রাজধানীতে বিদেশি অস্ত্র-বোমাসহ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্য গ্রেপ্তার (ভিডিও)

বিদেশি অস্ত্র-বোমাসহ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্য গ্রেপ্তার। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি বিদেশি পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি, ৩৬টি ককটেল, একটি প্রাইভেট কার এবং একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস—যা ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এ ছাড়া, পরিকল্পিত একটি বড় ধরনের স্বর্ণালংকার ডাকাতির ছকও নস্যাৎ করেছে ডিবি।
গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত সদস্যরা হলেন- মাসুদ রানা চৌকিদার (৩৮), শাকিল (২১), মামুন (৪০), মো. রাব্বি (২৬), মো. আসাদ মিয়া (৪৫), মো. পলাশ শেখ (৩৭) এবং আনোয়ার হোসেন (৪৪)। এদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন কিশোরগঞ্জ জেলার এবং পলাশ শেখ বরিশাল জেলার বাসিন্দা। এই দুইজনই এই ডাকাত দলের মূল পরিকল্পনাকারী ও নেতৃত্বে ছিলেন বলে ডিবি নিশ্চিত করেছে।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১০ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডিবির একটি দল। প্রথম ধাপে মাসুদ রানা চৌকিদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি ৭.৬২ এমএম পিস্তল ও সাত রাউন্ড গুলি। জিজ্ঞাসাবাদে সে ডাকাতির পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৩৬টি শক্তিশালী ককটেল উদ্ধার করে ডিবি। পরবর্তীতে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসে ককটেলগুলো নিষ্ক্রিয় করে এবং প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ধারণ করে আদালতে উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেয়।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, ডাকাত দলের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের সামনে জড়ো হচ্ছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল গোপালগঞ্জ জেলার বৌলতলী বাজারে অবস্থিত নিউ ডলি জুয়েলার্সে ডাকাতি চালানোর। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোররাতে তারা দনিয়া কলেজে একত্র হয় এবং ডাকাতি করতে রওনা দেওয়ার আগ মুহূর্তেই ডিবির নজরে পড়ে।
সকাল ১০টার দিকে একটি প্রাইভেট কার ও একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে করে ডাকাত দলের আরও সদস্যরা সেখানে আসে। ডিবি তৎক্ষণাৎ অভিযান চালিয়ে গাড়িসহ চারজন—শাকিল, মামুন, মো. রাব্বি ও মো. আসাদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুপুরের দিকে ধোলাইপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ডাকাতি পরিকল্পনার মূল হোতা মো. পলাশ শেখ এবং আনোয়ার হোসেনকে।

গ্রেপ্তার হওয়া এই সাতজনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি ও অস্ত্র মামলার রেকর্ড রয়েছে। ডিবির দাবি, এরা দীর্ঘদিন ধরে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের হয়ে বিভিন্ন জেলায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে আসছিল। তারা আগে রেকি করত এবং তারপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতি করত।
ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৮৭ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় সংঘটিত জুয়েলার্স ডাকাতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এর মধ্যে বনশ্রীর ডাকাতি, সীমান্ত সম্ভারের ক্রাউন জুয়েলার্স, ডেমরার ফারদিন জুয়েলার্স এবং শিল্পী জুয়েলার্সের ঘটনায় গ্রেপ্তার ও মালামাল উদ্ধার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সারা দেশে স্বর্ণালংকারের দোকানগুলো টার্গেট করে কাজ করে এমন কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রগুলো রেকি করে, অস্ত্র সংগ্রহ করে এবং গাড়ি ব্যবহার করে বড় ধরনের হামলা চালায়। এই চক্রগুলোর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া সব সদস্যের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলাও করা হচ্ছে। পুলিশ আশা করছে, এদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
