আজ পবিত্র হজ, লাখো মুসল্লির ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাতের প্রান্তর

ছবি: সংগৃহীত
আজ বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, পালিত হচ্ছে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এরই মধ্যে হজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায়। গতকাল রাতেই মক্কার অদূরে অবস্থিত মিনায় পৌঁছেছেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত লাখ লাখ হাজি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে অবস্থান নিয়ে তাঁরা ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন ছিলেন সারারাত।
আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই হাজিরা রওনা দিয়েছেন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে, যেখানে অনুষ্ঠিত হবে হজের অন্যতম প্রধান ও আবশ্যিক রোকন—আরাফাতের দিনে অবস্থান। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, এই দিন আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত না হলে হজ পূর্ণ হয় না। এই দিনকেই হজের দিন বলা হয়।
আরাফাতের বিশাল প্রান্তর আজ মুখরিত হয়ে উঠেছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’—এই হৃদয়ছোঁয়া ধ্বনিতে। হাজিরা দুই খণ্ড সাদা কাপড় (ইহরাম) পরে একত্রিত হয়েছেন মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে। এক কণ্ঠে তাঁরা উচ্চারণ করছেন— "লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"
অর্থাৎ—“আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সাম্রাজ্যও তোমারই, তোমার কোনো শরিক নেই।”
হজকে নির্বিঘ্ন করতে সৌদি সরকার নিয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নানা প্রশাসনিক প্রস্তুতি। ধর্মীয় বিষয়ক প্রেসিডেন্সি ইতোমধ্যে জানিয়েছে, এবারের হজে আরাফার ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করবেন বিশ্বখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও খতিব শেখ সালেহ বিন হুমাইদ। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক রাজকীয় ফরমানে তাকে এই দায়িত্ব প্রদান করেছেন।
স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার পরপর মসজিদে নামিরায় এই খুতবা প্রদান করা হবে, যা একযোগে ৩৪টি ভাষায় অনূদিত হবে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সরাসরি এই খুতবা শ্রবণ করবেন টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে।
আজ ৯ জিলহজ বৃহস্পতিবার, সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজিরা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন। এরপর তারা রওনা দেবেন মুজদালিফার উদ্দেশ্যে, যেখানে রাত যাপন ও শয়তানকে পাথর মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন।
১০ জিলহজ শুক্রবার ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা মিনায় ফিরে আসবেন। সেখানে বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, কোরবানি প্রদান এবং মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে—হজের পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। এরপর তাঁরা মক্কায় ফিরে গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সাঈ করবেন।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য, সংহতি ও আত্মত্যাগের বার্তা নিয়ে হজ পালনের এই মহাসম্মেলন আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, মানুষ এক আল্লাহরই বান্দা—জাতি, বর্ণ, ভাষা কিংবা শ্রেণির কোনো ভেদাভেদ এখানে নেই।
