দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে। আলোচনার বিষয়বস্তুতে থাকছে দীর্ঘদিনের আলোচিত সিন্ধু নদ পানি চুক্তি, কাশ্মির ইস্যু এবং সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত বিষয়াদি।
শনিবার (১০ মে) দুই দেশের মধ্যে আকস্মিকভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মাইক্রো ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান একটি নিরপেক্ষ স্থানে নানা বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করবে।”
এদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে জানান, ভারত ও পাকিস্তানের আলোচনায় মূলত তিনটি বিষয় স্থান পাবে—ভারতের স্থগিত করা সিন্ধু নদ পানি চুক্তি, কাশ্মির ইস্যু এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পারস্পরিক অভিযোগ। তবে আলোচনার নির্দিষ্ট তারিখ ও স্থান এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে এক বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে পরোক্ষভাবে দায়ী করে। এর জেরে নয়াদিল্লি সিন্ধু নদ পানি চুক্তি স্থগিত করে, পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভিসা সুবিধা বাতিল করে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যায়।
জবাবে পাকিস্তানও সিমলা চুক্তি স্থগিতসহ ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। দুই দেশের সীমান্তে বাড়তে থাকে উত্তেজনা।
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু নদ পানি চুক্তি অনুযায়ী, পাকিস্তান সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি ব্যবহার করে আসছিল। অন্যদিকে ভারত পায় শতদ্রু, বিয়াস ও রবি নদীর পানি।
ভারতের চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তানের কৃষকরা মারাত্মক বিপদের মুখে পড়ে। দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজমি এই নদীগুলোর পানির ওপর নির্ভরশীল।
গত ৫ মে ভারত হঠাৎ চেনাব নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেয় এবং নিজেদের বাঁধগুলোতে পানি জমা করে। ফলে পাকিস্তানের নদীগুলোর পানি প্রবাহ কমে যায়। তবে পরদিনই ভারত সীমিত পরিমাণে পানি ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ঝিলাম, চেনাব ও সিন্ধুর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ভবিষ্যতের জন্য বিষয়টি উদ্বেগজনক।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের আলোচনায় বসার পেছনে আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক উদ্যোগ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ এ অঞ্চলের উত্তেজনা প্রশমনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।