মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

আমাদের স্বপ্ন বোনার শিল্পী

মানুষকে তো পরিমাপ করা যায় না, সম্ভবও নয়। মানুষ জন্মের পর থেকে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়, প্রসারিত হয়, প্রস্ফুটিত হয়। ক্রমান্বয়ে সে নিজেকে তুলে ধরতে পারে, মানবতার অংশ হয়ে ওঠে। তার জাদুকরী কর্মক্ষমতা আর মানুষের ভালোবাসা ও আস্থায় সে নামটা ধীরে ধীরে এক সময় বিশেষণ হয়ে দাঁড়ায়। শেখ হাসিনা হলেন এমন একজন মানুষ যিনি একটা জাতিকে তাঁর নিজস্ব স্বপ্নের সঙ্গে দারুণভাবে সংযুক্ত করতে পেরেছেন। এই যে এক অনন্যসাধারণ ক্ষমতা এই ক্ষমতাটিকে কোনো অবস্থাতেই, কার পক্ষেই পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আজ এখানে আমি এক কিংবদন্তির উপাখ্যান বলছি, এক মানুষের কথা বলছি, বলছি একজন শেখ হাসিনার কথা।

শেখ হাসিনা সাধারণ জীবন-যাপন করা একজন মানুষের নাম। সেই টুঙ্গিপাড়ার মাটি-মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও বাংলার প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা একজন সাধারণ মানুষ। আমাদের জীবনের মতোই যার জীবনকে অতি পরিচিত মনে হয় এবং সহজেই মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যাঁকে দেখলেই মনে হয় সে আমাদের অতিচেনা-পরিচিত একজন মানুষ। যাঁর সাথে সহজেই গল্প করা যেতে পারে; পরিবারের দুঃখ-বেদনার কথা বলা যেতে পারে। রাষ্ট্রভার কাঁধে তুলে নিয়ে যিনি অনেকের ‘আপা’ই রয়ে গেছেন। যাঁর মধ্যে রয়ে গেছে বাংলার চিরচেনা মায়ের মুখাবয়ব, বোনের মূর্তি। শেখ হাসিনা হলেন সেই মানুষ যিনি একজন দুঃখী মানুষের জন্য কাতর হন; মানুষকে পরিপূর্ণ ভালোবাসা দিয়ে তাকে আপন করে নেয়ার সমস্ত কিছুই যেন তাঁর মধ্যে প্রকৃতি উজাড় করে দিয়েছে।

আবার অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে এই দেশেই একটি বিপরীত চিত্রও আমরা দেখি। কিছু মানুষ শেখ হাসিনাকে নিয়ে সারাক্ষণ নিন্দা আর সমালোচনায় মুখর থাকেন। প্রতিমুহূর্তে তাঁর ত্রুটি অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকেন। শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্য হচ্ছে যেই মানুষের কল্যাণে তাঁর সমস্ত স্বজনকে চিরতরে হারাতে হয়েছে; শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যাদের জন্যে নিজের জীবনকে উজাড় করে দিচ্ছেন, তারাও তাঁকে ভুল বোঝেন এবং তাদের একটা সংকীর্ণ বিচারের বাটখারা দিয়ে পরিমাপ করার চেষ্টা করেন। মাঝে মাঝে মনে হয় এই বাঙালি জাতির জন্যে তাঁকে আর কত হারাতে হবে; আর কত বেদনার আগুন বুকের মধ্যে ছাইচাপা দিয়ে তাদেরকেই বুকে জড়িয়ে আপন করে নেয়ার সাধনা চালিয়ে যেতে হবে; আর কত হারানোর সাগর পাড়ি দিতে হবে; আর কত! জসীম উদ্দিনের কবিতার বৃদ্ধের স্বজন হারানোর ব্যথা মনে পড়ে-‘এই শুন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি,
যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।’

আমার একটা বিরল সৌভাগ্য-আমি বিশাল এই মহীরুহকে ধীরে ধীরে পরিণত হতে দেখেছি। কথাটা রূপকভাবেই বলি-এক ছাদের কোনা থেকে গজিয়ে ওঠা অশ্বত্থের চারাকে ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ এক বিশাল বৃক্ষে পরিণত হতে দেখেছি যেন। দেখেছি এক বিশেষণ হয়ে ওঠা এক মানুষকে- যেন এ এক ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে জেগে ওঠা।

প্রিয়জন হারানোর ব্যথা-বেদনা-শূন্যতাবোধ সকল মানুষের মতো শেখ হাসিনারও আছে। তিনি তো মানুষই। তবে এক ভিন্ন মানুষ। সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকেও তিনি অসাধারণ মানুষ। আর সেই কারণেই তাঁর সমস্ত পরিবারকে হারিয়েও এদেশের মাটি ও মানুষকেই আপন করেছেন আর তিনিই বাংলাদেশকে এখনো পর্যন্ত পথ দেখাচ্ছেন। তিনি আছেন বলেই এখনো বাংলাদেশকে মনে হয়-এ দেশটি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। এখনো মনে করি- এই বাংলাদেশে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়, লেখা যায়, ভাবা যায়। শেখ হাসিনাই আমার মধ্যে সেই স্বপ্ন এখনো বাঁচিয়ে রেখেছেন-যেই স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুকে ঘুমোতে দেয়নি, যেই স্বপ্ন দেশরত্ন শেখ হাসিনাকেও ঘুমোতে দেয় না। মনে পড়ে উপ-মহাদেশের মহান দার্শনিক এ. পি. জে. আব্দুল কালামের অবিস্মরণীও সেই বাণীর কথা-‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন হলো সেটা যা পূরণের অদম্য ইচ্ছা তোমাকে ঘুমাতে দেবে না।’ এই বাণীর মর্মার্থই যেন মনে-প্রাণে উপলব্ধি করেছেন বাংলার আপামর মানুষের চোখের মণি জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তাঁর ভেতরে এমন এক অদম্য শক্তি প্রত্যক্ষ করি যা আমাদেরকে স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্ন দেখার জন্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ করে। রাষ্ট্র পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আজ ছিয়াত্তরে পা রাখলেন। সংগ্রাম-সংক্ষুব্ধ জীবনের অগণিত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দৃপ্ত পদক্ষেপে তিনি এগিয়ে চলেছেন, হাতে তাঁর বিজয় কেতন এবং তাঁকে অনুসরণ করছে এক বিশাল জাতিগোষ্ঠী, অন্তরে তাঁর মুক্তিযুদ্ধের অনির্বাণ অগ্নিশিখা, কণ্ঠে আছে বিজয়ের অমোঘ সংগীত লহর আর হৃদয়ে বহন করে চলেছেন মহান পিতার অকৃপণ আশীর্বাদ।

অথচ ৭৫-এ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ভেবেছিল বাংলাদেশের হৃদয় থেকে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেবে; ৭১-এ পরাজিত শক্তির করতলে আবার দেশটাকে নিপতিত করবে। সেসময় বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয়কে দেশে ফিরতে দেয়া হয়নি। পরদেশে ভেসে ভেসে নিজেদেরকে রক্ষা করতে হয়েছে। সেখানেও তাঁদেরকে হত্যার নানা পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমরা দেখেছি দীর্ঘ সামরিক স্বৈর-শাসন। পাকিস্তানের চর রাজনীতিকে যিনি জটিল করে দেওয়ার ব্রত নিয়েছিলেন; দেশটাকে আবার পাকিস্তানের আদলে তৈরি করে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেবার মিশন নিয়েছিলেন; শত শত মুক্তিযোদ্ধা আর্মি অফিসারকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করেছিলেন, তাকেও আমরা দেখেছি। আমরা এ-ও দেখি এই স্বাধীন বাংলাদেশে ৭১-এ পরাজিত শক্তিকে নানাভাবে পুনরুজ্জীবিত করা, তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করা, সরকারের অংশীদার করা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও জামাত হেফাজতের তাণ্ডব দেখেছি দেশব্যাপী। অর্থাৎ দেশটাকে যারা মেনে নেননি, সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাতেই দেশটি পরিচালিত হয়েছে সুদীর্ঘকাল। এতদসত্ত্বেও, আজ আমরা যে দেশটিকে নিয়ে গর্ব করছি, কিছু পূর্বে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি, যে অভাবিত উন্নতির জন্যে পুরো বিশ্ব উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তাকে সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পথটি কি বঙ্গবন্ধু কন্যা ও তার দল আওয়ামী লীগের জন্যে এতো সহজ ছিল?

সহজ তো ছিলই না বরং পুরো পরিস্থিতিই ছিল এক ভয়ানক ও অসম্ভব রকমের বিপরীত অবস্থানে। বঙ্গবন্ধু কন্যা হলেন সেই ফিনিক্স পাখি যিনি একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী দলটিকে সে সময় জাগিয়ে তুলেছিলেন। একইসঙ্গে একটি জাতিকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখালেন। একদিকে বাবা-মাসহ পরিবারের সকল আপনজনকে হারানোর দুঃসহ ব্যথা তার বুকে বয়ে চলেছেন; একইসঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী দুর্বৃত্ত ও ঘাতকদের ষড়যন্ত্রের নাগপাশ থেকে একটি জাতির মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে নিরন্তরভাবে নিয়োজিত করেছেন। একদিকে ভাই হারানোর শোকে বুকে পাথর বেঁধেছেন; একইসঙ্গে পিতার স্বপ্ন পূরণে সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে হয়েছেন বজ্রকঠিন।

পঁচাত্তরের আগস্টে মানবতার বহ্ন্যুৎসব ঘটিয়ে জিয়া-মোশতাক চক্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে কুক্ষিগত করে সময়ের চাকাকে উল্টোদিকে ঘোরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তাদের চক্রান্ত ও নীলনকশার লক্ষ্য ছিল সুস্পষ্ট-নির্মম ও হিংস্র।

এত ভয়াবহ নীল নকশা এবং নব্য পাকিস্তান সৃষ্টির যাবতীয় অপচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেই একচল্লিশ বছর আগে এই দিনে জন্মভূমির মাটি যার পদচুম্বন করেছিল তিনি বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা শেখ হাসিনা। তখন গণশত্রু নির্দেশিত ঘোষণা ছিল; যেভাবেই হোক আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করে বিধ্বস্ত করতে হবে, রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি করাকে অসম্ভব করে তুলতে হবে, মুক্তিযুদ্ধকে বিপর্যস্ত করার জন্য অর্থ কোনও সমস্যা হবে না, ভাগ করতে হবে, সব ভাগ করে করে এক সময় ক্ষয় করে ফেলতে হবে মুক্তিযোদ্ধাদের। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, ভুয়া দেশপ্রেমিক, চতুর রাজনীতিক, ভুয়া ব্যবসায়ী, প্রতারক ধর্মব্যবসায়ী দিয়ে ছেয়ে ফেলতে হবে দেশ এবং পাশাপাশি অতি সন্তর্পণে চালাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি নিধনপট। তাদের কৌশল, এভাবেই মুক্তিযুদ্ধকে করা যাবে বিতর্কিত, দুর্বল করে দেওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে।

পঁচাত্তরের পরপরই কাজ সেভাবেই শুরু হয়েছিল। ভাগ করা হতে থাকল আওয়ামী লীগকে, আওয়ামী লীগের নামের পাশে লেগে গেল ব্র্যাকেট, বাড়তে থাকল সেই ব্র্যাকেটের সংখ্যা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্য সংগঠনগুলোতেও গজিয়ে উঠতে থাকলো ব্র্যাকেটের রাজনীতি। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা তখন বিদেশের মাটিতে দ্বারে দ্বারে আশ্রয় প্রার্থনা করে চলেছেন গুপ্তঘাতক চক্রের দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে।

এরই মধ্যে ঘাতকের রোষণকষায়িত লোচন এবং নির্মম প্রহারের শ্যেনদৃষ্টিকে পদদলিত করে একচল্লিশ বছর আগের এই দিনে তিনি এসে দাঁড়ালেন তমসাবিনাশী আশার প্রদীপ নিয়ে হতাশা-সংক্ষুব্ধ জাতির সামনে। অন্তরের গভীরে বেদনার ফল্গুধারা আর হৃদয়ে শুভকর্মের প্রদীপ্ত চৈতন্য ধারণ করে শেখ হাসিনা যখন দেশে প্রত্যাবর্তন করলেন তখন এ দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির নির্ভরযোগ্য সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেন জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় জেগে উঠল। বারবার আক্রমণে জর্জরিত কর্মীরা দেখল এক সাহসী নারীর অবয়বে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির মুখচ্ছবিই যেন বিচ্ছুরিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্তর্ঘাত সৃষ্টির পরিকল্পনাকারীরা এবার শঙ্কিত হলো, কারণ তারা এটা বুঝেছিল যে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার যদি কোনোভাবে বাংলাদেশের মাটিতে আসতে পারে তবে সে তার স্বপ্নের ডালা বহন করেই আনবে এবং মুমূর্ষু জাতির দেহে প্রাণসঞ্চার করবেই। তাই তারা তাঁর যাত্রাপথে কণ্টক বিছিয়ে যেতে থাকলো।

আমরা দেখছি শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে অমিত বিক্রমে এগিয়েই চলেছেন। তাঁর রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব অসামান্য মেধা, সততা এবং নিষ্ঠা তাঁর কার্যক্রমের ক্ষেত্রকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানাকে অতিক্রম করে উপমহাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে অধিকতর বিস্তৃত হচ্ছে। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাঁর স্বপ্নসৌধ সোনার বাংলা সৃষ্টির প্রয়াস।

আমার কাছে শেখ হাসিনাকে জোয়ান অব আর্কের মতো মনে হয়। জোয়ান অব আর্ক যেমন ব্রিটিশরাজকে পরাস্ত করে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিলেন, শেখ হাসিনাও তেমনি অর্ধশতাব্দীব্যাপী তিল-তিল করে বেড়ে ওঠা স্বাধীনতা-বিরোধীদের পরাস্ত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ়সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। জোয়ান অব আকর্কে পুড়িয়ে মেরে ফরাসিরা অবশেষে তাকে দেবীর মর্যাদায় সন্ত সাজিয়েছিল। শেখ হাসিনা জয়ী হোন এবং মানুষই থাকুন, তার উপর দেবত্ব আরোপিত হোক-তা যেমন কামনা করি না; আবার মানুষ হিসেবেও তার সামর্থ্য ও সম্ভাবনাকে কূপমণ্ডকদের সংকীর্ণ বিচারকাঠিতে পরিমাপ করা হোক সেটাও প্রত্যাশা করি না।

আজ এটাই মনে হয়-জাতির পিতা যে রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণ করেছেন, তার কন্যা তাতে দিয়েছেন শক্তি, গতি, অগ্রগতি। তিনি আছেন বলেই আমরা বিনীত স্পর্ধা নিয়ে চলতে পারি। আমরা সাহসের সঙ্গে বলতে পারি-বিজয়ের শ্যামল তীর হাতছানি দিয়ে ডাকছে বাঙালি জাতিকে অমরাবতীর পথে পা রাখবার জন্য। পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের গুরুভার তারই সুযোগ্য কন্যা কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং সমস্ত অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে ‘মুক্তির দূত’ হয়ে জাতির মুক্তির সূর্যকে ঠিকই ছিনিয়ে আনবেন-এ বিশ্বাস এখন বাংলার মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত। শতায়ু হোন হে সাহসিকা। বটবৃক্ষের পরমায়ু নিয়ে ছায়া বিস্তার করুন এই দেশ ও জাতির মাথায়।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক কালবেলা ও দৈনিক জাগরণ

 

Header Ad

বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি কমাতে কাজ করেছে সরকার: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেছেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি কমাতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বজ্র নিরোধক যন্ত্র স্থাপন করাসহ এ বিষয়ক ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তুলতে কার্যকর কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে বলেও জানািন তিনি।

সোমবার সচিবালয়ের নিজের অফিস কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরী মাসদুপুইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।

প্রতিমন্ত্রী জানান, বজ্র নিরোধক প্রযুক্তি সুলভ ও ব্যাপকভিত্তিক করতে গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে প্রযুক্তি বিনিময় ও হস্তান্তরে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

সাক্ষাতকালে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে বজ্রপাত প্রতিরোধে প্রযুক্তি জ্ঞান বিনিময় ছাড়াও যন্ত্র স্থাপন, বজ্রপাত নিরোধী অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রশিক্ষণ প্রদানে তার দেশ সহয়তা প্রদান করবে।

জমজ দুই বোনের চমক, এসএসসি পরীক্ষায় পেলো জিপিএ-৫

অর্পিতা সাহা অর্পা ও অর্মিতা সাহা অর্ণা। ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

এসএসসি পরীক্ষায় অর্পিতা সাহা অর্পা ও অর্মিতা সাহা অর্ণা জমজ দুই বোন চমক দেখিয়েছেন। তারা উভয়ই জিপিএ-৫ পেয়েছে। গৌরবময় এমন সাফল্য অর্জন করায় ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ও আরেকজন প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

অর্পা ও অর্ণা টাঙ্গাইল পৌর শহরের আদালত রোডস্থ ওয়ালটন প্লাজার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার অনুপ কুমার সাহা ও গৃহিনী সুম্মিতা ঘোষ দম্পতির জমজ দুই কন্যা সন্তান। টাঙ্গাইলের ড্যাফোডিল ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল থেকে ওই দুইবোন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন এবং তারা একসাথেই বিন্দুবাসিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছিল।

 

অর্পিতা সাহা অর্পা ও অর্মিতা সাহা অর্ণা। ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

গত রবিবার ১২ মে ফলাফলে দেখা যায়, জিপিএ -৫ প্রাপ্তের মধ্যে অর্পার প্রাপ্ত নম্বর- ১ হাজার ১২৩ আর অর্ণার প্রাপ্ত নম্বর-১ হাজার ১১৪। জমজ দুই বোন বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।

অর্পিতা সাহা অর্পা জানায়, ভবিষ্যতে সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন চিকিৎসক হতে চায়। দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থাকার স্বপ্ন দেখছে সে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলের আর্শিবাদ কামনা করেছে সে।

অর্মিতা সাহা অর্ণা জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে সে। স্বপ্ন পূরণে সকলের আর্শিবাদ কামনা করেছে অর্ণা।

জমজ দুই কন্যার বাবা অনুপ কুমার সাহা বলেন, আমি চাই আমার মেয়েরা মানুষের মত মানুষ যেন হয়। তাদের স্বপ্ন ও আশা পূরণে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। তারা যেন দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে পারে এটিই আমার প্রত্যাশা।

স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আবাসন : গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন শহরে নিম্ন আয়ের বিশেষ করে বস্তিবাসীদের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

সোমবার (১৩মে) সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে গণপূর্তমন্ত্রী যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী’র সভাপতিত্বে সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিববৃন্দ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সিদ্দিকুর রহমানসহ মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক গণপূর্তমন্ত্রী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি ও তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি পরিবেশ সুরক্ষা, প্রয়োজনীয় বনায়ণ, উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণ, খেলার মাঠ, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, সৌরশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, পোড়ামাটির ইটের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহার, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এর ব্যবস্থা, সারফেস ওয়াটার ব্যবহারের সর্বোচ্চ সুযোগ রাখার পরামর্শ প্রদান করেন।

প্রাথমিকভাবে তিনি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় টঙ্গীর দত্তপাড়ায় তিনটি পর্যায়ে ১০০টি বহুতল ভবনে ১২৬০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের যে প্রস্তাবনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দেন। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১৭টি ১৫ তলা বিশিষ্ট ভবনে ২১৪২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। ২য় পর্যায়ে ৪৭টি ভবনে ৫৯২২টি ও তৃতীয় পর্যায়ে ৩৬টি ভবনে ৫৪৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

মন্ত্রী রাজধানীর করাইল বস্তি ও টি এন্ড টি কলোনীর বস্তিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও গণপূর্ত অধিদপ্তরকে পৃথক পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। ৭৫০ বর্গফুট গ্রস আয়তনের এসব ফ্ল্যাটের অভিন্ন ডিজাইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি প্রধান স্থপতিকে মৌখিক নির্দেশনা দেন।

রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য শহরেও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে পর্যায়ক্রমে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য যে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন উত্তরা আবাসন প্রকল্পে (তৃতীয় পর্যায়) নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসনের জন্য ১০ একর জমি নির্দিষ্ট রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে উক্ত জমিতে নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসনের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির জন্য মন্ত্রী নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার অর্থায়নও সম্ভব হলে গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জনান।

ইতোমধ্যে রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বস্তিবাসীদের জন্য ৫৩৩টি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে। এসব ফ্ল্যাটে তারা স্বাচ্ছন্দের সাথে বসবাস করছে। এছারা সিরাজগঞ্জের কোবদাস পাড়ায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের স্বল্প আয়ের মানুষের উন্নত জীবন ব্যবস্থা শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার নদী ভাঙ্গন কবলিত, ভূমিহীন বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরবর্তী প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে এসব প্রকল্পের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য মন্ত্রী পরামর্শ দেন। সেই সাথে সরকারের এসব জনহিতকর কার্যক্রম সম্পর্কে সর্বসাধারণের মাঝে ইতিবাচক প্রচারের জন্য তিনি পরামর্শ দেন।

সর্বশেষ সংবাদ

বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি কমাতে কাজ করেছে সরকার: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
জমজ দুই বোনের চমক, এসএসসি পরীক্ষায় পেলো জিপিএ-৫
স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আবাসন : গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
নওগাঁয় মেয়াদ পুর্ণ হওয়ার পরও গ্রাহকদের টাকা দিচ্ছে না প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৬ মে থেকে আম সংগ্রহ শুরু
২৩ নাবিকসহ কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে এমভি আবদুল্লাহ
মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু
ঢাকাসহ ৭ বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস
বিভাজন থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসা উচিত : মির্জা ফখরুল
ভোটারকে থাপ্পড় মারায় এমপির গালে ভোটারের পাল্টা থাপ্পড়, ভিডিও ভাইরাল
শিশু জায়েদকে মামার জিম্মায় দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
কেউ পাস করেনি বিরামপুরের খয়েরবাড়ী মির্জাপুর দাখিল মাদ্রাসায়
বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় অর্ধশতাধিক মার্কিন অধ্যাপক গ্রেপ্তার
প্রেম করলে শরীর ও মন ভালো থাকে: মন্দিরা
এবার একীভূত হলো সোনালী ব্যাংক-বিডিবিএল
১৩ শিক্ষকের বিদ্যালয়ে ১৪ পরীক্ষার্থীর সবাই ফেল, প্রধান শিক্ষককে শোকজ
ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত মিসরের
নিজের রেকর্ড ভেঙে ২৯ বার এভারেস্ট জিতলেন রিতা শেরপা
বাড়ি ফেরার পথে গরুবাহী ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন এক পুলিশ সদস্য
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