমোতে বাধ্য করতেন।

ছোটবেলায় নানি তাকে উদ্ভট একটা উপাধিতে ডাকতেন। সেই উদ্ভট বেনিডোর নামটা কাঁটার মতো মনে পড়ে যায়: আলজিয়ার্সের ওই বাড়িটার তিনটা রুমই সযত্নে ফেলা ঝাঁপের আড়ালে বন্ধ থাকত। বাইরে ধূলিময় রাস্তা যেন সূর্যের প্রখর তাপে ভাজা ভাজা হতো। আর ঘরের মধ্যে আধো আলোয় দুয়েকটা বিশাল আকৃতির মাছি বের হয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আপ্রাণ চেষ্টায় উড়োজাহাজের মতো উড়ড়ে উড়তে ভনভন করতে থাকত। এত গরমে পারদাইলান কিংবা ল’ইন্ট্রিপাইড পড়া যেতো না। কখনও কখনও নানি বাড়িতে না থাকলে কিংবা প্রতিবেশির সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত থাকলে ছোট জ্যাক রাস্তার দিকে মুখ করা শোবার ঘরের ঝাঁপের ফুটোয় নাক গলিয়ে দিত। রাস্তা তখন জনমানবহীন। রাস্তার ওপারে জুতার দোকান এবং জামাকাপড়ের দোকানের সামনে লাল আর হলুদ রঙের মোটা খড়খড়ি নামানো থাকত। তামাকের দোকানের সামনে বিভিন্ন রঙের গুটিগুটি নকশার পর্দা ফেলা থাকত। জাঁর ক্যাফেটেরিয়া থাকত একেবারে ফাঁকা; ঘুণ-ঢাকা মেঝে আর ধূলিময় ফুটপাতের মাঝখানে দরজার চৌকাঠের ওপর একটা বিড়াল ঘুমিয়ে থাকত; দেখে মনে হতো বিড়ালটা মরে গেছে।

জ্যাক তখন ফিরে যেত সাদা রঙ করা রুমটাতে; সেখানে আসবাবপত্র বলতে খুব অল্পই ছিল: মাঝখানে একটা গোলাকার টেবিল, দেয়ালের পাশ ঘেঁষে একটা দেরাজ, আঁকিবুকি আর কালির দাগ লাগা একটা ডেস্ক, পাঁচটা চেয়ার আর মেঝের ওপরে কম্বলঢাকা একটা জাজিম–রাতে সেখানে জ্যাকের আধো-বোবা মামা ঘুমাত। এক কোণে দেয়ালের তাকে ছিল সরু গলাঅলা একটা ফুলদানি; এরকম ফুলদানি শুধু মেলায় দেখতে পাওয়া যায়। বাইরের প্রখর সূর্যালোক আর ভেতরের আবছা আবদ্ধ ঘরের মতো দুটো মরুভূমির মধ্যে আটকা পড়ে টেবিলটার চারপাশে দ্রুত পায়ে ঘুরতে ঘুরতে জ্যাক গির্জার পুরোহিতের মতো গাইত–আমি ক্লান্ত, আমি ক্লান্ত। সে ক্লান্ত; তবু তার ওই ক্লান্তি আর একঘেয়েমির মধ্যে একটা খেলা ছিল; এক ধরনের উত্তেজনা ছিল। কারণ নানি যখন তাকে বেনিডোর বলে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকতেন তখন তার ওপরে যেন বয়সের ভার নেমে আসত। তবে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে যেত। নানি নয় জন ছেলেমেয়ে লালন পালন করেছেন। কীভাবে বাচ্চাদের বড় করতে হয় সে বিষয়ে তার নিজস্ব ধ্যান ধারণা ছিল।

এক ধাক্কাতেই নানি তাকে শোয়ার ঘরে ঢুকিয়ে দিতেন। শোয়ার দুটো ঘর উঠোনমুখী। তার মধ্যে ওটা একটা। অন্য ঘরটায় দুটো বিছানা: একটা তার মায়ের, আরেকটাতে থাকত তারা দুভাই। আর একটা ঘর ছিল নানির নিজের। কিন্তু নানি রাতে মাঝে মাঝে এবং দুপুরের ঘুমের সময় প্রতিদিনই তার ঘরে নিয়ে যেত। সেখানে ছিল কাঠের একটা উঁচু বিছানা। স্যান্ডেল খুলে উঠতে হতো সেই বিছানায়। একবার নানি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় জ্যাক চুপি চুপি নেমে গিয়ে টেবিলের চার পাশে ঘুরতে ঘুরতে পুরোহিতের গানের মতো তার সেই গান গাইতে শুরু করেছিল। সেই থেকে জ্যাকের জায়গা হলো বিছানার দেয়াল ঘেঁষা পেছন পাশটায়। সে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লে নানি পোশাক বদল করতেন: পরনের ফিতা দিয়ে বাঁধা পাটের তৈরি মোটা কামিজটা খুলে ফেলতেন। তারপর বিছানায় উঠে আসতেন। জ্যাকের নাকে লাগত বয়স্ক মানুষের মাংসের গন্ধ। নানির পায়ের বার্ধক্যজনিত কুৎসিত দাগ আর মোটা নীল শিরার দিকে তাকিয়ে থাকত জ্যাক। ঘুমাও বেনিডোর, বলে নানি খুব দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়তেন। আর জ্যাক খোলা চোখে রুমের ভেতরে বড় বড় মাছিদের যাওয়া আসা দেখত।

হ্যাঁ, সেই সময়ে বহু বছর এবং বড় হয়েও অনেক দিন জ্যাক ওই সময়ের অভিজ্ঞতাটা ঘৃণা করে এসেছে। খুব বেশি মাত্রায় অসুস্থ না হলে গরমের মৌসুমে বিছানায় হাত ছড়িয়ে কখনও শোয়নি জ্যাক। তারপরও যদি কখনও হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছে তাহলে জেগে উঠেছে বিতৃষ্ণা নিয়ে। শুধু সাম্প্রতিক সময়ে রাতের অনিদ্রার কারণে দিনের বেলা আধাঘন্টার মতো ঘুমিয়ে সতেজতা এনেছে। বেনিডোর!

সূর্যের আলোর চাপে বাতাস মনে হয় পড়ে এসেছে। জাহাজ এখন মৃদু গড়িয়ে চলা থামিয়ে সোজা এগিয়ে চলছে। ইঞ্জিন এখন পূর্ণ গতিতে আছে। জাহাজের পাখা পানির গভীর তলদেশ খুঁড়ে চলছে। পিস্টনের শব্দ একটানা হচ্ছে বলে সমুদ্রের পানির ওপরে পতিত সূর্যের নরম আলো থেকে এই শব্দ আলাদা করা যাচ্ছে না। জ্যাক আধো ঘুম আধো জাগরণে; আলজিয়ার্সের পুরনো এবং হতদরিদ্র বাড়িতে ফিরে যাওয়ার বিষয়টা তাকে কিছুটা সুখি অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছে। প্যারিস ছেড়ে আফ্রিকায় যাওয়ার সময় প্রতিবারই এরকম অনুভূতি কাজ করেছে তার মধ্যে: গোপন আনন্দে হৃদয় ভরে উঠেছে। পালানোর চেষ্টা সফলতায় পরিণত করার বিষয়টাও সন্তুষ্টির আবেশ তৈরি করেছে। আর পাহারাদারদের মুখের চেহারা মনে আসায় তার হাসি পাচ্ছে। ঠিক এভাবেই প্রতিবার বাসযোগে কিংবা ট্রেনে প্যারিসে ফিরে আসার পর তার মন বিষন্ন হয়ে যেত। কীভাবে এমন হতো সেটা তার জানার বাইরে থেকে গেছে। ওই সব দিনগুলোতে শহরের বাইরে অবস্থিত সামনে গাছপালাহীন বাড়িঘর হতভাগ্য ক্যান্সারের মতো কদর্যতা আর দারিদ্রের স্নায়ুগ্রন্থি পর্যন্ত পৌছে যেত যেন তার ওই পরবাসী শারীরিক অস্তিত্বকে একাত্ব করে নেয়ার জন্য এবং তাকে নগরের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ইট-কাঠের অরণ্য তাকে রাত দিন বন্দি করে রাখত।

এমনকি তার নিদ্রাহীনতাকেও আক্রমণ করত সেই অরণ্য। তবে ইট-কাঠের সেই অরণ্য তার মন থেকে মুছে দিত সেখানকার এক মঞ্চসজ্জা। অবশেষে সে পালিয়ে আসতে পেরেছে। সমুদ্রের বিশাল পৃষ্ঠদেশে সূর্যের দোলায় দোলায়িত ঢেউয়ের ওপর সে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। অবশেষে সে ঘুমাতে পেরেছে, যে বাল্যকাল থেকে সে কখনওই মুক্তি পায়নি সেখানে সে ফিরে আসতে পেরেছে, আলোর গোপন গহনে ফিরে আসতে পেরেছে, যে দারিদ্র তাকে সব বাঁধা অতিক্রম করার শক্তি দিয়েছে সেই উষ্ণ দারিদ্রের আলোর কাছে ফিরে আসতে পেরেছে। ঘুলঘুলির তামার ওপরে পতিত বিচুর্ণ প্রতিফলন এখন প্রায় অনড়; সেই প্রতিফলন এসেছে ওই একই সূর্য থেকে যে সূর্য সর্বশক্তি নিয়ে সেই অন্ধকার রুমের ঝাঁপের ওপর পতিত হতো। সেই অন্ধকার রুমে ঘুমিয়ে থাকতেন নানি। আর ঝাঁপের ধাতুপাতে হঠাৎ উত্থিত গ্রন্থি-সৃষ্ট একটা ফুটো দিয়ে অন্ধকারের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতেন একটা সরু তরবারি। মাছিগুলোকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। মাছিগুলো জ্যাকের স্বপ্নপ্রয়াণের বাসিন্দা হয়নি কিংবা স্বপ্নপ্রয়াণকে পুষ্টিদান করেনি। সমুদ্রে মাছি নেই। তা ছাড়া শব্দ তৈরি করার কারণে যে মাছিগুলোকে বালক জ্যাক ভালোবাসত সেগুলো তো মৃত; ওই জগতের সব জীবনধারী গরমের কারণে চেতনানাশিত। আর শুধু সে নিজে ছাড়া সব মানুষ এবং প্রাণী যার যার কুক্ষির ওপরে অসাড় হয়ে পড়ে থাকত। সত্যিই দেয়াল আর নানির মাঝখানে বিছানার সরু ওই জায়গাটাতে সে এপাশ ওপাশ করতে থাকত আর বেঁচে থাকার আকাঙ্খা পোষণ করত। মনে হতো, ঘুমের সময়টাকে যেন তার বেঁচে থাকার সময় আর খেলার সময় থেকে বিয়োগ করে দেওয়া হচ্ছে। খেলার সঙ্গীরা নিশ্চয়ই তার জন্য রিউ প্রিভোষ্ট-পোরাডোলে অপেক্ষা করত। পানি ঢালার কারণে পাশের বাগান থেকে সন্ধ্যার সময় সোঁদা গন্ধ বের হতো ওখানে। পানি ঢালার কারণে হোক আর না-ই হোক মৌমাছির চাকের গন্ধও পাওয়া যেত; কারণ ওখানে যত্রতত্র মৌমাছির চাকও তৈরি হতো। নানি জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জ্যাক দৌড়ে বের হয়ে যেত রিউ ডি লিওনের দিকে; তখনও সেখানে ডুমুর গাছের নিচটা ফাঁকা। তারপর দৌড়ে প্রিভোষ্ট-পোরাডোলের ফোয়ারার কাছে গিয়ে ঢালাই লোহার হাতল ঘুরিয়ে পানির ধারার নিচে মাথা এগিয়ে দিত। নাকের ছিদ্র, কান, শার্টের খোলা গলা এবং পেটের ওপর দিয়ে গড়িয়ে তার পায়ের স্যান্ডেল পর্যন্ত গিয়ে ঠেকত পানি।

পায়ের তলার ত্বক আর স্যান্ডেলের চামড়ার মাঝখানে পানির প্যাচপেচে অনুভূতি তার মনে আনন্দের আমেজ ছড়িয়ে দিত। জ্যাক তখন দৌড়তে থাকত পিয়েরে এবং অন্যদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য। ওরা রাস্তার ধারের একমাত্র দোতলা বাড়ির ঢোকার পথে একটা হল রুমে অপেক্ষা করত। জ্যাক ওখানে পৌঁছে দেখত, ওরা সিগারের আকৃতির কাঠের একটা টুকরো ঘষে ঘষে সমান করছে; ব্যাডমিন্টনের ব্যাটের মতো কাঠের একটা ব্যাট আর ওই টুকরোটা দিয়ে তারা কানেত্তি ভিঙা খেলত।

(চলবে)

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad

সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছর সৌদি আরবে মো. আসাদুজ্জামান নামের এক বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা গেছেন। এটিই এবারের হজে প্রথম কোন বাংলাদেশির মৃত্যু। বুধবার (১৫ মে) কিং সালমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার পাসপোর্ট নম্বর এ-১৩৫৬১০৩৪।

শনিবার (১৮ মে) ভোররাত ৩টার দিকে হজ পোর্টালের আইটি হেল্পডেস্কের প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর গত রাত ৩টা পর্যন্ত ২৭ হাজার ১১১ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। অন্যদিকে এখনো ৪ হাজার ২৫৬ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি।

সবশেষ হিসাবে যত হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী ৩ হাজার ৭৪৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ২৩ হাজার ৩৬৪ জন। এখন পর্যন্ত সৌদি আরব যাওয়ার হজফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে ৬৮টি।

এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ২৫টি, সৌদি এয়ারলাইন্সের ২৩টি ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স পরিচালিত ফ্লাইট সংখ্যা ২০টি।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন এবারের হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট শুরু হয় গত ৯ মে। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত যাওয়ার ফ্লাইট চলবে। হজ শেষে ২০ জুন ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে। দেশে ফেরার ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২২ জুলাই।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৮১ হাজার একজন হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে মোট ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজ করতে যাবেন। সে হিসাবে এখনো ৪ হাজার ২৫৬ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৫৬২ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে ৮০ হাজার ৬৯৫ জন হজ করতে যাবেন।

যমজ ২ বোনকে হাতুড়ি দিয়ে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা

হাতুড়িপেটায় আহত দুই বোন। ছবি: সংগৃহীত

পাবনার চাটমোহরে যমজ দুই বোনকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। আহতদের চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে চাটমোহর উপজেলার পৌর সদরে উথুলি খামারপাড়া মহল্লায় ওই ঘটনা ঘটে।

আহত দুই বোন মিম (২০) ও লাম (২০) চাটমোহর পৌরসভার আরাজি উথুলী খামারপাড়া মহল্লার রেজাউল করিম রিজুর যমজ মেয়ে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা একই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে আলিফ ইয়ামান পায়েল (২২)। তিনি চাটমোহর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি।

এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আহত দুই বোনের বাবা রেজাউল করিম রিজু। লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, বাড়ির পাশে কদম গাছের ডাল কাটছিলেন ছাত্রলীগ নেতা পায়েল। এ সময় প্রতিবেশী রেজাউল করিমের মেয়ে লাম তাকে গিয়ে বলেন গাছ কাটার সময় তাদের কলা গাছ যেন নষ্ট না হয়।

এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা পায়েল হাতুড়ি দিয়ে লামকে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। এ সময় তার যমজ বোন মিম এগিয়ে এলে তাকেও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। পায়েল ও তার বাবা-মা মিলি যমজ দুই বোনকে বেধড়ক মারধর করে।

পরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দুই বোনের পরিবারের লোকজন গিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ বিষয়ে চাটমোহর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আহত দুই বোনের বাবা।

অভিযুক্ত চাটমোর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আলিফ ইয়ামান পায়েল বলেন, আমার মায়ের সঙ্গে ওরা দুই বোন মারামারি করছিল। আমি সেখানে ঠেকাতে গিয়েছিলাম, তাদেরকে মারিনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ করা হয়েছে।

চাটমোহর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের জায়গা ছাত্রলীগে নেই। যদি সে দোষী সাব্যস্ত হয়, আমি তার বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানাই। যেহেতু ছাত্রলীগের কমিটি জেলা ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। সে কারণে জেলা ছাত্রলীগ এই বিষয়টি দেখবে।

চাটনোহর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, বিষয়টি এখনো আমি জানি না। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে এবং আমরা তদন্ত করে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি

বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানও তাদের সঙ্গে যাচ্ছেন। অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সে জন্য আয়োজিত নানা প্রচারণায় অংশ নেবেন তারা। পাশাপাশি অর্থ পাচার প্রতিরোধসংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানেও তাদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৪ মে নিউইয়র্কে একটি হোটেলে অফশোর ব্যাংকিং বিষয়ে প্রচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের খরচ বহন করবে ব্যাংকগুলো। যেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।

অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা। বক্তব্য দেবেন- অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হুসেইন, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন।

পাশাপাশি একই সময়ে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আয়োজনে আন্তর্জাতিক ব্যাংক সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন আরও ২৫ জন এমডি। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এসব ব্যাংক এমডির বিদেশ যাওয়া–সংক্রান্ত নথি অনুমোদন করেছে।

এদিকে দেশের ডলার–সংকটের এ সময়ে ব্যাংক খাতে ডলারের জোগান বাড়াতে বিভিন্ন ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংকে বিশেষ জোর দিয়েছে। এ জন্য নানা ধরনের প্রচার–প্রচারণাও চালাচ্ছে ব্যাংকগুলো। তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় ডলার জমায় উদ্বুব্ধ করতে দেশটিতে প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ

সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু
যমজ ২ বোনকে হাতুড়ি দিয়ে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা
যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হামাস
কেএনএফের নারী শাখার সমন্বয়ক আকিম বম গ্রেপ্তার
সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের
দুধ দিয়ে গোসল করানো হলো মুক্ত নাবিক সাব্বিরকে, পরিবারে বইছে খুশির জোয়ার
ট্যুরিস্ট ভিসায় ৩ দিন ভারত ভ্রমণ করতে পারবেন না বাংলাদেশীরা
গোবিন্দগঞ্জে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের ঘটনায় যুবক গ্রেফতার
গাজীপুরের কালীগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চালকসহ দুইজনের মৃত্যু
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে আসছে আইন : তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী
টেনিসের জন্য এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে ভালো অনুভূতি : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
গাজায় ইসরায়েলের হামলা হামাসের জন্যই: মাহমুদ আব্বাস
নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে প্রেম নিয়ে মুখ খুললেন জায়েদ খান
২০২৭ নারী ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল
স্বর্ণ পাচারের ‘গোল্ডেন রুটে’ পরিণত হচ্ছে খুলনা
বিএনপির সময় ঋণখেলাপির তালিকা সবচেয়ে বড় ছিল : আইনমন্ত্রী
বাংলাদেশিরা মাত্র ১ দিনেই পাবেন ভারতের ভিসা!
গুগল অ্যাস্ট্রা : হারানো জিনিস খুঁজে পাবেন নিমিষেই
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, দিশেহারা ক্রেতারা