শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Dhaka Prokash

পেঁয়াজ-আদার ঝাঁজ আর বাঁশির সুর

রোদের তাপে পুড়ছে দেশ। বাজারের আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষের সংসার। প্রকৃতিতে ছায়া নেই, কেটে ফেলেছে গাছ। বাজারেও ছায়া নেই। কে দেবে সেই ছায়া বা ভরসা? বাজারে যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে, তখন মন্ত্রীদের কাছ থেকে সমাধানমূলক কোনো বক্তব্যের পরিবর্তে মানুষ এমন কিছু শুনছেন যার ফলে তারা মনে করেন একি হচ্ছে? তারা ভাবছেন, একি সান্ত্বনা না কি শাস্তির পূর্বাভাস? মন্ত্রীরা একেকজন একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন, যাতে সাধারণ মানুষ সান্ত্বনা এবং স্বস্তির পরিবর্তে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান।

সম্প্রতি শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাজেট সংক্রান্ত এক কর্মশালায় বলেছেন, ‘আমি দেখেছি, বাজার করতে গিয়ে অনেকে কাঁদছেন। কারণ, বাজারের যে অবস্থা, তাদের পকেটে সে টাকা নেই। এটার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট।’ সিন্ডিকেটের কথা বললেই ক্ষমতাসীন দলের কর্তাব্যক্তি এবং ব্যবসায়ী নেতারা সমস্বরে বলে উঠেন কোথায় সিন্ডিকেট? সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। বাজার চলে বাজারের নিয়মে। কিন্তু মানুষ দেখে একই সাথে সারা দেশে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কার ইশারায় হয় তা দেখা যায় না কিন্তু দাম বেড়ে গেলে তার উত্তাপ ক্রেতার গায়ে লাগে। একে সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে এই সিন্ডিকেট নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু স্বীকার করছিলেন না দায়িত্বশীলরা। এবার তো মন্ত্রীর মুখেই শোনা গেল সিন্ডিকেটের কথা। এখানেই শেষ নয় শিল্প প্রতিমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘মন্ত্রীদের মধ্যেও সিন্ডিকেট আছে।‘ তিনি সংকটের কারণ জানালেন ’ কিন্তু তিনি যদি সিন্ডিকেটধারী মন্ত্রীদের নাম জানাতেন তাহলে দেশবাসী বুঝতেন কারা এই মন্ত্রিত্বের চেয়ারে বসে সিন্ডিকেটের সুতা টানছেন। তাহলে হয়তো লোকলজ্জার ভয়েও তারা কিছুটা সংযত হতেন, বাজারে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসতে পারতো। কিন্তু হায় এতো হবার নয়।

বাজারে যারা যান তারা জানেন যে, খুচরা ও পাইকারি—দুই বাজারেই পেঁয়াজ আদার দাম আরও বেড়ে গেছে এবং বাড়ছেই। অজুহাত ভারতে দাম বেড়েছে এবং আদা আর চীন বা ভারত থেকে নয় ইন্দোনেশিয়া থেকে আনতে হবে। অথচ মাস দুই আগে থেকেই পেঁয়াজ আমদানি না করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। আমদানি করলে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। শুধু আমাদের দেশে নয় ভারতেও এবার রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। ভারতের পেঁয়াজ উৎপাদন তাদের চাহিদার চেয়েও বেশি ফলে রপ্তানি না হওয়ায় সেখানকার কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না এবং পেঁয়াজের দাম গিয়েছে কমে। জানা গেছে ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ রুপিতে (এক রুপি সমান ১ টাকা ২৯ পয়সা) অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ৩৮ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়।

বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট সাধারণত হয় সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে। তখন কৃষকের পিয়াজ শেষের দিকে এবং নতুন পেঁয়াজ উঠতে বাকি। এই সংকট প্রায় প্রতিবছর কিছুটা হয়ে থাকে। ফলে এবারের সংকটে এই প্রশ্ন করা কি স্বাভাবিক নয় যে, এখন পেঁয়াজের মৌসুম কেবল শেষ হয়েছে। মাঠ থেকে পেঁয়াজ এসেছে কৃষকের ঘরে, এখনই কি আমদানির এত প্রয়োজন দেখা দিল? দুই মাসে কী পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে গেলো যে পেঁয়াজের জন্য বাজারে হাহাকার দেখা দিয়েছে। তাহলে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর কথা শুধু কথার কথা নয়। তার ভাষায় পেঁয়াজের বাজারেও সিন্ডিকেট ঢুকে পড়েছে? বাজার পরিস্থিতি দেখে তাহলে তো চাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজারের সিন্ডিকেটকেও অস্বীকার করা যাবে না।

