শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dhaka Prokash

আত্মহত্যা

আত্মহনন নয়, জেগে উঠুন নতুন উদ্যমে

শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত গান রয়েছে-
আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি
বেচোনা বেচোনা বন্ধু তোমার চোখের মনি।
ঝিঙে বেচো পাঁচ সিকেতে, হাজার টাকায় সোনা
বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেচোনা।

অথচ আমাদের জগৎ জুড়ে স্বপ্ন বেচে দেওয়ার মেলা বসে রোজ। স্বপ্ন বেচে দেওয়ার কত শত গল্প আমাদের চারপাশে। বহু চেনা-অচেনা মানুষ রয়েছে যারা একটু একটু করে তাদের স্বপ্ন বেচে দিচ্ছে প্রতিটি দিন। বর্তমান বিশ্বে সম্পদ ও সফলতার অভাব নেই,যত অভাব কেবল শান্তির।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন-"মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে,মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।" অথচ এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে চলে যাবার কত তাড়া অনেকের।

কেন বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতাঃ সারা বিশ্বে দিন দিন আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েই চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রিভেন্টিং সুইসাইড অ্যা সোর্স ফর মিডিয়া প্রফেশনালস ২০১৭ জরিপ বলছে, প্রতিবছর বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন।

এবার বলা যাক বাংলাদেশের কথা, ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) দেশের আত্মহত্যার ঘটনার তথ্য রাখে। সে তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে দেশে আত্মহত্যা করে ১০ হাজার ৭৪৯ জন। অপরদিকে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৮ সালে দেশে ১১ হাজারের বেশি আত্মহত্যা করে। সারা বিশ্বে আত্মহত্যায় বংলাদেশের অবস্থান দশম। যা ২০১১ তে ছিল ৩৪ তম।

নিশ্চিতভাবে প্রতি বছর বাড়ছে আত্মহত্যার পরিমাণ। আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমে সামনে আসে অধিক মানসিক অবসাদ, ব্যক্তি জীবনে অপ্রাপ্তি, অবহেলা, সম্পর্কের বিচ্ছেদ,  পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও শারীরিক অসুস্থতা, যৌন হয়রানি, দাম্পত্য কলহ, জটিল রোগের দুঃসহ যন্ত্রণা, পরকালীন শাস্তির ভয়হীনতা, নৈতিক অবক্ষয় কিংবা আত্মহত্যার প্ররোচনায় ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। তাছাড়া মানসিকভাবে দুর্বল প্রকৃতির মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আত্মহত্যার পেছনে ব্যাক্তির পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনেকাংশে দায়ী। যারা আত্মহত্যা করে তাদের ৯০ ভাগের মধ্যেই কোনও না কোনো মানসিক রোগ দেখা যায়। অধিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বিষন্নতা, যা মানসিক রোগের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করে স্বাস্থ্য সংস্থা। তাছাড়া নিজেকে নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা ও অধিক আবেগ তো রয়েছেই। বিষন্নতার একটি পর্যায়ে ব্যক্তি নিজেকে সম্পূর্ণ  অযোগ্য মনে করে। অধিক মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিরা আত্মহত্যাকে ওয়েলকাম রিলিজ হিসেবে বিশ্বাস  করে।


মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতামতঃ বিশেষজ্ঞরা মনে করে আত্মহত্যা দুই ধরনের। ইম্পালসিভ সুইসাইড (হঠাৎ আত্মহত্যা) আরেকটি ডিসিসিভ সুইসাইড (পূর্বপরিকল্পিত আত্মহত্যা)। আত্মহত্যার অন্যতম কারণ "সিজোফ্রেনিয়া ",যাকে গুরুতর মানসিক সমস্যা বলা হয়। এরমধ্যে পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার, কনটাক্ট ডিসঅর্ডার, মাদকাসক্তি, ডিপ্রেশন, পারিবারিক কলহ, বেকারত্ব, প্রেমে ব্যর্থতা তো রয়েছেই। শিশুদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যাটি অবজারভেশন লার্নিং বা দেখে দেখে শেখা হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে অনেক মুভি, কার্টুন সিস্টেম এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট দায়ী। কারণ এগুলোতে অনেক সময় আত্মহত্যাকে খোলামেলা উপস্থাপন, সমস্যা সমাধান বা মুক্তির পথ হিসেবে দেখানো হয়। কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই দৃশ্যগুলো এমনভাবে মাথায় প্রবেশ করে থাকে যে, কেউ সামান্য বকা দিলে কিংবা সমস্যা সমাধানে সহজেই সে এই পন্থাগুলো বেছে নেয়। এ বিষয়টি কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। টেলিভিশন ও পত্রিকাগুলোতে আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে নীতিমালা মেনে না চলার বিষয়টিও রয়েছে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে আত্মহত্যা করা যায় এমন উপাদানগুলোর সহজলভ্যতা। আত্মহত্যার উপকরণগুলো হাতের কাছে থাকলে কোনো কারণে অল্পতেই ব্যক্তি হুট করে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির মধ্যে আত্মহত্যার কোনো উপসর্গ আগে থেকে পরিলক্ষিত হয় না।


বিশ্ব বিখ্যাত সাহিত্যিকদের আত্মহত্যাঃ বলা হয়ে থাকে সৃজনশীলতা, বিষন্নতা ও আত্মহত্যা এই তিনের মধ্যে আন্তসম্পর্ক রয়েছে। সৃজনশীলতার একটি অন্যতম অন্ধকার দিক হলো আত্মহনন। কারণ সৃষ্টিশীল মানুষ অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে,অনেক শিল্পী, কবি, লেখকদের মনোজগতের অন্যতম একটি প্রবণতা হলো বিষন্নতা, অরাজক ও মানসিক ভারসাম্যহীনতায় আক্রান্ত হওয়া। যাকে বলা হয় 'বাইপোলার ডিসঅর্ডার। এক গবেষণায় দেখা গেছে লেখালেখি, গবেষণা ও বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে যারা লিপ্ত তারা সমাজের অন্য সকলের থেকে ৮ শতাংশ বেশি বিষন্নতা ও মানসিক ভারসাম্যহীনতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। তবে কবি-লেখকদের বেলায় এই ঝুঁকি অনেক বেশি। এবার আসা যাক আত্মহুতি দেওয়া বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকদের কথায়:

হান্টার এস থম্পসনঃ আমেরিকান বংশোদ্ভূত হান্টার এস থম্পসনকে বলা হয় বিশ্বখ্যাত অন্যতম সেরা ঔপন্যাসিক। তিনি নিজের শেষ লেখাটির নাম দিয়েছিলেন "ফুটফল খেলার মৌসুম শেষে। এটি তিনি লিখেছিলেন স্ত্রী অনিতাকে উদ্দেশ্য করে। তার লেখাটি ছিল এমন-"আর কোন খেলা নেই। আর কোন বোমা নেই। চলতে থাকা নেই। কোন মজা নেই। সাঁতার কাটা নেই। ৬৭,৫০ এর পরও ১৭ টি বছর। আমার চাওয়ার ও দরকারের চেয়েও ১৭ টি বাড়তি বছর, বিরক্তিকর। আমি সবসময়ই উদ্দাম। কারও জন্য কোনও আনন্দ নেই। ৬৭ তুমি লোভী হয়ে যাচ্ছো। বুড়োমী দেখাও। শান্ত হও এটা ব্যাথা দিবে না। এর চারদিন পরেই স্ত্রীর সাথে কথা বলতে বলতে গুলি করে আত্মহত্যা করেন তিনি। অনেকদিন ধরে শারীরিক বিকলাঙ্গতায় ভুগছিলেন । তাঁর শেষ লেখাটিতে যেন লেখাই ছিল আত্মহত্যার কথা।

ভার্জিনিয়া উল্ফঃ ইংরেজি ভাষার প্রখ্যাত কবি ভার্জিনিয়া উল্ফ ঊনিশ শতকে মডার্নিজম চর্চাকারী ব্রিটিশ লেখকদের মধ্যে অন্যতম। তার বিখ্যাত উক্তি ‘নারী যখন ফিকশন লেখে তখন তার একটি কক্ষ আর কিছু অর্থ প্রয়োজন।’ এই কবি একদিন তার ওভারকোটের পকেটে নুড়ি পাথর বোঝাই করে হেঁটে নেমে গিয়েছিলেন খরস্রোতা পাথুরে নদীতে। আর কখনও ফিরে আসেন নি। শেষ বিদায়ের আগে তিনি তার স্বামীকে একটি চিঠি লিখেন। তার এই চিঠিটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পড়া সুইসাইড নোটগুলোর মধ্যে একটি। তার এই চিঠিটি  এখনও পড়েন বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীরা।
তার চিঠির কিছু অংশ:
প্রিয়তম
আমি বুঝতে পারছি আমি আবারও পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি এবার হয়তো এই কঠিন সময় অতিক্রান্ত হবে না। আমি নানা রকম স্বর শুনতে পাচ্ছি, কিছুতেই মনোসংযোগ করতে পারছি না। তাই যা সবচেয়ে ভালো মনে হচ্ছে সেটিই করতে যাচ্ছি।

ডেভিড ফস্টার ওয়ালেসঃ তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্প লেখক এবং ইংরেজির প্রভাষক। তার লেখা ‘ইনফিনিটি জাস্ট’ বইটি ইংরেজি ভাষার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ বইয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। হঠাৎ করে তিনি মেরি নামক এক কবির প্রেমে পড়েন। কিন্ত কবি মেরি এতে কোনো সারা দেন নি। মেরির ভালোবাসা না পেয়ে তিনি মাদকসহ বিভিন্ন নেশায় জড়িয়ে যান। দীর্ঘদিন হতাশাগ্রস্ত ডেভিড ফস্টার ২০০৮ সালে ৪৬ বছর বয়সে, দুইপাতার সুইসাইড নোট লিখে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।


আরও অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিকরা রয়েছেন যেমন-সিলভিয়া প্লাথ, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, অ্যান সেক্সটন, এডগার অ্যালান পো,জন কেনেডি টুল।

আত্মাহুতি থেকে ফিরে আসা কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বঃ 

বিশ্ব বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’ মুভি এবং বইটির কথা আমরা কম বেশি সকলেই শুনেছি, দেখেছি। বিশ্বের বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি বই। যে বইটি  পৃথিবীর ৬৫টি  ভাষায় অনুবাদ করে সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। হ্যারি পটারের সফল এবং বিখ্যাত লেখক জে. কে রাউলিং। যিনি মানসিক অবসাদ এবং অর্থাভাবে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তার মনে হয়েছিল এ সমাজে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তিনি মনে করতেন তিনি চরমভাবে ব্যর্থ একজন মানুষ। নিজেকে প্রচণ্ড রকম ব্যর্থ মনে করা মানুষটিই আজ পৃথিবীর কাছে নিজেকে তুলে ধরেছেন অন্যতম একজন সফল মানুষ হিসেবে।


ওপার বাংলার কমেডি শো মিরাক্কেলের মীর আমাদের সকলের পরিচিত। যিনি কি-না ৪ বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিছু একটার পেছনে ছুটতে থাকা বা হতাশা তাকে গ্রাস করে ফেলেছিল পুরোপুরি। তবে সেই মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। আজ সেই মানুষটিই অন্য সকল মানুষদের হাসিয়ে বেড়াচ্ছেন, মন ভালো করে দিচ্ছেন আনন্দের ফেরিওয়ালার মতো।


বিখ্যাত সিঙ্গার কৈলাশ খের হতাশার এক পর্যায় এসে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এক সময় তার মনে হলো সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল এবং জীবনের অর্থবহতা খুঁজে বের করতে হবে। তার হতাশাকেই তিনি বেঁচে থাকার অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করলেন। অনির্বচনীয় যন্ত্রণা এবং হতাশা থেকে নিজেকে নতুন করে পরিচালনা করেছেন।


এখন এরা অন্যদের অর্থবহ সার্থক জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করেন। আমরা কেউ ব্যর্থ নই,কেবল সঠিক সময়ের অপেক্ষায়।


পরিবার প্রিয়জনের ভূমিকাঃ জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিবার বা প্রিয় মানুষটির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অন্য দেশগুলোতে বয়স্কদের আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। তবে আমদের দেশে কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। তাই পরিবারকে সন্তানের কাছে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহজ হতে হবে। প্রায়ই দেখা যায় আমাদের দেশে যখন বড় ধরনের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফল দেওয়া হয়, তখন একসঙ্গে অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কারণ, হয়তো বাবা-মা পরিবার ও তার পরিবেশ থেকে সহানুভূতিশীল আচরণ সে পায়নি। তার ফলাফলের কারণে তাকে তীব্রভাবে সমালোচিত করা হয়েছে। যা সে গ্রহণ করতে পারেনি ফলে ঝোঁকের বশে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

শিশুদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা সফলতার সঙ্গে ব্যর্থতাকেও মেনে নিতে পারে। আত্মহত্যার উপকরণগুলোর সহজলভ্যতাও কমানো জরুরি। পাশাপাশি পরিবারকে বুঝতে হবে বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে -মেয়েরা অনেক আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল হয়ে থাকে। মাত্রা বজায় রেখে সন্তানকে শাসন করুন। পরিবারের ছোট থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কারও সমস্যাকে ছোট করে না দেখে সতর্ক হতে হবে। পরিবারের পাশে থেকে পরিবারকে সময় দিন। সকল সম্পর্ককে প্রাধান্য দিন, আগলে রাখুন। প্রিয়জন এবং আপনার পাশের মানুষটিকে শুনুন ও তার মনের যত্ন নিন। কেউ বিষন্নতায় ভুগলে ‘মন খারাপ করো না’, ‘ভালো খাবার খাও’, ‘আনন্দ করো’, ‘বেড়াও’, ‘বই পড়’ এসব না বলে তাকে অবশ্যই একজন মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন করা উচিত। তার মাধ্যমে সাইকোথেরাপি দিন। অবহেলা নয়, প্রতিটি মানুষের সচেতনতাই বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেকগুলো জীবন।


আত্মহত্যার সমাধানঃ
Sometimes you win, sometimes you learn. অর্থাৎ আপনার হেরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ আছে-জিতে যাওয়ার নয়তো শিখে যাওয়ার। অথচ শিখতে পারার সুযোগটাকে আমরা ভুল করে হেরে যাওয়া বলি। জীবনের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে আত্মহনন কোনো সমাধান নয়। চিন্তা করুন, সবাইকে কি একইসময়ে-একইসাথে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে? না, গন্তব্যে পৌঁছানোই আমাদের আসল উদ্দেশ্য। সবার সঙ্গে আপনি পৌঁছাতে পারছেন না তবে এটিকে বিরতি ভাবুন, বিশ্রাম নিন অতপর উঠে দাঁড়ান। হয়তো একদিন আপনিই হবেন অন্যতম একজন সফল ব্যক্তি।

বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ও লেখক  জর্জ উইনবার্গের একটি বিখ্যাত উক্তি ‘আশা কখনও তোমাকে ছাড়ে না, বরং তুমিই তাকে ছেড়ে দাও।’ একটি আত্মহত্যার প্রভাব কেবল একজন ব্যক্তির জীবননাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট পরিবার, ঘনিষ্ঠ জন, সমাজে এক ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনে।


আত্মহত্যা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা না গেলেও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এর প্রতিরোধ করার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রের, চিকিৎসকের কিংবা মনোবিজ্ঞানীর নয়। সমাজ, পরিবার, আপনার এবং প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব এটি। বিকল্প ভাবুন। মৃত্যু নয়, জীবনই হতে পারে আপনার সমাধান। আত্মহত্যা নয়, আপনি জীবনের পথকে বেছে নিন। আপনার শক্তি সফলতার পথকে খুঁজে বের করুন। আত্মহত্যা কেবল দুর্বল মানসিকতার উদাহরণ, সমাধান নয়।

আমরা মনে করি, কেবল শরীরের যত্ন নেওয়া উচিত। কিন্তু শরীর এবং মন দুটোরই যত্ন সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রবণতা কমিয়ে আনতে শিশুকাল থেকে মা- বাবার আন্তরিক আচরণ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। মা-বাবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সন্তানের আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

জীবনে আনন্দ, ব্যর্থতা থাকবেই। সকল ব্যর্থতার গল্পকে উঠে দাঁড়ানোর গল্পতে পরিণত করুন। আর একটিও আত্মহনন নয় বরং ধৈর্য ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সুস্থ, সুন্দর পৃথিবী গড়াই আমাদের কাম্য। বেঁচে থাকলে একদিন আলো ও আনন্দের উৎসবে আমরা সকলে যুক্ত হতে পারবো।

Header Ad

গুগল অ্যাস্ট্রা : হারানো জিনিস খুঁজে পাবেন নিমিষেই

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। সম্প্রতি সংস্থাটি নিয়ে এসেছে জেনারেটিভ এআই চ্যাটবট জেমিনি।

এবার প্রোজেক্ট গুগল অ্যাস্ট্রা নামে আরও একটি নতুন ফিচার আনছে গুগল। এটির মাধ্যমে ব্যবহারকারী তার ফোন থেকে হারানো জিনিস নিমিষেই খুঁজে পাবেন।

গুগল অ্যাস্ট্রা সার্চ ইঞ্জিনের নতুন প্রোজেক্ট, যেখানে আরও আধুনিক এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট তৈরি করা যাবে। যা অনেকটা ওপেনএআইয়ের নতুন জিপিটি ৪০ মডেলের অনুরূপ। ক্যামেরার মাধ্যমে প্রত্যেকটি জিনিস বিশ্লেষণ করতে পারবে।

এআইয়ের কাছে যা যা ধরা পড়বে (ফোনের ক্যামেরার মাধ্যমে) তা সবই স্টোরেজে সেভ করে নেবে। সেফটিপিন থেকে স্মার্টফোন সব কিছুই বোঝার ও বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা থাকবে এআই অ্যাসিস্ট্যান্টের কাছে।

গুগল অ্যাস্ট্রা হতে চলেছে একটি কার্যকর এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট। এটি যেকোনো কোডও পড়তে পারবে এবং সেই বিষয়ে বিশদ তথ্য জানিয়ে দেবে। আপনার এলাকা দেখে আপনি কোথায় থাকেন, কী নাম সব বলে দেবে এই অ্যাসিস্ট্যান্ট। পাশাপাশি কোনো জিনিস শেষ কোথায় দেখেছিল তাও জানাতে সক্ষম গুগল অ্যাস্ট্রা।

এআইয়ের মধ্যে এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার হতে পারে। এ ছাড়াও গুগল অ্যাস্ট্রাকে ব্যবহারকারী একাধিক প্রশ্ন করতে পারবেন। তবে এটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে সময় লাগবে। তবে গুগল জানিয়েছে, এটির বেশকিছু সুবিধা জেমিনিতে পাওয়া যাবে। শুধু ক্যামেরা ওপেন করলেই ফিচারটি অন হয়ে যাবে।

এই ফিচারের সঙ্গে ওপেনএআই জিপিটি ৪০-এর অনেকটা মিল রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। যা কিছুদিন আগেই উন্মোচন করেছে কোম্পানিটি। এখানে শুধু সোজা একটি লাইন এঁকে এআই অ্যাসিস্ট্যান্টকে প্রশ্ন করতে পারেন। হারানো জিনিসও খুব সহজে খুঁজে পাবেন।

গুগল এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট ছাড়াও, নতুন অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড ১৫ নিয়েও বড় ঘোষণা দিয়েছে গুগল। যা শিগগিরই গুগল পিক্সেল ৮এ সিরিজ স্মার্টফোনে রোল আউট হচ্ছে। ওয়ানপ্লাস এবং স্যামসাংয়েরও বেশ কিছু ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনে আসছে অ্যান্ড্রয়েড ১৫।

লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, দিশেহারা ক্রেতারা

ফাইল ছবি

সপ্তাহ ব্যবধানে ফের অস্থির হয়ে ওঠেছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বেড়ে গেছে মাছ-মাংস ও শাক-সবজিসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের। সরবরাহে খুব একটা ঘাটতি না থাকলেও বেশির ভাগ পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।

বিক্রেতারা জানান, তীব্র গরমের কারণে ব্যহত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা। এতে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়ায় দাম বাড়ছে পণ্যের। আর ক্রেতারা বলেন, এ বছর রোজার আগে থেকেই বেড়েছে পণ্যের দাম। কিন্তু ঈদের পরও সেই দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চাপ বাড়ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সংসারে। অসহায় ক্রেতাদের এখন চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। ব্যবসায়ীরাও বুঝে গেছে, দাম বাড়ালেও পণ্য কিনবে সাধারণ মানুষ। তাই খেয়াল-খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে পণ্যের।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতিকেজি বেগুন ৮০-৯০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ধুন্দল ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, আলু ৫০-৫৫ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা ও কাঁকরোল ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দাম চড়েছে কাঁচা মরিচেরও। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ১২০ থেকে ২০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি পিস লাউ ৭০ টাকা ও চালকুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। আর বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারেও। প্রকারভেদে মাছের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ১০০ টাকা।

এদিকে স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারেও। ক্রেতারা মাছ কিনতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। নদী ও হাওরের মাছ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে গেছে অনেক আগেই। চাষের মাছও এখন বেশ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।

ঈদের আগে এক কেজি ছোট ও মাঝারি আকারের পাঙাশের দাম ছিল ১৮০-২২০ টাকা, সেই একই পাঙাশ এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায়। দাম বেড়ে তেলাপিয়া মাছের কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। মাঝারি ও বড় মানের তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৮০ টাকায়। ঈদের আগে যা ছিল ২২০-২৫০ টাকা। চাষের কই বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০ টাকার ওপরে। আর ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের চাষের রুই মাছের দাম হাঁকানো হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা কেজি। বড়গুলো ৩৬০-৪০০ টাকা। বাজারে ইলিশের সরবরাহ তেমন নেই। ৪০০-৫০০ গ্রামের ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০০-১৪০০ টাকা।৭০০-৮০০ গ্রাম হলে ১৬০০-১৮০০ টাকা। আর কেজি সাইজের হলে দাম দুই হাজারের ওপরে।

এদিকে কোরবানির ঈদের বাকি আরও প্রায় দেড় মাস। এর মধ্যেই মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে এলাচির দাম বাড়ছে লাফিয়ে। এ ছাড়া অন্যান্য মসলার মধ্যে দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে, তেজপাতা, শুকনা মরিচ ও হলুদের দামও গত বছরের তুলনায় বাড়তি। কোরবানির ঈদে মসলার চাহিদা বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। তাই কোরবানিকে সামনে রেখে আগেভাগেই বাজারে মসলার দাম বেড়ে গেছে।

সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য

ছবি: সংগৃহীত

ভিসার অপব্যবহারের দায়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য। তাঁরা গত এক বছরে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ জানাচ্ছে, সে আবেদন নাকচ হওয়ায় নতুন এক চুক্তির তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

উন্নত জীবনের আশায় প্রতিবছর বিদেশে পাড়ি জমান বাংলাদেশিরা। মূল গন্তব্য থাকে ইউরোপের নানা দেশ। তবে তাদের একটি বড় অংশই বেছে নেন অসাধু উপায়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট এবং টুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে গত বছরে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের ৫ শতাংশের আবেদন গ্রহণ করেছে ব্রিটিশ সরকার।

টেলিগ্রাফের দাবি, এবার অবৈধ এসব বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে যুক্তরাজ্য। ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্নস চুক্তির আওতায় শুধু ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীই নন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া ব্যক্তিদেরও ফেরত পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে।

ভিসা ব্যবস্থার এই অপব্যবহারকারীধের তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান। গত বছর, রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৪শ পাকিস্তানি। আর এক্ষেত্রে ভারতীয়ের সংখ্যা ৭ হাজার ৪শ।

২০২৩ সালে বসবাসের অধিকার নেই এমন ২৬ হাজার মানুষকে নিজ দেশে ফেরত পাঠায় যুক্তরাজ্য। এ সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি।

সর্বশেষ সংবাদ

গুগল অ্যাস্ট্রা : হারানো জিনিস খুঁজে পাবেন নিমিষেই
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, দিশেহারা ক্রেতারা
সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য
নিবন্ধন ছাড়াই নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছিল রাফসানের 'ব্লু' ড্রিংকস
যারা একবেলা খেতে পারতো না, তারা এখন চারবেলা খায়: প্রধানমন্ত্রী
রাজধানীতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকামী মানুষের নেতা: খাদ্যমন্ত্রী
সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ২৪ হাজার ২৩৬ জন হজযাত্রী
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
বাংলাদেশে আসছেন কুরুলুস উসমানের নায়ক বুরাক
কোপা আমেরিকার আগে ব্রাজিল শিবিরে দুঃসংবাদ
৫২৩ হজযাত্রীর টাকা নিয়ে উধাও ২ এজেন্সি মালিক
কুমিল্লায় বাস খাদে পড়ে প্রাণ গেল ৫ জনের
নামাজের সময় তালা আটকে মসজিদে দেওয়া হলো আগুন, নিহত ১১
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি-ম্যানেজিং কমিটি চালাতে নতুন বিধিমালা
প্রেমের বিয়ে, স্ত্রীকে হত্যার পর হাসপাতালে মরদেহ রেখে পালালেন স্বামী!
শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: রাষ্ট্রপতি
সুস্থ থাকতে বিশ্বনবি (সা.) যে দোয়া পড়তেন
৪ বছর পর পেলেন স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অনুমতি, যেভাবে মৃত্যু হবে তরুণীর