বুধবার, ১ মে ২০২৪ | ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dhaka Prokash

অসাধারণ ভাষণটির বিশ্বজয়

২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবরে প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দপ্তরে মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ঘোষণা দিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি ‘বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’-এ। ইউনেস্কো জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা। এই স্বীকৃতি ইতিহাসের বড় সময় ধরে বিশ্বজুড়ে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি করেছে। বলতেই হবে বাঙালি-বাংলাদেশের ইতিহাস এই ৭ই মার্চের ইতিহাস। ইউনেস্কোর মাধ্যমে বাঙালির অর্জন বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য। যে ঐতিহ্য মানবজাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। অনুপ্রেরণা প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের ভেতর দিয়ে মানুষের মানবিক অধিকারকে নিশ্চিত করে।

চল্লিশের দশকে প্রখ্যাত মনীষী এস. ওয়াজেদ আলি এমন একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন-বলেছিলেন এই জাতি একজন মহামানবের প্রতীক্ষায় আছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘এখন বাঙালি কেবল ভারতবর্ষের নয়, কেবল প্রাচ্য ভূখন্ডের নয়, সমগ্র বিশ্ববাসীর পথপ্রদর্শক হবে-সত্য, সুন্দর, শুভ জীবন- পথের।’ আশাটা কি বেশি করা হয়েছিলো যে বাঙালি শুধু ভারতবর্ষের নয়, প্রাচ্য ভূখণ্ডের নয়, সমগ্র বিশ্ববাসীর পথপ্রদর্শক হবে? অথচ কী আশ্চর্য, চল্লিশের দশক থেকে ষাটের দশক -মাত্র দু-দশক সময়ের ব্যবধানে এমন একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি বিশ্ববাসীর পথপ্রদর্শকের জায়গায় স্থান দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু এমনই এক রাজনৈতিক নেতা যিনি ভারত উপমহাদেশের মানচিত্র বদলে দিয়েছেন। বাঙালিকে যোদ্ধা জাতি হিসেবে বিশ্বের মানুষের সামনে পরিচিত করিয়েছেন। বাঙালির এই অর্জন আজকের পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের সামনে একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত।

বাঙালির প্রতি তাঁর আবেগ ছিলো সীমাহীন, বাঙালিকে কেন্দ্র করে তাঁর অভিজ্ঞতা ছিলো মৃত্তিকাসংলগ্ন এবং সমুদ্রসমান ভালোবাসা দিয়ে এ জাতিকে গৌরবময় জীবনের সন্ধান দেবার স্বপ্নে তৈরি করেছিলেন নিজের সবটুকু। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, একটি ভাষাগত ও জাতিগত রাষ্ট্রের উদ্ভব হলে তা এ সময়ের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হবে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে যদি অনেক রাষ্ট্রের জন্ম হয় তাহলে আর কোনো বৃহৎ শক্তি থাকবে না। কেউ কারো ওপর কর্তৃত্ব করতে পারবে না। শান্তি ও কল্যাণের রাষ্ট্র হবে সেগুলো। আগামী দিনের ছেলেমেয়েরা জানবে না বিশ্বযুদ্ধ কী! বাংলাদেশের মতো একটি একটি করে গড়ে উঠবে অসংখ্য রাষ্ট্র।

সেই ভাষণে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন একটি অলৌকিক বাক্য। তর্জনি তুলে বলেছিলেন, ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ বাক্যটি ভেবে দেখতে হবে। তিনি যদি প্রমিত বাংলা ব্যবহার করতেন তাহলে বলতেন, ‘আর দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’ তিনি প্রমিত বাংলা ব্যবহার করেননি। আঞ্চলিক শব্দ সহযোগে আঞ্চলিক ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তার হৃদয়ের এ বিশাল দরজা খুলে দিয়েছেন, যে দরজা পথে বেরিয়ে এসেছে বাঙালি চরিত্রের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য।

এই ছোট্ট বাক্যটি সেতুবন্ধ গড়ে তুলেছে এস. ওয়াজেদ আলির একটি দীর্ঘ বাক্যের সঙ্গে, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘বাঙালি এখন সেই মহামানবের প্রতিক্ষায় আছে। যিনি তাঁকে এই গৌরবময় জীবনের সন্ধান দেবেন- ভগীরথের মতো এই বাংলায় ভাবগঙ্গার সঙ্গম সুস্পষ্ট করে তুলবেন’। পার্থক্য এই যে, তাঁকে দীর্ঘ অর্থবহ বাক্য রচনা করতে হয়নি, তিনি রচনা করেছেন ছোট অথচ তীক্ষè, অপ্রমিত অথচ গভীর অর্থবহ বাক্য।

৭ই মার্চের ভাষণে সেদিন তিনি সেই বাক্যটির পর বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, এই বাক্যটি তিনি প্রমিত বাংলায় বলেছেন। এখানেও এস. ওয়াজেদ আলির আর একটি বাক্যের সঙ্গে সংযোগ-সেতু রচিত হয়। কি আশ্চর্যভাবে এই ভাষণ জাতীয় পটভূমি থেকে আন্তর্জাতিক মাত্রায় উন্নীত হয়েছে- মুক্তির সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম প্রতিটি দেশের জন্য সর্বজনীন সত্য। মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম এককভাবে হয় না, এরজন্য প্রয়োজন হয় আন্তর্জাতিক সমর্থন, সাহায্য এবং সহযোগিতা। তাই বাক্যটি উচ্চারিত হয় প্রমিত বাংলায়। বাঙালি জাতিসত্তার ঊর্ধ্বে পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে মেলবন্ধনের প্রত্যাশায়। স্পষ্ট হয়ে ওঠে ভগীরথের মতো এই বাংলায় ভাবগঙ্গার সঙ্গম। সেদিনের বক্তৃতায় তাঁর উত্থিত সেই অমিতবিক্রম তর্জনির সঙ্গে কন্ঠস্বর যখন একই সমান্তরালে পৌঁছে যায়, তখনই বাঙালির অভিনব জীবন আস্বাদের স্পৃহা প্রবল হয়ে ওঠে।

এই ভাষণের প্রতিটি বাক্যই বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে। ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবে না’ বাক্যটি সাংস্কৃতিক, রাজনীতিক, অর্থনৈতিক বিষয় স্পষ্ট করে দেয়। এই বাক্যটি দেশের সীমানা অতিক্রম করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের কাছেও পৌঁছে যায়।

এই ভাষণ কী করে দেশের সীমানা অতিক্রম করল এটা একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথা। তিনি বলেছেন যে বিদেশে কোনো একটি জায়গায় একজন কাশ্মীরের গেরিলাযোদ্ধার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে, নানা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এভাবে কি আপনারা অন্য দেশের ওপর নির্ভর করে নিজেদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবেন? সেই গেরিলাযোদ্ধা সঙ্গে সঙ্গে তাকে বলেছিলো, Are you from Bangladesh?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ উন্নয়নশীল বিশ্বের ছোট ছোট দেশগুলোর জনগণের কাছে এভাবেই পৌঁছে গেছে। এ পৌঁছে যাওয়া শুধু একটি ঘটনা নয়। এর পিছনে আছে হাজার বছরের একজন মানুষের অভিজ্ঞান নিয়ে হাজার বছরের ইতিহাসকে নিজের মধ্যে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের প্রাজ্ঞ মনীষী সরদার ফজলুল করিম ৭ই মার্চের ভাষণ শুনেছেন রমনা রেসকোর্সে বসে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিজেকে যত ক্ষুদ্রাবয়ব মনে করি, তেমন আর তখন যথার্থই ছিলাম না। আমার অবয়বকে আমি যথার্থই ছাড়িয়ে যাচ্ছিলাম। দেহ আমার দীর্ঘ হচ্ছিল। শরীরে আমার রোমাঞ্চ জাগছিল। সাহস বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আর তাই পাকিস্তানি জঙ্গি বিমানগুলো আমার মাথার উপর দিয়ে সগর্জনে যখন আসা-যাওয়া করছিল এবং সে বিমান থেকে যে কোনো মুহূর্তে যে মৃত্যুর বাণ আমর বুকে এসে বিঁধতে পারে, সে কথা জেনেও আমার পা একটুও কাঁপছিল না। আমি ছুটে পালাতে চেষ্টা করিনি।’

ইতিহাসে তিনিই অমর, যিনি সমগ্র জাতিকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন- ইতিহাস তাঁরই পক্ষে যিনি সময়ের বিচারে নিজেকে যোগ্য বলে প্রমাণ করতে পারেন। এ সংজ্ঞায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের সেই মহামানব, সময় যাঁকে সৃষ্টি করেনি, যিনি সময়কে নিজের করতলে নিয়ে এসেছেন। যিনি কঠোর স্বরে নিজস্ব ভঙ্গিতে উচ্চারণ করেছিলেন সব কালের উপযোগী এবং সব দেশের জন্য প্রযোজ্য একটি অমর পঙ্ক্তি ‘মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব- এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।’ রক্ত দেয়া অর্থবহ হয় নিজের জীবন উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞায়। এই প্রতিজ্ঞা মুক্তিকামী মানুষের ঘরে ঘরে উচ্চারিত না হলে মুক্তির লক্ষ্য অনিবার্য হয়ে ওঠে না। ইউনেস্কোর বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছালে এই ভাষণের তীব্রতা অপ্রতিরোদ্ধ হয়ে উঠবে মানুষের চেতনায়। সেজন্য ইউনেস্কোর এই দলিল সংরক্ষণের উদ্দ্যোগ। মানুষের জীবন যেন ন্যায়সঙ্গত সমতার বিচারে মহীয়ান হয়ে চির জাগরুক থাকে বিশ্ব সংস্থার এমন আবেদনই সকলের প্রত্যাশা।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শেষ জীবনে ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে আশা করেছিলেন : ‘আজ আশা করে আছি, পরিত্রাণকর্তার জন্মদিন আসছে আমাদের এই দারিদ্র্যলাঞ্ছিত কুটিরের মধ্যে; অপেক্ষা করে থাকব, সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে, মানুষের চরম আশ্বাসের কথা মানুষকে এসে শোনাবে এই পূর্বদিগন্ত থেকেই। ..... মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব। আশা করব, মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর-এক দিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে। মনুষ্যত্বের অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলে বিশ্বাস করাকে আমি অপরাধ মনে করি।’

যে পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ এই কথাগুলো বলেন, সেটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবু এই কথাও সবাইকে বঙ্গবন্ধুর কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি আমাদের যেভাবে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, মানুষ হিসেবে মানুষকে যে আশ্বাসের কথা শোনাতে চেয়েছিলেন, এ দেশে এমন আর কে চেয়েছেন। তিনি পরিষ্কার উচ্চারণে বলেছেন, ‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘২৩ বছরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। ২৩ বছরের ইতিহাস, মুমূর্ষু নরনারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস, এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।’ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে রবীন্দ্রনাথের কথার একই প্রতিধ্বনি শোনা যায়। রবীন্দ্রনাথ স্বদেশের মানবপীড়ন দেখে যে ক্ষোভ থেকে পরিত্রাণকর্তার আবির্ভাব চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছা পূরণ করেছেন অমৃতের সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাঁর অবদান আজ বিশ্বনন্দিত। ইতিহাসের পৃষ্ঠায় তিনি আজ অমর মানুষ।

 

লেখক: বাংলা একাডমেরি সভাপতি ও সাহত্যিকি

Header Ad

মহাদেবপুরে খাদ্যগুদামের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

খাদ্যগুদামের জব্দকৃত ট্রাক। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর মহাদেবপুরে সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ভালো মানের চাল বের করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের চাল গুদামে প্রবেশ করার অপরাধে খাদ্যগুদামের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এঘটনায় অজ্ঞাত আরো ২-৩ জনকে আসামী করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমদ বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

মামলার আসামীরা হলেন- নওগাঁ শহরের খাস-নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা, খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম (৪৬), বদলগাছী থানার দ্বাড়িশন গ্রামের বাসিন্দা ও উপ-খাদ্য পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম (৪৯) এবং মহাদেবপুর থানার চকগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা খাদ্য গুদামের শ্রমিক সর্দার আজমের আলী (৫২)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়- মহাদেবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাজের হাসান গত দুই বছর থেকে কর্মরত আছেন। গত ১৭ এপ্রিল সকাল ১০ টার দিকে মহাদেবপুর উপজেলার ইউএনও কামরুল হাসান সোহাগ এলএসডির ১নং গুদামের দক্ষিন পার্শ্বে একটি ট্রাক দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। এসময় তিনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাজের হাসানকে ফোনে ডেকে নেন। এরপর সেখানে উপ-খাদ্য পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম এবং আজমের আলীকে দেখতে পান। উক্ত ট্রাক হতে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের ৩০০ বস্তা চাল ১নং গুদামের ১০৯/১০১১৫৫৬ নং ধামালে খামালজাত করা হয়েছে। আর বাঁকী ১২০ বস্তা চাল গুদামজাত করার অপেক্ষায় ট্রাকের উপরে আছে। ইউএনও বিষয়টি মোহাজের হাসানের কাছে গুদামের ভেতরে চাল ঢুকানোর জন্য কোন সরকারি নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চান। মোহাজের হাসান সাফ জানিয়ে দেন এমন কোন নির্দেশনা নেই।

এ বিষয়ে রাশেদুল ইসলাম ও আজমের আলী চালের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনিও কোন সদুত্তর দিতে পারেননি এবং তার জ্ঞাতসারেই চালের বস্তাগুলো পরিবর্তন করা হচ্ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ইউএনও নির্দেশক্রমে মোট ৪২০ বস্তা (প্রতিটি বস্তা ৩০ কেজি) চালসহ ট্রাক থানায় পাঠানো হয়। সেই সাথে ১ নং গুদামটি সিলগালা করা হয়।

মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমদ বলেন- আতিকুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম ও আজমের আলী সহ অজ্ঞাত আরো ২-৩ জন মিলে পরস্পর যোগসাজসে অধিক মুনাফা লাভের আশায় ভালো মানের চাল গুদামের মধ্য থেকে বের করে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের চাল গুদামের মধ্যে ঢুকানোর চেষ্টা করছিল। অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

ফিলিপাইনে গরমে জেগে উঠল ৩০০ বছর আগে ডুবে যাওয়া শহর

ফিলিপাইনে গরমে জেগে উঠল ৩০০ বছর আগে ডুবে যাওয়া শহর। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ। এমন পরিস্থিতিতে ফিলিপাইনে পানিতে তলিয়ে যাওয়া একটি শহরের ধ্বংসাবশেষ নতুন করে দৃশ্যমান হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে বড় একটি বাঁধের পানি আংশিক শুকিয়ে যাওয়ার পর শহরটি জেগে উঠেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, প্রচণ্ড গরমে বড় একটি বাঁধের পানি আংশিক শুকিয়ে যাওয়ার পর শহরটি জেগে ওঠে।

ফিলিপাইনে গরমে জেগে উঠল ৩০০ বছর আগে ডুবে যাওয়া শহর। ছবি: সংগৃহীত

বলা হচ্ছে, ফিলিপিন্সের পান্তাবাঙ্গান নামের ওই শহর ৩০০ বছর পুরনো। ১৯৭০-এর দশকে পানি সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম জলাধার তৈরির সময় এটি পানিতে তলিয়ে যায়। আবহাওয়া যখন অনেক শুষ্ক ও গরম থাকে, তখন বাঁধের পানি শুকিয়ে শহরটি কখনো কখনো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, যা বিরল ঘটনা।

ফিলিপিন্সের বাঁধগুলো দেখভালকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রকৌশলী মারলন পালাদিন বলেন, তলিয়ে যাওয়া শহরটি আগে দৃশ্যমান হলেও এবারের মতো এতটা দৃশ্যমান হয়নি।

ফিলিপিন্সে এখন গরম ও শুষ্ক মৌসুম চলছে। এল নিনোর (প্রশান্ত মহাসাগরের পানি অস্বাভাবিক রকমের উষ্ণ হয়ে ওঠা) প্রভাবে সেখানে গরমের তীব্রতা বেড়েছে। এতে জলাধারের পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। দেশটির প্রায় অর্ধেক জায়গায় এখন খরা চলছে। কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পৌঁছেছে।

ফিলিপিন্সের বাঁধ দেখভালকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রকৌশলী মারলন পালাদিন এএফপিকে বলেছেন, বৃষ্টি না হওয়ায় গত মার্চ মাস থেকেই ডুবে থাকার শহরটির ধ্বংসাবশেষ দৃশ্যমান হতে শুরু করে। শহরটি নতুন করে জেগে ওঠায় পর্যটকরা ভিড় করছেন।

দাম বাড়ল জ্বালানি তেলের

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

দেশের বাজারে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে তৃতীয়বারের মতো জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি এক টাকা করে বেড়েছে। একই সঙ্গে অকটেন ও পেট্রলের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা করে বাড়ানো হয়।

আগামীকাল বুধবার থেকে এ নতুন দর কার্যকর হবে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে দাম বৃদ্ধির এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত মার্চ হতে বিশ্ববাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলার আলোকে প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতার প্রাইসিং ফর্মুলার আলোকে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৭ টাকা। ভেজাল প্রতিরোধে কেরোসিনের দাম ডিজেলের সমান রাখা হয়। পেট্রলের নতুন দাম প্রতি লিটার ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা ও অকটেনের দাম ১২৮ টাকা ৫০ পয়সা।

এর আগে এপ্রিলের জন্য ঘোষিত দামে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২ টাকা ২৫ পয়সা করে কমানো হয়েছিল। তবে মার্চে অকটেনের দাম ১৩০ টাকা থেকে কমে হয়েছিল ১২৬ টাকা। আর পেট্রলের দাম ১২৫ টাকা থেকে কমে হয়েছিল ১২২ টাকা।

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রল ব্যক্তিগত যানবাহনে অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাসদ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রলের দাম বেশি রাখা হয়।

অকটেন ও পেট্রল বিক্রি করে সব সময় মুনাফা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি। মূলত ডিজেলের ওপর বিপিসির লাভ-লোকসান নির্ভর করে। দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল।

জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

এছাড়া পৃথক একটি প্রজ্ঞাপনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিটে ৭৫ পয়সা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে (আইপিপি ও রেন্টাল) প্রতি ইউনিট গ্যাসের নতুন দাম ১৫ টাকা ৫০ পয়সা। আর ক্যাপটিভে (শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ) গ্যাসের নতুন দাম ৩১ টাকা ৫০ পয়সা।

সর্বশেষ সংবাদ

মহাদেবপুরে খাদ্যগুদামের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
ফিলিপাইনে গরমে জেগে উঠল ৩০০ বছর আগে ডুবে যাওয়া শহর
দাম বাড়ল জ্বালানি তেলের
সুন্দরবনের খালে ভাসছে মরা বাঘ
তিন ইসলামি ব্যাংকের ‘ঋণ কেলেঙ্কারি’ তদন্তের নির্দেশ বাতিল
টাঙ্গাইলে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, হিট স্ট্রোকে বৃদ্ধের মৃত্যু
অতি বাম-অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে: প্রধানমন্ত্রী
রাত ৮টার পর দোকান খোলা রাখলে বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা হবে: মেয়র তাপস
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি
বড় চমক রেখে ভারতের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ
নেটদুনিয়ায় ঝড় তুলেছে ‘লাপাতা লেডিস’-এর ফুল
গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৭০ শতাংশই ফেল
মুন্সীগঞ্জে হিট স্ট্রোকে ২ জনের মৃত্যু, অসুস্থ ৪
বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো করছে: আইএমএফ
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে আজ মুখোমুখি রিয়াল-বায়ার্ন
রেলের ভাড়া না বাড়ানোর আহ্বান জাতীয় কমিটির
আজ চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড, ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে রংপুর শ্রম আদালতের মামলা হাইকোর্টে স্থগিত
বিরামপুরে বন্ধুর পড়ে যাওয়া ব্যাগ তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাদ্রাসাছাত্র নিহত