গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের হাল ধরেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তারা নিয়েছে একের পর এক উদ্যোগ। বাজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজর দিয়েছে সরকার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ইলিশ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে স্পষ্ট বার্তাও দেন—ইলিশ আগে দেশের মানুষের জন্যই সংরক্ষিত হবে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয় বাজার তদারকি।
তবে সব উদ্যোগ ও কড়াকড়ি সত্ত্বেও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ ‘ইলিশ’ এখনও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে পানি বাড়ছে, বৃষ্টিও হচ্ছে নিয়মিত—তবু চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের সরবরাহ অপ্রতুল।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঘাটে আগে প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ মণ ইলিশ আসত, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৫০-১০০ মণে। ফলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জোগান কম থাকায় দাম আকাশছোঁয়া।
রোববার (২৯ জুন) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ কেনার আগ্রহ থাকলেও দাম শুনে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ একান্ত প্রয়োজনে বা দূরপাল্লা থেকে আসায় এক-দু’টি ইলিশ কিনছেন শুধু।
রাজধানী ঢাকা থেকে আসা আবু রায়হান বলেন, "তিন নদীর মোহনায় ঘুরতে এসেছি। ইলিশ ঘাট ঘুরে দেখলাম। তবে স্তুপ করে ইলিশ নেই, দামও অনেক বেশি। সাধ্যের মধ্যে হলে একটা কিনে নিয়ে যাব।"
চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা সায়েম মিয়া বলেন, “ঢাকা থেকে অতিথি এসেছে, ইলিশ খাওয়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাজারে এসে দেখি প্রতি কেজি ইলিশ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে একটিই কিনে হোটেলে আপ্যায়ন করেছি।”
ইলিশ ব্যবসায়ী নবীর হোসেন জানান, “মৌসুম চলছে, কিন্তু পদ্মা-মেঘনায় জালে ইলিশ ধরা পড়ছে খুবই কম। আগে দক্ষিণাঞ্চলের ট্রলারগুলো চাঁদপুরে ৪০০-৫০০ মণ মাছ আনত। এখন পদ্মা সেতু হওয়ায় সেই মাছ ঘাটে আসে না। প্রতিদিন আসে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ মণ। যদি বৃষ্টি বাড়ে ও নদীর পানি বাড়ে, তাহলে ইলিশ ধরা পড়বে বেশি—দামও কমবে।”
আরেক ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, “এখনকার ইলিশ বড় সাইজের, দামও বেশি। ছুটির দিনসহ প্রতিদিন ক্রেতা আসেন, দরদাম করেন, কিন্তু অনেকেই না কিনে ফিরে যান। এতে বিক্রি কমেছে।”
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সবেবরাত সরকার জানান, বাজারে এখন এক কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২,৩০০-২,৪০০ টাকায়। ৫০০-৭০০ গ্রামের ইলিশ ১,৭০০-১,৮০০ টাকায় এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ২,৮০০-৩,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।