শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান

সবাই ওখানে জমায়েত হলে আশপাশের বাড়িগুলোর সামনের বাগানের মরচেধরা বেড়ার ওপরে ব্যাট বাড়ি দিতে দিতে সবাই ছুটে চলত। তাদের চলার শব্দ লোকজনকে জাগিয়ে তুলত আর লতা গাছপালার নিচে শুয়ে থাকা বিড়ালগুলো ঘুম থেকে জেগে উঠে লাফিয়ে পড়ত। রাস্তা পার হয়ে ছুটতেই থাকত তারা। একজন আরেকজনকে ধরার চেষ্টা করত; ততক্ষণে তাদের সবার শরীর ঘেমে উঠত। কয়েক রাস্তা পরে তাদের স্কুল; সেখান থেকে খুব কাছেই একটা সবুজ মাঠ ছিল; সেই মাঠের দিকে ছিল তাদের যাত্রা। কিছুদূর এগিয়ে সামনে একটা অকেজো পানির ফোয়ারা ছিল; সেখানে গিয়ে সবাই থেমে পড়ত।

বড় গোলাকার জায়গাটাতে ফোয়ারার বেসিন বৃষ্টির পানিতে ভরে থাকত। সেই পানির ভেতর পড়ে থাকত পুরনো শ্যাওলা, তরমুজের খোসা, কমলালেবুর খোসা এবং সব ধরনের আবর্জনা। সূর্যের আলো সেই পানি শুষে না নেওওয়া পর্যন্ত কিংবা সেচে ফেলে দেওয়ার জন্য কর্পোরেশনের লোকদের টনক না নড়া পর্যন্ত পানি জমাটবদ্ধ হয়ে থাকত। বেসিনের তলায় অনেক দিন ধরে জমে থাকত নর্দমার ময়লার মতো পদার্থ। সেই পদার্থও ওভাবেই পড়ে থাকত যতদিন না সূর্যের আলো সেটাকে শুকিয়ে ফেলার গরজ না দেখানো পর্যন্ত কিংবা ঝাড়ু–দারের শলাকা শুকিয়ে যাওয়া ময়লাকে ধূলি আকারে চার পাশের ডুমুর গাছের চকচকে পাতায় পৌঁছে না দেওয়া পর্যন্ত। গরমের দিনে যেভাবেই হোক বেসিনটা শুকনো থাকত। চকচকে কালো পাথরের কিনার হাজার হাজার হাত আর ট্রাউজারের ঘষা খাওয়ার ফলে পিছলে হয়ে যেত। জ্যাক, পিয়েরে এবং তাদের বন্ধুরা নাইটদের মতো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলত আর কিনারার ওপর দিয়ে ঘুরতে থাকত। ঘুরতে ঘুরতে এক সময় অবশ্যই বেসিনটার অগভীর তলায় পড়ে যেত। তখন নাকে আসত সূর্যালোকের গন্ধ আর মুতের ঝাঁঝ।

খেলার এরকম অবস্থায় তাদের পায়ে এবং স্যান্ডেলে ধূলির এক প্রস্থ সাদা আস্তরণ পড়ে যেত। কড়া তাপের মধ্যে তারা দৌড়তে থাকতো সবুজ মাঠের দিকে। ব্যারেল তৈরির কারখানার পেছনে ওই মাঠটা ছিল একটা ফাঁকা জায়গা। সেখানে মরচেধরা আংটা আর ব্যারেলের পচনধরা তলদেশের ভেতর দিয়ে ফ্যাকাশে ঘাস গজাত। কোথাও কোথাও সাদা রঙের গুচ্ছ গুচ্ছ ঘাসের চাপড়াও দেখা যেত। হৈচৈ করতে করতে ঘাসের গুচ্ছগুলোর মধ্যে তারা গোল দাগ তৈরি করত। তাদের একজন ব্যাট হাতে ওই গোল দাগের মধ্যে দাঁড়াত। বাকিরা সিগার আকারের কাঠের টুকরোটাকে বৃত্তের মধ্যে ছুড়ে মারত। কাঠের টুকরোটাকে কেউ দাগের বৃত্তের মধ্যে ফেলে দিতে পারলে ব্যাট হাতে সে দাঁড়াত মাঝখানে। তখন তার পালা হতো বৃত্তটা আগলানো। খেলোয়ারদের মধ্যে যার দক্ষতা বেশি সে কাঠের টুকরোটাকে বলিষ্ঠ হাতে দূরে পাঠিয়ে দিত।

