শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ | ৭ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

সৈয়দ আবু জাফর আহমদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

মৌলভীবাজারের কোর্ট রোডের একটি ভবনে তখন সাপ্তাহিক ‘মনুবার্তা’ পত্রিকার অফিস। দ্বিতীয় তলায় তিনটি কক্ষ। তার একটি কক্ষে সময় পেলেই বসেন পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক। এক-আধটু লেখালেখির সুবাদে প্রায়ই সেখানে যেতাম। তার সঙ্গে দেখা হলে স্মিত হেসে কথা বলতেন অনুচ্চস্বরে কিন্তু দৃঢ়ভাবে এবং গুছিয়ে। হ্যাঁ, তিনি হলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ।

২৯ মে সোমবার ছিল তার ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল আন্দোলনের একজন নির্ভীক সৈনিক ছিলেন তিনি। শোষণ মুক্ত সমাজ নির্মাণ, মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে লড়াকু এক নেতা ছিলেন কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ। কৈশোরে ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতির ময়দানে নেমে আমৃত্যু তাই ছিলেন।

মফস্বল শহর থেকে রাজনীতি করে দেশের অন্যতম একটা প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সহজ কথা নয়। সৈয়দ আবু জাফর আহমদ ১৯৫৪ সালের ১১ জুলাই মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে সৈয়ারপুর লক্ষ্মীবালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে এসএসসি পাশ করে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৭০ সালে মৌলভীবাজার কলেজ সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত হোন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে একই সংগঠনের প্রার্থী হিসেবে একই কলেজ সংসদে জিএস নির্বাচিত হোন।

১৯৭১ সালে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি- ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথম কারাবরণ করেন চা শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে। ওই বছরই তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মৌলভীবাজার মহকুমা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। ১৯৭৫ সালে তিনি আবারও গ্রেপ্তার হোন।

স্বপরিবারে জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে বিনা বিচারে প্রায় এক বছর হাজতবাস করে ১৯৭৬ সালে মুক্তিলাভ করেন। এ ছাড়া, স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলেও তিনি কারাবন্দী হোন।

কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, লড়াই- সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার কারণে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মৌলভীবাজার মহকুমা কমিটির সহ- সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হোন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালে পার্টির ৫ম কংগ্রেসে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ১৯৯৫ সালে ৬ষ্ঠ কংগ্রেসে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ২০১২ ও ২০১৬ সালে যথাক্রমে দশম ও একাদশ কংগ্রেসে পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। তবে অসুস্থতার কারণে ২০১৭ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে আমৃত্যু প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ সৈয়দ আবু জাফর আহমদ সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ছাড়াও প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিলেন সদা সোচ্চার। কৃষক, ক্ষেতমজুর, চা শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, শব্দকার জনগোষ্ঠী তথা মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার, জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলনে তিনি ছিলেন সামনের কাতারে। তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ২০০২ সালের ঢাকা- বিবিয়ানা লংমার্চে তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক।

পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে সুবক্তা সৈয়দ আবু জাফর আহমদ ভারত, নেপাল, সোভিয়েত ইউনিয়ন(রাশিয়া), চীন, ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হংকং, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তা ছাড়া, ১৯৭৯ সালে তিনি এক বছরের জন্যে মার্ক্সবাদ এবং লেনিনবাদ সর্ম্পকে উচ্চতর জ্ঞান লাভের জন্যে জার্মানীতে গমন করেন।

রাজনৈতিক পাঠে অক্লান্ত এবং লেখালেখিতেও দক্ষ ছিলেন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়েও ছিলেন নিবেদিত। ১৯৯১ সালে তার সম্পাদনায় মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক মনুবার্তা। পত্রিকাটি অল্পদিনেই সুধীজনসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পত্রিকা অফিসটি অনেক লেখক, সাংবাদিকদের যোগাযোগের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। নতুন লেখক সৃষ্টিতেও পত্রিকাটির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

সার্বক্ষণিক এই রাজনীতিবিদের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা।

জাহাঙ্গীর জয়েস: কবি ও শিক্ষক।

Header Ad
Header Ad

নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২১ মার্চ) ভোরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন রায়পুরা উপজেলার মোহিনীপুর গ্রামের আমিন (২৩) ও বাশার (৩৫), যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাম মিয়ার সমর্থক বলে জানা গেছে। নিহত আমিনের পায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁনপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর সালাম মিয়া এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সোহাগের সঙ্গে বিএনপি নেতা সামসু মেম্বারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করেছিলেন সালাম ও সোহাগ।

তবে গত ৫ আগস্টের পর সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকরা এলাকায় ফিরে এলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সালাম মিয়া ও তার সমর্থকরা এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে সামসু মেম্বারের সমর্থকরা তাদের বাধা দেয়।

পরে দেশীয় অস্ত্র, টেঁটা-বল্লম, দা, ছুরি, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে আমিন এবং টেঁটা ও ছুরিকাঘাতে বাশার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন।

রায়পুরা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আদিল মাহামুদ জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত ও একজন গুলিবিদ্ধসহ আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

Header Ad
Header Ad

বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত খসড়ায় এই নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার ৯৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ মার্চ এ-সংক্রান্ত কার্যপত্রে (খসড়াসহ অন্যান্য বিষয়) স্বাক্ষর করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য) হিসেবে নির্বাচিত এই নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে গণপরিষদ গঠিত হলে তাদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে নতুন খসড়া আইনে তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৯৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সংশ্লিষ্ট খসড়ায় স্বাক্ষর করেন। সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আরও চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছে—

১. মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসে পেশাজীবী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার চালানো ও বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা।
২. মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত ও অন্যান্য সহযোগী।
৩. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিকরা।
৪. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

এই খসড়া কার্যকর হলে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকার অন্তত ১০ হাজার ব্যক্তির পরিচয় বদলাতে হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যারা এতদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিলেন, তাদের নতুনভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গণমাধ্যমকে বলেন, 'বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবল তারাই থাকবেন, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কোনো মর্যাদা কমানো হয়নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।'

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'আইন বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান পরিবর্তন করা যায় না। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং অপচয়মূলক উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। যদি কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'

মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ, কেবল সামরিক যুদ্ধ নয়। এ লড়াইয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঢালাওভাবে এমএনএ, এমপিএ ও গণপরিষদ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।'

খসড়া আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, 'যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা।'

সংশোধনীতে রাজনীতিবিদদের নাম বাদ দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক ও নার্সদের স্বীকৃতি বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যা ইতিহাসকে বিকৃত করার শামিল। মুক্তিযুদ্ধ একটি পরিকল্পিত সংগ্রাম ছিল, যেখানে রাজনীতিবিদরাই মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন।'

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, 'এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধ জাতির ইতিহাসের মীমাংসিত অধ্যায়। এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা অযৌক্তিক।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।'

মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন যাচাই-বাছাই:

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন শুধু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকের স্বীকৃতি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি কার্যকর হলে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যেও অনেকের স্বীকৃতি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান আইনে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধ। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় সাড়া দিয়ে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা।'

কিন্তু নতুন খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।'

এই পরিবর্তনের ফলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর এটি অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এই নতুন খসড়া আইনের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও মর্যাদা সংক্রান্ত ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এটি বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল

বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার বিচার দাবি করে শুক্রবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল করেছে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা। জুমার নামাজ শেষে তারা "নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার" স্লোগানে মুখরিত হয়ে পল্টন মোড়ের দিকে মিছিল করে।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সময়, বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর শাখাও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিলের জন্য সমাবেশ শুরু করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মসজিদের প্রবেশমুখে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন, এবং নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিজিবি সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। এছাড়া, মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করতে পুলিশ সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে আজ বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করা হয়। এর পাশাপাশি, ছাত্রশিবির ও জামায়াতের সদস্যরাও মসজিদ এলাকায় উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০
বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি
বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল
হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড, হাজার হাজার যাত্রী আটকা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ট্রাম্পের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে: হোয়াইট হাউস
ওমরাহ থেকে ফিরে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা বর্ষার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে এক সপ্তাহে ২৪৯ অপরাধী গ্রেপ্তার
ভিজিএফের চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নামে স্লোগান; স্থানীয়দের ক্ষোভ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকিরকে সাময়িক বরখাস্ত
ভিনিসিয়ুসের শেষ মুহূর্তের জাদুতে ব্রাজিলের রোমাঞ্চকর জয়
ইউনূস-মোদি বৈঠকের জন্য দিল্লির কাছে ঢাকার চিঠি
কুমিল্লায় শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৫ জন নিহত, তিনদিনে প্রাণ গেল ৬০০ ফিলিস্তিনির
আত্মপ্রকাশ করলো সাবেক সেনা কর্মকর্তা-আমলাদের ‘জনতার দল’
১৯৪ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি
ভোরে মাঠে নামছে ব্রাজিল, যেমন হবে একাদশ
মার্চে রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ
ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
হামাসের রকেট হামলায় কাঁপল ইসরাইল, বিমান চলাচল ব্যাহত
কবরস্থানের মালিকানা নিয়ে বিরোধে মারামারি, আ.লীগ নেতার মৃত্যু