৭ দিনের নোটিশে চাকরি হারাবেন সরকারি চাকুরেরা, আসছে সংশোধিত আইন

ছবি: সংগৃহীত
সরকার চাইলে এখন থেকে মাত্র ৭ দিনের নোটিশে কোনো তদন্ত ছাড়াই সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত বিধান যুক্ত করে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধনে উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সংশোধিত আইনের খসড়া প্রস্তুত হয়ে গেছে এবং তা শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। পরে অধ্যাদেশ আকারে এটি জারি করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রস্তাবিত এই বিধানের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, গুরুতর অনিয়ম, দুর্নীতি, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি কিংবা সরকারবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বর্তমান আইনের আওতায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শাস্তি কার্যকরে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে, যা প্রশাসনের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ, অরাজকতা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর প্রবণতা বাড়ছে। অনেকেই কর্মস্থলে না গিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, এমনকি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অথচ বর্তমান আইনে দীর্ঘ তদন্ত ছাড়া শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না, যা সরকারকে ব্যর্থতার মুখে ফেলছে।
এই প্রেক্ষাপটে নতুন আইনটি জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছে সরকার। তারা বলছে, আইন সংশোধনের মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ তৈরি হলে প্রশাসনে কার্যকারিতা বাড়বে এবং অনিয়মের লাগাম টানা সম্ভব হবে।
মন্ত্রণালয়ের মতে, এই আইনটির অনুপ্রেরণা এসেছে ১৯৭৯ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় প্রণীত একটি অধ্যাদেশ থেকে, যেখানে ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলে চাকরি থেকে অব্যাহতির বিধান ছিল।
তবে প্রস্তাবিত এই সংশোধনী ঘিরে সরকারি মহলে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেক কর্মকর্তা এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী বললেও, কেউ কেউ এটিকে সরকারি চাকরিজীবীদের ওপর একটি চাপ ও ভয়ভীতির নতুন অস্ত্র হিসেবে দেখছেন। তাদের আশঙ্কা, এই বিধান ভবিষ্যতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার হতে পারে এবং স্বাধীন মত প্রকাশের পরিবেশকে সংকুচিত করতে পারে।
সংশোধিত আইনে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত ছাড়াও শুনানি শেষে সরকার চাইলে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, প্রকাশ্যে বা গোপনে সভা-সমাবেশ করা, বা কর্তব্যে অবহেলা—এসব বিষয়কে আরও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান পদ্ধতিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ২-৩ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। এই সময় অভিযুক্তরা নানা উপায়ে প্রভাব খাটিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন, ফলে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন এই আইন বাস্তবায়িত হলে সেই দীর্ঘসূত্রতা দূর হবে এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