সে ক্ষেত্রে টুকরোটা যেখানে পড়েছে অন্যরা সেখানে গিয়ে ওটা ব্যাট দিয়ে শূন্যে পাঠিয়ে দিত। কেউ হয়তো ব্যাট মারতে ব্যর্থ হতো কিংবা অন্য কেউ শূন্যের ওপর থেকেই টুকরোটা ধরে ফেলত। তখন বৃত্ত রক্ষক তাড়াতাড়ি ফিরে এসে তার বৃত্তে দাঁড়াত যাতে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা বৃত্তের মধ্যে টুকরোটা ছুড়ে মারতে না পারে। এটা ছিল আসলে গরিবের টেনিস খেলা; তবে টেনিস খেলার চেয়ে তাদের নিয়ম কানুন ছিল আরও জটিল। এই খেলায় তাদের পুরো বিকেলটাই শেষ হয়ে যেত। সবচেয়ে ভালো খেলত পিয়েরে। জ্যাকের চেয়ে হালকা পাতলা এবং আকৃতিতে ছোট পিয়েরে ছিল খুবই পলকা, মাথায় সোনালি আর তামাটে চুলের সমান মিশ্রণ, চোখের ভ্রু পর্যন্ত নেমে আসত চুল। সেই চুলের নিচে তার চোখের চাহনি ছিল সোজাসাপটা এবং নাজুক, কিছুটা যেন বেদনার্ত আর বিস্মিত; চালচলনে আনাড়ি মনে হলেও কাজের ক্ষেত্রে ছিল নিশ্চিত এবং নির্ভুল। অন্যদিকে জ্যাক অসম্ভব রকমের প্রতিরোধ তৈরি করতে পারলেও ব্যাকহ্যান্ড খেলায় লক্ষ্য ঠিক রাখতে পারত না। প্রতিরোধের দক্ষতা থাকার কারণে তার বন্ধুরা তার খেলার প্রশংসা করত এবং জ্যাক মনে করত, সে-ই সবার চেয়ে ভালো খেলে। এতে তার মধ্যে অহংকারের একটা ভাবও চলে আসত। আসলে পিয়েরের কাছে সে সব সময়ই হেরে যেত। তবে পিয়েরে এ বিষয়ে কিছুই বলত না। অবশ্য খেলার পরে সে অহংকারের ভাব ছেড়ে সোজা হয়ে বন্ধুদের প্রশংসায় মনে মনে হাসত।

যখন আবহাওয়া কিংবা তাদের নিজেদের মনের অবস্থা রাস্তাঘাট আর ময়লা আবর্জনাময় জায়গায় দৌড়াদৌড়ির ব্যাপারে সায় দিত না তখন প্রথমত সবাই জমায়েত হতো জ্যাকদের বাড়ির হল রুমে। সেখান থেকে পেছনের দরজা দিয়ে একটা উঠোনের মতো জায়গায় নেমে যেত। জায়গাটা বাড়ি ঘরের দ্বারা তিন দিক থেকে বন্ধ। খোলা পাশটাতে ছিল একটা বিরাট কমলালেবু গাছ। গাছটার প্রশস্ত ডাল পালা ছড়িয়ে ছিল পাশের একটা বাগানের দেয়ালের ওপর পর্যন্ত। গাছটাতে যখন ফুল ফুটত হতদরিদ্র বাড়িগুলো সুবাসে ভেসে যেত। সুগন্ধটা ভাসতে ভাসতে তাদের হল রুম পর্যন্ত এবং ঊঠোনের পাথুরে সিঁড়ি পর্যন্ত চলে আসত। উঠোনের এক দিকে পুরোটা এবং অন্য দিকের অর্ধেকটা পাশ জুড়ে ছিল একটা ইংরেজি এল আকৃতির ভবন। সেখানে থাকত এক স্প্যানিস নাপিতের পরিবার। লোকটার দোকান ছিল রাস্তার পাশে। ওই ভবনের আরেক অংশে থাকত এক আরব পরিবার। সে পরিবারের গৃহিনী কোনো কোনো সন্ধ্যায় উঠোনে কফি তৈরি করত। তৃতীয় দিকের বাসিন্দারা কাঠ আর তারের বেড়া দিয়ে তৈরি উঁচু ভাঙাচোরা খাঁচায় মুরগি পুষত।

চতুর্থ দিকের ভবনের ভূগর্ভস্থ ঘরের কালো গর্ত সিঁড়ির দুপাশে হা করে থাকত। ওই গুহার মধ্য থেকে বের হওয়ার কোনো পথ ছিল না; আলোর কোনো ব্যবস্থাও ছিল না; মাটি কেটে কোনো রকম বেড়া না দিয়েই তৈরি। সব সময় আর্দ্রতার ঘাম বের হতো সেখান থেকে। সবুজ ছাতলা ঢাকা গর্তের কাছে পৌঁছতে চার কদম ফেললেই হতো; সেখানকার বাসিন্দারা যখন তখন অতিরিক্ত জিনিসপত্র স্তুপ করে রাখত; তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়; পুরনো বস্তা পচত ওখানে, সিন্দুকের ভাঙা টুকরো, ফুটো ওয়াশবেসিন, আর যেসব জিনিস ভাগাড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় এমনকি যেগুলো হতদরিদ্র মানুষদেরও কোনো কাজে আসে না তেমন জিনিসপত্র। জ্যাক এবং তার খেলার সঙ্গীরা ওখানেই জড়ো হতো। স্পেনীয় নাপিতের দুই ছেলে জাঁ এবং যোসেফ ওখানে খেলতে অভ্যস্ত ছিল। জায়গাটা তাদের জীর্ণ বাড়ির দোর গোড়ায় ছিল বলে এটা ছিল তাদের নিজস্ব এলাকা। নধর চেহারার যোসেফ ছিল হাসিখুশি স্বভাবের এবং তার যা কিছু ছিল সব অন্যদের বিলিয়ে দিতে কোনো কার্পণ্য ছিল না তার।

অন্যদিকে খাটো এবং পলকা জাঁ বাইরে ছোটখাটো পেরেক কিংবা স্ক্রু থেকে শুরু করে যা কিছু পেত কুড়িয়ে সংগ্রহ করত। খুবানির বিচি এবং মার্বেলের ব্যাপারে জাঁ ছিল অতিশয় কৃপণ। ছোটদের অন্যতম প্রিয় খেলায় এগুলোর দরকার হতো। এই ভ্রাতৃজুটির চেয়ে বিপরীত স্বভাবের আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পিয়েরে, জ্যাক এবং ম্যাক্সের মতো সঙ্গীদের নিয়ে তারা ওই আর্দ্র এবং দুর্গন্ধময় গর্ত-ঘরের মধ্যে ঢুকত। সাদা তেলাপোকাকে তারা বলত গিনিপিগ। পচনধরা ছেঁড়া বস্তা থেকে সাদা তেলাপোকা তাড়িয়ে মরচে ধরা খাড়া লোহার খণ্ডের ওপর বিছিয়ে দিয়ে তারা নিজেদের একটা জায়গা তৈরি করত। অবশ্য তখন কারোই এমন কোনো ঘর কিংবা বিছানা ছিল না যেটাকে তারা নিজের বলতে পারত। কুৎসিত ওই তাঁবুর নিচে গিয়ে তারা আগুন জ্বালাত। কিন্তু ওখানকার স্যাঁতসেতে বাতাসে আগুন নিভে যেত এবং প্রচণ্ড ধোঁয়া তৈরি হতো। ফলে তাদের বাধ্য হয়ে ওই গুহা থেকে বের হয়ে আসতে হতো। উঠোন থেকে মাটি খুঁড়ে নিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিত। শেষে তারা ছোট জাঁর কাছ থেকে যুক্তিতর্কের অনেক কসরতের পর পুদিনার স্বাদ জড়ানো মিঠাই, শুকনো লবণাক্ত বাদাম, মটরদানা, লবণ জড়ানো এক ধরনের গোখাদ্যের ফল ইত্যাদি চেয়ে নিত। আরও ছিল গাঢ় রঙে পরিণত হয়ে যাওয়া জবের চিনি। এটা বিক্রি করত আরব দোকানদাররা।

নিকটবর্তী সিনেমা হলের সামনে চাকাঅলা গাড়িতে কাঠের তৈরি বাক্সে করে মাছি ভনভন একটা স্ট্যান্ডের ওপরে খোলা অবস্থায়ও বিক্রি হতো জবের চিনি। খুব বেশি বৃষ্টি হলে উঠোনের পানি গড়িয়ে পড়ত ওই গর্তসদৃস ঘরে। খোলা আকাশ আর সমুদ্রের হাওয়া থেকে বহু দূরে নিজেদের দারিদ্রের রাজ্যে জ্যাক এবং তার বন্ধুরা পুরনো বাক্সপেটরার ওপরে দাঁড়িয়ে রবিনসন ক্রুসো সাজত।
তবে তাদের খেলার সবচেয়ে ভালো সময় ছিল গরমের মৌসুমে। কোনো না কোনো অজুহাতে, মিথ্যে বলে তারা দুপুরের ঘুম ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়ত। তখন তাদের কাছে ট্রলি-বাসে ওঠার মতো টাকা থাকত না বলে তাদের অভিজ্ঞতার পর্যবেক্ষণ চালানোর জায়গা বলে পরিচিত যে বাগানটা ছিল সেখানে যেতে গোটা পথ তাদের হাঁটতে হতো: কাছাকাছি এলাকার হলুদ আর ধূসর রাস্তা পেরিয়ে, ঘোড়ার আস্তাবলপূর্ণ এলাকা পিছে ফেলে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন ঘোড়ার গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রেতাদের দোকান পার হয়ে যেত তারা। ঠেলা দিয়ে খোলার মতো সব দরজার পেছনে মাটিতে ঘোড়ার পদশব্দ শোনা যেত, নাক থেকে হঠাৎ ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস পতনের ফলে ঘোড়াগুলোর ঠোটের ওপরে জোরে শব্দ শোনা যেত।

ঘোড়ার গলার লোহার শিকল জাবনাপাত্রের কাঠের সঙ্গে বাড়ি লেগে শব্দ হতো। ওইসব জায়গা পার হয়ে যেতে যেতে বিষ্ঠার জৈব সার, খড়, ছোটদের জন্য নিষিদ্ধ ওই এলাকা থেকে উত্থিত ঘামের গন্ধ তারা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতে থাকত। এমনকি ঘুমের মধ্যেও জ্যাকের নাকে আসত ওইসব গন্ধ। আস্তাবলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের গতি মন্থর হয়ে যেত; সেখানে ঘোড়াদের দেখাশোনা করা হতো; বড় বড় খুরঅলা ঘোড়াগুলো ফ্রান্স থেকে আনা; রোদের তাপ আর মাছিদের কাছে ঘোড়াগুলো কাবু হয়ে থাকত। ঘোড়াগুলোর চোখের দিকে তাকালে বোঝা যেত নির্বাসনে এসেছে। তারপর গাড়োয়ানরা তাদের তাড়িয়ে দিলে তারা বিরাট একটা বাগানের দিকে দৌড়ে চলে যেত; ওই বাগানে বিরল প্রজাতির গাছপালা জন্মানো হতো। বিরাট জলাধার আর ফুলের ভেতর দিয়ে সমুদ্রের দৃশ্য দেখা যেত একটা বড় পায়েচলা পথ দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে। সেখানেও বাগানের প্রহরীরা তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখত।

