রবিবার, ৫ মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

বঙ্গবন্ধুর কূটনীতি এবং বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান

ডিসেম্বর মাস। আমাদের মহান বিজয় দিবসের মাস। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাত থেকে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশকে ছিনিয়ে আনার সফলতা ঘটে এই মাসে। এই মাসের ১৬ তারিখে পাকিস্তানী সেনাদের আত্মসমর্পণ পরিসমাপ্তি টানে এদেশে পাকিস্তানী শাসন ও শোষণের। বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। সবুজের মাঝে লাল সূর্যের পতাকা বাংলাদেশের সমগ্র আকাশ ছেয়ে ফেলে। মুক্তিপাগল মানুষের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলার আকাশ-বাতাস, সবুজ প্রান্তর আর সাগর-নদীর জলরাশি।

বাংলাদেশ তার স্বাধীন সত্ত্বায় প্রতিষ্ঠিত। বিজয়ের আনন্দে সকলেরই দিশেহারা হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মুক্তির সেই আনন্দ অনেকটাই নিষ্প্রভ হয়ে আছে। তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে পাকিস্তানের কারাগারে ফাঁসির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। কি করে তারা বিজয়ের উল্লাস করবে? তাঁর মুক্তি ছাড়া যে মুক্তিযুদ্ধ অসমাপ্ত। তাঁকে যে মুক্ত করে আনতেই হবে।সাড়ে সাত কোটি মানুষের হৃদয়ের আর্তনাদে সৃষ্টিকর্তা সাড়া দিলেন।পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁর প্রিয় জন্মভূমির মাটি স্পর্শ করলেন। দেশের মানুষ তাঁদের প্রিয় নেতাকে পেয়ে ১৬ ডিসেম্বরের জমানো আনন্দে এবার বাংলার মাটিকে কাঁপিয়ে দিলো।

বঙ্গবন্ধুর স্পর্শে একটি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নতুন প্রাণের জাগরণ ঘটলো। যুদ্ধের বিভীষিকা ভুলে তিনি দেশের আপামর জনগণকে নিয়ে নেমে পড়লেন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কাজে। দেশপ্রেমের বজ্র কঠিন শক্তিতে উজ্জীবিত সেই আত্মপ্রত্যয়ী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মহান নেতা দ্রুততম সময়ে প্রণয়ন করলেন দেশের সংবিধান এবং পররাষ্ট্র নীতি। বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা-২৫ অনুযায়ী বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি হলো জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা।

বলতে গেলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই, যদিও তখন দেশের কোনো সংবিধান বা পররাষ্ট্রনীতি তৈরি হয়নি। সেই কূটনৈতিক তৎপরতা মূলত ছিল আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি বিভিন্ন দেশের সমর্থন,পাকিস্তানের জেল থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বীকৃতি প্রদানকে কেন্দ্র করে। সেই প্রয়াসে যুক্ত ছিলেন যেমন রাজনীতিবিদরা, তেমনি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত বাঙালিরা। এছাড়া ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ কয়েকটি বন্ধু দেশের তৎপরতাও চলমান ছিল।

বঙ্গবন্ধুর কূটনীতির প্রথম উদাহরণটি ছিল ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে বঙ্গবন্ধুকে দেয়া পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর নৈশভোজের সময় জনাব ভুট্টোর বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান মিলে একটি কনফেডারেশনের প্রস্তাবটি, যার উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে তিনি প্রথমে তাঁর জনগণের সঙ্গে দেখা করবেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করবেন, তারপরেই তিনি বিষয়টি জানাতে সক্ষম হবেন। মুক্তি পেয়েই তিনি পাকিস্তান থেকে ৮ জানুয়ারি লন্ডন পৌঁছেন এবং সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন রাখেন যেন তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং দ্রুত জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়। লন্ডনে তিনি প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হোটেলে দেখা করতে এসেছিলেন ব্রিটেনের বিরোধী দলের নেতা হ্যারল্ড উইলসন এবং কমনয়েলথের মহাসচিব আরনল্ড স্মিথ। সেদিনই তিনি মিঃ স্মিথকে কমনওয়েলথে বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার ইচ্ছাটি জানিয়ে দিয়েছিলেন। এভাবেই শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক তৎপরতা।

বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর একটি কমেট বিমানে ১০ জানুয়ারি তিনি লন্ডন থেকে দিল্লিতে যাত্রা বিরতি করে ঢাকা ফেরেন। দিল্লিতে তাঁর ওই যাত্রা বিরতি ছিল ভারত সরকার এবং জনগণকে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে। দিল্লি থেকে ঢাকা ফেরার পথে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গীরা ভেবেছিলেন ব্রিটিশ বিমানের পরিবর্তে ভারতের বিমানে ফিরবেন এবং সেমতে সকল লাগেজ ব্রিটিশ বিমান থেকে নামিয়ে নেয়া হয়েছিল। খবরটি বঙ্গবন্ধুর কানে আসা মাত্রই তিনি জানিয়ে দেন যে তিনি ব্রিটিশ বিমানেই ঢাকা ফিরবেন। সেদিন ওই সিদ্ধান্তে, যথা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতাকে আঘাত না করা এবং ভারতকে নিয়ে অযথা সমালোচনার সুযোগ না দেয়া,বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক দূরদর্শিতাই প্রকাশ পেয়েছিল।

৬ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ তারিখে বঙ্গবন্ধুর কোলকাতা সফরটি ছিল তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। ওই সফরে বাংলাদেশ থেকে মার্চের মধ্যে সকল ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয় এবং সে মোতাবেক ১৫ মার্চের মধ্যেই প্রত্যাহার সমাপ্ত হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে তিনি মস্কো সফর করেন। ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে আসেন। সেসময় দুদেশের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং শান্তি বিষয়ক চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। লন্ডনে চিকিৎসা শেষে কয়েকদিন জেনেভা সরকারের অতিথি হয়ে বিশ্রামের পর ১৩ সেপ্টেম্বর সেখান থেকে দেশে ফেরার পথে দিল্লীতে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করার জন্য যাত্রা বিরতি করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ আইএমএফ, আইএলও, আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়ন, ইউনেস্কো, কলম্বো প্ল্যান এবং গ্যাট –এর সদস্য লাভ করে। ওই বছর বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি এবং প্যাট্রিস লুমুম্বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি পদক প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সফরে আসেন জাতিসংঘের মহাসচিব এবং যুগোস্লাভিয়ার প্রধানমন্ত্রী।প্রেসিডেন্ট টিটোর আমন্ত্রণে যুগোস্লাভিয়া সফর করা ছাড়াও তিনি আগস্টে অটোয়ায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে এবং সেপ্টেম্বরে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। ন্যাম সম্মেলনের সময় তিনি বাদশাহ ফয়সাল, প্রেসিডেন্ট টিটো, প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাদ, প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন, প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি এবং প্রধানমন্ত্রী তাকেদ্দিন স্লথ প্রমুখ ব্যাক্তিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে বৈঠকের সময় বাংলাদেশের নামের সাথে 'ইসলামিক' শব্দ যুক্ত করার বাদশাহের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিকভাবে উল্লেখ করেন যে সৌদি আরবের নামের সাথে 'কিংডম' রয়েছে, কোনো 'ইসলামিক' শব্দ নেই। বঙ্গবন্ধু অক্টোবর মাসে জাপান সফরে যান। ওই বছর তিনি স্বল্প সময়ের জন্য মালয়েশিয়ায় যাত্রা বিরতি করেছিলেন।

পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদেরকে প্রত্যাবাসনের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘ মহাসচিব এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর ১৬৮ জন বাঙ্গালির দলটি বাংলাদেশে ফিরে আসার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই বছর বাংলাদেশ এডিবি, আইসিএও, ইকাফ এবং ফাও –এর সদস্য পদ লাভ করে।   

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে আসেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট, ওআইসি মহাসচিব, মিসরের প্রেসিডেন্ট, আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট, ভারতের রাষ্ট্রপতি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট, পূর্ব জার্মানির প্রধানমন্ত্রী, মালয়েশিয়ার রাজা এবং ভুটানের রাজা। বঙ্গবন্ধু লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান ছাড়াও পাঁচ দিনের সফরে ভারত যান এবং সীমানা চিহ্নিতকরণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেন। ওই সময় তিনি প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া তিনি ওই বছর ইরাক, মিসর, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যান। বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়।

 

১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী, জাপানের যুবরাজ এবং আফগানিস্তনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেন। বঙ্গবন্ধু এপ্রিল মাসে জ্যামাইকা যান কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য।বাংলাদেশ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যপদ লাভ করে। 

 

জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে জুলাই ১৯৭৫, মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পঞ্চাশটির মতো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের সফরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক সফর অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সহযোগিতার নানা বিষয়ে সত্তরটির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।

বঙ্গবন্ধু একদিকে যেমন ধনতান্ত্রিক বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, তেমনি সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকেও বন্ধুত্বের বন্ধনে বেঁধেছিলেন। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গেও তিনি গভীর ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন । এসবের মূলে কাজ করেছে তাঁর পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক কথা- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান। বঙ্গবন্ধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করতেন সারা বিশ্বের নির্যাতিত, নিষ্পেষিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের, উত্তর বা দক্ষিণের, যে কোনো ধর্ম বা বর্ণের মানুষের উপর শোষণ বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে তিনি দ্বিধা করেননি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমন একজন বিশ্ব নেতা যিনি সবসময়ই পরাধীন জাতি ও শোষিতদের মুক্তির জন্য কথা বলতেন। তিনি যেমন আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, অবসান চেয়েছেন এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় বিদেশি শাসনের, তেমনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন,গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সাইপ্রাস সরকারকে উৎখাতের নিন্দা করেছেন।   

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যে আকাশচুম্বী সাফল্য রেখে গেছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অদ্বিতীয় উদাহরণ হয়েই রইবে। তিনি পাকিস্তানের স্বীকৃতিও আদায় করে ছেড়েছেন। তিনি ধনতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক- এই ত্রিধারার বিশ্বের সকল প্রান্তের ছোটবড় সব দেশের সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত স্থাপন করে গেছেন। শুধু নেতৃত্বই নয়,আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও কূটনৈতিক নিপুনতা বাংলাদেশকে বিশ্ব সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে রেখে গেছে।বঙ্গবন্ধু শুধু একজন নেতা,রাষ্ট্রনায়ক বা শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বরই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক বিরল কূটনৈতিক প্রতিভার অধিকারী।

 

লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত

Header Ad

সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী

ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ১৫ ঘন্টা পর আজ (রবিবার) সকালে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া ছিলা এলাকায় লাগা আগুন নেভাতে কাজ শুরু ফায়ার সার্ভিস। আজ সকাল ৯টা থেকে আগুন নেভাতে বনরক্ষী-ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি এ কাজে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার।

শুরুতেই নৌবাহিনীর মোংলা ঘাঁটির লেফটেনেন্ট কমান্ডার আরফাতুল আরেফিনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি ফায়ার ফাইটিং টিম আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়েন। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পাশের ভোলা নদী থেকে পানি ওঠানোর জন্য পাইপ সংযোগ দেন। তবে নদীতে জোয়ার না থাকায় পানি সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মামুন আহমেদ জানান, সকালেই সুন্দরবনের আগুন নেভাতে তাদের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসেছে। এর মধ্যে মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার তিনটি ইউনিট কাজ শুরু করেছে। বাকি দুটি ইউনিট স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। তবে বনের পাশে ভোলা নদীতে এখন ভাটা থাকায় আগুন নেভানোর কাজে পাইপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নেওয়া যাচ্ছে না। জোয়ার হলে এগুলো পার করা হবে। তবে আগুন অল্প অল্প করে জ্বলছে। শুকনো পাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করার শঙ্কা নেই।

শনিবার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করতে পারেনি। এর আগে শনিবার দুপুরে স্থানীয় গ্রামবাসী ও বনরক্ষীরা বনের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি এলাকায় আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া দেখতে পায়।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ‘রোববার সকাল ৮টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট সুন্দরবনের ভোলা নদী থেকে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছে। যে সব স্থানে আগুনের ধোঁয়া ও কুণ্ডলী দেখছে সেখানে পানি ছেটানো হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বনবিভাগ ও গ্রামবাসী আগুন নেভাতে কাজ করছে। কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে। আগুন পুরোপুরি না নির্বাপণ পর্যন্ত তারা কাজ করবে।’

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার (৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন বনাঞ্চলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান তারা। পরে বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে বালতি ও কলসি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন।

এদিকে আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে হেলিকপ্টার এসে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনাস্থলের উপরে চক্কর দিয়ে চলে গেছে বলে নিশানবাড়িয়া ইউপি সদস্য আবু তাহের মিনা জানিয়েছেন।

এদিকে, আগুন লাগার কারণ, কী পরিমাণ এলাকায় আগুন লেগেছে ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বনবিভাগ। চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেবকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন জিউধারা স্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম।। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

 

গাজায় দেড় লাখের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী পানিশূন্যতায় ভুগছেন

ছবি: সংগৃহীত

হামাসের হামলার প্রতিশোধে ফিলিস্তিনের গাজায় সাত মাসের বেশি সময় ধরে নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞ যেন থামছেই না। প্রতিদিনই ফিলিস্তিনি জনগণ হত্যার শিকার হচ্ছে। এ সংঘাত পুরো বিশ্বে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে নতুন খবর সামনে এসেছে।

ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় দিন দিন পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। এতে দেড় লাখেরও বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে গাজায় লাখ লাখ অন্তঃসত্ত্বা বা স্তন্যপান করানো নারী প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছেন না। তারা স্যানিটেশন সমস্যায়ও ভুগছেন। সেখানে বলা হয়, ঐ নারীদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার নারী রয়েছেন, যারা খুব কঠিন সময় পার করছেন। তাদের বেশির ভাগই পানিশূন্যতায় ভুগছেন বলে জানানো হয়েছে।

ইউএনআরডব্লিউ-এর তথ্যানুযায়ী, গাজায় গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি নারীর প্রাণহানি হয়েছে। ১৯ হাজার ফিলিস্তিনি নারী আহত হয়েছেন। যেসব নারী মারা যাচ্ছেন তাদের অনেকেই সন্তানের মা। ফলে গড়ে প্রতিদিন মা হারাচ্ছে অন্তত ৩৭ ফিলিস্তিনি শিশু।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পালটা অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। অভিযানের নামে সেখানে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরায়েলি বাহিনী। বিশ্ব জুড়েই গাজা সংঘাত বন্ধের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বরং রাফা এবং অন্যান্য শহরে হামলার তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার।

 

স্বামীর সঙ্গে অভিমানে নববধূর আত্মহত্যা

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর শাজাহানপুরের শহীদবাগে স্বামীর সঙ্গে অভিমানে মিম আক্তার (১৭) নামে এক নববধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যার দিকে শাহজাহানপুরে এই ঘটনাটি ঘটে। পরে অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৮ টার দিকে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মিম আক্তার শেরপুরের শ্রীবরদী থানার কর্ণছড়া গ্রামের ইউসুফ মিয়ার মেয়ে। স্বামীর সাথে শাজাহানপুরের বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি।

নিহত নববধূর মা আমেনা বেগম জানান, আমার এক ছেলে এক মেয়ের মাঝে মিম ছিল বড়। আমি মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করি। মিমের বাবা একটি বাড়িতে নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করেন। মাত্র দুই মাস আগে নিজের পছন্দে বিয়ে করে মিম।

তিনি আরও জানান, গত দুইদিন আগে মিমের কথা স্বামী না শুনলে অভিমান করে আমার বাড়িতে চলে আসে। আজ কাজ শেষে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে দেখি আমার মেয়ে টিনশেডের ঘরে আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঝুলে আছে। পরে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, আমার মেয়ে মিম আর বেঁচে নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম জানান, ওই গৃহবধূর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসা করে আমরা জানতে পেরেছি, পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর ওপর অভিমানে তিনি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

সর্বশেষ সংবাদ

সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী
গাজায় দেড় লাখের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী পানিশূন্যতায় ভুগছেন
স্বামীর সঙ্গে অভিমানে নববধূর আত্মহত্যা
নারী এমপিকে মাদক খাইয়ে যৌন হেনস্তা
নীলক্ষেতে দুই রেস্টুরেন্টে আগুন
খাগড়াছড়িতে টিনের চালে বজ্রপাত, ঘরসহ পুড়ে ছাই মা-ছেলে
যুদ্ধে বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রকেও পাত্তা দিচ্ছে না দখলদার ইসরায়েল
সুন্দরবনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু
ঢাকা সফরে আসছেন আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপ
কেমন থাকবে আজকের আবহাওয়া, যা জানাল আবহাওয়া অফিস
আজ থেকে খুলছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
মিল্টন সমাদ্দারের মানবিকতার আড়ালে প্রতারণা, যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন
যুক্তরাষ্ট্রের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে: ইরান
নিজের মান ইজ্জত রক্ষা করুন, মন্ত্রী-এমপিদের প্রতি ইসি রাশেদা
উদ্যোক্তারাই দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির কাণ্ডারী : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
টানা ৬ দিন হতে পারে ঝড়বৃষ্টি জানাল আবহাওয়া অফিস
সেই ভাইরাল নেতা পাকিস্তান জামায়াতের আমির নির্বাচিত
টানা ৮ দফা কমার পর বাড়ল স্বর্ণের দাম
দিয়াবাড়ির লেক থেকে ২ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
রাজধানীবাসীর জন্য সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস