মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪ | ৬ কার্তিক ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

বৈশ্বিক মানবিক সংকটে ঊর্ধ্বমুখী সামরিক ব্যয়ের প্রভাব

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের প্রায় সব দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, স্থানীয় মুদ্রার দরপতন, মার্কিন ডলারের সংকট ইত্যাদি নানা কারণে সাধারণ মানুষ ক্রমাগত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার জটিল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এবং পণ্য, খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি ও সারের মূল্যস্ফীতি ঘটিয়েছে।

মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, জাতীয় ঋণের মাত্রা বাড়ছে এবং অনেক দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। আমদানি নির্ভর দেশগুলোকে আমদানি ব্যয় মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন হওয়ার কারনে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৮২টি দেশের সাড়ে ৩৪ কোটি মানুষ খাদ্য নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দেশগুলোতে খাদ্য সহায়তার জন্য বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউ এফ পি) কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অনাহারের ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষের মধ্যে ৪৫টি দেশের ৫ কোটি মানুষ চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই ধাক্কা চলমান উন্নয়নের গতিকে ধীর করে দিয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলংকার উপর যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল তার প্রভাব এখনো কিছুটা রয়েছে। শ্রীলংকার পর পাকিস্তান ও আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে ও তা কাটিয়ে উঠতে সংগ্রাম করছে।

ইতোমধ্যে অনেক বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেন, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, তুরস্কে ভূমিকম্প, ইথিওপিয়া ও সর্বশেষ সুদানের গৃহযুদ্ধ বিশ্ব ব্যাপী মানবিক সংকটের তালিকা দীর্ঘায়িত করে চলেছে। এর ফলে মানবিক ও ত্রাণ সহায়তার গুরুত্ব ও লক্ষ্য ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। ২০২১ সালের ২৪শে আগস্ট ইথিওপিয়ার ফেডারেল সরকার ও টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট এর মধ্যে সংঘর্ষে ওই অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। সুদানে গত ১৫ এপ্রিল থেকে চলা সংঘর্ষে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে, প্রায় আট লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এসব মানবিক বিপর্যয় ত্রাণ সহায়তা ও মানবিক কার্যক্রমের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। জাতিসংঘ পূর্ব আফ্রিকার তিন-চতুর্থাংশ শরণার্থীর খাদ্য রেশন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ইথিওপিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ সুদান ও উগান্ডার শরণার্থীরা। পশ্চিম আফ্রিকার বুরকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, চাদ, মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারে ডব্লিউএফপির রেশনও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বুরকিনা ফাসোতে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছেছে। ডব্লিউএফপি আশঙ্কা করছে যে দক্ষিণ সুদানে শরণার্থীসহ দেশটির ৮৩ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন হবে।

যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে ইউরোপের দেশগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ইউরোপজুড়ে গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের সম্মুখীন হয়েছে।

ইউএনএইচসিআরের তথ্য মতে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮০ লাখেরও বেশি শরণার্থী ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ৫৯.১ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে, ১ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে ২৮১ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষ রাষ্ট্রহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

বিশ্বের সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়ে ২ দশমিক ২৪ ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে। পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারনে অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে বাড়ছে সামরিক ব্যয়। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) ২৪ এপ্রিল বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, ইউরোপের দেশগুলোর সামরিক খাতে ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

এই ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ সম্পর্কিত হলেও ইউরোপের অন্য দেশগুলো রাশিয়ার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে। এ কারণে ফিনল্যান্ড ৩৬ শতাংশ, লিথুয়ানিয়া ২৭ শতাংশ, সুইডেন ১২ শতাংশ এবং পোল্যান্ডে ১১ শতাংশ সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। ফিনল্যান্ড এপ্রিলে ন্যাটোর ৩১তম সদস্য হয়েছে, পাশাপাশি সুইডেনও এখন ন্যাটো জোটে যুক্ত হতে চাচ্ছে। নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ইটালির মতো ইউরোপীয় দেশগুলোও গত দশকে সামরিক খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের ক্রমাগত বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, আমরা বর্তমানে একটি অনিরাপদ বিশ্বে বসবাস করছি।

