শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ | ৭ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

রেনু থেকে আমাদের বঙ্গমাতা

রেনু গোলাপ গঞ্জের টুঙ্গি পাড়ায় ১৯৩০ সনের ৮ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তিন বছর বয়সে বাবাকে হারান, মাকে হারান পাঁচ বছর বয়সে। তিনি দাদার আদরে বড় হয়েছেন এবং দাদা তার দুই নাতনিকে সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর মাতা ও পিতা বাবা-মা হারা পুত্রবধু রেনুকে তাদের কাছে নিয়ে এনে পরম আদর-যত্নে বড় করতে থাকেন। তাদের স্নেহ-মমতায় রেনুকে পিতা-মাতার অভাব তেমন অনুভব করতে হয়নি। সকলের প্রিয় রেনু বঙ্গবন্ধুর ভাই-বোনদের সঙ্গে একই পরিবারিক আদর্শ বেড়ে উঠেন।

রেনুর শ্বশুর-শাশুড়ি তাদের ছেলে সম্পর্কে জানতেন। তার রাজনৈতিক আদর্শ, দেশপ্রেমের বিষয়টি তারা বুঝতেন। তিনি যে একদিন বাংলার কাণ্ডারি হবেন, এতে তাদের কারোরই কোনো সন্দেহ ছিল না। এমন একজন ব্যক্তির জন্য যে উপযুক্ত জীবনসঙ্গী সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেটিও তারা ভালোভাবেই বুঝেছিলেন। আর সে লক্ষ্য নিয়েই বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতা পুত্রবধূ রেনুকে শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধুর মতো দেশপ্রেমিক নেতার উপযুক্ত সঙ্গী হিসেবে গড়ে তোলেন। রেনুও তার পরবর্তী জীবনে সে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট বেবী মওদুদ ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনে মাইলস্টোনে ফজিলাতুনেসা রেনু’ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনসঙ্গী ফজিলাতুন নেসা রেনু শৈশবে বাবা-মা হারালে বঙ্গবন্ধুর মা তাকে পুত্রবধূ করে নিজের কাছে রেখে শিক্ষা-দীক্ষায় উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন। গ্রামে জন্ম, গ্রামীণ জীবনধারায় লালিত-পালিত হলেও দিনে দিনে রেনু একজন আদর্শ ও মমতাময়ী নারীর প্রতিকৃতি হয়ে ওঠেন। শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা- আস্থা এতটাই গভীর ছিল যে, তিনি নীরবে নিভৃতে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা- ভাবনার অংশীদার হয়ে উঠেছিলেন। পরম প্রিয় ভালোবাসার এই জীবনসঙ্গীকে শেখ মুজিব তার জীবনের সব খুঁটিনাটি কথা শোনাতেন। তার রাজনৈতিক দর্শন ও স্বপ্নের বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে প্রস্তুত করে তোলেন। রেনু ছিলেন অসীম ধৈর্য, উপস্থিত জ্ঞানসম্পন্ন এক প্রেমিময়ী স্ত্রী ও মমতাময়ী জননী। পুত্রবধূ হিসেবে রেনু তার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে জীবন চলার এই পাঠকে অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে রপ্ত করতে পেরেছিলেন তার স্বভাবাজাত বুদ্ধিমত্তা দ্বারা।

বেবী মওদুদ আরও লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্য, জন্মদাতা পিতা-মাতা স্নেহ, যত্ন ও পরিচর্যা যেমন ছিল, তেমনি তাদের পরে তার জীবনসঙ্গী রেনুর ছিল সজাগ দৃষ্টি। তিনি বঙ্গবন্ধুর মিশন ও ভিশনকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করেছিলেন।

বঙ্গমাতা অত্যন্ত ধৈর্যশীল ছিলেন। ছোট্ট রেনুর বিয়ে হলে, বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতা রেনুকে আদর-যত্নে বেড়ে ওঠায় সাহায্য করেন এটি যেমন সত্য, তেমনি রেনু তার দাম্পত্য জীবনে স্বামীকে একটানা কাছে পাননি, এটিও সত্য। স্বামীকে কাছে না পাওয়ার ধৈর্যের পরীক্ষায়ও তিনি উর্ত্তীণ হয়েছেন।

কারাগারে থাকাকালীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য বঙ্গমাতা সন্তানদের নিয়ে কারাগারে যেতেন। কারাগারে সাক্ষাতের সময় অতিক্রান্ত হলেও অবুঝ সন্তানরা বাবাকে ছেড়ে ফিরতে চাইত না। বিশেষ করে শেখ রাসেলের বায়না এবং তাকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসাটা বঙ্গমাতার জন্য যেমন ছিল কষ্টের, তেমনি তারা চলে যাওয়ার পর জেলখানার ছোট্ট একটি কক্ষে রাতযাপন ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য আরো বেদনার। জাতির পিতা এবং বঙ্গমাতা দেশের প্রতি, দেশের মানুষের জন্য যে ত্যাগ করেছেন তার তুলনা তারা নিজেরাই। ইতিহাস খুঁজে দ্বিতীয় পাওয়া যাবে না।

বঙ্গবন্ধু ১৭ বার কারাগারে যান। এই সময়ে দীর্ঘ ৩০৫৩ দিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়। নাসিমা বেগম, ‘রেনু থেকে বঙ্গমাতা’। অথচ বঙ্গমাতা রেনুর জীবনে স্বামীকে কাছে না পাওয়ার যে দীর্ঘ সময় কারাগারে থামতে হয়। আমরা দেখতে পেলাম এবং এটি মেনে নিয়ে আমরণ বঙ্গবন্ধুর পাশে ছায়ার মতো থেকে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তার কোনো তুলনা নেই। তিনি স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কখনো কোনো বিরোধিতা তো করেইনি; বরং তার অনুপস্থিতিতে সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্বামীর খাবার নিয়মিত জেলখানায় পাঠিয়েছেন। কতটা ধৈর্যশীল হলে নিজের চাওয়া-পাওয়া তুচ্ছ করে এ ধরনের সহযোগিতা করা সম্ভব, তা সহজেই অনুমেয়।

বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর সকল কাজের প্রেরণাদাত্রী ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সাহস দিয়ে, শক্তি দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতেন। তিনি কখনোই বঙ্গবন্ধুকে পেছনে টেনে ধরেননি। তার জীবনে শত যন্ত্রণার ভেতরও ভেঙে পড়েননি। আমরা জানি, বঙ্গমাতা রেনু এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবের শৈশব কেটেছে একসঙ্গে। বড় হয়েছেন একই পরিবারে। তাদের স্বভাব ও চরিত্র প্রায় একই। অভিন্ন সামাজিক মূল্যবোধ, মানবিক গুন, শুভবুদ্ধি ও সামাজিক কল্যাণে উদ্বুুদ্ধ ছিলেন দুজনেই। তারা দুজনেই মানুষকে ভালোবেসে অপরের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সচেষ্টা ছিলেন। মানুয়ের আপদে-বিপদে, রোগে-শোকে তাদের পাশে দাঁড়াতেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ দুটির রচনা প্রসঙ্গে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘আমার মায়ের প্রেরণা ও অনুরোধে আব্বা লিখতে শুরু করেন। তিনি যতবার জেলে গেছেন আমার মা খাতা কিনে জেলে পৌঁছে দিতেন। আবার যখন মুক্তি পেতেন, তখন খাতাগুলি সংগ্রহ করে মা নিজের কাছে সযত্নে রেখে দিতেন। তার এই দূরদর্শী চিন্তা যদি না থাকতো তাহলে এই মূল্যবান লেখা আমরা জাতির কাছে তুলে দিতে পারতাম না।’

কারাগারের রোজনামচা’র ভূমিকা লিখতে গিয়ে কন্যা শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং কারাগরে বন্দি করে রাখে। এরই একটি পর্যায়ে তারা এক মাসে ১৯ বার জায়গা বদল করেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাননি, তারা ধরা পড়ে যান এবং তাদের ধানমন্ডি ১৮ নম্বর থেকে সড়কে (বর্তমানে ৯/এ ২৬ নম্বর বাড়ি) একটি একতলা বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়।

রাজনীতি বঙ্গবন্ধুর জীবনের সঙ্গ এমনভাবে জড়িয়েছিল যে, বারবার তাকে কারাবরণ করতে হতো। আর এ সময় বঙ্গমাতা অত্যন্ত শক্তহাতে দলের হাল ধরতেন। সংসার পরিচালনার পাশাপাশি তিনি দলের নোতাকর্মীদের সঙ্গে যোাগাযোগ রাখা শুরু করতেন। তিনি ধীরস্থির এবং প্রচণ্ড মানসিক শক্তির অধিকারী ছিলেন। বিপদে-আপদে, দুঃখ-বেদনায় কখনো ভেঙে পড়েননি। বরং সেখান থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যায় তার সঠিক পথ তিনি খুঁজে বের করতেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা তোফায়েল আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অনেক সময়ে দলের নেতাকর্মীরাও গ্রেপ্তার হতেন। যখন মাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ থাকতো না, বঙ্গমাতা দলের সারথির ভূমিকায় থাকতেন। কারাগারে যতবার তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছেনম ততবারই তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে কথা বলার আগে দলের সংবাদ পরিবেশন করেছেন। আর বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে প্রাপ্ত বার্তা তিনি গোপনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিকট তা পৌঁছে দিতেন। তিনি নিজের ভালো-মন্দের কথা চিন্তা করেন নাই। চিন্তা করেছেন দেশ, জাতিকে নিয়ে। তিনি চিন্তা করেছেন দল, আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগকে নিয়ে। এভাবে তিনি রেনু থেকে হয়ে যান সবার বঙ্গমাতা।

তিনি ছিলেন কোমলে-কঠোর এক শুদ্ধ নারী। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সকল করে সকল প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে শুধু এগিয়ে গিয়েছেন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সাহস নিয়ে সকল লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে বাংলা ও বাঙালির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে থেকে ভালোবেসেছেন সংসার-জীবন। জীবনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা দুঃখ-কষ্ট সয়ে জীবন সমর্পিত করেছেন দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, অসামান্য আত্মত্যাগ ও অসাধারণ অবদানের জন্যে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে শহিদ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

বঙ্গমাতা একদিন ড. নীলিমা ইব্রাহিমকে বললেন, “নিজের ভাইকে বানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু আর আমাকে বঙ্গমাতা, বেশ আমি বুঝি ‘বঙ্গবান্ধবী’ হতে পারি না। এতই কী বুড়ো হয়েছি।” তবে রেনু কৌতুক করে যা-ই বলুন না কেন, তিনি আমাদের বঙ্গমাতা থেকে গিয়েছেন এবং থাকবেনও।
বঙ্গবন্ধুর স্বীকারোক্তিতেই আছে। ১৯৭২- এর ২ মার্চ আজিমপুর গার্লস স্কুলে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন-

“আমি আমার জীবনে দেখেছি আমি বুলেটের সামনে এগিয়ে গেলেও আমার স্ত্রী কোনোদিন বাধা দেননি। আমি দেখেছি ১০/১১ বছর জেলখানায় থাকলেও তিনি কোনোদিন মুখ খুলে প্রতিবাদ করেননি। যদি তিনি তা করতেন তাহলে আমি জীবনে অনেক বাধার মুখোমুখি হতাম। এমন অনেক সময় ছিল যখন আমি জেলে যাবার সময় আমার সন্তানদের জন্য একটি পয়সাও রেখে যেতে পারিনি। আমার নিরন্তর সংগ্রামী জীবনে তার প্রচুর অবদান আছে।”

বঙ্গবন্ধুর নিজের ভাষায় “রেনু আমার পাশে না থাকলে, আমার সব দুঃখ-কষ্ট অভাব অনটন, বারবার কারাবরণ, ছেলে মেয়ে নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি আজ বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না।”

রেনু তার জীবনের শেষ অগ্নিপরীক্ষা দিলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বেগম মুজিবকে ঘাতকরা বলল, আমাদের সাথে চলেন। তিনি বললেন, ‘তোমাদের সাথে কোথাও যাব না। তাকে মেরেছে, আমাকেও গুলি কর। আমি এক পা-ও নড়ব না।’ ঘাতকের হাতের বন্দুক গর্জে উঠল। বত্রিশ নম্বরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল তার দেহে। তার শরীরের রক্ত গড়িয়ে গিয়ে মিশে যায় সিঁড়িতে পড়ে থাকা স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রক্তের সাথে। আর সে রক্তের শ্রোতধারা গড়িয়ে মিশে যায় বাংলার মাটিতে।

যিনি বঙ্গবন্ধুর শৈশবের সঙ্গী থেকে জীবনসঙ্গী হয়েছেন। সবশেষে একই সাথে বঙ্গবন্ধুর সাথে মৃত্যুতে আলিঙ্গন করেন। ভাবলে বিস্ময় জাগে এক আটপৌরে সাধারণ চিরায়ত মাতৃরূপে যিনি হাজারো বাঙালি হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে আছেন। যতই দিন যাচ্ছে এই মহীয়সী নারীর প্রজ্ঞা এবং সাহসিকতার আলোর বিচ্ছুরণ ঘটছে। তেজস্বিনী অথচ চলনে বলনে এক সাধারণ গৃহবধূ। সেই গৃহবধূ রেনু আজ আমাদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব।

ড. মাহবুবা রহমান, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা।

এসএন

Header Ad
Header Ad

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক এনসিপির

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন শুক্রবার (২১ মার্চ) জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের আহ্বান জানান।

এ সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের গণহত্যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও এখনো তাদের বিচারিক কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার আগে এ দলের সাথে সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে যেন রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না দেয়া হয়, সেই জন্য অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, “শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানই নয়; শাপলা চত্বরে গণহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ভোট ডাকাতি, গুম, খুনসহ সব অপরাধের প্রকাশ্যে বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়, তারা নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত হয়নি; ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা পরাজিত হয়েছে। পুরোপুরি ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাই।”

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হবে কি না, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যেরও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত।”

তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ: নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিক্ষোভ। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নতুন করে গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে নেতানিয়াহুর পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।

বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় গাজা অভিযানের কারণে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, হামাসের হাতে থাকা সমস্ত বন্দিকে উদ্ধার না করে গাজায় নতুন করে আক্রমণ চালিয়ে ভুল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গাজায় হামাসের হাতে এখনো প্রায় ৫৯ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ২০ জন এখনো জীবিত। নেতানিয়াহুর অভিযান চলতে থাকলে বেঁচে থাকা বন্দিদেরও হত্যার শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জনগণ।

বিক্ষোভের সময় মোহাম্মদ রনেন বারকে নিরাপত্তা প্রধানের পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেতানিয়াহুর সরকার। এ সিদ্ধান্তকে সুপ্রিমকোর্ট সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে এবং রনেন বারের আপিলের শুনানি শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

রনেন বার অভিযোগ করেছেন, “নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে নয়।” তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, “উচ্চপদস্থ অফিসারকে সরানোর এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ ভুল।”

এদিকে, বিক্ষোভের দায় বামপন্থিদের উপর চাপিয়ে নেতানিয়াহু দাবি করেছেন যে, 'ডিপস্টেট' চক্রান্তের মাধ্যমে এ আন্দোলন সংগঠিত করা হচ্ছে।

তবে বিক্ষোভকারীরা স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং বন্দিদের উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার করবেন। নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করেছে, যা নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ আরো বেড়েছে।

সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের অধিকাংশ মানুষ চান সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তি মেনে আলোচনা চালিয়ে বন্দি প্রত্যার্পণ সম্পন্ন হোক। নেতানিয়াহুর নতুন করে আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্তে তাদের সমর্থন নেই।

Header Ad
Header Ad

শেখ হাসিনার মতো নব্য ফ্যাসিবাদীরা জাতীয় পার্টিকে ব্ল্যাকমেইল করছে: জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের অভিযোগ করেছেন, শেখ হাসিনার মতো নব্য ফ্যাসিবাদীরাও জাতীয় পার্টিকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে। শুক্রবার (২১ মার্চ) সন্ধ্যায় রংপুরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, শেখ হাসিনার ব্ল্যাকমেইলের কারণে তিনি মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। বর্তমানে নব্য ফ্যাসিবাদীরা জাতীয় পার্টিকে ঘিরে দুর্নীতির মিথ্যা তথ্য তৈরি করছে। একইভাবে ২০১৪ সালেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্ত করা হয়েছিল। তিনি দুইটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কেউ কোনো দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারেনি।

পুলিশ বিভাগের অবনতি নিয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পুলিশ নষ্ট হয়ে গেছে এবং এখন সেনাবাহিনীকে নষ্ট করার চেষ্টাও চলছে। যদি সেনাবাহিনীও নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে দেশের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব কে নেবে?”

এ সময় তিনি সেনাপ্রধানের পদত্যাগ চাওয়া উচিত নয় বলে উল্লেখ করেন।

জি এম কাদের আরও বলেন, শেখ হাসিনা বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করেছে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে জোরপূর্বক নির্বাচন করতে চাচ্ছে। যদি এমনটি ঘটে, তাহলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না এবং দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে জাতীয় পার্টি নয়।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক এনসিপির
ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ: নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ
শেখ হাসিনার মতো নব্য ফ্যাসিবাদীরা জাতীয় পার্টিকে ব্ল্যাকমেইল করছে: জি এম কাদের
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের মিছিল, যুবলীগ নেত্রীসহ আটক ৩
তাসকিনের আইপিএল অভিষেকের সম্ভাবনা, যোগাযোগে মিলেছে ইতিবাচক সাড়া!
স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসনের সুযোগ পায়, এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না: তারেক রহমান
ট্রেনের ১৩০ টিকিটসহ নৌবাহিনী কর্মচারী আটক
জনগণ সুযোগ দিলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিএনপির কিছু বলার নেই: রিজভী
বিচারের আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ নেই : মামুনুল হক
টাঙ্গাইলে আগুনে পুড়ল ২১ দোকান, ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি
ব্যাংককে ড. ইউনূস-মোদির মধ্যে বৈঠক হচ্ছে না
রাত ১টার মধ্যে ৯ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা
পৃথিবীর সর্বত্র আজ দিন-রাত সমান
নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০
বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি
বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল
হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড, হাজার হাজার যাত্রী আটকা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ট্রাম্পের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে: হোয়াইট হাউস
ওমরাহ থেকে ফিরে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা বর্ষার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে এক সপ্তাহে ২৪৯ অপরাধী গ্রেপ্তার