পেঁয়াজের বাজার যখন এরকম অস্থির তখন বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন যে মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। নজর কি শুধুই আমদানির দিকে থাকবে? যাচাই করে দেখা হবে না যে সত্যি আমাদের পেঁয়াজের ঘাটতি আছে, নাকি সিন্ডিকেটই কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে।

যদি পেঁয়াজের ঘাটতি থেকে থাকে, তাহলে তো আমদানি করে তা মেটাতেই হবে। তার জন্য তো আগে থেকে সরকার কেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সংকট দেখা দিলেই আমদানির সিদ্ধান্ত নিলেও সেই পেঁয়াজ বাজারে আসতে এবং দাম কমতে সময় লাগবে। এই সময়ে সিন্ডিকেট (শিল্প প্রতিমন্ত্রীর ভাষায় মন্ত্রীদের মধ্যেও আছেন) বসে থাকবে না। দাঁও মারবে এবং ফাউ মুনাফা লুটে নেবে। সরকারের কাজ কি হবে এ ধরনের সিন্ডিকেটকে বারবার বাড়তি ও অন্যায্য মুনাফা নেওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া? সরকারের কাছে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা কত ও উৎপাদনের কত হয়েছে তার একটা গ্রহণযোগ্য হিসাব থাকলে এমন হতে পারে কি? সামনে কোরবানির ঈদ আসছে, ফলে দাম বাড়ানোর অজুহাত শক্তিশালী হবে।

এতো গেল সংকটের কথা। কিন্তু পেঁয়াজ চাষিরা জানান, চাষিরা এবার দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে আগাম জাতের হাইব্রিড পেঁয়াজ রোপণ করেছিলেন। আগাম জাতের হাইব্রিড পেঁয়াজের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। গড়ে প্রতি বিঘা জমি থেকে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ মণ পর্যন্ত। এটা অবশ্য হাইব্রিড পিঁয়াজের কথা। তবে দেরিতে লাগানো নাবি বা দেশি জাতের পেঁয়াজের উৎপাদন আগের মতই, প্রতি বিঘায় গড় ফলন হয়েছে ২০–২২ মণ। বীজ, সারসহ চাষাবাদের খরচ হিসেব করলে দেখা যায় প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। কিন্তু পেঁয়াজ যখন উঠল বাজারে অর্থাৎ মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এতে কৃষকের লোকসান হয়েছে। তবে এপ্রিলের শেষ বা ঈদের পর থেকে বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা ও দাম দুটিই বাড়তে শুরু করেছে। অস্থিতিশীল বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৬৫০ থেকে ১ হাজার ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে আন্তঃমন্ত্রণালয় তৎপরতাও শুরু হয়েছে। কৃষিসচিবকে পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম এক মাস আগেও ছিল ৩০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা আর বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সরবরাহ বাড়িয়ে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়ার দরকার।’ চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে জরুরিভিত্তিতে সীমিত পরিসরে আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে কৃষি সচিব আবার এ কথাও জানান যে, ২৪ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে দেশে এবার ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে এবং গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজও উঠবে তাহলে উদ্বৃত্ত উৎপাদন সত্ত্বেও পেঁয়াজের বর্তমান দর কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এই হিসাব দেখলে তো ধাঁধা লাগে চোখে আর সন্দেহ জাগে। হিসাব সঠিক না কি কৃত্রিম বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ক্রেতার পকেটের সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শক্তিশালী?

অন্যদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি বলেছেন, একটা কাজ করলেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। আর সেটা হচ্ছে আমদানি অনুমতি। পেঁয়াজের পাশাপাশি চিনি ও সয়াবিনের দাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। উচিত হচ্ছে সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো রাখা ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। উভয় ক্ষেত্রেই ঘাটতি আছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে এখানে যে সুরে বাঁশি বাজাচ্ছেন, সে সুরেই দাম ঠিক হচ্ছে।’ একটা কথা হরহামেশাই বলা হয় এসব নাকি অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্ম। তাহলে সেই প্রশ্নই তো আবার জেগে উঠে, সাধু ব্যবসায়ী কারা? তারা কী করেন?

এসব কথার পরে তাহলে কী দাঁড়াল শেষমেশ? কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত, সংকট নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে সংকট সমাধানে আমদানির বিকল্প নেই। শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলছেন, এসব সিন্ডিকেটের কারসাজি। সিন্ডিকেট খুব শক্তিশালী কারণ সেখানে মন্ত্রীরা যুক্ত থাকেন। ক্যাব সভাপতি বললেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন। এখানে দাম নির্ধারিত হয়ে ব্যবসায়ীদের বাঁশির সুরে। ফলে বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতেও থাকতে হবে। এটা একটা সাময়িক সমাধান হতে পারে কিন্তু এখানেও তো ভয়। মন্ত্রীরা যদি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে কে?

রাজেকুজ্জামান রতন: সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।

এসএন

Header Ad

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের হাতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল।

এ সময় নিহত আবু সাঈদের বৃদ্ধ বাবা মকবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে আরেকদিন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে। সেই সময় ভিসি স্যার আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি স্যারকে বলেছিলাম আমাদের পরিবারের একজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয়। ভিসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন। প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ না কেউ খোঁজ রেখেছেন।

এ ছাড়া পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই সহায়তা করছেন বলেও জানায় আবু সাঈদের পরিবার।

মকবুল হোসেন আরও বলেন, আমার কলিজার টুকরা ছিল আবু সাঈদ। তার প্রাইভেট পড়ানোর (টিউশনের) জমানো টাকায় আমার সংসার চলতো। সন্তান হারিয়েছি, এ শোকের কোনো সান্ত্বনা নেই। বাবা হয়ে সবচেয়ে ভারী কাজ হলো সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া।

এখন শুধু সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান বৃদ্ধ এ বাবা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, ভিসি মহোদয়ের নির্দেশে আবু সাঈদের বাবা-মায়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় যোগাযোগ রাখছে। ভিসি স্যার নিজেও সাঈদের পরিবারের খোঁজ রাখছেন, পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে আজকে সাড়ে সাত লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারে দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ নিহত হন। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলাজুড়ে। নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০৯টি। নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২০৯টি মামলায় ২৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সারাদেশে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। অভিযানে ঢাকায় ৬৩ ও ঢাকার বাইরে ২০৩ জনসহ মোট ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এদিকে আজ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত অনেকবার গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা বা দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুলিশের কারণে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য তারা এবার পুলিশকেই টার্গেট করেছে।

যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, স্বপ্নের মেট্রোরেলসহ সরকারি স্থাপনায় নাশকতা চালিয়েছে। যারা এসবের নেতৃত্ব দিয়েছে, অর্থ আদান-প্রদান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’

বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক বলেছেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটা শতকরা পাঁচ ভাগ রেখেছে। এটি মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু পরিষ্কার হওয়া দরকার, বাকি পদে কাদের নেওয়া হবে। আমরা বাকি ৯৫ শতাংশ কোটা নিয়ে আদালতের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় বোঝাপড়া করব।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনায় সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনাসভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এই পাঁচদোনা মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। স্মৃতিধন্য এই স্থানে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। দুঃখের বিষয়, সেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সেই হামলা চালানো হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী ও বিএনপির ক্যাডাররা মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সেই গর্বের ধন আজ পরাজিত শক্তির কাছে আক্রান্ত হচ্ছে।

এসময় তিনি রাজাকারদের তালিকা প্রস্তুত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, কোটার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মতামত গ্রহণের জন্যও আদালতকে অনুরোধ জানানো হবে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটিও আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হবে।

তিনি বলেন, যারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা কখনো ছাত্র হতে পারে না। বিএনপি, জামায়াত ও রাজাকারের দল এ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। তাদের কার্যকলাপে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যারা আঘাত করেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডার।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান খান, নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো, পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ প্রমুখ।

সর্বশেষ সংবাদ

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭
‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’
কোটা আন্দোলনে নিহত রুদ্রের নামে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকের নামকরণ
সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ কোটি টাকা লোকসান
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ-পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা জারি
রিমান্ড শেষে কারাগারে নুরুল হক নুর
ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই সরকারের: মির্জা ফখরুল
নরসিংদী কারাগার থেকে লুট হওয়া ৪৫ অস্ত্র উদ্ধার
বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত
মোবাইল ইন্টারনেট কবে চালু হবে, জানাল বিটিআরসি
পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ: ডিবি হারুন
মৃত্যুর দিনক্ষণ গোপন রাখা হয়েছে যে কারণে
অলিম্পিক উদ্বোধনের আগেই প্যারিসে উচ্চগতির রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা
তারেক রহমানের নির্দেশেই রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
শিক্ষার্থীদের হত্যা করে সরকারের ওপর দায় চাপানো হয়েছে: ওবায়দুল কাদের
‘বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ত ঝরছে’, মমতাকে কড়া বার্তা দিল্লির
বাজারে সরবরাহ বাড়লেও সবজির দামে এখনো অস্বস্তি