শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর এত দুরবস্থা কেন?

আমরা যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ি তখন একটি সিনেমার গান খুব হিট করেছিল, সিনেমার নামটি সম্ভবত ‘অশিক্ষিত’। নায়িকা গ্রাম থেকে ঢাকার সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়েছে। গানটি ছিল ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, লাল লাল নীল নীল বাতি দেইখা পড়ান জুড়াইছে, মাটি ফাইটা বৃষ্টির পানি ঝরঝড়াইয়া পড়ে, আজব এই শহরে।’

আজব এই শহর! একবার একজন এনজিও নেতা বলেছিলেন নারী পল্লীতে অপুষ্টিতে ভোগা মেয়েরা ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে পুরুষ আকর্ষণের চেষ্টা করে কিন্তু তাদের শরীরে রয়েছে অপুষ্টির ছাপ। ঢাকা সিটির সেই সময়কার সাজানোকে অপুষ্টিতে ভোগা মেয়েদের ঠোঁটের লাল লিপস্টিকের সাথে তুলনা করেছিলেন উক্ত এনজিও কর্মী। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবেমাত্র বেরিয়েছি। এ সব কিছুই এখন পুরনো কথা। ঢাকায় শুধু লাল লাল নীল নীল বাতি নয়, এখানে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল। নির্মাণ করা হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সিটির অনেক রাস্তাই এখন অর্ধ পশ্চিমা দেশের মতো, রয়েছে শত শত মাল্টিস্টোরেজ বিল্ডিং। গ্রামের অবস্থাও আগের মতো নেই। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থাও উন্নত হয়েছে অনেক। এসব পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে একটি জায়গায় কিন্তু সেভাবে পরিবর্তন আসেনি আর সেটি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাক্ষেত্রে সুষম উন্নয়ন হয়নি।

অনেক উদাহরণের মধ্যে একটি উদাহরণ যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে আবার সেই লিপস্টিকের কথা মনে পড়ে। এই ঢাকা সিটিতে ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলোই টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ছোট্ট ঘর, যেখানে ১০ থেকে ১২টি বেঞ্চ বসিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলে। অনেক বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য একান্ত জরুরি। অনেক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। নেই শৌচাগার এবং বর্ষাকালে মেঝেতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে এলাকাবাসীর সহায়তায় শৌচাগার নির্মাণ করেছেন। সমস্যা শুধু জরাজীর্ণ ভবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, শিক্ষার সার্বিক আয়োজনেই অবহেলার ছাপ ষ্পষ্ট। শিক্ষানীতি অনুসারে বিদ্যালয়গুলোয় প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু গড়ে এই সংখ্যা ৪৫ জন, কোথাও কোথাও আরও বেশি।

বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত দপ্তরি, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া নেই। ব্যবস্থাপনা কমিটির বা স্থানীয় মানুষের অনুদানে সামান্য বেতনে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে এ ধরনের কর্মী রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলো জরাজীর্ণ, মলিন ও অপরিচ্ছন্ন। মানে সর্বত্রই দারিদ্র আর অবহলোর ছাপ। বেশ কিছু বিদ্যালয়ের জমি ও অবকাঠামো বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। এভাবে শিক্ষার সব আয়োজনেই অবহেলার ছাপ বিদ্যমান। আর তাই্ সহজেই অনুমেয় এখানে কী ধরনের লেখাপড়া হয়, আর কোনো ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম যে অনুষ্ঠিত হয় না— তাতো বুঝাই যাচ্ছে। আলো ঝিলমিল ঢাকা সিটিতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য শিক্ষার এই ধরনের আয়োজন আমাদের অনেকটাই অবাক করে দেয়।

আমাদের সারাদেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ৩৪২টি। এর মধ্যে ২১টি বিদ্যালয়ের জমি ও চারটির ভবন বেদখল হয়ে যাওয়ার খবর পত্রিকায় দেখলাম। সংবাদটি আমাদের বিস্মিত করেছে, ছোট বাচ্চাদের বিদ্যালয় বেদখল অথচ কোনো উচ্চবাচ্য নেই!

বিষয়টি আমাদের অজানা নয় যে, ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই দখলের কাজটি করে থাকেন। রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণের জন্য ১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার— যেটি একটি প্রশংসনীয় কাজ এবং এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাত্র ১০টি বিদ্যালয়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, যা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি এটিও বলতে হয় যে, বিশাল এক জনসংখ্যার শহর রাজধানী ঢাকা, এখানে মাত্র ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কি যথেষ্ট? তার মানে কি আমরা বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষাকে উৎসাহিত করছি? যদি তাই করে থাকি, সেটি করলেও ভালোভাবে করতে হবে। পুরো শিক্ষার দায়িত্ব ও দেখভাল করা সরকারের একার পক্ষে যে সম্ভব নয় তা বহুবার এবং প্রতিদিনই প্রমাণিত হচ্ছে। অথচ বেসরকারি ব্যবস্থাপনা কিংবা সরকারি বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা পরিচালনা করার উদাহরণ তৈরি করা প্রয়োজন। সেটি মুখের কথায় নয় বরং কাজে প্রমাণ করতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলো যখন এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে যায় তখন দেখা যায় সরকারি বাধা। বিষয়টিকে স্পষ্ট করা দরকার এবং রাষ্ট্রীয় একটি সঠিক নীতি থাকা দরকার যে, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারি সংস্থাগুলো কী কী করতে পারে, কীভাবে করতে পারে। ছোট শিশুদের ঠকানোর অধিকার আমাদের নেই। উপযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়া তাদের অধিকার, আমরা তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারি না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ দুরবস্থায় প্রতীয়মান হয় দেশের অন্যান্য এলাকা, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও ভালো নয়।

১৯৭৩ সালে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৩ সালের দিকেও আবারও প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। এগুলো অত্যন্ত প্রশংসনীয় পদক্ষেপ কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষক্ষেত্রে বৈষম্য বৃদ্ধি ও মানের উন্নয়নে আমরা এগুতে পারিনি। বিত্তবান ও সামর্থ্যবান মানুষ বিপুল অর্থ খরচ করে সন্তানদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন, সেটি কেবল ঢাকা সিটিতে কিংবা বড় বড় শহর ও জেলা শহরেই নয়, এটি গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষাকেও আমরা পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারব না, তা ছাড়া তুলনা করার জন্যও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষা থাকাটা একেবারে অর্বাচীন কোনো সিদ্ধান্ত নয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নীতি এখানে যাই থাকুক আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে নিম্নআয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা কিন্তু পিছিয়ে পড়ছে। কেউ কেউ বলছেন, রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শোচনীয় অবস্থা হয়েছে মূলত দুটি কারণে।

প্রথমত, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ে, তাই এগুলোর দিকে তেমন রাষ্ট্রীয় নজর নেই। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় প্রভাবশালীরা চান না সেখানে সরকারি প্রাথমিকগুলো ভালোভাবে চলুক। সরকারি বিদ্যালয় উঠে গেলে তারা জামি ও ভবন অনায়াসে দখলে নিতে পারবে।

শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার আয়োজন জরুরি হলেও রাজধানীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫২টিতেই কোনো খেলার মাঠ নেই। সব মিলিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর এতোই দুরবস্থা যে সেখানে সন্তানদের ভর্তি করানোকে নিজেদের সম্মানহানি হিসেবে গণ্য করেন সচ্ছল অভিভাবকরা।

সেদিন একজন রিকশাচালকের সাথে কথা বলছিলাম। তার দুটো সন্তানই বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়ছে। আমি বললাম সরকারিতে পড়ালে তো কোনো টাকা লাগত না, তারপরও সেখানে পাঠাচ্ছেন না কেন? উত্তরে বললেন, ওইসব জায়গায় পাঠিয়ে ধরা খেয়েছি। কোনো পড়ালেখা নেই। আসলে এটিই তো বাস্তব কথা।

দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোও একসময় জরাজীর্ণ ছিল। সংকট ছিল শিক্ষকের, শ্রেণিকক্ষ ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের, শিক্ষার মান ছিল নিম্ন। ঢাকার মতো এ সব সরকারি বিদ্যালয়েও দরিদ্র ও নিম্নবিত্তরা ছাড়া আর কেউ তাদের সন্তানদের পাঠাতে চাইতেন না। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয় ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় আসার পর। তারা স্বাস্থ্য,পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি পাবলিক সেক্টরগুলোর মতো শিক্ষা খাতেও যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করতে থাকে। আম আদমি পার্টির লক্ষ্য ছিল দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোকে এমনভাবে সংস্কার করা যেন সেখানে পড়তে আসা শিশুদের মধ্যে গরিবের বিদ্যালয়ে পড়ার হীনম্মন্যতা না থাকে। তারা জানে, ভারতের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী ব্যবস্থায় জনগণের মন জয় করেই তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। এ কারণেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও পানির মতো পাবলিক সার্ভিস বা সর্বজন খাতের উন্নয়নের গুরুত্ব তাদের কাছে অপরিসীম।

আমাদের দেশেও বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও পানির মতো সর্বজন খাতে সুলভে মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে না। ফলে ক্রমাগত বাণিজ্যিকীকরণে এ সব খাত থেকে সুলভে মানসম্পন্ন সেবা পাওয়ার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। এ ঘটনা ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও দিল্লির শিক্ষা মডেল বিষয়ে যেমন আগ্রহ তৈরি করেছে, ভারতের বাইরেও সরকারি বিদ্যালয়ের এই ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্ক টাইমস এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে। শিরোনাম’ ক্লিন টয়লেটস’ ইন্সপায়র্ড টিচাস: হাউ ইন্ডিয়া’স ক্যাপিটাল ইজ ফিক্সিং ইটস স্কুল’।

সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা জানি থাকে না কোন টয়লেট, থাকলেও দুর্গন্ধে সেগুলোতে ঢোকা যায় না। পানির ব্যবস্থা থাকে না, সর্বত্রই থাকে অব্যবস্থাপনার ছাপ। যেগুলোর দিকে দিল্লি সরকার সঠিক নজর দিয়ে পরিবর্তন এনেছে যা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় রয়েছে অনেক। যদি আমরা সেটি করতে ব্যর্থ হই তাহলে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের মাধ্যমে কিংবা স্থানভেদে শুধু প্রাইভেট শিক্ষাকে কীভাবে মানসম্পন্ন করা যায় তার জন্য একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এখন যে অবস্থায় চলছে এটিকে আমরা কোনোক্রমেই একটি সুষ্ঠু ও সার্বজনীন ব্যবস্থানা বলতে পারি না।

শিক্ষাব্যবস্থা এমন হওয়া প্রয়োজন যেন ভৌগলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে কাউকে যথাযথ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে না হয়। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ সাংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে গণমুখী, সুলভ, সুষম, সর্বজনীন, সুপরিকল্পিত, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা সেই লক্ষ্য থেকে বহু দূরে। এমনকি শিক্ষানীতিতে যে প্রাথমিক শিক্ষাকে সার্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক এবং সবার জন্য একই মানের করার কথা বলা হয়েছে, সেই প্রাথমিক শিক্ষাই অর্থনৈতিক, আঞ্চলিক ও ভৌগলিক বৈষম্যমুক্ত নয়। সরকারি, বেসরকারি এবং ইংরেজি মাধ্যমের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার খরচ ও মানে রয়েছে ব্যাপক তারতম্য, এমনকি শহরের সরকারি স্কুলের সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোর শিক্ষার আয়েজনেও রয়েছে বৈষম্য। জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে এই বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন।

মাছুম বিল্লাহ: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক

আরএ/

Header Ad

সৌদির যেকোনো ভিসা থাকলেই ওমরাহ পালন করা যাবে

ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ওমরাহ পালনে বিদেশিদের জন্য ভিসা ব্যবস্থাপনা আরও সহজ করেছে সৌদি আরব। এখন থেকে যেকোনো ধরনের ভিসায় সৌদি আরব গেলেই বিদেশিরা ওমরাহ পালনের অনুমতি পাবেন।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বলেছে, যেকোনো দেশ থেকে এবং যেকোনো ভিসায় সৌদি আরবে আগতরা এখন থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে ওমরাহ পালন করতে পারবেন।

মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ট্রানজিট, শ্রম ও ই-ভিসাসহ সব ভিসাধারী ব্যক্তিরা এ সুযোগ পাবেন। এছাড়া ওমরাহ পালনের অনুমতি ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ের জন্য ‘নুসুক’ অ্যাপ ব্যবহার করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।

এদিকে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববিতে হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের ইবাদত সহজ করতে ‘ডিজিটাল ব্যাগ’ চালু করেছে সৌদি সরকার।

সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয় জানায়, এই ব্যাগ প্রোগ্রাম হজ ও ওমরাহযাত্রীদের জীবনমান সহজ করবে। তাদের হজ ও ওমরাহ পালন সহজ করবে। মুসল্লিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে এর মাধ্যমে। বিশেষ করে কখন তারা কোন বিধান পালন করবে, সে বিষয়ে সতর্ক করা হবে।

নাটোরে বোনের বৌভাতে গিয়ে একে একে তিন ভাইয়ের মৃত্যু

নিহত জাওহার আমিন লাদেন। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের বড়াইগ্রামে মামাতো বোনের বউভাতের অনুষ্ঠানে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জাওহার আমিন লাদেন (১৮) নামে আরও এক কলেজছাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন প্রাণ হারালেন।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ এ চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়

নিহত জাওহার বড়াইগ্রামের গোপালপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিনের ছেলে।

জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল মামাতো বোনের বৌভাতের অনুষ্ঠানে যায় তিন ভাই। পরে মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়াতে বের হন তারা। পথে বড়াইগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে তিনজনই গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামাতো ভাই আকিব হাসান (১৫) ও খায়রুল বাশার ছাগির (১৭) মারা যায়। বুধবার রাতে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেক ভাই জাওহারের মৃত্যু হয়।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম খান বলেন, গত ১৫ এপ্রিল উপজেলার ধামানিয়াপাড়া গ্রামে মামাতো বোনের বৌভাতের অনুষ্ঠানে গিয়ে তিন মামাতো-ফুফাতো ভাই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে তিনজন গুরুতর আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনই মারা গেছেন।

জনপ্রতি ১২-১৪ লাখ চুক্তিতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নফাঁস, গ্রেপ্তার ৫

গ্রেপ্তার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপরই বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। চক্রটি এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে দুইজন ঢাবি শিক্ষার্থী ও তিনজন পরীক্ষার্থী।

ডিবি জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে বসে এ পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতেন তারা। পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হতো উত্তরপত্র।

গ্রেপ্তাররা হলেন- ঢাবি শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন (২৬) ও সুজন চন্দ্র রায় (২৫) এবং পরীক্ষার্থী মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মণ্ডল (৩০)।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

ডিবিপ্রধান বলেন, গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২১ জেলার সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এ পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র ও ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন ও রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।

ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনায় দুই জেলায় আলাদাভাবে মামলা করে সংশ্লিষ্টরা। রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, কীভাবে এবং কখন তার মোবাইলে উত্তরপত্র এসেছে। মাদারীপুরে গ্রেপ্তার হওয়া পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জামিনে বের হয়ে যান। ঘটনাটি তদন্তের জন্য মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলমের অনুরোধে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ তদন্তে নামে।

মাঠে নেমে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্রকে। তারা দুজনেই ঢাবির জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

তারা গোয়েন্দা পুলিশকে জানান, পরীক্ষার আগেই তারা প্রশ্ন সমাধানের জন্য পেয়েছেন। এ প্রশ্ন সমাধানের দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যোতির্ময় গাইনের চাচা অসিম গাইনের মাধ্যমে।

প্রশ্ন প্রতি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাসে তাদের দিয়ে প্রশ্ন সমাধান করান অসিম। এ প্রস্তাবে জ্যোতির্ময় ও সুজনসহ সাতজন ঢাবির জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময়গুহ ঠাকুরতা ভবনের ২২৪ রুমে বসে তারা প্রশ্নের সমাধান করে পাঠান। অসিম তার ভাতিজা জ্যোতির্ময় গাইনকে প্রশ্ন সামাধানের দায়িত্ব দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্য। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, তিনি পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে, এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন।

পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগেই প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসিম গাইন। তাদের সমাধান করে দেওয়া প্রশ্নের মধ্যে ৭২ থেকে ৭৫টিই মিলেছে।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত যে প্রমাণ পেয়েছি, তাতে এ চক্রের হোতা অসিম গাইন। তার বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। তিনি আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। তিনি অল্পদিনে কয়েকশ’ কোটি টাকা আয় করেছেন। এ টাকা দিয়ে তার গ্রামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকা অসিমের মানবপাচার, হুন্ডি ব্যবসা ও ডিশের ব্যবসা রয়েছে। যেখানে তিনি প্রশ্ন ফাঁস করে আয় করা টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেপ্তার করলে কীভাবে প্রশ্নগুলো পান, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারব।

এ ঘটনায় দুজনকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। যারা প্রশ্নের সমাধান করেছেন, আদালতে তারাও স্বীকার করেছেন। যারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন, তারাও স্বীকার করেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ জানানো হবে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হারুন বলেন, আমরা এ মামলার তদন্তে নেমে যা যা পেয়েছি সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন পরীক্ষা বাতিল করবেন না-কি বহাল রাখবেন।

সর্বশেষ সংবাদ

সৌদির যেকোনো ভিসা থাকলেই ওমরাহ পালন করা যাবে
নাটোরে বোনের বৌভাতে গিয়ে একে একে তিন ভাইয়ের মৃত্যু
জনপ্রতি ১২-১৪ লাখ চুক্তিতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নফাঁস, গ্রেপ্তার ৫
কুড়িগ্রামে হিট স্ট্রোকে নারীর মৃত্যু
রবিবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস
বাংলাদেশের উন্নতি দেখে এখন লজ্জিত হই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
মৌসুমের সর্বোচ্চ ৩৯.২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়ছে নওগাঁ
চেন্নাইয়ের হয়ে খেলা সবসময় স্বপ্ন ছিল: মোস্তাফিজ
বৃষ্টি কামনায় টাঙ্গাইলে ইস্তিস্কার নামাজ আদায়
মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে আরও ৬ ধাপ পেছালো বাংলাদেশ
বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস
এফডিসিতে ইউটিউবার প্রবেশ নিষিদ্ধ চাইলেন অঞ্জনা
অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা, ক্ষোভে বাসে আগুন দিল শিক্ষার্থীরা
থাইল্যান্ডে হিট স্ট্রোকে ৩০ জনের মৃত্যু
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ‘এমপিরাজ’ তৈরি হয়েছে: রিজভী
অনুমতি মিললে ঈদের আগেই গরু আমদানি সম্ভব: ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত
আবারও ঢাকাই সিনেমায় কলকাতার পাওলি দাম
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় সাবেক কৃষকলীগ নেতাসহ নিহত ২
গোবিন্দগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়