রবিবার, ১২ মে ২০২৪ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ১)

বাজারের উপর ছেড়ে দিলে কখনো অভিন্ন শিক্ষা হবে না

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সম্প্রতি ঢাকাপ্রকাশ’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন দেশের শিক্ষানীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম এবং করোনাকালের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহেরীন আরাফাত। আজ প্রকাশিত হলো সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব

ঢাকাপ্রকাশ: অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, আমরা এখনই প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরগুলোতে একমুখী শিক্ষা করতে পারি কিনা। একমুখী শিক্ষার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

আনু মুহাম্মদ: প্রথমেই একমুখী শিক্ষার অর্থটা খেয়াল করতে হবে। সবার কাছে তো এর অর্থ একরকম নয়। আমরা যতদূর দেখছি, বাংলাদেশে সর্বশেষ শিক্ষানীতি হয়েছিল ২০১০ সালে। সেখানেই প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছিল যে, একমুখী শিক্ষা তারা করবে। বাস্তবে তারা যেটাকে একমুখী শিক্ষা দাবি করছে, তার সঙ্গে একমুখী শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি যেভাবে বুঝি, একমুখী শিক্ষার মানে হলো অভিন্ন শিক্ষা। একটা দেশের নাগরিক হিসেবে শিশুকাল থেকে শুরু করে তার যে শিক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়া, তাতে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। সবাই যে একরকম করবে, এক রকম ফলাফল থাকবে বা সবার একই দিকে মনোযোগ থাকবে তা নাও হতে পারে; কিন্তু তার জন্য অভিন্ন একটা পদ্ধতি রাখতে হবে।

শিশুরা একেকজন একেকমানের পড়াশোনা করবে, একক ধারায় পড়াশোনা করবে–এটা সমাজে যে বৈষম্যটা আছে, তা আরও বাড়ানো বা একটা বিশাল অংশকে পঙ্গু করে ফেলার মতো। যেমন–আমরা যদি চিন্তা করি যে, বর্তমান সময়ে কী ধরনের শিক্ষা চলছে–একটা শিক্ষা আমরা দেখি সরকারি প্রাথমিক স্কুল, সরকারি মাধ্যমিক স্কুল পাশাপাশি আমরা দেখছি কিন্ডারগার্টেন–এর মধ্যে খুবই উচ্চ ব্যয়বহুল আছে, আবার সাধারণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে কিন্তু ব্যয়বহুল নয় এমনও আছে। মানের দিক থেকে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আমরা দেখছি মাদ্রাসা শিক্ষা আছে। মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যেও দুটো প্রধান ধরন আছে–একটাতে খুবই সাধারণভাবে পড়াশোনা হয়, গরিব ছেলে-মেয়েরা পড়ে। আরেকটা হলো–ব্যয়বহুল ইংলিশ মিডিয়াম ক্যাডেট মাদ্রাসা, সেটাতে উচ্চবিত্তরা পড়ে। সাধারণ মাদ্রাসায় যে ধরনের পড়াশোনা হয়, সেদিক থেকে ইংলিশ মাদ্রাসা বা ক্যাডেট মাদ্রাসাগুলোর যে পড়াশোনার মান, তাদের যে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, সাজ-সরঞ্জাম কিংবা বইপত্র, তাদের যে ইনটেনসিভ কেয়ার সেটার তুলনাই হয় না। দুটোর মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। এদিকে আবার ক্যাডেট কলেজ বলে আরেকটা জিনিস আছে। এই যে বহুধরনের শিক্ষা–এর মধ্যে যে ছেলে-মেয়েরা বড় হচ্ছে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গীও ভিন্ন। মাদ্রাসায় যে পড়ছে সে এক ধরনের বিশ্বদৃষ্টি নিয়ে পড়ছে, আবার ক্যাডেট মাদ্রাসা যেগুলো, সেখানে তারা ইংলিশ ও আরবি শিখছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নাই। আবার কিন্ডারগার্টেনের যে ইংলিশ মিডিয়াম, সেখানে বাংলাদেশ থেকে যতদূরে থাকা যায়, তত চেষ্টা। সেগুলোর ব্যাপারে সরকারের কোনো কাঠামো নাই, নজরদারি নাই। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে অবহেলিত। যদিও সেটা একটা স্ট্যান্ডার্ড জায়গায় যাওয়া উচিত ছিল, সেটাও নাই। এই যে বহু ধরনের শিক্ষা, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষা হওয়া উচিত–শিশুরা জন্ম থেকে শুরু করে তাদের জগৎকে জানা-বোঝা, নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো, ভাষার সঙ্গে পরিচিত হওয়া, গণিত-ইতিহাস-ভূগোল-সমাজ এগুলো সম্পর্কে তার ধারণা তৈরি হওয়া, তার শরীর সম্পর্কে তার ধারণা তৈরি হওয়া। এগুলো দিয়েই সাধারণ বা প্রাথমিক ভিত্তিটা মানুষের তৈরি করা দরকার। সবার মধ্যে সমান সুযোগ থাকলে তখন বোঝা যাবে কে, কোন বিষয়ে মনোযোগ পাচ্ছে। তাকে যদি বাধ্যতামূলকভাবে এক ধরনের শিক্ষার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে তাকে আমরা একটা গণ্ডিতে বন্দি করে ফেলছি।

আবার ব্যয়ের তারতম্যের কারণে, যার টাকা আছে সে উচ্চমানের লেখাপড়া করবে এবং বাংলাদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে বিচ্ছিন্ন হতে থাকবে। আর যার টাকা নাই সে হীনমন্যতায় ভুগবে এবং সে অদক্ষ, অক্ষম হয়ে থাকবে। এটা তো জাতীয় পর্যায়ে নাগরিকদের প্রতি বড় ধরনের একটা বৈষম্য এবং বেঈমানি এক ধরনের। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিশ্রুতি আছে যে, সবার জন্য শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে। অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা যদি করতে হয়, তাহলে এর জন্য রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। বাজারের উপর ছেড়ে দিলে কখনো অভিন্ন শিক্ষা হবে না। কারণ বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার মানে–টাকার শক্তি দিয়ে প্রকাশিত হবে সেটা। যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রকাশিত হবে। নানা ধরনের মতাদর্শ, নানা ধরনের আগ্রহ, নানা রকম অগ্রাধিকার দ্বারা শিক্ষা নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়বে। শিক্ষা থাকতে হবে রাষ্ট্রের দায়িত্বে, এখানে কোনো আর্থিক বিষয় থাকা উচিত না। আর্থিক কোনোরকম চিন্তা, টাকা-পয়সার চিন্তা যদি কোনোরকম অভিভাবককে তাড়িত করে তাহলে তাদের পক্ষে সন্তানের লেখাপড়ার যে চাহিদা পূরণ সম্ভব না। আমরা অনেক ছেলে-মেয়ের কথা জানি, যারা অর্থের অভাবে মেধা থাকা সত্ত্বেও সফল হতে পারেনি। করোনাকালে অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে এবং করোনা ছাড়াও আমরা ঝরে পড়ার হার দেখি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

শিক্ষার ব্যবস্থার যে প্রতিশ্রুতি ছিল–আমরা যদি ৬০-এর দশক থেকে শুরু করি–৫৪ সালে যে যুক্তফ্রন্ট গঠনের যে ২১ দফা, সেখান থেকে শুরু করে ৬৯ সালের যে ১১ দফা, স্বাধীনতার পর যতগুলো শিক্ষা আন্দোলন হয়েছে, সেগুলোর যে বিভিন্ন দাবি–সে সবগুলো দাবির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে এখনকার শিক্ষাব্যবস্থা চলছে। প্রত্যেকটার মধ্যেই এ দাবিটা ছিল–সবার জন্য শিক্ষার অভিন্ন ব্যবস্থা করতে হবে এবং রাষ্ট্রের সে দায়িত্ব নিতে হবে। দাবিগুলো ছিল বলেই সেটার প্রতিফলন আমরা সংবিধানে দেখি। দাবিগুলো যারা করেছিলেন–সে সময় অনেকে রাজনীতিবিদ ছিলেন বা ছাত্র সংগঠনে যুক্ত ছিলেন, তারা অনেকেই পরে মন্ত্রী হয়েছেন; কিন্তু ওই দাবিগুলো আর পূরণ হয়নি।

শৈশব থেকে শুরু করে শিক্ষাটা কখনো বোঝা হতে পারে না। আমাদের এখানে ব্যয়বহুল হোক, অব্যয়বহুল হোক–সবখানে আমরা দেখি, যারা নীতিনির্ধারণ করে তাদের মধ্যে এরকম একটা ধারণা–যত বেশি বই, যত বেশি বোঝা চাপানো যাবে শিশুদের উপর, সেই স্কুল তত উচ্চ মানসম্পন্ন। এর চেয়ে ভুল আর কিছু হতে পারে না। শিশুদের থেকে শুরু করে প্রাথমিক-মাধ্যমিক পর্যায়ে, আসলে সকল পর্যায়েই শিক্ষাটা হওয়া উচিত একটা আনন্দের বিষয়। আর শিক্ষার কাজ, শিক্ষকদের কাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে–শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করা, আনন্দ তৈরি করা এবং প্রশ্ন তৈরি করা। যাতে সে নতুন নতুন বিষয়ে অনুসন্ধানে নিজে থেকে আগ্রহী হয়, সে যেন আরও বই পড়তে চায়, সে যেন আরও জানতে চায়। আমাদের লেখাপড়ার সিস্টেমটাই এরকম–খুব ব্যয়বহুল কিন্ডারগার্টেন কিংবা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে শুরু করে মাদ্রাসা পর্যন্ত সবজায়গায় আমরা দেখি মুখস্ত করানো, গাইড বই পড়ানো। এগুলো একেকটা বোঝা হিসেবে আসে এবং শিক্ষার বোঝাটা বলা যায় শিক্ষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। আমরা যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে ভয় দেখি, পরীক্ষা নিয়ে ভয় দেখি কিংবা তাদের মধ্যে কোনো রকমে পাস করার প্রবণতা দেখি, নোট বইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখি, গাইড বইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখি; এগুলোর প্রধান কারণ হচ্ছে–প্রধানত, শিক্ষার কোনো অভিন্ন অবকাঠামো নাই; দ্বিতীয়ত, অভিন্ন কোনো সিলেবাস নাই; আর তৃতীয়ত, কাঠামোটাই এমন যে, শিক্ষার্থী ভয় পেয়ে যায়, বোঝা সৃষ্টি হয়। এটা থেকে পুরোপুরি শিক্ষাব্যবস্থাকে মুক্ত না করা পর্যন্ত আমাদের উপায় নাই।

ঢাকাপ্রকাশ: আমরা অনেক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি, এই শিক্ষাব্যবস্থা কি আসলে আমাদের সংস্কৃতি থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে?

আনু মুহাম্মদ: আমাদের সংস্কৃতি বলে তো কোনো স্থির জিনিস নাই। সংস্কৃতিরও তো পরিবর্তন হয়; কিন্তু প্রধান বিষয় হচ্ছে–তার যে সামাজিক দায়, একজন শিশু নাগরিক হিসেবে যেভাবে বড় হয়, মানুষ হিসেবে তার মধ্যে যেটা হওয়া উচিত বলে মনে করি, প্রাকৃতিকভাবে যেটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে আছে, সেটা হচ্ছে তার মধ্যে পরিপার্শ্ব সম্পর্কে একটা দায় সৃষ্টি হয়। প্রথমত পরিবার, তারপর সমাজ, তারপর রাষ্ট্র, এরপর বিশ্ব। আশপাশের মানুষ, তার প্রাণ-প্রকৃতি–এগুলোর সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেই সম্পর্ক তৈরি করার মধ্য দিয়ে তার একটা দায় তৈরি হয়, দায়-দায়িত্ববোধ তৈরি হয়; কিন্তু তাকে যদি ছোটবেলা থেকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, তাকে আত্মকেন্দ্রিক বানানো হয়। যে কোনোভাবে টাকা-পয়সা কীভাবে পাওয়া যাবে, কিংবা সমাজের মধ্যে তার একটা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা হবে–সেখানে সে প্রাণ-প্রকৃতি সম্পর্কে জানে না, মানুষ সম্পর্কে তার কোনো দায় নাই, সমাজ সম্পর্কে জানে না বা সমাজ সম্পর্কে কোনো দায় নাই।