বিশ্বে সামরিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় শতকরা ০.৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮৭৭ বিলিয়ন ডলারে। যা বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের শতকরা ৩৯ ভাগ। ইউক্রেনকে দেওয়া অব্যাহত আর্থিক সামরিক সহায়তার কারণে এই ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন আর্থিক সামরিক সহায়তার পরিমাণ ছিল ১৯.৯ বিলিয়ন ডলার।

চীন সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, ২০২২ সালে এই খাতে চীনের বরাদ্দ ছিল আনুমানিক ২৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৪.২ শতাংশ বেশি। চীনের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশগুলোতে। জাপান ২০২২ সালে সামরিক খাতে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৯ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তাইওয়ান তাদের ব্যয় বাড়িয়েছে ১৩.৯ শতাংশ এবং সাউথ কোরিয়া বাড়িয়েছে ৪.৬ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক ব্যয় ৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ১৮০ কোটি ডলার। অস্ট্রেলিয়া সরকার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেনার পেছনে ১ হাজার ৯০০ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার খরচ করার ঘোষণা দিয়েছে।

রাশিয়ার সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে আনুমানিক ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৮৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার যা বৈশ্বিক মোট সামরিক ব্যয়ের ৩.৯ শতাংশ। সামরিক ব্যয়ে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে আছে ভারত। ২০২২ সালে ভারত সামরিক খাতে ৭ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে যা সামরিক খাতে বিশ্বের মোট খরচের ৩.৬ শতাংশ। সৌদি আরব পঞ্চম বৃহত্তম সামরিক ব্যয়কারী দেশ, ২০২২ সালে তাদের ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়ে আনুমানিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

২০২২ সালে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সামরিক ব্যয় ছিল মোট ১২৩২ বিলিয়ন ডলার যা ২০২১ সালের তুলনায় ০.৯ শতাংশ বেশি। বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয়ের তালিকায় ৩.১ শতাংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ষষ্ঠ যার পরিমাণ ৬৮.৫ বিলিয়ন ডলার। এর পরেই মোট ব্যয়ের আড়াই শতাংশ জার্মানির আর ২.৪ শতাংশ ফ্রান্সের। ইউক্রেনে সামরিক ব্যয় ২০২২ সালে ছয় গুণের বেশি বেড়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা হিসাবে সামরিক খাতে খরচ ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩৪ ভাগ। এটা একটা দেশের সামরিক ব্যয়ের সর্বোচ্চ এক বছরের বৃদ্ধর রেকর্ড। ২০২২ সালে এশিয়া ও ওশেনিয়ার দেশগুলোর সম্মিলিত সামরিক ব্যয় ছিল ৫৭৫ বিলিয়ন ডলার যা আগের বছরের তুলনায় ২.৭ শতাংশ বেশি এবং এই ব্যয় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে।

২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো মিয়ানমারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এরপরও দেশটির সামরিক সামর্থ্য কমেনি বা তাদের সমরাস্ত্র কেনা থেমে নেই। প্রতি বছর দেশটি তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ও সামরিক সামর্থ্য বাড়িয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ২২৮ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতিবেশী দুই দেশ চীন ও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় মিয়ানমার এই দুই দেশ থেকে বেশিরভাগ অস্ত্র কিনে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের পর চীন, রাশিয়া ও সার্বিয়া দেশটিকে যুদ্ধ বিমান, সাজোঁয়া যান, রকেট ও কামান সরবারহ করেছে।

বিশ্বব্যাপী মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সশস্ত্র সংঘাত এবং ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে এর ফলে খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে দারিদ্র্য বাড়ছে সেই সঙ্গে বাড়ছে উদ্বাস্তু ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকটের কারণে দাতারা অনুদান কমিয়ে দেওয়ায় ডব্লিউ এফ পি রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তা প্রায় ১৭ শতাংশ কমিয়েছে। রোহিঙ্গাদের খাবারের জন্য মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ ছিল ১২ ডলার, ১ মার্চ থেকে তা কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়েছে। নতুন তহবিল জোগাড় না হলে আগামী দিনগুলোতে এই সাহায্যের পরিমাণ আরও কমতে পারে। তহবিল সংকটের কারণে সুযোগ-সুবিধা আরও কমে যেতে পারে এই আশঙ্কায় রোহিঙ্গাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

বাংলাদেশ গত প্রায় ছয় বছর ধরে ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভবিষ্যতে এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশের একার পক্ষে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের ব্যয় বহনের জন্য বন্ধুরাষ্ট্র ও দাতাগোষ্ঠীর কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে যা প্রাপ্তি এখনো অনিশ্চিত। সারা বিশ্বে সামরিক ব্যয় বেড়েই চলছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে মানুষের দুর্দশা ও নিপীড়িত বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। বিশ্বব্যাপী এই সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি মানবিক সহায়তাও বাড়ানোর উদ্যোগ চলমান রাখতে হবে। একটা শান্তিময় বিশ্বের প্রত্যাশায় সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি যেন চলমান মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রমের উপর প্রভাব না ফেলে তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব মানবতাবোধকে জাগ্রত রাখতে হবে।

হাসান মো. শামসুদ্দীন: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত), মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাবিষয়ক গবেষক।

এসএন

Header Ad

হাফ ভাড়া না নেওয়ায় ৩০ বাস আটকেছে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ভিআইপি পরিবহনের বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে শিক্ষার্থীরা ৩০টি বাস আটক করেছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থী সাবিত, যিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের ছাত্র, অভিযোগ করেছেন যে তিনি বাসে উঠার পর হাফ ভাড়া নিয়ে বাসের হেল্পারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বাস থেকে নামার সময় হেল্পার তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, ফলে তার দুই পা কেটে যায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে হয়।

আহত সাবিত জানান, "আমি আজিমপুর থেকে কলেজে আসার জন্য ভিআইপি বাসে উঠি। নামার সময় হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় তারা আমার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এরপর আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, যার ফলে আমি পা ও হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হই।"

অপরদিকে, আটক বাস চালকরা জানিয়েছেন, পূর্ববর্তী কোনো ঘটনার কারণে এসব বাস আটক করা হয়েছে। লিটন নামের এক চালক বলেন, "কোন বাসের সঙ্গে ঘটনা ঘটেছে সেটা আমি জানি না। তবে, শুনেছি কলেজের এক ছাত্রকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে হেল্পার। তাই আমাদের বাসগুলো আটক করেছে।"

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, "আমরা বিষয়টি জেনেছি এবং নিউমার্কেট থানাকে জানিয়েছি। থানার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি দেখছে। তবে শিক্ষার্থীদের নিজেদের হাতে বিচার তুলে নেওয়া উচিত নয়।"

বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে স্থানীয় নিউমার্কেট থানার পুলিশ ও কলেজ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আটক বাসগুলো নিয়ে যায় মালিকপক্ষ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।

Header Ad

ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটেছে, ঘোষণা দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘকাল ধরে চলমান ভারত ও চীনের সীমান্ত সমস্যা অবশেষে মিটে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষও ঘটেছে, কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি উন্নতির পথে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দু এবং আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা এএফপির রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) সংক্রান্ত এলাকায় 'টহল বন্দোবস্ত' এবং সেনা মোতায়েনের বিষয়ে যে অচলাবস্থা ছিল, তা সমাধান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। তাঁর এই সফরের প্রেক্ষিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি বলেন, "গত কয়েক সপ্তাহে ভারত ও চীনের কূটনীতিক এবং সামরিক মধ্যস্থতাকারীরা বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনার ফলস্বরূপ, সীমান্তে বিরোধের বিষয়গুলো সমাধান হয়েছে।"

তিনি আরও জানান, দুই দেশ এখন 'পরবর্তী উদ্যোগ' নিতে শুরু করবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এই চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, "২০২০ সালের আগে সীমান্তে যে ধরনের টহল কার্যক্রম পরিচালনা করা হত, তা আবারও শুরু হবে।"

যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি, তবে জয়শঙ্কর বলেছেন, "২০২০ সালের পরিস্থিতিতে ফিরে গেছি, যার মাধ্যমে আমি বলতে পারি যে চীনের সঙ্গে সীমান্তে বিরোধের অবসান ঘটেছে।"

অতীতে, ভারত সরকার জানিয়েছিল যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি তখনই ফিরে আসবে, যখন চীন তাদের সেনা সরিয়ে নেবে। চীনের সেনা মোতায়েনের জবাবে ভারতও ওই এলাকায় সেনা মোতায়েন করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিকস সম্মেলন শুরুর এক দিন আগে এই ঘোষণায় মোদি ও শি জিনপিংয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মোদি ও শি'র দেখা হয়েছে ১৪ বার, কিন্তু ২০২২ সালে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘাতের পর মাত্র দুইবার তারা সাক্ষাৎ করেছেন।

এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লি জিয়ান জানিয়েছেন, "ভারত-চীন সীমান্তের বিরোধিতাপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানে দুই দেশ একমত হয়েছে।"

Header Ad

টাকা না পেয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের গেটে তালা দিল গ্রাহকরা

ছবি: সংগৃহীত

টাকা না পাওয়ায় চাঁদপুরের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল থেকে শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত ব্যাংকটিতে টাকা উত্তোলনের জন্য গ্রাহকরা জড়ো হন। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লেনদেন বন্ধ রাখলে উত্তেজিত গ্রাহকরা প্রবেশদ্বারে তালা লাগিয়ে দেন।

পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া উপস্থিত হয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

চাঁদপুর জেলা শাখায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ২২ হাজার গ্রাহক রয়েছে, কিন্তু বর্তমানে ১০০ জন গ্রাহকেরও টাকা দিতে পারছে না ব্যাংক। জেলার অন্যান্য শাখাগুলোর পরিস্থিতিও একই রকম। ব্যাংকের টাকা সংকটের কারণে গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী সেবা পাচ্ছেন না, যা তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

সরকার পতনের পর থেকেই ব্যাংকটির লেনদেনে জটিলতা শুরু হয় এবং তা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বর্তমানে ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। তবে টাকার সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ঠিকমতো সেবা দিতে পারছে না।

অনেক গ্রাহক জানান, দুই সপ্তাহ ধরে টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে এসে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রতিবারই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের পরবর্তী সপ্তাহে আসার পরামর্শ দেন, কিন্তু টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয় না। আজকের দিনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন।

ব্যাংকের ম্যানেজার মো. মাহবুব আলম জানান, রোববার ও সোমবার সীমিত আকারে লেনদেন চলছিল, তবে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। আজ সম্পূর্ণ লেনদেন বন্ধ থাকায় গ্রাহকরা তালা মেরেছেন। তিনি আরও জানান, প্রধান কার্যালয় থেকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে, যা দিয়ে আপাতত গ্রাহকদের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া সম্ভব হবে।

ওসি মো. বাহার মিয়া বলেন, "ব্যাংকে ভিড় জমেছে এবং গ্রাহকরা তাদের টাকা পাচ্ছেন না, এমন খবর পেয়ে আমরা টহল পার্টি পাঠাই। পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে আমি নিজে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি এবং ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে কিছু টাকার ব্যবস্থা করি। আশা করছি, আপাতত গ্রাহকদের শান্ত করা যাবে।"

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

হাফ ভাড়া না নেওয়ায় ৩০ বাস আটকেছে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা
ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটেছে, ঘোষণা দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
টাকা না পেয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের গেটে তালা দিল গ্রাহকরা
২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম
আন্দোলনে মাথায় গুলিবিদ্ধ শিশু মুসা উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলো
বিরামপুরে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনের এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত
১৭ প্রতিষ্ঠানসহ সালমান পরিবারের নথি তলবে ৭০ সংস্থায় চিঠি
আন্ডারপাসের দাবিতে ঢাকা-যমুনা সেতু মহাসড়ক অবরোধ, যানবাহনের দীর্ঘলাইন
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াইয়ের পথ খুলল
এসআই অব্যাহতির পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ক্ষমা চেয়ে আদালতে ব্যারিস্টার সুমন বললেন, ‘আমি খুব সরি স্যার’
ফেসবুক লাইভে মিথ্যা আতঙ্ক ছড়ালেন সাদিয়া আয়মান
পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন ১৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড
১৬ বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছেন শাজাহান খান
নারায়ণগঞ্জে আসামির ছুরিকাঘাতে পুলিশ সদস্য আহত
ব্যারিস্টার সুমন ৫ দিনের রিমান্ডে
লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরও ১৫৭ বাংলাদেশি
সারদায় পুলিশের ২৫০ ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে গনজমায়েতের ডাক
৩৬৯ দিন পর অবশেষে মাঠে ফিরলেন নেইমার