মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান

স্বার্থসচেতন লোক একটা।

মালান বলল, আমিই সেই লোক। এরপর দুজনই হাসিতে ফেটে পড়ল। আমার বয়স তখন অল্প। তার সম্পর্কে বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিপরীতধর্মী এমন সব তথ্য পেলাম যে, তার সম্পর্কে আমার নিজের ধারণাই বিভ্রান্ত হয়ে গেল। তাকে আমি ভালোবাসি কি না সে বিষয়েই আর নিশ্চিত থাকতে পারলাম না। শেষে আরেক মহিলাকে বিয়ে করলাম।

কিন্তু আমার প্রেক্ষিত তো আলাদা: আমি তো আর দ্বিতীয় কাউকে বাবা হিসেবে পেতে পারি না।

না, পাওয়া যায় না এবং সেটাই সৌভাগ্যের বিষয়। একজনই যথেষ্ট। আমার অভিজ্ঞতা থেকে সে সিদ্ধান্তই আসে।

ঠিক আছে। যে করেই হোক কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে হবে। তার সঙ্গে দেখা হলে সুযোগ আসতে পারে। আমি তোমার সঙ্গে কথা বললাম, বিশেষ করে কারণ আমার মন বিক্ষিপ্ত ছিল আমার অনুকূলে বয়সের পার্থক্য থাকার কারণে।

হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি।

করমারি মালানের দিকে তাকাল।

মালান বলল, নিজেকে বলো, তিনি বৃদ্ধ হননি। তিনি সেই যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছেন। সেও অনেক দিন হয়ে গেছে।

বেশ কিছু সংখ্যক আনন্দের যোগও আছে তাতে।

হ্যাঁ, তুমি জীবনকে ভালোবাসো। যেহেতু তুমি সেটাই বিশ্বাস করো জীবনকে তোমার ভালোবাসতেই হবে। মালান একটা ছাপা সুতি কাপড়ের ইজি চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়ল। একটা অপ্রকাশ্য বিষাদময়তা তার সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল।

ঠিকই বলেছ। আমি জীবনকে ভালোবেসেছি। আমি জীবনের জন্য ক্ষুধার্ত। একই সময়ে জীবনকে ভয়ঙ্কর আর অপ্রবেশ্যও মনে হয়। সে কারণেই আমি বিশ্বাসী, আবার একই সঙ্গে সংশয়বাদীও। হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করতে চাই; আমি চিরকাল বেঁচে থাকতে চাই। একথা বলার পর সে নীরব হয়ে গেল।

পয়ষট্টি বছর বয়সে প্রত্যেকটা বছরই যেন ফাঁসির জন্য অপেক্ষমাণ সময়। আমি শান্তিতে মারা যেতে চাই। মৃত্যু আমাকে আতঙ্কিত করে তোলে। আমি এ পর্যন্ত নিজের মতো করে কোনো কিছুই সম্পন্ন করতে পারিনি।

পার্থিব জীবনকে অনেকেই প্রমাণ করে দেন। তাদের উপস্থিতি দিয়েই তারা অন্যদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন।

হ্যাঁ, অবশ্যই এবং তারা মৃত্যুবরণ করেন।

দুজনই চুপ হয়ে গেল। ঘরের চার পাশে বাতাস যেন আরো জোরে বইতে থাকল।

মালান বলল, জ্যাক, তোমার কথাই ঠিক। যাও, যতদূর অনুসন্ধান করতে পারো, দেখো। এখন তোমার নিজের জন্য তো আর বাবার দরকার নেই। নিজেকে একাই এতদূর নিয়ে এসেছ। এখন যেহেতু তুমি জানো কিভাবে ভালোবাসতে হয়, তুমি তাকে ভালোবাসতে পারো। তবে...., বলেই মালান একটু থেমে গেল। কিছুটা দ্বিধায় থেকে আবার বলল, আমাকে দেখতে এসো। আমার সময় খুব বেশি নেই। আর আমাকে ক্ষমা করে দিও।

তোমাকে ক্ষমা করতে বলো? আমার সবকিছুর ঋণ তো তোমার কাছে।
না, আমার কাছে তোমার তেমন ঋণ নেই। আমি তোমার ভালোবাসার প্রতি মাঝে মধ্যে সাড়া দিতে পারিনি। সেজন্য ক্ষমা করে দিও।

টেবিলের ওপরে ঝুলন্ত প্রাচীন বাতিটার দিকে তাকিয়ে রইল মালান। তার কণ্ঠটা ফাঁকা শোনাল যখন সে করমারিকে তার শেষ কথাগুলো বলল; করমারি চার পাশের জনশূন্যতার বাতাসে বার বার শুনতেই থাকবে সেই কথাগুলো: আমার ভেতরে ভয়ঙ্কর এক শূন্যতা, ভয়ঙ্কর এই বৈরাগ্য আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।

৪. বালকের খেলা

একটা সংক্ষিপ্ত তরঙ্গবিক্ষোভ জুলাই মাসের কড়া তাপের মধ্য দিয়ে জাহাজটাকে গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার কেবিনে অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে জ্যাক করমারি ঘুলঘুলি পথে সমুদ্রের ওপর ভেঙে পড়া সূর্য-রশ্মির প্রতিফলন দেখছে। হঠাৎ লাফিয়ে উঠে জ্যাক কেবিনের ফ্যানটা বন্ধ করে দেয়; বুকের ত্বকে সুরসুরি তৈরি করার আগেই ফ্যানের বাতাসে লোমকূপের ঘাম শুকিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, ঘেমে যাওয়াটা তেমন খারাপ না, ভালোই তো। সরু এবং শক্ত মঞ্চকের ওপর আরাম করে শুয়ে পড়ে সে। বিছানা এরকম শক্তই হওয়া উচিত। বিশাল সেনাবহিনীর অবিরাম মার্চ করে যাওয়া শব্দের মতো জাহাজের গভীর তলদেশ থেকে ইঞ্জিনের চাপা কম্পনের একঘেয়ে ভোঁতা শব্দ ছড়িয়ে পড়ছে। এরকম বড় স্টিমারের তৈরি দিন রাত অবিরাম শব্দ এবং জীবন্ত আগ্নেয়গিরির ওপর হেঁটে বেড়ানোর মতো অনুভূতিও তার বেশ পছন্দ, বিশেষ করে যখন দৃষ্টির সামনে বিশাল সমুদ্রের এই খোলা দৃশ্যপট ভেসে আসে। তবে ডেকের ওপরে খুব গরম পড়েছে। ডেকের যেটুকুর ওপরে ছাউনি আছে সে জায়গাটাতে চেয়ারে ঢলে পড়েছে যাত্রীরা: দুপুরের খাবারের প্রতিক্রিয়া নেশার মতো তাদের কাবু করে ফেলেছে। কিংবা কেউ কেউ ডেকের নিচে চলাচলের রাস্তার দিকে দৌড়ে চলে গেছে দিবানিদ্রার ব্যবস্থা খুঁজতে। দিবানিদ্রা জ্যাকের পছন্দ নয়। আলজিয়ার্সে থাকাকালীন নানি তাকে তার সঙ্গে দুপুর বেলা ঘুমোতে বাধ্য করতেন।

ছোটবেলায় নানি তাকে উদ্ভট একটা উপাধিতে ডাকতেন। সেই উদ্ভট বেনিডোর নামটা কাঁটার মতো মনে পড়ে যায়: আলজিয়ার্সের ওই বাড়িটার তিনটা রুমই সযত্নে ফেলা ঝাঁপের আড়ালে বন্ধ থাকত। বাইরে ধূলিময় রাস্তা যেন সূর্যের প্রখর তাপে ভাজা ভাজা হতো। আর ঘরের মধ্যে আধো আলোয় দুয়েকটা বিশাল আকৃতির মাছি বের হয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আপ্রাণ চেষ্টায় উড়োজাহাজের মতো উড়ড়ে উড়তে ভনভন করতে থাকত। এত গরমে পারদাইলান কিংবা ল’ইন্ট্রিপাইড পড়া যেতো না। কখনও কখনও নানি বাড়িতে না থাকলে কিংবা প্রতিবেশির সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত থাকলে ছোট জ্যাক রাস্তার দিকে মুখ করা শোবার ঘরের ঝাঁপের ফুটোয় নাক গলিয়ে দিত। রাস্তা তখন জনমানবহীন। রাস্তার ওপারে জুতার দোকান এবং জামাকাপড়ের দোকানের সামনে লাল আর হলুদ রঙের মোটা খড়খড়ি নামানো থাকত। তামাকের দোকানের সামনে বিভিন্ন রঙের গুটিগুটি নকশার পর্দা ফেলা থাকত। জাঁর ক্যাফেটেরিয়া থাকত একেবারে ফাঁকা; ঘুণ-ঢাকা মেঝে আর ধূলিময় ফুটপাতের মাঝখানে দরজার চৌকাঠের ওপর একটা বিড়াল ঘুমিয়ে থাকত; দেখে মনে হতো বিড়ালটা মরে গেছে।

জ্যাক তখন ফিরে যেত সাদা রঙ করা রুমটাতে; সেখানে আসবাবপত্র বলতে খুব অল্পই ছিল: মাঝখানে একটা গোলাকার টেবিল, দেয়ালের পাশ ঘেঁষে একটা দেরাজ, আঁকিবুকি আর কালির দাগ লাগা একটা ডেস্ক, পাঁচটা চেয়ার আর মেঝের ওপরে কম্বলঢাকা একটা জাজিম–রাতে সেখানে জ্যাকের আধো-বোবা মামা ঘুমাত। এক কোণে দেয়ালের তাকে ছিল সরু গলাঅলা একটা ফুলদানি; এরকম ফুলদানি শুধু মেলায় দেখতে পাওয়া যায়। বাইরের প্রখর সূর্যালোক আর ভেতরের আবছা আবদ্ধ ঘরের মতো দুটো মরুভূমির মধ্যে আটকা পড়ে টেবিলটার চারপাশে দ্রুত পায়ে ঘুরতে ঘুরতে জ্যাক গির্জার পুরোহিতের মতো গাইত–আমি ক্লান্ত, আমি ক্লান্ত। সে ক্লান্ত; তবু তার ওই ক্লান্তি আর একঘেয়েমির মধ্যে একটা খেলা ছিল; এক ধরনের উত্তেজনা ছিল। কারণ নানি যখন তাকে বেনিডোর বলে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকতেন তখন তার ওপরে যেন বয়সের ভার নেমে আসত। তবে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে যেত। নানি নয় জন ছেলেমেয়ে লালন পালন করেছেন। কীভাবে বাচ্চাদের বড় করতে হয় সে বিষয়ে তার নিজস্ব ধ্যান ধারণা ছিল।

এক ধাক্কাতেই নানি তাকে শোয়ার ঘরে ঢুকিয়ে দিতেন। শোয়ার দুটো ঘর উঠোনমুখী। তার মধ্যে ওটা একটা। অন্য ঘরটায় দুটো বিছানা: একটা তার মায়ের, আরেকটাতে থাকত তারা দুভাই। আর একটা ঘর ছিল নানির নিজের। কিন্তু নানি রাতে মাঝে মাঝে এবং দুপুরের ঘুমের সময় প্রতিদিনই তার ঘরে নিয়ে যেত। সেখানে ছিল কাঠের একটা উঁচু বিছানা। স্যান্ডেল খুলে উঠতে হতো সেই বিছানায়। একবার নানি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় জ্যাক চুপি চুপি নেমে গিয়ে টেবিলের চার পাশে ঘুরতে ঘুরতে পুরোহিতের গানের মতো তার সেই গান গাইতে শুরু করেছিল। সেই থেকে জ্যাকের জায়গা হলো বিছানার দেয়াল ঘেঁষা পেছন পাশটায়। সে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লে নানি পোশাক বদল করতেন: পরনের ফিতা দিয়ে বাঁধা পাটের তৈরি মোটা কামিজটা খুলে ফেলতেন। তারপর বিছানায় উঠে আসতেন। জ্যাকের নাকে লাগত বয়স্ক মানুষের মাংসের গন্ধ। নানির পায়ের বার্ধক্যজনিত কুৎসিত দাগ আর মোটা নীল শিরার দিকে তাকিয়ে থাকত জ্যাক। ঘুমাও বেনিডোর, বলে নানি খুব দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়তেন। আর জ্যাক খোলা চোখে রুমের ভেতরে বড় বড় মাছিদের যাওয়া আসা দেখত।

হ্যাঁ, সেই সময়ে বহু বছর এবং বড় হয়েও অনেক দিন জ্যাক ওই সময়ের অভিজ্ঞতাটা ঘৃণা করে এসেছে। খুব বেশি মাত্রায় অসুস্থ না হলে গরমের মৌসুমে বিছানায় হাত ছড়িয়ে কখনও শোয়নি জ্যাক। তারপরও যদি কখনও হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছে তাহলে জেগে উঠেছে বিতৃষ্ণা নিয়ে। শুধু সাম্প্রতিক সময়ে রাতের অনিদ্রার কারণে দিনের বেলা আধাঘন্টার মতো ঘুমিয়ে সতেজতা এনেছে। বেনিডোর!

সূর্যের আলোর চাপে বাতাস মনে হয় পড়ে এসেছে। জাহাজ এখন মৃদু গড়িয়ে চলা থামিয়ে সোজা এগিয়ে চলছে। ইঞ্জিন এখন পূর্ণ গতিতে আছে। জাহাজের পাখা পানির গভীর তলদেশ খুঁড়ে চলছে। পিস্টনের শব্দ একটানা হচ্ছে বলে সমুদ্রের পানির ওপরে পতিত সূর্যের নরম আলো থেকে এই শব্দ আলাদা করা যাচ্ছে না। জ্যাক আধো ঘুম আধো জাগরণে; আলজিয়ার্সের পুরনো এবং হতদরিদ্র বাড়িতে ফিরে যাওয়ার বিষয়টা তাকে কিছুটা সুখি অস্থিরতায় ফেলে দিয়েছে। প্যারিস ছেড়ে আফ্রিকায় যাওয়ার সময় প্রতিবারই এরকম অনুভূতি কাজ করেছে তার মধ্যে: গোপন আনন্দে হৃদয় ভরে উঠেছে। পালানোর চেষ্টা সফলতায় পরিণত করার বিষয়টাও সন্তুষ্টির আবেশ তৈরি করেছে। আর পাহারাদারদের মুখের চেহারা মনে আসায় তার হাসি পাচ্ছে। ঠিক এভাবেই প্রতিবার বাসযোগে কিংবা ট্রেনে প্যারিসে ফিরে আসার পর তার মন বিষন্ন হয়ে যেত। কীভাবে এমন হতো সেটা তার জানার বাইরে থেকে গেছে। ওই সব দিনগুলোতে শহরের বাইরে অবস্থিত সামনে গাছপালাহীন বাড়িঘর হতভাগ্য ক্যান্সারের মতো কদর্যতা আর দারিদ্রের স্নায়ুগ্রন্থি পর্যন্ত পৌছে যেত যেন তার ওই পরবাসী শারীরিক অস্তিত্বকে একাত্ব করে নেয়ার জন্য এবং তাকে নগরের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ইট-কাঠের অরণ্য তাকে রাত দিন বন্দি করে রাখত।

এমনকি তার নিদ্রাহীনতাকেও আক্রমণ করত সেই অরণ্য। তবে ইট-কাঠের সেই অরণ্য তার মন থেকে মুছে দিত সেখানকার এক মঞ্চসজ্জা। অবশেষে সে পালিয়ে আসতে পেরেছে। সমুদ্রের বিশাল পৃষ্ঠদেশে সূর্যের দোলায় দোলায়িত ঢেউয়ের ওপর সে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। অবশেষে সে ঘুমাতে পেরেছে, যে বাল্যকাল থেকে সে কখনওই মুক্তি পায়নি সেখানে সে ফিরে আসতে পেরেছে, আলোর গোপন গহনে ফিরে আসতে পেরেছে, যে দারিদ্র তাকে সব বাঁধা অতিক্রম করার শক্তি দিয়েছে সেই উষ্ণ দারিদ্রের আলোর কাছে ফিরে আসতে পেরেছে। ঘুলঘুলির তামার ওপরে পতিত বিচুর্ণ প্রতিফলন এখন প্রায় অনড়; সেই প্রতিফলন এসেছে ওই একই সূর্য থেকে যে সূর্য সর্বশক্তি নিয়ে সেই অন্ধকার রুমের ঝাঁপের ওপর পতিত হতো। সেই অন্ধকার রুমে ঘুমিয়ে থাকতেন নানি। আর ঝাঁপের ধাতুপাতে হঠাৎ উত্থিত গ্রন্থি-সৃষ্ট একটা ফুটো দিয়ে অন্ধকারের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতেন একটা সরু তরবারি। মাছিগুলোকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। মাছিগুলো জ্যাকের স্বপ্নপ্রয়াণের বাসিন্দা হয়নি কিংবা স্বপ্নপ্রয়াণকে পুষ্টিদান করেনি। সমুদ্রে মাছি নেই। তা ছাড়া শব্দ তৈরি করার কারণে যে মাছিগুলোকে বালক জ্যাক ভালোবাসত সেগুলো তো মৃত; ওই জগতের সব জীবনধারী গরমের কারণে চেতনানাশিত। আর শুধু সে নিজে ছাড়া সব মানুষ এবং প্রাণী যার যার কুক্ষির ওপরে অসাড় হয়ে পড়ে থাকত। সত্যিই দেয়াল আর নানির মাঝখানে বিছানার সরু ওই জায়গাটাতে সে এপাশ ওপাশ করতে থাকত আর বেঁচে থাকার আকাঙ্খা পোষণ করত। মনে হতো, ঘুমের সময়টাকে যেন তার বেঁচে থাকার সময় আর খেলার সময় থেকে বিয়োগ করে দেওয়া হচ্ছে। খেলার সঙ্গীরা নিশ্চয়ই তার জন্য রিউ প্রিভোষ্ট-পোরাডোলে অপেক্ষা করত। পানি ঢালার কারণে পাশের বাগান থেকে সন্ধ্যার সময় সোঁদা গন্ধ বের হতো ওখানে। পানি ঢালার কারণে হোক আর না-ই হোক মৌমাছির চাকের গন্ধও পাওয়া যেত; কারণ ওখানে যত্রতত্র মৌমাছির চাকও তৈরি হতো। নানি জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জ্যাক দৌড়ে বের হয়ে যেত রিউ ডি লিওনের দিকে; তখনও সেখানে ডুমুর গাছের নিচটা ফাঁকা। তারপর দৌড়ে প্রিভোষ্ট-পোরাডোলের ফোয়ারার কাছে গিয়ে ঢালাই লোহার হাতল ঘুরিয়ে পানির ধারার নিচে মাথা এগিয়ে দিত। নাকের ছিদ্র, কান, শার্টের খোলা গলা এবং পেটের ওপর দিয়ে গড়িয়ে তার পায়ের স্যান্ডেল পর্যন্ত গিয়ে ঠেকত পানি।

পায়ের তলার ত্বক আর স্যান্ডেলের চামড়ার মাঝখানে পানির প্যাচপেচে অনুভূতি তার মনে আনন্দের আমেজ ছড়িয়ে দিত। জ্যাক তখন দৌড়তে থাকত পিয়েরে এবং অন্যদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য। ওরা রাস্তার ধারের একমাত্র দোতলা বাড়ির ঢোকার পথে একটা হল রুমে অপেক্ষা করত। জ্যাক ওখানে পৌঁছে দেখত, ওরা সিগারের আকৃতির কাঠের একটা টুকরো ঘষে ঘষে সমান করছে; ব্যাডমিন্টনের ব্যাটের মতো কাঠের একটা ব্যাট আর ওই টুকরোটা দিয়ে তারা কানেত্তি ভিঙা খেলত।

(চলবে)

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার

ছবি: সংগৃহীত

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) সদস্যদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘পুলিশ পরিচয়ে’ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন কমিশনার মো. মজিদ আলী। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আচরণ সর্বক্ষেত্রে পেশাদার ও সংবেদনশীল হতে হবে।

সোমবার (৩০ জুন) আরপিএমপির মাসিক কল্যাণ সভায় পুলিশ কমিশনার এই নির্দেশনা দেন।

কমিশনার বলেন, "পুলিশ সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের পেশাগত পরিচয় ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।"

তিনি আরও যোগ করেন, সদস্যদের অনলাইন জিডি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে, যাতে জনগণ আরও দ্রুত ও কার্যকর সেবা পায়।

সভায় কমিশনার মজিদ আলী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, দায়িত্ব পালনে সতর্কতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা জরুরি। পুলিশ সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, "পুলিশের দায়িত্ব শুধু আইন প্রয়োগ নয়, এটি একটি জনসেবামূলক পেশা।"

সভায় আগের মাসের কল্যাণ সভায় উত্থাপিত বিভিন্ন সমস্যা ও সুপারিশের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। অনেক বিষয় সমাধানের নির্দেশও দেন কমিশনার।

এ সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) নরেশ চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) সফিজুল ইসলাম, উপপুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) হাবিবুর রহমান, উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) তোফায়েল আহম্মেদ, এবং উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুর রশিদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন
বিরামপুরে ১৭০তম সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালন