‘পদ পেতে’ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেন এইচএসসি পাস ছাত্রদল নেতা

মেহেরাব হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করেছেন। এরপর ভর্তি হয়েছিলেন স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে। কিন্তু সেখান থেকে বিদেশে চলে যাওয়ায় শিক্ষাজীবনে পড়ে দীর্ঘ বিরতি। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদলের পর ফের সক্রিয় হয়েছেন ছাত্রদলের রাজনীতিতে—আর সেই ধারাবাহিকতায়ই নতুন করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন এক সাবেক শিক্ষার্থী। উদ্দেশ্য—কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসা।
ব্যতিক্রমী এই ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। ছাত্রদলের এই নেতার নাম মেহেরাব হোসেন, বাড়ি চন্দ্রগঞ্জ এলাকার শেখপুর গ্রামে। তিনি বর্তমানে কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়কের পদে রয়েছেন। ২০১৫–১৬ শিক্ষাবর্ষে কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করার পর স্নাতক শ্রেণিতে পড়লেও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায় ভর্তি বাতিল হয়। এরপর অনেকদিন রাজনীতি থেকেও দূরে ছিলেন তিনি।
তবে ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আবারও দেশে ফেরেন মেহেরাব। ফের সক্রিয় হন কলেজ রাজনীতিতে। আর সম্প্রতি তিনি আবার কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি (বিএমটি) শাখায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন।
এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কলেজের শিক্ষকরা। তাদের ভাষ্য, “এইচএসসি পাস করা একজন শিক্ষার্থী কীভাবে আবার সমমানের কোর্সে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।” যদিও বিএমটি এইচএসসির সমতুল্য, এরপরও এ ধরনের পুনঃভর্তি প্রক্রিয়া প্রশ্ন তুলেছে প্রতিষ্ঠানটির ভর্তি ব্যবস্থাপনা নিয়েও।
ছাত্রদলের একাধিক কর্মী ও সমর্থকের দাবি, কলেজ শাখার সভাপতি পদের দাবিদার মেহেরাব রাজনৈতিক পদ পাওয়ার পথ সুগম করতেই কৌশল হিসেবে আবার কলেজের ছাত্র হয়েছেন। সংগঠনেরই এক কর্মী শাহাদাত হোসেন বলেন, “ছাত্রদলে এখন নেতৃত্বে জড়তা চলছে। কৌশলবাজদের দখলে পদ-পদবি থাকায় নতুনদের সুযোগ পাচ্ছেন না। এ কারণে পুরনো নেতারাই নানা ছলচাতুরিতে সক্রিয় হয়ে উঠছেন।”
তবে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মেহেরাব হোসেন বলেন, “ছাত্রদলের রাজনীতির কারণে একসময় হামলা-মামলার শিকার হয়েছিলাম। কলেজে পড়া চালিয়ে যেতে পারিনি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে আবার ভর্তি হয়েছি। যেহেতু স্নাতকে সরাসরি ভর্তি জটিল, তাই একাদশ শ্রেণিতে নতুন করে শুরু করলাম।”
তিনি আরও বলেন, “আমি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতির পদপ্রার্থী। যদি দল আমাকে উপযুক্ত মনে করে, তাহলে দায়িত্ব দেবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ প্রিয়ব্রত চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, “বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। একজন এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী কীভাবে আবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
