রবিবার, ৫ মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১

দ্য ফার্স্ট ম্যান

প্রথম ভাগ: পিতার সন্ধানে

পাথুরে পথে গড়িয়ে চলা ওয়াগনের মাথার উপর দিয়ে বড় বড় ঘন মেঘের পাহাড় গোধূলির গা বিদীর্ণ করে ছুটে চলেছে পূর্বদিকে। আটলান্টিকের উপর মেঘেদের শরীর ভরে উঠেছে প্রায় তিন দিন আগেই। পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা বাতাসের অপেক্ষায় ছিল অনড়। তারপর আস্তে আস্তে চলা শুরু করে ক্রমেই দ্রুত থেকে দ্রুততর গতি পেয়েছে। শরতের মৃদু আলোকিত পানির উপর দিয়ে উড়ে চলে এসেছে গোটা মহাদেশের ওপর। মরক্কোর পাহাড়চূড়ায় এসে টুকরো টুকরো হয়ে আবার দলবদ্ধভাবে একত্রিত হয়েছে আলজেরিয়ার উঁচু মালভূমিতে। আর এখন তিউনিসিয়া সীমান্তে এসে চেষ্টা করছে তাইরেনীয় সমুদ্রের জলে গলে একাকার হতে।

বিশাল দ্বীপের মতো হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ভ্রমণ শেষে উত্তর দিকে বহমান সমুদ্র জল আর দক্ষিণ দিকে বহমান জমাট বালির উর্মিমালার কোলে আশ্রয় পেয়ে মেঘেদের গতিবেগ হাজার বছরের সাম্রাজ্য আর মানব অধ্যুষিত নামহীন এই দেশটার উপর ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো টুকরো সবিরাম বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে টুপ টুপ ঝরে পড়ছে এই চারজন ভ্রমণকারীর মাথার উপরের মোটা কাপড়ের ছাউনির উপর।

রাস্তাটার সুপরিসর অবয়ব থাকলেও উপরিভাগটা মজবুত নয়। ঘোড়ায় টানা গাড়িটা চলার সময় ক্যাচ ক্যাচ শব্দ হচ্ছে। যখন তখন ছোট ছোট পাথরের টুকরোর সঙ্গে ধাতব চাকার বেষ্টনীতে ঘষা লেগে কিংবা ঘোড়ার খুরের আঘাতে ফুলকি জ্বলে উঠছে; ছিটকে উঠে বাড়ি খাচ্ছে গাড়ির কাঠ-শরীরের সঙ্গে। কখনোবা বোবা শব্দ তুলে ডুবে যাচ্ছে রাস্তার খানাখন্দের নরম মাটিতে। ইতিমধ্যে ছোট ঘোড়া দুটো মাঝে মধ্যে অপারগতায় শ্লথ হলেও সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে ভারী গাড়িটাকে টেনে নিয়ে; দুলকি চালে মিশ্র পদক্ষেপে পথটাকে তারা পিছে ফেলে চলেছে। কোনোটা হয়তো কখনো নাসারন্ধ্র থেকে ফোঁস ফোঁস আওয়াজ তুলে ভারী নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিছিয়ে পড়ছে; ঠিক তখনই আরব গাড়োয়ান তার পিঠের ওপরের লাগামে টান মারছে আর পশুটা চলার ছন্দ ফিরিয়ে আনায় সচেষ্ট হচ্ছে।

চালকের পাশে প্রথম আসনে বসা ত্রিশ বছর বয়সী ফরাসি লোকটা তার সামনের পশু দুটোর ছন্দময় চলমান পেছনের অংশকে ভাসমান নিরিখে দু-এক পলক দেখে নিয়েছে। মাঝারি উচ্চতার এবং গাট্টাগোট্টা চেহারার লোকটার মুখটা লম্বাটে, ললাট চওড়া এবং গোলাকার, চোয়াল শক্ত আর চোখ নীল। মৌসুম আগে আগে শুরু হলেও লোকটার পরনে নিখুঁত করে বোনা তিন বোতামঅলা জ্যাকেট, ওই সময়ের কেতা অনুযায়ী গলা পর্যন্ত তুলে এনে আঁটো করে বাঁধা; তার ছোট করে ছাঁটা চুলের মাথার ওপরে পরেছে উদ্ভিদের শাঁস থেকে তৈরি হেলমেট। মাথার উপরে আচ্ছাদিত মোটা কাপড়ের উপর দিয়ে ঘন বৃষ্টি শুরু হলে গাড়ির পেছনের দিকে তাকিয়ে লোকটা জোর গলায় জিজ্ঞেস করে, ঠিক আছো তো?

পুরনো বাক্স-পেটরা আর আসবাবপত্রের স্তূপের মাঝে সাঁটানো দ্বিতীয় আসনটাতে বসে আছে একজন নারী, অন্য পোশাকাদি মলিন হলেও গায়ে জড়িয়ে আছে একটা পশমী মোটা শাল। ক্ষীণ একটা হাসি ছড়িয়ে দিয়ে সে বলল, হ্যাঁ, ঠিক আছি। বলার সময় তার অঙ্গভঙ্গিতে একটা ক্ষমাপ্রার্থী ভাব প্রকাশ পেল। চার বছর বয়সী একটা ছেলে তার গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মহিলার স্বাভাবিক সুন্দর অবয়বের চেহারায় ছড়িয়ে আছে কোমলতা, বাদামী চোখে তার উষ্ণ চাহনি, নাকটা তার ছোট তবে খাড়া, স্পেনীয় নারীদের মতো মাথাভর্তি ঢেউ খেলানো কালো চুল; কিন্তু ওই মুখাবয়বে কী একটা অস্বাভাবিক ইঙ্গিত রয়েছে। ক্লান্তির মতো ক্ষণিকের কোনো কালো ছায়া তার মুখের উপর পড়েছে এমন নয়। তার চাহনির উৎস যেন দূরে কোথাও, এ চাহনি যেন মিষ্টি কোনো অমনোযোগের।

এ রকমটি দেখা যায় কোনো নির্বোধের মুখে। তবে এ চাহনি যেন থেকে থেকে তার মুখের সৌন্দর্যের উপর ছড়িয়ে পড়ছে। মাঝে-মাঝেই অকারণ ভয়ের মিশ্রণ ঘটছে তার চিত্তহারী চাহনির ভেতর দিয়ে প্রকাশিত কোমলতার সঙ্গে। তবে সেই ভয়টা নিমিষেই কেটেও যাচ্ছে। তার কাজ করে ক্ষয়ে যাওয়া গ্রন্থিল হাতের মসৃণ অংশ দিয়ে স্বামীর পিঠ স্পর্শ করে মহিলা বলে, ঠিক আছে, ঠিক আছে। অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে হাসি থামিয়ে মাথার উপরের মোটা কাপড়ের ছাউনির তলা দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় রাস্তার উপর ইতিমধ্যে জমে উঠা কাদা চিকচিক করে ওঠা শুরু করেছে।

গাড়োয়ানের মাথায় পাগড়ির হলুদ রঙের মোটা রশির কারণে তার চেহারায় প্রসন্ন একটা ভাব ফুটে উঠেছে। পায়ের গুলের ওপরে সাজানো প্রশস্ত আসনে বসা ঢিলা পাজামায় তাকে আরও বেশি গাট্টাগোট্টা দেখাচ্ছে। স্বামী লোকটা আরব গাড়োয়ানের দিকে ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমাদের কি আরও অনেক দূর যেতে হবে?

বিরাট সাদা গোঁফের আড়ালে হাসি ছড়িয়ে দিয়ে গাড়োয়ান বলে, আর আট কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাবেন।

মুখে হাসি না থাকলেও মনোযোগী দৃষ্টিতে স্বামী লোকটা তার স্ত্রীর দিকে তাকায়। তার দৃষ্টি এখনো সামনের রাস্তায় নিবদ্ধ। লোকটা গাড়োয়ানকে বলে, লাগাম আমার হাতে দিন।

–আপনার যা ইচ্ছে, বলে বৃদ্ধ গাড়োয়ান তার হাতে লাগাম দিয়ে পাশে ফাঁকা হওয়া জায়গায় একটু সরে বসে। লাগাম হাতে দুটো ঝাঁকি মেরে লোকটা ঘোড়া দুটোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ঘোড়া দুটো ধীর গতি থেকে আরেকটু দ্রুততায় দুলকি চালে চলা শুরু করে এবং দ্রুতই সোজা চলতে থাকে।

আরব গাড়োয়ান মন্তব্য করে, আপনি ঘোড়া চালানোর কায়দা কানুন বেশ ভালোই জানেন, দেখছি।

লোকটা শুকনো সংক্ষিপ্ততায় উত্তর দেয়, হ্যাঁ।

চারপাশের আলো কমে আসে। হঠাৎই যেন ঝুপ করে রাত নেমে আসে। বাম পাশ থেকে একটা লণ্ঠন তুলে এনে পেছনের দিকে ফিরে গাড়োয়ান কয়েকবার চেষ্টা করে ভেতরের সলতেয় আগুন জ্বালাতে পারে। আবার জায়গামতো রেখে দেয় লণ্ঠনটা। এখন বৃষ্টি পড়ছে মৃদু লয়ে, একটানা। লণ্ঠনের মৃদু আলোয় বৃষ্টি চক চক করে। বাইরে বৃষ্টির মৃদু শব্দে অন্ধকার ভীড় করে। মাঝে মাঝেই গাড়িটা কাঁটাঅলা ঝোপঝাড়ের পাশ ঘেঁষে চলতে থাকে। ছোট ছোট গাছপালা লণ্ঠনের মৃদু আলোয় সেকেন্ডের জন্য ঝিঁকিয়ে উঠে মিলিয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ সময় গাড়িটা ফাঁকা জায়গার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায়। চার পশের অন্ধকারের কারণে ফাঁকা জায়গা আরও প্রশস্ত মনে হয়। রোদে পোড়া ঘাসের গন্ধ আর থেকে থেকে ভেসে আসা প্রাকৃতিক সারের গন্ধ মনে করিয়ে দেয় তারা এখন আবাদী জমির ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে।

পেছনের দিকে ঝুঁকে বসে লাগাম ধরে আছে স্বামী লোকটা। পেছন থেকে তার স্ত্রী কথা বলে ওঠে, এদিকে মনে হয় জনমানুষ নেই।

–তোমার কি ভয় করছে?

–কী বললে?

স্বামী পুনরায় জিজ্ঞেস করে। তবে এবার তার কথা বলা চিৎকারের মতো শোনায়।

–না, না। ভয় করছে না। তুমি সাথে থাকলে ভয় কিসের? তবে চিন্তিত মনে হয় তাকে।

–তোমার মনে হয় ব্যথা হচ্ছে?

–একটু একটু।

লোকটা ঘোড়া দুটোকে তাড়া দিলে রাস্তার মাঝে উঁচু হয়ে থাকা মাটির ওপরে চাকার আওয়াজ আর রাস্তার ওপরে ঘোড়ার নাল পরা খুরের আওয়াজ চারপাশের অন্ধকারকে ভরিয়ে তোলে।

১৯১৩ সালের এক রাত। ভ্রমণকারীরা দুঘণ্টা আগে বনের রেল স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছে। তৃতীয় শ্রেণির ট্রেনের কাঠের বেঞ্চে এক দিন এক রাতের দীর্ঘ ভ্রমণের পর তারা পৌঁছেছিল রেল স্টেশনে। এই আরব গাড়োয়ান তাদেরকে প্রায় বিশ কিলোমিটার ভেতরের দিকে একটা ছোট গ্রামের কাছে অবস্থিত এক খামারে নিয়ে আসার জন্য স্টেশনে অপেক্ষায় ছিল। ওই খামারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা স্বামী লোকটার। বাক্সপেটরা এবং অন্যান্য কয়েকটা জিনিসপত্র গাড়িতে তুলতে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া খারাপ রাস্তার কারণে আরও দেরি হয়ে গেছে। সঙ্গীর নীরবতা ভাঙার জন্য গাড়োয়ান বলে ওঠে, ভয় পাাবেন না। এদিকে কোনো চোর ডাকাত নেই।

সবখানেই আছে। তবে আমার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও আছে, বলে স্বামী লোকটা তার আঁটো পকেটের উপর চাপড় মারে।

গাড়োয়ান বলে, ঠিকই বলেছেন, পাগল ছাগল সবখানেই আছে।

ঠিক তখনই পেছন থেকে মহিলা তার স্বামীকে ডাক দেয়, হেনরি, ব্যথা করছে।

লোকটা ঘোড়াগুলোকে আরেকবার তাড়া দিয়ে স্ত্রীর উদ্দেশে বলে, এই তো আমরা পৌঁছে গেলাম বলে। আরেক মুহূর্ত পরে লোকটা পিছু ফিরে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, এখনও কি ব্যথা আছে?

স্বামীর দিকে অন্যমনস্কতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটুখানি হাসে মহিলা। দেখে মনে হয় না তার কষ্ট হচ্ছে। তবু বলে, হ্যাঁ, অনেক।

লোকটা গম্ভীর দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে।

মহিলার কণ্ঠে ক্ষমা প্রর্থনার সুর বাজে, তেমন কিছু না। মনে হয়, ট্রেনের কারণে এরকম হচ্ছে।

গাড়োয়ান বলে ওঠে, ওই যে দেখুন গ্রামটা। আসলেই রাস্তা থেকে বেশ খানিক দূরে বাম দিকে সলফেরিনো গ্রামের কয়েকটা আলো দেখা যায়। বৃষ্টির ভেতর দিয়ে আলোগুলো আবছা আবছা দেখায়। গাড়োয়ান আরও বলে, তবে আপনাদের ডান দিক দিয়ে যেতে হবে।

স্বামী লোকটা কিছুটা দ্বিধায় থেকে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমরা কি গ্রামের ভেতরে যাব, না কি বাড়িটাতে আগে যাব?

–না, না বাড়িটার দিকেই চলো। সেটাই ভালো হবে।

গাড়িটা ডান দিকে মোড় নেয়। সামনে অচেনা বাড়িটা তাদের জন্য অপেক্ষা বরছে। গাড়োয়ান বলে, আর এক কিলোমিটার।

স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে লোকটা বলে, আমরা পৌঁছে গেলাম বলে। হাতের মাঝখানে মুখ ডুবিয়ে মহিলা মাথা গুঁজে পড়ে আছে। লোকটা ডাক দেয়, লুসি।

তবে তার কোনো সাড়া নেই। হাত বড়িয়ে স্ত্রীকে ছুঁয়ে দেয় হেনরি। তার স্ত্রী নীরবে কাঁদছে। কণ্ঠ আরও জোরে চিৎকারের মতো করে প্রত্যেকটা শব্দ আলাদা আলাদা করে উচ্চারণ করে লোকটা বলে, তুমি ওখানে গিয়েই শুয়ে পড়বে। আমি ডাক্তার নিয়ে আসব।

–হ্যাঁ, ডাক্তার নিয়ে এসো। ব্যথাটা আমার কাছে ওই রকম মনে হচ্ছে।

আরব গাড়োয়ান তাদের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বলে হেনরি বলে, তার বাচ্চা হবে।
–গ্রামে কি ডাক্তার আছে?

–হ্যাঁ, আছে। আপনি চাইলে আমিই ডাক্তার ডেকে আনতে পারি।

–না, না যেতে হবে না। বাড়িটাতে খেয়াল রাখলেই হবে। আমিই দ্রুত যেতে পারব। কোনো ছোট গাড়ি কিংবা ঘোড়া পাওয়া যাবে?

–হ্যাঁ, গাড়ি একটা আছে। তারপর সে লুসির দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার ছেলে হবে। দোয়া করি ছেলেটা খুব সুন্দর হোক।

লুসি তার কথা কিছু বুঝেছে বলে মনে হয় না। তবে মৃদু হাসতে থাকে।

হেনরি বলেন, ও শুনতে পায় না। বাড়িতে গিয়ে ওর সাথে কথা বলার সময় জোরে বলতে হবে আর ইশারায় বুঝাতে হবে। গাড়িটা হঠাৎ ঘাসের চাপড়ার উপর দিয়ে চলতে থাকলে চাকার নিচে কোনো শব্দ শোনা যায় না। রাস্তাটা এখানে আরও সরু। পাশে কয়েকটা টালি ছাওয়া ঘর দেখতে পাওয়া যায়। ঘরগুলোর পেছনে আঙুরের ক্ষেতের প্রথম সারি। গাঁজানো আঙুরের কড়া গন্ধ এসে নাকে লাগে। উঁচু ছাদঅলা কয়েকটা ভবন পার হয়ে যায় গাড়ি। তারপর গাড়ির চাকা আকর বিছানো একটা উঠোনের উপর চলে আসে। মুখে কিছু না বলেই গাড়োয়ান লাগাম হাতে নিয়ে টেনে ধরে। ঘোড়াগুলো থেমে যায়; একটা বেশ জোরে নিশ্বাস ছাড়ে।

গাড়োয়ান হাতের ইশারায় একটা সাদা রং করা বাড়ি দেখায়। নিচু একটা দরজার পাশ বেয়ে উঠে গেছে একটা লতাগাছ। কপার সালফেট দিয়ে নীল রং করা হয়েছে দরজাটা। গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে হেনরি বৃষ্টির ভেতরেই দৌড়ে যায় ঘরটার দিকে। দরজা খুলে সামনে দেখতে পায় একটা অন্ধকার কামরা। ফাঁকা অগ্নিকুণ্ড থেকে একটা চাপা গন্ধ নাকে আসে। তার পেছন পেছন আগত গাড়োয়ান অন্ধকার পার হয়ে সরাসরি উনানের কাছে চলে আসে; জ্বলন্ত কয়লা ঘেঁটে কামরার মাঝখানে রাখা টেবিলের ওপরে ঝুলন্ত কোরোসিনের একটা লণ্ঠন জ্বালায়।

তখনই কেবল হেনরির চোখে পড়ে সে সাদা রং করা রান্নাঘরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। লাল সিরামিক টালির তৈরি বাসনপত্র ধোয়ার জায়গা, একটা পুরনো দেরাজ এবং তাকঅলা টেবিল, আর দেয়ালে একটা ভেজা স্যাঁতসেতে ক্যালেন্ডার। লাল টালির সিঁড়ি শেষ হয়েছে দ্বিতীয় তলার মাথায়। আগুনটা জ্বালিয়ে দাও, বলে সে গাড়ির কাছে ফিরে এলো। তার স্ত্রী গাড়িতেই নীরবে অপেক্ষা করছে। হেনরি স্ত্রীকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে যাতে নিরাপদে মাটিতে তার পা রাখতে পারে। তাকে বুকের সাথে এক মুহূর্ত ধরে রেখে হেনরি জিজ্ঞেস করে, হাঁটতে পারবে?

–হ্যাঁ, পারব, বলে সে স্বামীর বাহুতে আলতো ছোঁয়া রাখে।

ঘর পর্যন্ত ধরে নিয়ে গিয়ে হেনরি বলে, একটু অপেক্ষা করো।

(চলবে)

এসএ/

Header Ad

মিল্টন সমাদ্দারের মানবিকতার আড়ালে প্রতারণা, যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন

ছবি: সংগৃহীত

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা অনিয়মের প্রতিবাদ ও মানবিক স্টোরি তুলে ধরে ব্যাপক আলোচনায় আসেন এই সংসদ সদস্য।

বর্তমানে এমপি হলেও আগের মতো নানা ইস্যুতে আওয়াজ তুলেন ব্যারিস্টার সুমন। সেই ধারাবাহিকতায় মানবিকতার আড়ালে ভয়ংকর প্রতারক মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন তিনি।

মিল্টন সমাদ্দার মানবিক কাজ দিয়ে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। বর্তমানে তার মানবিক কাজগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, এ বিষয়ে কী বলবেন? জবাবে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, একটা বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিৎ, যারা মানবিক কাজ করে মুখ দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে করে। মুখ দিয়ে মানবিক কাজ করলে নানা প্রশ্নবিদ্ধ হবে কিন্তু হৃদয় থেকে করলে তাকে কেউ আটকাতে পারবে না।

মানবিক কাজগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হলে সমাজে কী নীতিবাচক প্রভাব ফেলে না? এমন প্রশ্নের জবাবে এই সংসদ সদস্য বলেন, সমাজে নীতিবাচক প্রভাব ফেলতে ফেলতে এই পর্যায়ে আমরা দাঁড়িয়েছি। আর পেছনের যাওয়ার সুযোগ নেই, সামনের দিকে যেতে হবে। আমরা নষ্ট হওয়ার শেষ পেরিয়ে গেছি। এর থেকে বেশি নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, দুস্থ, অসহায় ব্যক্তিদের আশ্রয় ও সাহায্যের মতো মানবিক কাজের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত পান মিল্টন সমাদ্দার।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে এসব কাজের আড়ালে তার নানা অন্যায়-অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর বুধবার এই মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তার বিরুদ্ধে ডেথ সার্টিফিকেট জালিয়াতি, মানবপাচার, আশ্রয় দেওয়া অসহায়, দুস্থ ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর তাদের কিডনি বিক্রি, জমি দখলসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে: ইরান

ছবি: সংগৃহীত

চলমান ছাত্র বিক্ষোভে দমন-পীড়ন ও ধরপাকড়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মুখ থেকে ভণ্ডামির মুখোশ সরে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স বার্তায় এই মন্তব্য করেন তিনি। খবর ইরানি গণমাধ্যম ইরনার

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ দমন প্রসঙ্গে কানানি বলেছেন, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মিথ্যা রক্ষকদের মুখ থেকে ভণ্ডামির মুখোশ সরে গেছে। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঠেকাতে দমন-পীড়নকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য সত্যকে বিকৃত করে শিক্ষার্থী ও একাডেমিক কর্মীদের প্রকৃত ক্ষোভ ও তাদের প্রতিবাদকে ইহুদিবিদ্বেষ হিসাবে বর্ণনা করছে মার্কিন সরকার।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল। বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি ক্যাম্পাসে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা। এর জেরে ক্লাস-পরীক্ষা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। সে সঙ্গে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকতেও বিন্দুমাত্র পিছপা হননি তারা।

এমনকি পুলিশ এসে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে। গ্রেফতার করেছে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে। তবে এতকিছু করেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পুলিশ প্রশাসন। উলটো তা আরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি মার্কিন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ছাড়িয়ে এখন বৈশ্বিক রূপ ধারণ করেছে।

নিজের মান ইজ্জত রক্ষা করুন, মন্ত্রী-এমপিদের প্রতি ইসি রাশেদা

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, যেকোন মূল্যে উপজেলা নির্বাচন হবে প্রভাবমুক্ত। সরকারের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রভাবশালীরা এই নির্বাচনে প্রভাব খাটালে কমিশন প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে বিধিবিধান অন্যুায়ী ব্যবস্থা নিবে।

শনিবার দুপুরে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রাজশাহীর চার জেলার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদা সুলতানা একথা বলেন।

রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি পছন্দের প্রার্থী পক্ষে নেক দৃষ্টি দিয়ে সরকারের অতি সুবিধাভোগি কিছু ব্যক্তিরা (মন্ত্রী-এমপি) এ নির্বাচনে প্রভাব খানাটোর চেষ্টা করছেন। ওই সমস্ত পদে যারা আছেন তাদের প্রতি অনুরোধ করবো- দয়া করে আপনারা আপনাদের জায়গায় থাকেন। আপনি এলাকার ভোটার আপনি আসবেন ভোট দিবেন চলে যাবেন। আপনি যে পর্যায়ে আছেন- আপনি আপনার মান ইজ্জত রক্ষা করবেন। আপনার ইজ্জত আপনি যদি রক্ষা না করেন তাহলে কিন্তু যে কোন মুহুর্তে বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। এর দায় কিন্তু আমরা নিব না। আপনাই সেটা বহন করবেন। আপনারা নিজের মর্যাদায় আসিন থেকে দ্বায়ীত্ব পালন করবেন।

প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে ইসি রাশেদা সুলতানা আরও বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের সৌন্দর্য নেই, গ্রহনযোগ্যতা নেই, আনন্দও নেই। ১০ শতাংশ ভোট পেয়ে যেতা আর ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতার মধ্যে প্রার্থক্য আপনারাই বুঝতে পারবেন। তাই আপনার চিন্ত করেন, পরিবেশ নষ্ট করে ১০ শতাংশ ভোটে জিততে চান ভোটার না এনে; ৮০ শতাংশ ভোটে জিততে চান। আপনাদের উপর এই ভারটা ছেড়ে দিলাম সিদ্ধান্ত নেয়ার।

ইসি বলেন, ভোটের দিন কোন রকম উশৃঙখলতা, বিশৃঙখলাতা, সহিংস আচরণ, ভোট কেন্দ্র দখল করার মত কোন দুঃসাহস করবেন না। আপনার অবৈধভাবে যে ব্যালটই রাখেন না কেন আমাদের কাছে তথ্য গেলে প্রমান পেলে সেই ভোট বাতিল করে দিব যেকোন মুহুর্তে। আর অসাধুচারণ করেন, আচরন বিধি ভঙ্গ করেন আমরা কিন্তু নির্বাচনের মুহুর্তেও প্রার্থীতা বাতিল করে দিব। ভোটের দিন যে কোন নৈরাজ্য মূলক আচরণ করলে আমরা কিন্তু নির্বাচন স্থগিত করবো, নির্বাচন বাতিল করবো, প্রার্থীতা বাতিল করবো।

তিনি আরও বলেন, গনতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে নির্বাচন। তাই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। জনগনের মনে যেন গেঁথে থাকে এমন একটি নির্বাচন হবে এবার। তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কমিশন চায় না।

নির্বাচনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের উদেশ্যে রাশেদা সুলতানা বলেন, কোন প্রার্থী জিতল কোন প্রার্থী জিতল না এ নিয়ে ইসির কোন মাথা বেথা নেই। নির্বাচন কমিশনের একটি নির্দেশনা, আপনার সব প্রার্থীকে সমান চোখে দেখবেন, নিরপেক্ষতার সাথে দেখবেন, যে হাঙ্গামা করবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। তবে কমিশনার নির্দেশনা যিনি প্রতি পালন করবেন না তার দায়দায়িত্বও তিনি নিবেন। আপনাদের কৃতকর্মের দায় কমিশন বহন করবে না।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও জয়পুরহাটের উপজেলার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।

সর্বশেষ সংবাদ

মিল্টন সমাদ্দারের মানবিকতার আড়ালে প্রতারণা, যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন
যুক্তরাষ্ট্রের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে: ইরান
নিজের মান ইজ্জত রক্ষা করুন, মন্ত্রী-এমপিদের প্রতি ইসি রাশেদা
উদ্যোক্তারাই দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাণ্ডারী : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
টানা ৬ দিন হতে পারে ঝড়বৃষ্টি জানাল আবহাওয়া অফিস
সেই ভাইরাল নেতা পাকিস্তান জামায়াতের আমির নির্বাচিত
টানা ৮ দফা কমার পর বাড়ল স্বর্ণের দাম
দিয়াবাড়ির লেক থেকে ২ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
রাজধানীবাসীর জন্য সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস
মক্কায় প্রবেশে আজ থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ
‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার জিতলেন মিথিলা
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বগুড়ার আলু ঘাঁটি উৎসব
টাঙ্গাইলে পাগলা কুকুরের কামড়ে শিশুসহ ২২ জন আহত
১৭ রোগীকে হত্যার দায়ে মার্কিন নার্সের ৭৬০ বছর কারাদণ্ড
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে ছাত্রলীগের কর্মসূচি ঘোষণা
দুবাইয়ের ‘গোল্ডেন ভিসা’ পেলেন শাকিব খান
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ আগুন, ছড়িয়েছে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে
স্কুলে দেরি করে আসায় শিক্ষিকাকে ঘুষি মারলেন অধ্যক্ষ
আইপিএলের প্লে অফের দৌড়ে এগিয়ে কারা?
আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করল মিয়ানমারের ৪০ বিজিপি সদস্য