শনিবার, ১০ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১১

মোস্তফা রাতেই বলে রেখেছিল এদফু টেম্পল দেখতে যাবার জন্যে বেরোতে হবে সকাল ছয়টায়। রানা ভাইয়ের ধারণা মোস্তফা কিছুটা সময় হাতে রেখেই বলে। কাজেই খুব ভোরে উঠে পড়লেও আমরা নিচের লবিতে এলাম সোয়া ছয়টার দিকে। তখনও দুবাই মরক্কো বাহরাইনের যাত্রীদের দেখা নেই। সাড়ে ছয়টার দিকে সবাই এসে গেলে জলযান ছেড়ে আমরা ডাঙায় নেমে গেলাম। অন্যদিনের মতো কোথাও কোনো গাড়ি অপেক্ষা করে নেই, কিংবা সরাসরি পায়ে হেঁটে মন্দিরে ঢুকে পড়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই। তার পরিবর্তে পথের উপরে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য অশ্বচালিত শকট! সোজা বাংলায় টমটম বা ঘোড়ার গাড়ি।

মিশরে এসে রাজশাহী শহরের প্রধান বাহন দেখে রাজশাহী দুহিতার খুশি হবার কথা! কিন্তু তাঁর মনোভাব বোঝার আগেই মোস্তফার নির্দেশনা অনুসারে আমরা দুজন একটা টাঙ্গায় উঠে বসলাম। তৃতীয় ব্যক্তিটি নিশ্চয়ই রানাভাই হবেন যখন ভাবছি তখনই অপরিচিত আরো একজন আমাদের সাথে এসে জুটলেন এবং মোস্তফার সাথে কিশোর চালকের কী কথপোকথন হলো জানি না, আমাদের অশ্ব শকট একটা আকস্মিক ঝাঁকুনি দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে শুরু করলো।

এদফু মন্দিরের পথে

খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে ক্লিওপেট্রার বাবা দশম টলেমি আউলেটাসের আমলে এদফুর মন্দিরের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলেও আমরা দেখতে যাচ্ছি দুই হাজার ঊনআশি বছর পরে। আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট-এর মেসোডেনিয়ান জেনারেল এবং বিশ্বস্ত সঙ্গী প্রথম টলেমি দ্য সেভিয়ার খ্রিস্টপূর্ব ৩০৫ অব্দে নিজেকেই ফারাও প্রথম টলেমি হিসাবে ঘোষণা দিয়ে রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ততোদিনে আলেক্সান্ডারের ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে এবং প্রকৃত ফারাও সম্রাটগণ তখন বিলুপ্ত প্রাণী। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৩৪১ বছর আগেই শেষ মিশরীয় ফারাওয়ের রাজত্ব শেষ হলে সূচনা হয়েছিল পারস্য রোমান গ্রিকদের রাজত্ব। এদের মধ্যে মিশরের ইতিহাসে টলেমি রাজবংশ সর্বশেষ এবং দীর্ঘতম শাসক রাজবংশ হিসাবে খ্রিস্টপূর্ব ৩০ অব্দে ক্লিওপেট্রার মৃত্যু পর্যন্ত টিকে গিয়েছিল। এদফুর বর্তমান মন্দিরটি প্রাচীন ফারাওদের বাজপাখির মাথাওয়ালা হোরাসের পুরোনো মন্দিরের জায়গাতেই নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। দেশ ও জাতির রক্ষাকর্তা হিসাবে প্রাচীন মিশরে দেবতাদের সর্দার হোরাসের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সেই কারণে নতুন ফারাও রাজত্বেও তাঁর গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। তৃতীয় টলেমির নির্দেশে এদফু মন্দিরের কাজ শুরু হলেও শেষ করতে সময় লেগেছে দেড়শ বছরের বেশি।

নদীর ঘাট থেকে এদফু মন্দিরের দূরত্ব তিন কিলোমিটারের কিছু বেশি। পথের দুপাশ দিয়ে ঘোড়ার পাড়ি চলাচলের বিরাম নেই। ডানদিক দিয়ে যাত্রী বোঝাই এবং বাঁ দিকেরগুলো খালি। খালি টাঙ্গাগুলো নদীর ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে এদফু মন্দির চত্বরে নামিয়ে দিয়েই আবার ছুটছে। এদের ঘোড়ার গাড়ির চাকা চারটি, সামনের দিকের দুটো আকারে ছোট। নগরীর বাহনের মতো এখানকার পথঘাটও চল্লিশ বছর আগের রাজশাহী শহরের মতো। দীর্ঘ জীর্ণ দেয়াল, কিছু বাসভবনে রঙের ছোঁয়া লাগলেও বেশিরভাগই সস্তা চুনকাম করা অথবা পলেস্তারাখসা বসত বাড়ি। পথে কিছু বন্ধ দোকান চোখে পড়ে, দুই একটা কেবল খুলতে শুরু করেছে। একটা বস্তিও কেবল জেগে উঠছে। ঘোড়ার গাড়ির চাকার শব্দ, খুরের খটখট এবং চালকের মুখে ঢাকা বা রাজশাহীর চালকদের মতো সেই একই ধরনের ‘টিক-টক’ শব্দ! নিশ্চয়ই জাতি গোষ্ঠী নির্বিশেষে ঘোড়াদের জন্যে বোধগম্য করেই সহিসদের মুখে এই ভাষা সৃষ্টি হয়েছে।

মন্দিরে ঘোড়াগাড়ি পার্কিং

আমাদের শকট-সঙ্গী, যাকে আমি এতোক্ষণ নেহায়েতই মিশরের কোনো গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সাদামাটা আরবি জানা পর্যটক ভাবছিলাম, হঠাৎ করেই তিনি বিশুদ্ধ ইংরেজিতে জানতে চান, ‘হোয়ার আর ইউ ফ্রম স্যার? আই মিন হুইচ কান্ট্রি?’ বললাম, ‘বাংলাদেশ।’ আমি নিশ্চিত ছিলাম, তিনি বাংলাদেশের নাম কখনো শোনেননি। তাই সঙ্গে সঙ্গেই আবার বললাম, ‘হ্যাভ ইউ এভার হার্ড দ্য নেম অফ আওয়ার কান্ট্রি?’ আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন, ‘ওহ ইয়া। দেয়ার আর লটস অফ পিপল ফ্রম বাংলাদেশ ইন কানাডা?’ ‘সো... ইউ লিভ ইন কানাডা?’ এরপর তিনি তাঁর কানাডাবাসের বিবরণ দিতে শুরু করলেন। বয়সে আমার চেয়েও কিছুটা বড়ো, এলোমেলো পোশাকের ভদ্রলোকের আদি নিবাস মিশরেই। বহু বছর ধরে কানাডা প্রবাসী হলেও প্রতিবছর নভেম্বর ডিসেম্বরে দুতিন মাসের জন্য দেশে আসেন। তার এই ফিরে ফিরে দেশে আসা যতোটা না দেশপ্রেমের জন্য তারচেয়ে বেশি ঠাণ্ডার কারণে। শীত একেবারেই সহ্য করতে পারেন না বলে এ সময় দেশে চলে আসেন। বললেন, স্ত্রী এবং পুত্র কন্যারা আসতে চায় না বলে তিনি একাই ফিরে আসেন, আসবেন যতোদিন বেঁচে আছেন!

বিশাল অভ্যন্তরীণ চত্বর

এদফু মন্দিরের বাইরে যেখানে আমরা ঘোড়ার গাড়ি থেকে নেমে এলাম সেই জায়গাটাকে কী বলবো, পার্কিংজোন, গ্যারেজ নাকি আস্তাবল বুঝতে পারলাম না। দীর্ঘ কয়েকটি সারিতে শতাধিক টাঙ্গার স্থান সংকুলান হতে পারে। সকালে অবশ্য ঘোড়া এবং সহিস করোরই বিশ্রাম নেবার সময় নেই। প্রবেশ পথের বাইরে আমাদের কিছুক্ষণ দাঁড়াতে হলো। দর্শণার্থী ভক্তগণ সমবেত হলেও সম্ভবত মন্দির দ্বার খোলার সময় তখনো হয়নি। করিৎকর্মা মোস্তফা অবশ্য বুকিং কাউন্টার খোলার প্রায় সাথে সাথেই আমাদের প্রবেশ পত্র সংগ্রহ করে নিয়ে এলো এবং অনতি বিলম্বে আমরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মন্দিরের বাইরের চত্বরে ঢুকে পড়লাম। কিছুটা হেঁটে মূল মন্দির পর্যন্ত পৌছাবার আগেই কয়েকটি ভগ্নদশা প্রাচীর, ধ্বসে পড়া তোরণ এবং প্রকাণ্ড পাথরের স্তূপ পেরিয়ে এগোতে থাকি। এ সব ভেঙে পড়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নির্মাণ কৌশল এবং স্থাপত্যকলার বিন্যাস দেখে মুগ্ধ হতে হয়। অনেক দেয়ালেই প্রাচীন মিশরের চিত্রকলায় এখনো ফুটে আছে সমকালের সমাজের দৃশ্যাবলী। কিছু দৃশ্য এখনো রঙিন। হায়রোগ্লিফিক লিপিতে কোথাও কোথাও লেখা রয়েছে সেকালের কথা ও কাহিনি। আমাদের ঠিক পেছনে বিশুদ্ধ বঙ্গ ভাষায় উচ্চস্বরে কথপোকথন শুনে ফিরে দেখলাম পশ্চিম বাংলার জনাকয়েক দাদা বৌদি ঠিক আমাদের পেছনেই আছেন।

এদফু মন্দিরের দেয়াল চিত্র

মূল মন্দিরের প্রবেশ পথের বাইরে দুটি বিশাল সুদৃশ্য তোরণের দুপাশে বাজ পাখির রূপ ধারণ করে গ্রানাইট পাথরে নির্মিত দেবতা হোরাস বসে আছেন। গেটের দেয়ালে করা রিলিফের কাজে দশম টলেমি আউলেটাসকে চিত্রিত করা হয়েছে। তিনি তাঁর শত্রুদের আঘাত করছেন আর দেবতা হোরাস তাকিয়ে দেখছেন। সিনিয়ার দাদাদের একজন বলে উঠলেন, ‘দেখেছিস পেঁচার নাকটা কে যেনো ভেঙে দিয়েছে!’ কমবয়েসী দাদা বললেন, ‘ওটা পেঁচা নয় বাজপাখি, দেবতা হোরাস!’

এই নাক-মুখ-মুণ্ডু ভাঙাভাঙির ব্যাপারটা হাজার বছর ধরেই চলছে। তবে নাক ভাঙার পরেও হোরস মহোদয় যে দুই হাজার বছর টিকে আছে, সেই তো অনেক!

স্তম্ভের উপরে অক্ষত সিলিং 

তোরণ পেরিয়ে ভেতরে আমরা একটা বিস্তৃত খোলা চত্বরে ঢুকে পড়ি। তিনদিকে বত্রিশটি স্তম্ভ দিয়ে ঘেরা এই উন্মুক্ত প্রাঙ্গণেই এক সময় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। কেমন ছিল সেই উপাসনা পদ্ধতি! উঠানের তিন পাশের দেয়ালগুলোতে দেখা যায় হোরাস এবং তাঁর স্ত্রী দেবী হাথোরের রিলিফের কাজ। মূল প্রবেশ পথের বিপরীতে আরো একটি ছোট আকারের পথ দিয়ে ভেতরের হল ঘরে ঢুকে পড়া যায়। ভেতরে পা রাখার পরেই অবাক হয়ে লক্ষ করি মিশরের অন্যসব মন্দিরের ছাদ খুলে পড়লেও দীর্ঘ পিলারের উপরে এখানে সিলিংগুলো অক্ষত অবস্থায় এখনো টিকে আছে। বাইরের হলঘরটির বারোটি স্তম্ভের দুপাশে দুটি লম্বা কক্ষ, যার একটি ছিল ধর্মগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের লাইব্রেরি আর অন্যটি ছিল পবিত্র উৎসর্গের জন্য সংরক্ষিত। ভেতরের দিকের তুলনামূলক ছোট কক্ষটি ছিল ধুপধুনা বা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সুগন্ধি তৈরির ল্যাবরোটারি। দেবতা হোরাসের উদ্দেশ্যে নিবেদিত নৈবেদ্য উপহার রাখার জন্যেও বরাদ্দ ছিল একটি কক্ষ। এসব নৈবেদ্যের কতোটা পাথরের বাজপাখি আর কতোটা পুরোহিতকূলের ভোগে লেগেছে তা এখন বলা কঠিন। এইসব হলঘর এবং পবিত্র কক্ষগুলোর ভেতর দিয়ে সবশেষে যেখানে পৌঁছালাম সেটিই হচ্ছে এদফু মন্দিরের পবিত্রতম স্থান। ঘষেমেজে পালিশ করা গ্রানাইট পাথরের বেদীতে এখানেই ছিল হোরাসের পবিত্র স্বর্ণমূর্তি।

বাইরের হল পেরিয়ে অভ্যন্তরের কক্ষ আবার কক্ষ পেরিয়ে আরো ভেতরের পবিত্র প্রকোষ্ঠ। এখানে খোলা ছাদ নেই, ফলে অন্ধকার কক্ষের ভেতরে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা আছে। তারপরেও কালো পাথরের দেয়াল চিত্র খুব ভালো করে দেখা যায় না। পবিত্রতম মন্দিরে ছবি তুলতে মানা নেই, কিন্তু কৃত্রিম আলো জ্বালাতে মানা। আধো অন্ধকারে বাজপাখি দেবতার মন্দির দর্শন শেষ করে আমরা উল্টো পথে ফিরতে শুরু করি। এই সময় দেখা হয়ে গেল কানাডা প্রবাসীর সাথে। প্রায় তাঁর সমবয়েসী এক ভদ্রমহিলার হাত ধরে অন্ধকার মন্দির থেকে বাইরে আলোর চত্বরে বেরিয়ে আসছেন। মিশরীয় কানাডিয়ান আমাদের দেখে একটা মৃদু হাসি দিলেন। দেখলাম তাঁর সঙ্গিনীর বয়স হয়েছে, কিন্তু এক সময় যে তিনি অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

হোরাসের পবিত্র কক্ষ

রানা ভাই আমাদের কিছু আগেই বেরিয়ে এসে প্রধান ফটকের সামনে সান্ধ্যকালীন ‘সাইট এ্যান্ড সাউন্ড’ শোর দর্শকদরে জন্যে পেতে রাখা চেয়ারে বসে তাঁর হাতে থাকা ‘ঈজিপ্ট’ বইটির পাতা ওল্টাচ্ছিলেন। অনেকটা সময় হেঁটে একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম বলে আমরাও বসে পড়লে রানা ভাই ইতিহাসের পাতা থেকে কিছুটা উদ্ধৃতি দিলেন।

‘পরিত্যক্ত মন্দিরটি এক সময় নীল নদের পলি এবং মরুভূমি ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে আসা বালিতে সম্পূর্ণ দৃষ্টির আড়ালে চলে গিয়েছিল। অষ্টদশ শতকের শেষ দিকে মন্দির তোরণের উপরের অংশ মানুষের চোখে পড়ে। তবে তারও অনেক পরে ফরাসি মিশরবিদ অগাস্ত মেরিয়েট ধুলো মাটি সরিয়ে এদফুর মন্দির বের করে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’

রোমের সম্রাট প্রথম থিওডিয়াসের রাজদকীয় আদেশ জারি করে ৩৯১ খ্রিস্টাব্দে রোমানদের সাম্রাজ্যে খ্রিস্টধর্ম ছাড়া অন্য সকল ধর্মের পূজা-অর্চনা, ভক্তি ভাবনা এবং প্রচার প্রচারণা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে ফারাও আমলের আরো অনেক মন্দিরের মতো এদফুর মন্দিরও অবহেলায় অব্যবহারে জীর্ণ হতে থাকে। ধর্মাবতারদের অতি উৎসাহের ফলে অনেক মূর্তির নাক মুখ ভেঙে বা আঁচড়ে দিয়ে বিকৃত করে ফেলা হয়। দেয়ালের সুদৃশ্য রিলিফের কাজগুও এসব ধর্মান্ধ খ্রিস্টান পুরোহিতদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি। এদফুর হাইপোস্টাইল হলের অভ্যন্তীর ছাদটি কালো রঙের। ধারণা করা হয়, অখ্রিস্টান পৌত্তলিকদের দেব দেবীর সব ধরনের চিহ্ন মুছে ফেলতে মন্দিরের ভেতের আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল।

এদিক থেকে আফগানিস্তানের মোল্লা এবং রোমান যাজকদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় খ্রিস্টানরা পরবর্তী সময়ে সভ্য হয়ে উঠলেও মুসলমানরা দুই হাজার বছর পরেও সভ্যতার আলোক বঞ্চিতই থেকে গেছে।

মন্দির গেটের সামনে 

প্রত্ন এলাকা থেকে বেরিয়ে যাবার আগে মোস্তফা আমাদের নয়জনকে আবার একত্রিত করে কিছুটা আরবি এবং কিছুটা অ্যারাবিশ ইংরেজিতে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে দিল। সব কথা শোনা বা বোঝার দরকার মনে হলো না, তবে শেষে সে অভ্যাস মতো জোরে একটা হাঁক দিয়ে বললো, ‘তামাম!’ ছোটবেলায় পড়া আরব্য রজনী বা বাদশাহী গল্পের বইয়ের শেষে লেখা থাকতো ‘তামাম শোধ’, যার অর্থ সম্ভবত সমাপ্ত। এখানে মোস্তফার ‘তামাম’ অর্থ ইংরেজিতে ‘ওকে’ অথবা বাংলায় ‘ঠিক আছে?’ ধরনের কিছু একটা হবে। বুঝলাম এদফুর মন্দির দর্শন শেষ, এখন যে যার টাঙ্গায় উঠে ফিরে যেতে হবে জাহাজে।

বাইরে বেরিয়ে দেখলাম অসংখ্য অশ্বশকটে পরিপূর্ণ পার্কিং এলাকা থেকে নিজেদের ঘোড়ার গাড়ি খুঁজে বের করাই কঠিন। সহিসদের চিৎকার চেঁচামেচি, ফেরিওয়ালাদের হাঁক ডাক, চলমান টাঙ্গার খটখট এবং গাইডদের দিক নির্দেশনার মতো হুলস্থুলের ভেতরেও মোস্তফা ঠিকই আমাদের গাড়ি খুঁজে বের করে তুলে দিল। এখন অপেক্ষা শুধু কানাডিয়ান ভদ্রলোকের জন্য! দেখা গেল কিছু দূরে তিনি সেই সাবেক সুন্দরীকে বেশ সাবধনাতার সাথে একটি টাঙ্গায় তুলে দিচ্ছেন। এরপর তাঁর উদ্দেশ্যে সম্ভবত কিছু সাবধান বাণী উচ্চারণ করে তিনি আমাদের গাড়িতে এসে উঠলেন। কে জানে, তিনি হয়তো কানাডার শৈত্য প্রবাহের কারণে নয়, তাঁর বোন, বান্ধবী কিংবা প্রাক্তন প্রেমিকার ঊষ্ণতার কারণেই ফিরে ফিরে মিশরে আসেন।

চলবে...

এসএ/

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১০

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

 

Header Ad
Header Ad

শাহবাগে বিক্ষোভে উত্তাল জনতা, খালেদা জিয়ার উপস্থিতি চায় ইনকিলাব মঞ্চ

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে উত্তাল আন্দোলন চলছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার সারা দিনব্যাপী এই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ‘ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’ সহ নানা স্লোগানে মুখরিত করে তোলে শাহবাগ চত্বর।

এই প্রেক্ষাপটে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি এক আবেগঘন আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে শাহবাগে আসার জন্য।

হাদি নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে লেখেন— “বাংলাদেশের বেগম জিয়া, শাহবাগে হাজারো শহিদ পরিবার ও সারা বাংলাদেশ আপনার অপেক্ষায়।”

অন্য একটি পোস্টে তিনি আরও লেখেন— “জুলাই যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আপোষহীন নেত্রী বেগম জিয়ার কাছে যেতে চাই আমরা শাহবাগের দাওয়াত নিয়ে। কাইন্ডলি সংশ্লিষ্ট কেউ হেল্প করুন। উনি আমাদের সার্বভৌম অভিভাবক।”

শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে ফোয়ারার পাশে তৈরি করা মঞ্চ থেকে আন্দোলনের নতুন ধাপ হিসেবে মোড় অবরোধের ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

ঘোষণার পরপরই আন্দোলনকারীরা মিছিলসহ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় এবং অবরোধ শুরু করে।

Header Ad
Header Ad

১৭ বছর পর দেশে ফিরে মসজিদে জুমার নামাজ পড়লেন জোবাইদা রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। ছবি: সংগৃহীত

১৭ বছর পর স্বদেশে ফিরে প্রথমবারের মতো মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। আজ (শুক্রবার) তিনি রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর মসজিদে সশরীরে জুমার নামাজে অংশ নেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জোবাইদা রহমানের নামাজ আদায়ের কিছু ছবি পোস্ট করে লেখেন— "ধানমন্ডি ৭ নম্বর মসজিদে আজ জুমার নামাজ আদায় করেছেন তারেক রহমানের সহধর্মিণী জোবাইদা রহমান।"

এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার নাসির, তার স্ত্রী ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নানসহ আরও কয়েকজন।

২০০৮ সালে দেশ ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি জমানো জোবাইদা রহমান চলতি বছরের ৬ মে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফেরেন। ফিরে আসার পর থেকে তিনি গুলশানের ফিরোজা বাসভবনে অবস্থান করছেন। মাঝে মাঝে তিনি বাবার বাড়ি ধানমন্ডির মাহবুব ভবনেও যাতায়াত করছেন।

জোবাইদা রহমানের এই জুমার নামাজে অংশগ্রহণ ও জনসম্মুখে উপস্থিতি বিএনপির রাজনৈতিক পরিসরে তার সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের একটি বার্তা হিসেবেও দেখা হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Header Ad
Header Ad

ভারতে ইউটিউবে বন্ধ যমুনা-বাংলাভিশনসহ ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল

ছবি: সংগৃহীত

ভারত সরকার জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলার উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে ইউটিউবে বাংলাদেশের অন্তত চারটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার সীমিত করেছে। শুক্রবার (৯ মে) স্থানীয় ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ সংস্থা ডিসমিস্ল্যাব বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বন্ধ হওয়া চ্যানেলগুলো হলো— যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন, এবং মোহনা টেলিভিশন।

ভারতীয় ব্যবহারকারীরা এখন ইউটিউবে এসব চ্যানেলে প্রবেশ করতে গেলে একটি সতর্কবার্তা দেখতে পাচ্ছেন— "এই ভিডিওটি বর্তমানে এই দেশে প্রদর্শনের জন্য অনুমোদিত নয়, কারণ এটি জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ভিত্তিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত।"

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০-এর ৬৯(ক) ধারা অনুযায়ী, সরকার জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, জনশৃঙ্খলা বা রাষ্ট্রের অখণ্ডতা বিঘ্নিত হয়—এমন কনটেন্ট বা চ্যানেল বন্ধ করার নির্দেশ দিতে পারে। সেই ধারার অধীনেই ইউটিউবকে টেকডাউন অনুরোধ পাঠানো হয়েছে বলে জানায় ডিসমিস্ল্যাব।

ভারতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো বাংলাদেশ সরকার, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বা ইউটিউব কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও মিডিয়া কনটেন্টের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ থেকেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে গণমাধ্যম কূটনীতি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

শাহবাগে বিক্ষোভে উত্তাল জনতা, খালেদা জিয়ার উপস্থিতি চায় ইনকিলাব মঞ্চ
১৭ বছর পর দেশে ফিরে মসজিদে জুমার নামাজ পড়লেন জোবাইদা রহমান
ভারতে ইউটিউবে বন্ধ যমুনা-বাংলাভিশনসহ ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল
আটকের পরও যে ফোনে ছেড়ে দেওয়া হয় আবদুল হামিদকে
নওগাঁয় দুলাভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে গ্রেপ্তার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা
বাংলাদেশ সফরে আসছে না ভারত, অনিশ্চিত এশিয়া কাপ
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল শাহবাগ, জনস্রোতে ভরপুর রাজপথ
বিএনপি ছাড়া সব রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে: সারজিস আলম
শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যায় গ্রেপ্তার টিনা ৩ দিনের রিমান্ডে
চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ৪১.০২ ডিগ্রি সেলসিয়াস; বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ
কাশ্মীরে ফের বিএসএফের গুলি, ৭ পাকিস্তানি নিহত: দিল্লির দাবি বিচ্ছিন্নতাবাদী
নওগাঁয় ককটেল বিস্ফোরণে উড়ে গেল বাড়ির টিন
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ‘আমাদের বিষয় নয়’: যুক্তরাষ্ট্র
দেশের তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে যা বলল আবহাওয়া অফিস
আ.লীগ নিষিদ্ধে গুরুত্বের সাথে সরকার বিবেচনা করছে: সরকারের বিবৃতি
টাঙ্গাইলে নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতা রাজ্জাকসহ ২ জন গ্রেফতার
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল
এবার অপেক্ষা তারেক রহমানের ফেরার, চলছে জোরালো প্রস্তুতি
পদ্মার এক ইলিশের দাম সাড়ে ৮ হাজার টাকা
৫ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে থানায় নেওয়া হলো আইভীকে