যারা আস্তে ধীরে হেঁটে বেড়াতে আসত তাদেরও হাঁটার ধরন বদলে যেত ছোটদের উপস্থিতির কারণে। তবে আড়াআড়ি পথের প্রথমটাতে এসে তারা বাগানের পূর্ব পাশের দিকে পথ ধরত। ওদিকটায় যেতে হতো বিরাট বিরাট ঘন ম্যানগ্রোভ গাছের ভেতর দিয়ে; গাছগুলোর ছায়ায় দিনের বেলাতেই রাত নেমেছে মনে হতো। এরপর তারা বড় বড় রাবার গাছ পেরিয়ে যেত; হরেক রকমের শিকড়ের গাছগুলোর প্রথম ডাল থেকে আরও সব ডালাপালা বের হয়ে মাটি ছুঁয়ে আছে দেখা যেত। সেখান থেকে আরও এগিয়ে যাওয়া লাগত তাদের অভিযানের আসল গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য: তালগাছের মতো লম্বা গাছের মাথায় বড় বড় গোলাকার কমলা রঙের ফলগুলো খুব ঘন হয়ে ঝুলে থাকত। ফলগুলোকে তারা বলত কোকোসেস।

ওখানে পৌঁছে প্রথমে দেখতে হতো আশপাশে কোনো প্রহরী আছে কি না। তারপর শুরু হতো অস্ত্র খোঁজা, মানে ঢিল। পকেট ভর্তি ঢিল যোগাড় করে সবাই ফিরে এলে গাছে গাছে উঁচুতে ঝুলে থাকা থোকাগুলোতে ঢিল ছুড়ত তারা। একেকটা ঢিলে বেশ কয়েকটা করে ফল পড়ত। যার ঢিলে যে ফলগুলো পড়ত সেগুলোর মালিক হতো সেই। তার ফলগুলো কুড়ানো পর্যন্ত অন্যরা অপেক্ষা করত; এরপর আসত তাদের পালা। জ্যাকের হাতের লক্ষ্য খুব পাকা ছিল বলে এই খেলায় সে পিয়েরের সমকক্ষ ছিল। তবে যাদের হাতের লক্ষ্য অতোটা পাকা ছিল না তাদের সঙ্গে জ্যাক এবং পিয়েরে নিজেদের ফলগুলো ভাগাভাগি করে নিত। এই খেলায় সবচেয়ে খারাপ হাত ছিল ম্যাক্সের; তার চোখের দৃষ্টি ছিল দুর্বল এবং চোখে চশমা পড়ত সে। গাট্টাগোট্টা চেহারার ম্যাক্সকে তারা যেদিন প্রথম মারামারির দৃশ্যে দেখেছিল সেদিন থেকে সবাই তাকে সমীহ করে চলত। অন্যরা, বিশেষ করে জ্যাক, মারমুখি মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাস্তায় মারামারির সময়ে প্রচণ্ড বেগে হাত পা ছুড়ে সর্বশক্তি দিয়ে তাকে আঘাত করার চেষ্টাতেও ঝুঁকির মধ্যে থাকত। কারণ মারের প্রতিবাদে ম্যাক্সও কষে মার লাগাতে ওস্তাদ ছিল। ম্যাক্সের নামের উচ্চারণে জার্মান ভাষার ছোঁয়া ছিল বলে কষাইয়ের ছেলে যাকে অন্যরা গিগট বলে ডাকত সে একদিন ম্যাক্সকে ‘শালার হান’ বলে গালি দিয়েছিল। সেদিন উত্তেজনা প্রকাশ না করেই ম্যাক্স চশমা খুলে যোসেফের কাছে রেখে মুষ্টিযোদ্ধাদের স্টাইলে দাঁড়িয়ে গেল; খবরের কাগজে সে মুষ্টিযোদ্ধাদের ওরকম করে দাঁড়ানোর ছবি দেখেছিল আগেই। তারপর গিগটকে তার গালি পুনরায় আওড়াতে আহ্বান করল।

