দিনাজপুরে বাঁশফুল থেকে পাওয়া যাচ্ছে চাল, রান্না হচ্ছে ভাত-পোলাও-পায়েস
বাঁশফুল থেকে পাওয়া যাচ্ছে চাল। ছবি: সংগৃহীত
ধান নয়, বাঁশের ফুলের বীজ থেকে তৈরি হচ্ছে চাল। তা দিয়ে রান্না হচ্ছে ভাত-পোলাও-পায়েস। এমনকি সেই চালের আটা তৈরি করে বানানো হচ্ছে রুটি। বাঁশ ও কঞ্চিতে ঝুলছে ধানসদৃশ দানাদার ফল। সেই ফল সংগ্রহ করা হচ্ছে বস্তায়। ময়লা পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে চলছে মাড়াই। এভাবেই তৈরি করা হচ্ছে বাঁশের চাল।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামে। বাঁশের ফল থেকে ধানসদৃশ দানাদার শস্য সংগ্রহ করে এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন গ্রামের তরুণ সাঞ্জু রায় (২৫)। সঞ্জু রায় উপজেলার ১নং এলুয়ারি ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের শিমুল চন্দ্র রায়ের ছেলে। পেশায় একজন কৃষিশ্রমিক।
গত এক সপ্তাহে প্রায় সাত মণ দানাদার শস্য সংগ্রহ করেছেন। ইতোমধ্যে দুই মণ চাল পেয়েছেন। নিজে যেমন রান্না করে খেয়েছেন, তেমনি আশপাশের মানুষের কাছে বিক্রিও করেছেন প্রতি কেজি ৪০ টাকায়। প্রতিবেশী বৃদ্ধের কাছে গল্প শুনে বাঁশফুলের বীজ থেকে দানা (চাল) সংগ্রহ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে উৎসুক এলাকাবাসীর মধ্যে এ বীজ সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে।
পাকাপান গ্রামের সাঞ্জু রায় ও প্রতিবেশী বৃদ্ধ কালিচন্দ্র রায় (৭০) দুজনই পেশায় দিনমজুর। তিনি সাঞ্জু রায়কে গল্প শোনান যে, ১৯৭১ সালে এরকম বাঁশফুলের দানা থেকে চাল সংগ্রহ করতে দেখেছেন। সে সময় অনেকেই এ দানা চাল হিসেবে ভাত রান্না করে খেয়েছেন।
সাঞ্জু রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের ঝাড় থেকে বাঁশের বীজ সংগ্রহ করছেন তিনি। তার মা বাঁশফুলগুলো কুলা দিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করছেন। সেই বীজ পানিতে ধুয়ে সাঞ্জু রায় পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। এরপর সেগুলো ধানের হাসকিং মিলে ভাঙাবেন। বাড়ির উঠানে প্রস্তুতকৃত এমন কয়েকটি বীজের বস্তা দেখা যায়। কিছু দানা ভাঙিয়ে রেখেছেন। গ্রামের অনেকেই তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন করার বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে।
সাঞ্জু রায় বলেন, বাঁশের কঞ্চিতে ফলগুলো শুকিয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে কঞ্চি ধরে নাড়া দিলে ঝরে পড়ছে। এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ ২০ কেজি সংগ্রহ করেছেন। এক কেজিতে চাল পেয়েছেন আধা কেজির মতো। রান্না করে খেয়েছেন। ভাতের মতোই স্বাদ। পায়েসও রান্না করেছেন। আটা বানিয়ে রুটিও খেয়েছেন। ইতোমধ্যে আড়াই হাজার টাকার চাল বিক্রিও করেছেন। এখনও পাঁচ বস্তা মজুত আছে। ভালোই লাগছে।
বাঁশগাছে পাওয়া দানাদার শস্যের চাল নিয়ে গেছেন পাড়ার সুনীল রায়, লিপি রানী ও কামিনী বালা। তারা জানান, সাঞ্জুকে ধানের চাল বদল দিয়ে বাঁশের চাল নিয়েছেন এক কেজি করে। রান্না করে খেয়েছেনও। খুবই সুস্বাদু।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রকিবুল হাসান বলেন, বাঁশের বীজ থেকে চাল উৎপাদন হয় এই প্রথম জানলাম। দেশের কোথাও এমন ঘটনা শোনা যায়নি। এটি বিরল ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা শিগগিরই গবেষণার কাজ শুরু করব।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান জানান, বাঁশ এবং ধান একই প্রজাতির। ৫০ বছরে একটি বাঁশঝাড়ে একবার ফল আসে। পরে আর সেই বাঁশঝাড়টি আর টিকে থাকে না। তবে বাঁশফলের সেই দানা থেকে অবিকল চালের মতো দানা হয়। যার ভাতের স্বাদ ধানের চালের ভাতের মতোই। তবে এটি সম্ভাবনাময় নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিভিকালচার জেনেটিকস বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বাঁশে সাধারণত ফুল হয় না। তবে প্রজাতিভেদে ২৫ থেকে ৬০ বছর পরে ফুল আসতে পারে। ফুল আসা মানেই ওই বাঁশের জীবনচক্র শেষ হওয়া। বাঁশফলটা দেখতে অনেকটা ধানের বীজের মতো।
পদ্মায় নিখোঁজ তিন কিশোরের লাশ উদ্ধার
প্রতীকী ছবি
আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে পদ্মা নদীতে ডুবে নিখোঁজ হওয়া তিন কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
নিহতরা হলো- পবা উপজেলার কাটাখালির বাখরা বাঁশ দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা রেন্টুর ছেলে যুবরাজ (১২), নুর ইসলামের ছেলে নুরুজ্জামান (১৪), লিটনের ছেলে আরিফ (১৪)। তারা সবাই স্কুলশিক্ষার্থী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাত কিশোর একসঙ্গে পদ্মা নদীতে গোসল করতে নেমেছিল। এক পর্যায়ে তিনজন পানিতে তলিয়ে যায়। বাকি চারজন চেষ্টা করলেও কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু সামা বলেন, পদ্মায় গোসলে নেমে নিখোঁজ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন
বাড়তে পারে তাপমাত্রা
আবহাওয়া ভবন। ছবি সংগৃহীত
বাড়তে পারে তাপমাত্রা। সেইসঙ্গে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি কিংবা গরম কমারও কোনো সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) এ তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যেই গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) আরও তিন দিনের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।’
চলতি মৌসুমে গত শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় যশোরে। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। তীব্র গরমের কারণে স্কুল-কলেজে সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।