আমরা দেখি যে, অভিভাবকদের মধ্যেও এ প্রবণতা অনেকের আছে, যারা সন্তানদের যতটা সম্ভব আত্মকেন্দ্রিক করতে চেষ্টা করে, স্বার্থপর হতে চেষ্টা করে; কিন্তু শিক্ষা তো এটা হওয়া উচিত না। তার ফলে দেখা যায়–ইংলিশ মিডিয়াম, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা এগুলোর প্রধান প্রবণতাই হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে, সে যে দেশের মানুষ সেখান থেকে কত বিচ্ছিন্নতা তৈরি করা যায়। সেখানকার কিছু সম্পর্কে তার ধারণা নাই। এমনকি সে যে কবিতা পড়ে, গল্প পড়ে, যে কাহিনি পড়ে, প্রবাদ পড়ে, ইতিহাস-ভূগোল পর্যন্ত, সমাজ সম্পর্কে সে যে পড়াশোনা করে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নাই। এরকম একটা প্রজন্ম যদি হয় যে, বাংলাদেশে সে আউটসাইডার, বহিরাগত; সে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানে না। বাংলাদেশকে বাইরে থেকে দেখে এবং বাংলাদেশকে দেখে একটা শাসকের দৃষ্টি থেকে–ঔপনিবেশিক প্রভুদের সন্তানেরা যেভাবে দেখত। সেটা তো বড় বিপদের কথা, ভবিষ্যতের জন্য একটা বড় বিপর্যয়ের বিষয় এবং যে সন্তানেরা এভাবে বড় হচ্ছে, এটা তাদের জন্যও একটা দুঃখজনক অবস্থা। কারণ সে আনন্দটা পাচ্ছে না এবং সে সম্পর্কটা তৈরি করতে পারছে না অন্যদের সঙ্গে। চারদিকে প্রাণশক্তির যে অনেক উৎস আছে, সেগুলো থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে।

(চলবে)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ২)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (পর্ব ৩)

সাক্ষাৎকারে আনু মুহাম্মদ (শেষ পর্ব)

Header Ad

নওগাঁয় ধান ব্যবসায়ী ও কৃষকদের ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর মহাদেবপুরে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওসমান এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওসমান গণির বিরুদ্ধে ধান ব্যবসায়ী ও কৃষকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কৌশল হিসেবে তার প্রতিষ্ঠানটি একটি কোম্পানিকে ভাড়া দিয়ে পরিবারসহ ঢাকায় অবস্থান করছেন। এদিকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা টাকা না পেয়ে হন্য হয়ে ঘুরছেন।

বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী পাওনাদাররা রবিবার (১২ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় মহাদেবপুর উপজেলার মডেল স্কুল মোড়ে ‘ভুক্তভোগী সকল পাওনাদার গং’ এর ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন। এসময় এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

মানববন্ধনে আড়ৎদার আবু আহসান হাবিব এর সভাপতিত্বে আড়ৎদার সামিউল আলম, ইমতিয়াজ হোসেন সরদার, মাসুদ মোল্লা সহ ১০-১২ জন ব্যবসায়ি বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধনে প্রায় দুইশতাধিক ব্যবসায়ী ও কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, জেলার মহাদেবপুর উপজেলার নওগাঁ-মহাদেবপুর সড়কের আখেড়া এলাকায় ওসমান গণি গত প্রায় ৪০ বছর আগে চালকল গড়ে তুলে ব্যবসা শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে চালকলটি অটোমেটিকে রুপান্তর করে ওসমান এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিমিটেড নাম দেন। যেখানে কয়েক একর জায়গার ওপর পাঁচটি ইউনিট গড়ে তুলেন। যা টাকার অঙ্কে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। ধানের আড়ৎদারদের কাছ থেকে নগদ ও বাঁকীতে ধান কিনে চালকল পরিচালনা করা হতো। এতে ব্যবসার সুবাদে আড়ৎদারদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে। এভাবে জেলা ও জেলার বাহিরের প্রায় ২৬০ জন ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নগদ ও বাঁকীতে ধান কিনতেন তিনি।

অভিযুক্ত ব্যবসায়ী ওসমান গণি

এক পর্যায়ে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ধান ব্যবসায়ীদের কাছে বকেয়া রাখেন। গত ৩-৪ মাস থেকে ধান ব্যবসায়ীদের সাথে ওসমানের দুরুত্ব বাড়তে থাকে এবং টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছে। ওসমান গণি পরিবারসহ ঢাকায় অবস্থান করতে থাকেন। গোপনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি একটি কোম্পানির কাছে ভাড়া দিয়ে দেন। এরপর ধান ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারে ওসমান লাপাত্তা হয়ে যাচ্ছে। গত দেড়মাস থেকে ওই প্রতিষ্ঠানটি অন্য একটি কোম্পানির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। কৌশল হিসেবে ওসমান গণি ব্যবসায় লোকসান দেখিয়ে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন।

উপজেলার মাতাজি হাট এলাকার মোল্লা ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকার সামিউল আলম বলেন, গত কয়েক বছর থেকে ওসমান গণিকে ধান দিয়ে আসছি। নগদ ও বাঁকীতে ধান দিতাম। এভাবে প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা পাওনা রয়েছি। পাওনা টাকা চাওয়া হলে বিভিন্ন ভাবে তালবাহানা শুরু করেছে। ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আলিসান জীবন যাপন করছেন। সম্পদগুলো ছেলে ও মেয়ে-জামাইয়ের নামে লিখে দিয়েছে। এখন নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করছে। অথচ তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। আমার মতো ২৬০ জন ব্যবসায়ী প্রায় ৩৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আমরা এখন পথে পথে ঘুরছি।

জেলার ধামইরহাট উপজেলার মেসার্স বেলাল ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী আবু আহসান হাবিব। আবু আহসান হাবিব এবং বেলাল ইসলাম দুই ভাই যৌথভাবে ধানের ব্যবসা করেন। আবু আহসান হাবিব বলেন, ওসমান গণির সাথে প্রায় ১৫ বছর থেকে ব্যবসা করে আসছি। ব্যবসা চলমান ছিল। সবশেষ আমন মৌসুম থেকে লেনদেন করা হয়নি। কিন্তু সপ্তাহে ৫০ হাজার করে টাকা দিতো। সবশেষ ফেরুয়ারিতে ১ লাখ টাকা দিয়েছে। লেনদেনের সুবাদে প্রায় ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে যায়। পাওনা টাকা দিচ্ছি দিবো বলে সময়ক্ষেপন করছিল। এখন লাপাত্তা হয়ে গেছে। আমরা ছোট ব্যবসায়ী। পুঁজি হারিয়ে এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছি। পাওনাদার বা কৃষকের কাছ থেকে ধান নিয়েছিলাম তারা এখন টাকা নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। পাওনাদারদের ভয়ে এখন বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

দিনাজপুর জেলার ডুগডুগিহাট এলাকার মোল্লা ট্রেডার্স এর স্বত্ত্বাধিকারী মাসুদ মোল্লা বলেন, গত ৫ বছর থেকে ওসমানের চালকলে ধান দিয়ে আসছি। তবে গত ৩ বছর থেকে ধান দেয়ার পর টাকা বকেয়া রাখা হচ্ছে। এভাবে প্রায় আমার ৭৮ লাখ টাকা বকেয়া রাখে। বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে অনেকবার তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু দিচ্ছি দিবো বলে এখন লাপাত্তা। ফোন করা হলে ওসমান ফোন ধরে না। কিন্তু আমার কাছ থেকে অনেক কৃষক টাকা পাওনা রয়েছে। তারা এখন চাপ দিচ্ছে। দুশ্চিন্তার কারণে ইতোমধ্যে ২ বার স্টোক করেছি। বাবাও অসুস্থ। ৭ বিঘা জমি বিক্রি করে কিছুটা দেনা পরিশোধ করেছি। এদিকে ব্যাংকের ৭০ লাখ টাকা ঋণ এখন কোটি টাকায় ঠেঁকেছে। আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন পথে বসার উপক্রম। বকেয়া টাকা দ্রুত ফেরত পেতে সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।

এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলার ওসমান এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ (প্রাঃ) লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ওসমান গণি বলেন, প্রায় ৩৮ বছর থেকে ব্যবসা করছি। ব্যবসার সুবাদে অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছেও আমার দেনা রয়েছে। আমার কাছে নগদ টাকা নাই। পাওনাদারদের বলেছি যে সম্পদ আছে তা বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি গত ৩১ জানুয়ারি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য আদালতে একটি আবেদন করেছি। তবে আমি আমার প্রতিষ্ঠানটি ভাড়া দিয়েছি।

সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর সুপারিশের কার্যকারিতা নেই: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে তিনি যে সুপারিশ করেছিলেন, সেটির আর কোনো কার্যকারিতা নেই। তার সুপারিশপত্রটি নিয়ে একটি পক্ষ জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদে জনপ্রশাসনমন্ত্রী এ বিষয়ে রাষ্ট্রের নীতিগত সিদ্ধান্তটা কী পরিষ্কার বলে দিয়েছেন। চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে এই মুহূর্তে যে সিদ্ধান্ত নেই, সেটা বলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে যে সুপারিশ করেছিলেন, সেটির আর কোনো কার্যকারিতা নেই। সুপারিশপত্রটি নিয়ে একটি পক্ষ জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে।

রবিবার (১২ মে) দুপুরে সচিবালয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী এ বিষয়ে অনুরোধ করেছিলেন, কিছু কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনাকালে মনে হয়েছে, সেটার বিষয়ে একটা সুপারিশ করা যেতে পারে। সেই হিসেবে আমি একটি সুপারিশপত্র দিয়েছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে সেই সুপারিশপত্র পুঁজি করে অনেকেই জল ঘোলা করার চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, একটি পক্ষ আমার সেই সুপারিশপত্র পুঁজি করে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে, অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করতে চাইছে। সুতরাং আমি তাদের বলব, এটা অত্যন্ত একটা খারাপ কাজ তারা করছে। রাষ্ট্র উত্তর দিয়েছেন, এখানেই বিষয়টি সমাপ্তি ঘটেছে।

সেই সুপারিশপত্রের কার্যকারিতা এখন নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু জাতীয় সংসদে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলে দিয়েছেন। এখন এটাকে নিয়ে জলঘোলা করে নানা জায়গায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা কখনোই কাম্য নয়।

এর আগে, জাতীয় সংসদে পৃথক দুটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আরও আলাপ-আলোচনা করা হবে। আরও আলোচনা-পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে বিষয়টি দেখা হবে।

এদিকে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে শনিবার (১১ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। ‘চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫-প্রত্যাশী সমন্বয় পরিষদ’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে এ কর্মসূচি ডাকা হয়েছিল। এ কর্মসূচি থেকে ১৫ জনকে পুলিশ আটক করলেও পরে তাদেরকে জামিনে দেওয়া হয়।

এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণ শুরু কাল, আবেদন করবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ বা ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন শুরু হবে আগামীকাল সোমবার। যা চলবে আগামী ১৯ মে পর্যন্ত। ফল পুনঃনিরীক্ষাণের আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিপত্রের জন্য ১২৫ টাকা।

রবিবার (১২ মে) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আবুল বাসারের স্বাক্ষতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক থেকে প্রতিপত্রের জন্য ১৫০ টাকা ফি দিয়ে ফল যাচাইয়ের আবেদন করা যাবে।

যেভাবে আবেদন করতে হবে:

শুধুমাত্র টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল ফোন থেকে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC <Space> বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <Space> রোল নম্বর <Space> বিষয় কোড লিখে Send করতে হবে 16222 নম্বরে।

ফিরতি এসএমএ-এ আবেদন বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন দেওয়া হবে। এতে সম্মত থাকলে মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC <Space> Yes <Space> PIN <Space> Contact Number (যে কোনো অপারেটর) লিখে Send করতে হবে 16222 নম্বরে।

ফল পুনঃনিরীক্ষণে ক্ষেত্রে একই এসএমএস-এর মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে কমা (,) দিয়ে বিষয় কোড আলাদা লিখতে হবে। যেমন ঢাকা বোর্ডের একজন শিক্ষার্থী বাংলা ও ইংরেজি দুটি বিষয়ের জন্য টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখবে RSC <Space> Dha <Space> Roll Number <Space) 101, 102, 107, 108। ফল পুনঃনিরীক্ষণে প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা করে কেটে নেওয়া হবে।

সর্বশেষ সংবাদ

নওগাঁয় ধান ব্যবসায়ী ও কৃষকদের ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর সুপারিশের কার্যকারিতা নেই: শিক্ষামন্ত্রী
এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণ শুরু কাল, আবেদন করবেন যেভাবে
ভারতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি হাতিয়ে নিতো চক্রটি
উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর নির্দেশ ইসির
মারা গেলেন প্রথম শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনকারী সেই ব্যক্তি
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ: অধ্যক্ষের অপসারণ চান শিক্ষক-কর্মচারীরা
চামড়া ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ পেতে সুপারিশ করা হবে: শিল্পমন্ত্রী
গোবিন্দগঞ্জে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
উড়ন্ত বিমান থেকে লাফ দেওয়ার হুমকি যাত্রীর, তারপর...
রাজশাহীর কোন আম কবে বাজারে আসবে জানালো জেলা প্রশাসন
আমরা যে উন্নয়নের রোল মডেল তৈরি করেছি তা এখানেই সীমাবদ্ধ না: নৌপ্রতিমন্ত্রী
এসএসসিতে ৫১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই ফেল
বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন ভেঙে সান্ত্বনার জয় পেল জিম্বাবুয়ে
বিয়ে করছেন ‘বিগ বস’ তারকা আবদু রোজিক
এসএসসিতে কোন বোর্ডে পাসের হার কত
হোয়াইটওয়াশের মিশনে জিম্বাবুয়েকে ১৫৮ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ
ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ
সৌদি আরবে এবার হজযাত্রীদের জন্য থাকছে উড়ন্ত ট্যাক্সি