সামান্যতম ঘাম না ঝড়িয়েই গিগটের প্রত্যেকটা আঘাত এড়িয়ে তাকে আচ্ছা মতো কয়েক বার করে ধোলাই দিয়ে দিল। ওদিকে গিগট তাকে আঙুল দিয়ে ছোঁয়ার সুযোগও পেল না। শেষে ঘুষি মেরে গিগটের চোখের কোণে কালো দাগ ফেলে দিয়ে ম্যাক্স সর্বোচ্চ বিজয়লাভ করেছিল সেদিন। সেদিন থেকেই তাদের ক্ষুদে দলে ম্যাক্সের জনপ্রিয়তা সুনিশ্চিত হয়ে গেল। ফলের রসে পকেট আর হাত বোঝাই হয়ে গেলে তারা বাগান ছেড়ে সমুদের দিকে এগোতে থাকত। বাগানের সীমানা পার হয়ে গিয়ে তাদের ময়লাজীর্ণ রুমালে বিছিয়ে ফলগুলো খেতে থাকত। দাঁতের নিচে ফলগুলো যেন বিজয়ের মতোই কড়া মিষ্টি আর রসালো লাগত। তারপর তারা সমুদ্র সৈকতের দিকে ছুটে যেত।

(চলবে)

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad

অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে কৃষকের আত্মহত্যা

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর আত্রাইয়ে শফির উদ্দিন (৭২) নামে এক কৃষকের ঝুলন্ত মরদহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। শনিবার (১৮ মে) সকালে তার নিজ বাড়ি থেকে মরদহ উদ্ধার করা হয়। 

নিহত কৃষক উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ছোটডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত কৃষক শফির উদ্দিন শনিবার সকালে পরিবারের সবার অজান্তে নিজ বাড়ির গোয়াল ঘরের তীরের সাথে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দেন। পরে স্বজনরা তার মরদেহ ঝুলন্ত দেখে পুলিশে খবর দেয় পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে। 

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আত্রাই থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. জহুরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পরিবারের লোকজনের উপর অভিমান করে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মরদেহ উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।’

ট্রোল কখনো পাত্তা দেই না : জেফার

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেফার রহমানের নতুন ইংরেজি গান ‘স্পাইসি’। গানটিতে নার্গিস আক্তারের গাওয়া ‘সোনা বন্ধু তুই আমারে’ গানের দুই লাইন ব্যবহার করা হয়েছে। এই অংশ নিয়ে নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচিত হচ্ছেন জেফার।

গণমাধ্যম অনুযায়ী, এ প্রসঙ্গে জেফার বলেছেন, ‘যে অংশটুকু নিয়ে সমালোচনা করছেন, সেটুকু কিন্তু আমার লেখা, কিংবা সুর করা নয়। লিরিকটা কিন্তু ফুয়াদ ভাইও লেখেন নাই।

এটা অনেক আগের গান। নার্গিস নামের একজনের গাওয়া। ইউটিউবে সার্চ করলেই পাওয়া যাবে। ২০০৬ সালে সেই গানটি ফুয়াদ ভাই কানিজ সুবর্ণাকে নিয়ে প্রথম করেন।

সেই রেফারেন্সটাই ২০২৪ সালে আমার ইংরেজি গানে আনা হয়েছে। অনেকে বুঝতে পারছেন, অনেকে আবার বুঝছেন না। যারা ফুয়াদ ভাইয়ের গান শোনেন, তারা বুঝতে পারছেন।

যারা নতুন বা বয়সে ছোট, তারা বুঝতে পারছে না গানের অংশটুকু রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া সেই সময়ে আমাদের দেশে ইন্টারনেট এত সহজলভ্য ছিল না বিধায় তখন এত কথা হয়নি। এখন মানুষের বলার সুযোগ বেড়েছে।’

ট্রল হওয়া নিয়ে গায়িকার ভাষ্য, ‘একদমই না। ট্রোল কখনো পাত্তা দেই না। আমার যোগ্যতা সম্পর্কে আমি জানি। আমি কী করতে পারি, সেটা কাজের মধ্য দিয়েই প্রমাণ করে আসছি। সামনেও কাজ দিয়েই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে চাই। তাই সমালোচনা নিয়ে আমি কখনো ভাবি না।

তবে আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এই ট্রল নিয়ে নড়েচড়ে যেত। আমাকে এইসব ভাবায় না। আমার চেহারা যেহেতু পরিচিত, তাই সমালোচনাটা আমার ঘাড়ে পড়ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি লজ্জিত নই।’

পলাশবাড়ীতে চাচার ছুরিকাঘাতে ভাতিজির মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে পারিবারিক কলহের জেরে আপন চাচার ছুরিকাঘাতে ভাতিজির মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে উপজেলার রিরামের ভিটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত পাপিয়া জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের বিরামেরভিটা গ্রামের মৃত নুরুল ইসলাম মাস্টারের মেয়ে৷

শনিবার সকালে নিহত পাপিয়ার চাচা রাব্বী মিয়া তার লোকজন নিয়ে পাপিয়াদের পূর্বের বিরোধপূর্ণ জমিতে জোরপূর্বক গাছ রোপন করতে যায়। এতে পাপিয় সহ পরিবারের লোকজন বাধা দিলে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে চাচা রাব্বির হাতে থাকা ছুরি দিয়ে ভাতিজি পাপিয়াকে আঘাত করে৷ এতে পাপিয়া গুরুতর জঘম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এসময় স্বজনরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে পাপিয়ার মৃত্যু হয়৷ ঘাতক রাব্বি একই গ্রামের চান্দু খলিফার ছেলে৷

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) উদয় কুমার বলেন, আমরা এ ঘটনায় পারভিন নামের একজনকে গ্রেফতার করেছি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ সংবাদ

অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে কৃষকের আত্মহত্যা
ট্রোল কখনো পাত্তা দেই না : জেফার
পলাশবাড়ীতে চাচার ছুরিকাঘাতে ভাতিজির মৃত্যু
নরসিংদীতে বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ ৪ জন নিহত
সদস্যপদ ফিরে পেলেন জায়েদ খান, বাতিল হতে পারে নিপুণের
অস্থির ডিমের বাজার, প্রতি ডজনে বেড়েছে ৩০ টাকা
মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল ঝড়ের আঘাতে ৭ জনের মৃত্যু
জিয়াউর রহমান বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন: ওবায়দুল কাদের
মা হারালেন সংগীতশিল্পী মোনালি ঠাকুর
মালয়েশিয়ায় ২ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়ার অভিজ্ঞতা জানালেন বাংলাদেশি শ্রমিক
মসজিদে ভোজের আয়োজন করলেন ডিআইজি বাতেন, ইসিতে অভিযোগ
ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আগুন নিয়ন্ত্রণে
টাঙ্গাইলে ধান কাটতে এসে বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন দুই ভাই
মেসি-বার্সা চুক্তির সেই ন্যাপকিন বিক্রি হলো ১১ কোটি টাকায়
এবার রাজধানীর ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন
কারওয়ান বাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি-বাতাসে রাজধানীতে স্বস্তি
সাতক্ষীরায় ট্রাক উল্টে প্রাণ গেল দুই শ্রমিকের, আহত ১১
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট