শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Dhaka Prokash

রেনু থেকে আমাদের বঙ্গমাতা

রেনু গোলাপ গঞ্জের টুঙ্গি পাড়ায় ১৯৩০ সনের ৮ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তিন বছর বয়সে বাবাকে হারান, মাকে হারান পাঁচ বছর বয়সে। তিনি দাদার আদরে বড় হয়েছেন এবং দাদা তার দুই নাতনিকে সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর মাতা ও পিতা বাবা-মা হারা পুত্রবধু রেনুকে তাদের কাছে নিয়ে এনে পরম আদর-যত্নে বড় করতে থাকেন। তাদের স্নেহ-মমতায় রেনুকে পিতা-মাতার অভাব তেমন অনুভব করতে হয়নি। সকলের প্রিয় রেনু বঙ্গবন্ধুর ভাই-বোনদের সঙ্গে একই পরিবারিক আদর্শ বেড়ে উঠেন।

রেনুর শ্বশুর-শাশুড়ি তাদের ছেলে সম্পর্কে জানতেন। তার রাজনৈতিক আদর্শ, দেশপ্রেমের বিষয়টি তারা বুঝতেন। তিনি যে একদিন বাংলার কাণ্ডারি হবেন, এতে তাদের কারোরই কোনো সন্দেহ ছিল না। এমন একজন ব্যক্তির জন্য যে উপযুক্ত জীবনসঙ্গী সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেটিও তারা ভালোভাবেই বুঝেছিলেন। আর সে লক্ষ্য নিয়েই বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতা পুত্রবধূ রেনুকে শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধুর মতো দেশপ্রেমিক নেতার উপযুক্ত সঙ্গী হিসেবে গড়ে তোলেন। রেনুও তার পরবর্তী জীবনে সে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট বেবী মওদুদ ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনে মাইলস্টোনে ফজিলাতুনেসা রেনু’ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনসঙ্গী ফজিলাতুন নেসা রেনু শৈশবে বাবা-মা হারালে বঙ্গবন্ধুর মা তাকে পুত্রবধূ করে নিজের কাছে রেখে শিক্ষা-দীক্ষায় উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন। গ্রামে জন্ম, গ্রামীণ জীবনধারায় লালিত-পালিত হলেও দিনে দিনে রেনু একজন আদর্শ ও মমতাময়ী নারীর প্রতিকৃতি হয়ে ওঠেন। শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা- আস্থা এতটাই গভীর ছিল যে, তিনি নীরবে নিভৃতে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা- ভাবনার অংশীদার হয়ে উঠেছিলেন। পরম প্রিয় ভালোবাসার এই জীবনসঙ্গীকে শেখ মুজিব তার জীবনের সব খুঁটিনাটি কথা শোনাতেন। তার রাজনৈতিক দর্শন ও স্বপ্নের বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে প্রস্তুত করে তোলেন। রেনু ছিলেন অসীম ধৈর্য, উপস্থিত জ্ঞানসম্পন্ন এক প্রেমিময়ী স্ত্রী ও মমতাময়ী জননী। পুত্রবধূ হিসেবে রেনু তার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে জীবন চলার এই পাঠকে অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে রপ্ত করতে পেরেছিলেন তার স্বভাবাজাত বুদ্ধিমত্তা দ্বারা।

বেবী মওদুদ আরও লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্য, জন্মদাতা পিতা-মাতা স্নেহ, যত্ন ও পরিচর্যা যেমন ছিল, তেমনি তাদের পরে তার জীবনসঙ্গী রেনুর ছিল সজাগ দৃষ্টি। তিনি বঙ্গবন্ধুর মিশন ও ভিশনকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করেছিলেন।

বঙ্গমাতা অত্যন্ত ধৈর্যশীল ছিলেন। ছোট্ট রেনুর বিয়ে হলে, বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতা রেনুকে আদর-যত্নে বেড়ে ওঠায় সাহায্য করেন এটি যেমন সত্য, তেমনি রেনু তার দাম্পত্য জীবনে স্বামীকে একটানা কাছে পাননি, এটিও সত্য। স্বামীকে কাছে না পাওয়ার ধৈর্যের পরীক্ষায়ও তিনি উর্ত্তীণ হয়েছেন।

কারাগারে থাকাকালীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য বঙ্গমাতা সন্তানদের নিয়ে কারাগারে যেতেন। কারাগারে সাক্ষাতের সময় অতিক্রান্ত হলেও অবুঝ সন্তানরা বাবাকে ছেড়ে ফিরতে চাইত না। বিশেষ করে শেখ রাসেলের বায়না এবং তাকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসাটা বঙ্গমাতার জন্য যেমন ছিল কষ্টের, তেমনি তারা চলে যাওয়ার পর জেলখানার ছোট্ট একটি কক্ষে রাতযাপন ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য আরো বেদনার। জাতির পিতা এবং বঙ্গমাতা দেশের প্রতি, দেশের মানুষের জন্য যে ত্যাগ করেছেন তার তুলনা তারা নিজেরাই। ইতিহাস খুঁজে দ্বিতীয় পাওয়া যাবে না।

বঙ্গবন্ধু ১৭ বার কারাগারে যান। এই সময়ে দীর্ঘ ৩০৫৩ দিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়। নাসিমা বেগম, ‘রেনু থেকে বঙ্গমাতা’। অথচ বঙ্গমাতা রেনুর জীবনে স্বামীকে কাছে না পাওয়ার যে দীর্ঘ সময় কারাগারে থামতে হয়। আমরা দেখতে পেলাম এবং এটি মেনে নিয়ে আমরণ বঙ্গবন্ধুর পাশে ছায়ার মতো থেকে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তার কোনো তুলনা নেই। তিনি স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কখনো কোনো বিরোধিতা তো করেইনি; বরং তার অনুপস্থিতিতে সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্বামীর খাবার নিয়মিত জেলখানায় পাঠিয়েছেন। কতটা ধৈর্যশীল হলে নিজের চাওয়া-পাওয়া তুচ্ছ করে এ ধরনের সহযোগিতা করা সম্ভব, তা সহজেই অনুমেয়।

বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর সকল কাজের প্রেরণাদাত্রী ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সাহস দিয়ে, শক্তি দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতেন। তিনি কখনোই বঙ্গবন্ধুকে পেছনে টেনে ধরেননি। তার জীবনে শত যন্ত্রণার ভেতরও ভেঙে পড়েননি। আমরা জানি, বঙ্গমাতা রেনু এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবের শৈশব কেটেছে একসঙ্গে। বড় হয়েছেন একই পরিবারে। তাদের স্বভাব ও চরিত্র প্রায় একই। অভিন্ন সামাজিক মূল্যবোধ, মানবিক গুন, শুভবুদ্ধি ও সামাজিক কল্যাণে উদ্বুুদ্ধ ছিলেন দুজনেই। তারা দুজনেই মানুষকে ভালোবেসে অপরের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সচেষ্টা ছিলেন। মানুয়ের আপদে-বিপদে, রোগে-শোকে তাদের পাশে দাঁড়াতেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ দুটির রচনা প্রসঙ্গে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘আমার মায়ের প্রেরণা ও অনুরোধে আব্বা লিখতে শুরু করেন। তিনি যতবার জেলে গেছেন আমার মা খাতা কিনে জেলে পৌঁছে দিতেন। আবার যখন মুক্তি পেতেন, তখন খাতাগুলি সংগ্রহ করে মা নিজের কাছে সযত্নে রেখে দিতেন। তার এই দূরদর্শী চিন্তা যদি না থাকতো তাহলে এই মূল্যবান লেখা আমরা জাতির কাছে তুলে দিতে পারতাম না।’

কারাগারের রোজনামচা’র ভূমিকা লিখতে গিয়ে কন্যা শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং কারাগরে বন্দি করে রাখে। এরই একটি পর্যায়ে তারা এক মাসে ১৯ বার জায়গা বদল করেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাননি, তারা ধরা পড়ে যান এবং তাদের ধানমন্ডি ১৮ নম্বর থেকে সড়কে (বর্তমানে ৯/এ ২৬ নম্বর বাড়ি) একটি একতলা বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়।

রাজনীতি বঙ্গবন্ধুর জীবনের সঙ্গ এমনভাবে জড়িয়েছিল যে, বারবার তাকে কারাবরণ করতে হতো। আর এ সময় বঙ্গমাতা অত্যন্ত শক্তহাতে দলের হাল ধরতেন। সংসার পরিচালনার পাশাপাশি তিনি দলের নোতাকর্মীদের সঙ্গে যোাগাযোগ রাখা শুরু করতেন। তিনি ধীরস্থির এবং প্রচণ্ড মানসিক শক্তির অধিকারী ছিলেন। বিপদে-আপদে, দুঃখ-বেদনায় কখনো ভেঙে পড়েননি। বরং সেখান থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যায় তার সঠিক পথ তিনি খুঁজে বের করতেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা তোফায়েল আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অনেক সময়ে দলের নেতাকর্মীরাও গ্রেপ্তার হতেন। যখন মাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ থাকতো না, বঙ্গমাতা দলের সারথির ভূমিকায় থাকতেন। কারাগারে যতবার তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছেনম ততবারই তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে কথা বলার আগে দলের সংবাদ পরিবেশন করেছেন। আর বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে প্রাপ্ত বার্তা তিনি গোপনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিকট তা পৌঁছে দিতেন। তিনি নিজের ভালো-মন্দের কথা চিন্তা করেন নাই। চিন্তা করেছেন দেশ, জাতিকে নিয়ে। তিনি চিন্তা করেছেন দল, আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগকে নিয়ে। এভাবে তিনি রেনু থেকে হয়ে যান সবার বঙ্গমাতা।

তিনি ছিলেন কোমলে-কঠোর এক শুদ্ধ নারী। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সকল করে সকল প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে শুধু এগিয়ে গিয়েছেন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সাহস নিয়ে সকল লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে বাংলা ও বাঙালির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে থেকে ভালোবেসেছেন সংসার-জীবন। জীবনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দুঃখ-কষ্ট সয়ে জীবন সমর্পিত করেছেন দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, অসামান্য আত্মত্যাগ ও অসাধারণ অবদানের জন্যে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে শহিদ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

বঙ্গমাতা একদিন ড. নীলিমা ইব্রাহিমকে বললেন, “নিজের ভাইকে বানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু আর আমাকে বঙ্গমাতা, বেশ আমি বুঝি ‘বঙ্গবান্ধবী’ হতে পারি না। এতই কী বুড়ো হয়েছি।” তবে রেনু কৌতুক করে যা-ই বলুন না কেন, তিনি আমাদের বঙ্গমাতা থেকে গিয়েছেন এবং থাকবেনও।
বঙ্গবন্ধুর স্বীকারোক্তিতেই আছে। ১৯৭২- এর ২ মার্চ আজিমপুর গার্লস স্কুলে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন-

“আমি আমার জীবনে দেখেছি আমি বুলেটের সামনে এগিয়ে গেলেও আমার স্ত্রী কোনোদিন বাধা দেননি। আমি দেখেছি ১০/১১ বছর জেলখানায় থাকলেও তিনি কোনোদিন মুখ খুলে প্রতিবাদ করেননি। যদি তিনি তা করতেন তাহলে আমি জীবনে অনেক বাধার মুখোমুখি হতাম। এমন অনেক সময় ছিল যখন আমি জেলে যাবার সময় আমার সন্তানদের জন্য একটি পয়সাও রেখে যেতে পারিনি। আমার নিরন্তর সংগ্রামী জীবনে তার প্রচুর অবদান আছে।”

বঙ্গবন্ধুর নিজের ভাষায় “রেনু আমার পাশে না থাকলে, আমার সব দুঃখ-কষ্ট অভাব অনটন, বারবার কারাবরণ, ছেলে মেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না।”

রেনু তার জীবনের শেষ অগ্নিপরীক্ষা দিলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বেগম মুজিবকে ঘাতকরা বলল, আমাদের সাথে চলেন। তিনি বললেন, ‘তোমাদের সাথে কোথাও যাব না। তাকে মেরেছে, আমাকেও গুলি কর। আমি এক পা-ও নড়ব না।’ ঘাতকের হাতের বন্দুক গর্জে উঠল। বত্রিশ নম্বরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল তার দেহে। তার শরীরের রক্ত গড়িয়ে গিয়ে মিশে যায় সিঁড়িতে পড়ে থাকা স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রক্তের সাথে। আর সে রক্তের শ্রোতধারা গড়িয়ে মিশে যায় বাংলার মাটিতে।

যিনি বঙ্গবন্ধুর শৈশবের সঙ্গী থেকে জীবনসঙ্গী হয়েছেন। সবশেষে একই সাথে বঙ্গবন্ধুর সাথে মৃত্যুতে আলিঙ্গন করেন। ভাবলে বিস্ময় জাগে এক আটপৌরে সাধারণ চিরায়ত মাতৃরূপে যিনি হাজারো বাঙালি হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে আছেন। যতই দিন যাচ্ছে এই মহীয়সী নারীর প্রজ্ঞা এবং সাহসিকতার আলোর বিচ্ছুরণ ঘটছে। তেজস্বিনী অথচ চলনে বলনে এক সাধারণ গৃহবধূ। সেই গৃহবধূ রেনু আজ আমাদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব।

ড. মাহবুবা রহমান, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা।

এসএন

Header Ad

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের হাতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল।

এ সময় নিহত আবু সাঈদের বৃদ্ধ বাবা মকবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে আরেকদিন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে। সেই সময় ভিসি স্যার আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি স্যারকে বলেছিলাম আমাদের পরিবারের একজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয়। ভিসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন। প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ না কেউ খোঁজ রেখেছেন।

এ ছাড়া পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই সহায়তা করছেন বলেও জানায় আবু সাঈদের পরিবার।

মকবুল হোসেন আরও বলেন, আমার কলিজার টুকরা ছিল আবু সাঈদ। তার প্রাইভেট পড়ানোর (টিউশনের) জমানো টাকায় আমার সংসার চলতো। সন্তান হারিয়েছি, এ শোকের কোনো সান্ত্বনা নেই। বাবা হয়ে সবচেয়ে ভারী কাজ হলো সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া।

এখন শুধু সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান বৃদ্ধ এ বাবা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, ভিসি মহোদয়ের নির্দেশে আবু সাঈদের বাবা-মায়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় যোগাযোগ রাখছে। ভিসি স্যার নিজেও সাঈদের পরিবারের খোঁজ রাখছেন, পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে আজকে সাড়ে সাত লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারে দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ নিহত হন। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলাজুড়ে। নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০৯টি। নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২০৯টি মামলায় ২৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সারাদেশে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। অভিযানে ঢাকায় ৬৩ ও ঢাকার বাইরে ২০৩ জনসহ মোট ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এদিকে আজ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত অনেকবার গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা বা দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুলিশের কারণে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য তারা এবার পুলিশকেই টার্গেট করেছে।

যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, স্বপ্নের মেট্রোরেলসহ সরকারি স্থাপনায় নাশকতা চালিয়েছে। যারা এসবের নেতৃত্ব দিয়েছে, অর্থ আদান-প্রদান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’

বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক বলেছেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটা শতকরা পাঁচ ভাগ রেখেছে। এটি মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু পরিষ্কার হওয়া দরকার, বাকি পদে কাদের নেওয়া হবে। আমরা বাকি ৯৫ শতাংশ কোটা নিয়ে আদালতের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় বোঝাপড়া করব।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনায় সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনাসভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এই পাঁচদোনা মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। স্মৃতিধন্য এই স্থানে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। দুঃখের বিষয়, সেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সেই হামলা চালানো হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী ও বিএনপির ক্যাডাররা মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সেই গর্বের ধন আজ পরাজিত শক্তির কাছে আক্রান্ত হচ্ছে।

এসময় তিনি রাজাকারদের তালিকা প্রস্তুত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, কোটার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মতামত গ্রহণের জন্যও আদালতকে অনুরোধ জানানো হবে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটিও আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হবে।

তিনি বলেন, যারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা কখনো ছাত্র হতে পারে না। বিএনপি, জামায়াত ও রাজাকারের দল এ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। তাদের কার্যকলাপে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যারা আঘাত করেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডার।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান খান, নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো, পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ প্রমুখ।

সর্বশেষ সংবাদ

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭
‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’
কোটা আন্দোলনে নিহত রুদ্রের নামে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকের নামকরণ
সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ কোটি টাকা লোকসান
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ-পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা জারি
রিমান্ড শেষে কারাগারে নুরুল হক নুর
ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই সরকারের: মির্জা ফখরুল
নরসিংদী কারাগার থেকে লুট হওয়া ৪৫ অস্ত্র উদ্ধার
বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত
মোবাইল ইন্টারনেট কবে চালু হবে, জানাল বিটিআরসি
পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ: ডিবি হারুন
মৃত্যুর দিনক্ষণ গোপন রাখা হয়েছে যে কারণে
অলিম্পিক উদ্বোধনের আগেই প্যারিসে উচ্চগতির রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা
তারেক রহমানের নির্দেশেই রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
শিক্ষার্থীদের হত্যা করে সরকারের ওপর দায় চাপানো হয়েছে: ওবায়দুল কাদের
‘বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ত ঝরছে’, মমতাকে কড়া বার্তা দিল্লির
বাজারে সরবরাহ বাড়লেও সবজির দামে এখনো অস্বস্তি