কেন আমরা উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী ছিলাম না?
এইচএসসি পাস করার পর বন্ধুদের অনেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ'তে ভর্তি হয়েছিল। এখনো অনেকের সঙ্গে কথা হয়, সুযোগ পেলে আড্ডা হয়। একটা বিষয় আমাদের মাঝে উঠে আসে। সেটা হচ্ছে, আমাদের কেউই বিবিএ/এমবিএ শেষ করার পরে উদ্যোক্তা হইনি। সবাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি।
তের/চৌদ্দ বছর আগে যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস গ্রাজুয়েট হয়ে বের হয়েছে, তাদের প্রায় সকলেই আমাদের মতো সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/ সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। এর আগে যারা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন, তাদের অধিকাংশই এমএনসি (মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি) এর বিকল্প কিছু খুঁজতেন না।
কেন আমরা উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি আগ্রহী ছিলাম না? এর অন্যতম একটা কারণ হতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে আমাদেরকে করপোরেট কালচার সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ করা হত। যেমন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কিংবা ইউনিলিভারে চাকরি করলে শুরুতেই গাড়ির সুবিধা পাওয়া যায়। ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসারে যোগদান করতে পারলে, অল্প সময়ের মধ্যেই শাখা ব্যবস্থাপক হওয়া যায় এবং শাখাটি পুরোপুরি ব্যবস্থাপকের নিয়ন্ত্রণে থাকে ইত্যাদি। কারা বড় বড় দেশি স্বনামধন্য কিংবা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কতটা দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে, সেগুলো দেখিয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু তারা যে সব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে, সেই সব প্রতিষ্ঠানের মালিক বা চেয়ারম্যানের সফলতার বর্ণনা কি দেওয়া হতো? কীভাবে সেই সব মালিক বা চেয়ারম্যান ছোট অবস্থান থেকে মেধা,পরিশ্রমের মাধ্যমে বড় বড় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন, হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন, জন প্রতিনিধি হচ্ছেন, সিআইপি সম্মান পাচ্ছেন, এসব যদি সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হত, তবে আমাদের সকলেই শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে কয়েকজন হলেও অন্তত উদ্যোক্তা হতে চেষ্টা করত।
লেখক: রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক