শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১০

একদিন একরাত আসোয়ানে নীল নদের উপরে ভেসে থাকলেও ফিলাই এবং আবু সিম্বেলের পুরাকীর্তি এবং শহরের প্রধান সড়ক ছাড়া তেমন কিছুই দেখা হয়নি। আসোয়ান ছেড়ে যাবার পরেই প্রথম দেখলাম নীলের তীরে বহুতল ভবন, সুদৃশ্য মসজিদ এবং সবুজ গাছপালার ওপারে শহরের সীমানা ছাড়িয়ে  দূরে ধূসর পাহাড়ের সারি। আসোয়ান থেকে জলপথে লাক্সরের দূরত্ব দুশ কিলোমিটারের কিছু বেশি। 

ছবি: নীলনদ থেকে আসোয়ান

নীলের উৎপত্তি নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। লেক ভিক্টোরিয়া নাকি লেক অ্যালবার্ট, কোথায় থেকে মূলধারা প্রবাহিত হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে পণ্ডিতেরা কয়েক শতক থেকেই বিস্তর ঘোরাঘুরি এবং গবেষণা করে চলেছেন। এতোসব খোঁজ খবর না নিয়ে সোজাসুজি বলতে পারি আমরা এখন যাচ্ছি দক্ষিণ থেকে উত্তরে ভূমধ্য সাগরের দিকে, সেখানেই শেষ পর্যন্ত নীল নদের বয়ে চলার পরিসমাপ্তির ঘটেছে। সারা জীবন পদ্মা মেঘনা যমুনাসহ দেশের সকল ছোট বড় নদীকে উত্তর থেকে দক্ষিণে বয়ে যেতে দেখেছি। অন্য অনেক দেশেই দানিয়ুব, ভ্লাতাভা, রাইন কিংবা হাংগাং কোনো দিকে প্রবাহিত হচ্ছে ভেবে দেখিনি, ফলে আমার ধারণা ছিল পৃথিবীর সব নদীই বোধয় দক্ষিণে বয়ে যায়। কিন্তু এই প্রথম উত্তরে ভাটির দিকে ভেসে যাচ্ছি। 

ডাইনিং হলে টেবিলে বসে খেতেই দেখছিলাম নদীপারের দৃশ্য। শহর থেকে দূরে সরে যেতেই খেজুর গাছের সারি, ফসলের ক্ষেত এবং অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ঝোপঝাড় লতাগুল্মের জঙ্গল নীল নদের দুই পাড় সবুজে ছেয়ে রেখেছে। আমাদের দেশের নদীর মতো পাড়ভাঙা ঢেউ নেই, ফলে পাড়ে কোনো ভাঙনের চিহ্ন নেই। নদী তীরে ধু ধু বালুর চর চোখে পড়ে না। তবে কোথাও কোথাও চারিদিকে জল পরিবেষ্টিত চরভূমি জেগে আছে, সেখানেও লক্ষ করা যায় সবুজের সমারোহ। নদীর কূল ঘেষে ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের ডগায় অজ্র ফুল ফুটে আছে। কাশফুলের মতো দীর্ঘ সারিতে সবুজের ডগায় ফোটা ফুল আকারে ছোট হলেও সুন্দর এই পুষ্পসম্ভার নদীর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কোথাও ঘন বন বিস্তুত হয়ে বহুদূর চলে গেছে আবার কোথাও ঘাসে ভরা মাঠে গরু ছাগল, এমন কি গোটাকয়েক ঘোড়া মনের সুখে কচি ঘাস চিবিয়ে পেট ভরাচ্ছে। পাশ দিয়ে ভেসে যাওয়া জাহাজের দিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ছোট জলযান ফালুকার যাত্রীরাও হয়তো ঈর্ষাবশত আমাদের বড় জাহাজের যাত্রীদের দিকে ফিরে তাকায় না। তবে বড় কোনো জাহাজ পাশ দিয়ে যাবার সময় যাত্রীরা হাত নাড়ে, তাদের হৈ চৈ শোনা যায়।

ছবি: কোম ওম্বো মন্দির

প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা ভেসে চলার পরে হঠাৎ করেই চোখের সামনে দেখা দিল কোম-ওম্বো মন্দির। ফারাও রাজত্বকালের অন্যান্য মন্দিরের তুলনায় কোম-ওম্বোর তফাৎ হলো এটি সম্রাট  বা সম্রাজ্ঞীর উদ্দেশ্যে নয় বরং উৎসর্গ করা হয়েছিল কুমির দেবতার উদ্দেশ্যে। কোম-ওম্বো কথাটির আভিধানিক অর্থ ‘সোনার পাহাড়’। টলেমির রাজত্বকালে আসোয়ান ও এডফুর মাঝখানে কোম ওম্বো নগরী অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। তবে পরবর্তী সময়ে বন্দরটি তার সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। ঘাটের সাথেই পুরাকীর্তি কোম-ওম্বো মন্দির। কাজেই টুইয়া ঘাটে ভেড়ার পরপরই নেমে পড়েছিলাম। আমাদের নতুন গাইড মোস্তফা যখন শিক্ষার্থীদের ইতিহাসের পাঠ দিচ্ছেন, তখন কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখলাম জাহাজের অনেকেই লাইন ধরে প্রত্ম এলাকায় ঢুকে পড়ছে। আমি ঢুকতে গিয়ে বাধা পেলাম, টিকেট প্লিজ! আগে খেয়াল করিনি, সবার হাতেই ভেতরে যাবার ছাড়পত্র। এখানে ঢুকতেও টিকেট কিনতে হবে নিশ্চয়ই। আবার কয়েক ধাপ নেমে টিকেট ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি, টিকেট কিনে ঢুকে পড়বো, নাকি গাইডের জন্যে অপেক্ষা করবো, এই সময় মোস্তফা তার দলবলসহ হাজির। মোস্তফা নিজেই আমাদের হয়ে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করার পরে বুঝলাম, এটির আমাদের প্যাকেজের অন্তর্ভূক্ত, অর্থাৎ কুমিরের মন্দির দেখতে এসে একশ চল্লিশ পাউন্ড দিয়ে টিকেট কিনে ফেলাটা নেহায়েতই নির্বোধের কাজ হতো।  

ছবি:পিলারের ফাঁকে চাঁদ

কোম-ওম্বো মন্দির চত্বরে সন্ধ্যাবাতি জ্বলে উঠেছে। বিভিন্ন কোন থেকে সুপরিকল্পিতভাবে আলো ফেলে দর্শকের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়েছে পুরো প্রত্ম-এলাকা। মোস্তফা তার আরবি ভাষাভাষিদের পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বয়ান দিতে শুরু করে আমরা ডান দিকের বিপুল স্তম্ভগুলোকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগোতে শুরু করলাম। কোম-ওম্বোর বর্তমান মন্দিরটি  যিশুখ্রিস্ট জন্মের ২০৫ থেকে ১৮০ বছর আগে সম্রাট পঞ্চম টলেমির সময়কালের। রোমানদের রাজত্বকাছে কিছু সংস্কারও করা হয়েছে। এরও অন্তত হাজারখানেক বছর আগে রাজা তৃতীয় তুথমোসিস এবং রাণী হাতসেপসুর শাসনামলে এই জায়গাতেই আরো একটি মন্দির ছিল বলে জানা গেছে। তবে ধ্বংসাবশেষের অস্তিত্ব থাকলেও আজকাল গবেষকরা ছাড়া কেউ আর তার খোঁজ করে না। কোম-ওম্বোর দ্বৈত মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো এর দুপাশে বিস্তৃত পুরোপুরি সিমেস্ট্রিক্যাল ডিজাইন। প্রাচীন মিশরিয় স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য অনুসারে কেন্দ্রীয় অক্ষের দুপাশে একই ধরনের হলঘর এবং কক্ষের অবস্থান। এর কারণ হলো মন্দিরটি ব্যবহার হতো দুটি দেবতার উপসানায়। একদিকে কুমির মাথাওয়ালা দেবতা সোবেক আর অন্য দিকে রাজ্যের প্রথম আরাধ্য দেবতা বাজপাখির মাথাওয়ালা হোরাস দ্য এলডার। এ ছাড়া চাঁদের দেবতা খনসু এবং দেবী হাথরও জায়গা করে নিয়েছেন মন্দিরে, তবে তাদের অবস্থান সম্ভবত গৌণ! 

ছবি: সুদৃশ্য ম্যূরাল 

আমরা মূল হলঘরের ডাইনের পথ ধরে চিত্রিত দেয়ালগুলো ধরে সামনে এগিয়ে যাই। এক জায়গায় ছোট্ট প্রকোষ্ঠ লোহার শিক দিয়ে ঘেরা, তবে ভেতরে দৃশ্যমান কিছু নেই। হয়তো কখনো কোনো দেবতা বা দেবী মূর্তি ছিল। সেখান থেকে বাঁ দিকে ঘুরে আরো দু-তিনটি একই ধরনের ছোট ছোট কক্ষ দেখে হলঘরের পেছন দিক থেকে ভেতরে ঢুকে পড়ি। চমৎকার আলোক বিন্যাসের কারণে সব জায়গা থেকেই পুরো ভবন, বিশাল স্তম্ভের সারি এবং বিশেষ করে দেয়ালে ও পিলারে সুক্ষ্ম সুদৃশ্য রিলিফের কাজ খুব ভালো দেখা যায়। ভবনের ভেতরটা আলোকিত থাকলেও উপরের দিকে তাকালে চোখে পড়ে পিলারের ফাঁকে গাঢ় নীল আকাশে আলো ছড়াচ্ছে সপ্তমীর চাঁদ। 

ছবি: চিত্রিত পিলার ও দেয়াল

মন্দিরের মাঝখানের অংশ দশটি সুদৃশ্য চিত্রিত স্তম্ভ দিয়ে ঘেরা একটি চত্বর। এখানে দেয়ালগুলোতে সংরক্ষিত রিলিফ এবং ম্যূরালে  সে যুগের ইতিহাস, নানা অকথিত কথা এবং দৃশ্য উৎকীর্ণ করা। রিলিফের কাজে প্রধান বিষয়বস্তু হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে দেবতাদের উদ্দেশ্যে টলেমিক সম্রাটদের নৈবেদ্য উপহার। দৃশ্য সজ্জায় সিলিংগুলোও বাদ যায়নি। স্তম্ভ শীর্ষে চোখে পড়ে ফুলের পাপড়ি কিংবা পাতার কারুকাজ এবং সিলিংয়ে উড়ন্ত শকুনির পেইন্টিং। রাজকীয় প্রবেশ পথের পাশে বাহান্ন লাইনে দীর্ঘ ইতিকথা লেখা আছে হাইরোগ্লিফিক লিপিতে। সে ভাষা পড়ে কার সাধ্য! অতএব আমরা ইতিহাসের পাঠ বাদ দিয়ে ডান দিকের দেয়ালে বাজপাখির মাথাওয়ালা হোরাস এবং বাঁ দিকের দেয়ালে কুমিরের মাথাওয়ালা সোবেকের নানা রূপ দেখে সামনে এগেয়ে যাই। এক সুন্দরী তরুণী চত্বরের মাঝখানে বর্গাকার বেদীর চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছিল। আসলে দেখছিল নাকি কোনো মন্ত্র উচ্চারণ করছিল জানি না। এইসময় মোস্তফা কোথাও থেকে তার দুই দুবাই এবং দুই মরোক্কো সঙ্গে করে এসে হাজির। একটি দেয়ালে লম্বা সারিতে উৎকীর্ণ করা ফারাও যুগের ক্যালেন্ডার দেখিয়ে সে তার ইতিবৃত্ত বর্ণনা করছিল। কিন্তু মোস্তফার আরবি উচ্চারণের ইংরেজি আর কিছুটা অতিকথনের জন্য তার বেশিরভাগ কথাই আমার মাথায় ঢোকেনি। 

ছবি: নিলোমিটার

প্রফেশনাল গাইড হলেও মোস্তফার কথায় আস্থা রাখা কঠিন। মন্দিরের বাইরে পূর্ব দিকের চত্বরে চৌবাচ্চার মতো একটি বাধানো জলাধারের কাছে দাঁড়িয়ে সে জানালো, ‘এই যে এটাই হচ্ছে ক্লিপেট্রার সুইমিংপুল। কোম-ওম্বোতে থাকাকালীন এখানেই সাঁতার কাটতেন সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা।’ সে এতোটাই নিশ্চয়তার সাথে কথাটা বলছিল যেনো ক্লিওপেট্রার জলকেলির সময় মোস্তফা স্বয়ং সেখানে উপস্থিত ছিল। তার কথিত সুইমিংপুলের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ দেখে এটাকে বড়জোর বাথটাব বলা যেতে পারে। রানাভাই বিস্তর পড়াশোনা করা মানুষ। তিনি ধরে বসলেন, ‘ক্লিওপেট্রা কি তার জীবদ্দশায় কখনো কোম-ওম্বোতে এসেছিলেন? কবে কোন রাজত্বের আমলে?’ আসলে ক্লিওপেট্রা দ্য সেভেন্থ টলেমি রাজবংশের কন্যা হয়েও কখনো তাঁর আদি পিতৃভূমিতে এসেছিলেন কিনা সে সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে জনপ্রিয় মিথ হিসাবে স্থানীয় গাইডেরা ক্লিওপেট্রার কাহিনি বলতে উৎসাহিত বোধ করে আর পর্যটকেরাও আনন্দ পান। ফলে মোস্তফার কাছে কোনো স্বদুত্তর পাবার আশা না করে আমরা মন্দিরের উত্তর পশ্চিম কোনার দিকে এগিয়ে গেলাম।     উত্তর পশ্চিম কোণে রয়েছে একটি বৃত্তাকার কুয়া যা নীল নদের জওর স্তর পরিমাপের জন্য নিলোমিটার হিসাবে ব্যবহার করা হতো। নীলের বন্যার সময় এই প্রযুক্তি প্রাচীন মিশরে ফসল উৎপাদন ও সেচ ব্যবস্থানার ক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে কাজে লাগানো হয়েছে। সে যুগে নীল নদের পানির স্তর দেখে বন্যা খরার সময় ফসলের উৎপাদন অনুমান করে কৃষকদের উপর কম বা বেশি ট্যাক্স আরোপ করা হতো। রানাভাইয়ের তথ্য থেকে বোঝা গেল নিলোমিটার সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই পড়াশোনা করে এসেছেন। কাজেই মোস্তফার বিবরণ শোনার চেয়ে কূপের চারিদিকে ঘুরে এবং ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে এর কর্মপদ্ধতি বোঝার বৃথা চেষ্টা করে কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা বাইরের পথে পা বাড়ালাম।

মন্দির চত্বরের বাইরে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় দিকের চলাচলের পথে দেয়ালেও রয়েছে মিশরীয় এবং রোমান দেবতাদের রিলিফের কাজ। এ সব কাজ ভেতরের সুক্ষ্ম ও শৈল্পিক কাজের তুলনায় অনেকটা সাদামাটা, তাছাড়া অনেক কাজই মনে হয় অসমাপ্ত। বাইরের উত্তর পশ্চিম দেয়ালে দেবতার চরণতলে হাঁটুগেড়ে বসা এক রোমক সম্রাটের অর্ঘ্য নিবেদনের স্বাভাবিক চিত্রের পাশাপাশি কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামের দৃশ্য বিস্ময় সৃষ্টি করে। এইসব দৃশ্যচিত্র থেকে খ্রিষ্ট জন্মের কয়েক শত বছর আগের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতোটা উন্নত ছিল এবং এই উৎকর্ষ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের গুরুত্ব অর্জন করেছিল তা ধারণা করা যায়। 

ছবি: কুমিরের জাদুঘরে 

 

মূল কোম ওম্বো টেম্পল থেকে বেরিয়ে যাবার মুখেই হাতের ডাইনে মিউজিয়াম অফ ক্রোকোডাইলস। পশু-পাখির চিড়িয়াখানা বা মমি করা জীবজন্তু দেখার ব্যাপারে আমার তেমন আগ্রহ নেই। তারপরেও কুমিরের জাদুঘরের কুমির তো আর যে সে কুমির নয়, কুমির দেবতা, তাও আবার আড়াই থেকে তিন হাজার বছরের পুরোনো! জাদুঘরে ঢুকতে ভিন্ন করে টিকেটও কিনতে হবে না, অতএব ঢুকেই পড়লাম ক্রোকোডাইল মিউজিয়ামে। এতোদিন পবিত্র উট এমন কি মহাপবিত্র উটের কাফেলার কখা শুনেছি। এখানে এসে প্রথমবারের মতো পবিত্র কুমিরের দর্শন পেলাম। পরম পূজনীয় কুমির দেবতা  সোবেক মানুষের মনে ভীতি এবং সম্ভ্রম ছড়ানো  অন্যসব দেবতার মতোই ফারাওদের ক্ষমতার প্রতীক। কুমিরের জাদুঘরে পাথর বা ধাতব পদার্থে তৈরি বিভিন্ন নানা আকার আকৃতির কুমিরের সমাবেশ ঘটেছে। কুমির দেবতার সমাধিতে অথবা দেবতার উদ্দেশ্যে নির্মিত মন্দিরের অলঙ্কৃত প্রস্তরফলকে সোবেকের প্রতিকৃতি এবং নিবেদনকারী ভক্ত আশেকানের নামসহ সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা খোদাই করে লেখার রীতিও চালু ছিল। কোম-ওম্বোর মন্দির এবং আশেপাশের এলাকা থেকে উদ্ধার করা শতিনেক কুমিরের মমির মধ্যে থেকে বেশ কয়েকটা এই কুমিরের মিউজিয়ামে ঠাঁই পেয়েছে। 

কুম্ভীর দর্শন শেষ করে আমরা যখন বাইরের চত্বরে এসে দাঁড়ালাম তখন আমাদের নির্ধারিত সময় শেষ, তারপরেও রানাভাইয়ের দেখা নেই। মোস্তফা তাড়া দিচ্ছিল, জাহাজ ছেড়ে যাবার নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, আমরা ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত টুইয়া অপেক্ষা করবে। অবশেষে কুমিরের জাদুঘর থেকে রানাভাই যখন বেরিয়ে এলেন তখন টি-শার্ট, স্কার্ফ এবং চিত্রিত প্যাপিরাসের বিক্রেতারা ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া’ বলে আমাদের ঘিরে ধরলো। আমরাও ‘নো ইন্ডিয়া নো ইন্ডিয়া’ বলে তার পাশ কাটিয়ে জাহাজে উঠে পড়লাম। জাহাজ ছাড়লো আরো অনেক পরে, তখন আমাদের নৈশ্যভোজের সময় হয়ে গেছে। 

 


চলবে...     

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৯

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৮

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৭

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৬

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

আজকের সেহরির শেষ সময় (ঢাকা)

0

ঘণ্টা

0

মিনিট

0

সেকেন্ড

ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেপ্তার ৫

চক্রের পাঁচজন গ্রেপ্তার। ছবি: সংগৃহীত

দুবাইয়ে বসে ‘জেট রোবোটিক’ নামে একটি অ্যাপস ও নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাহিদা অনুযায়ী রেমিট্যান্স পাঠানোর দায়িত্ব নিতেন কুমিল্লার শহিদুল ইসলাম ওরফে মামুন। ২০২০ সাল থেকে তিনি দুবাইয়ে থাকেন। গত তিন থেকে সাড়ে তিন মাসে জেট রোবোটিক অ্যাপসের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার সমমূল্যের রেমিট্যান্স ব্লক করেছেন মামুন।

তবে তিনি ঠিকই চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে টাকা পাঠিয়েছেন। এজন্য ব্যবহার করা হয়েছে চট্টগ্রামের মোবাইল ব্যাংকিং ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটসকে। প্রতিষ্ঠানটির ৪৮টি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট সিমে আগে থেকেই সমপরিমাণ বা বেশি অনলাইনে টাকা সংগ্রহ করে রাখা হয়। এরপর সংগ্রহ করা টাকা এজেন্ট সিম থেকে অ্যাপের ব্যবহার করে প্রবাসীদের আত্মীয়দের নম্বরে অর্থ পাঠিয়ে দিয়ে আসছিল সংঘবদ্ধ একটি চক্রটি বলে দাবি করেছে সিআইডি।

বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক অভিযান চালিয়ে এই চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে হুন্ডির কাজে ব্যবহৃত মুঠোফোন, সিমকার্ড ল্যাপটপ ও ২৮ লাখ ৫১ হাজার নগদ টাকা উদ্ধার করা হয় এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডি বলছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রায় এক মাস ধরে অনুসন্ধান করে এই চক্রের সন্ধান পায়। এই চক্রের কারণে রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল দেশ। অনেকের অবৈধ উপার্জনের টাকা এই চক্রের মাধ্যমে বৈধ হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে মালিবাগে নিজ কার্যালয়ে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নাসির আহমেদ (৬২), ফজলে রাব্বি সুমন (৩২), মো. কামরুজ্জামান (৩৩), খায়রুল ইসলাম (৩৪) ও জহির উদ্দিন (৩৭)। তাদের মধ্যে নাসির ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের মালিক। ফজলে রাব্বি ও মো. কামরুজ্জামান ডিস্ট্রিবিউশন হাউজে কাজ করেন। আর পরের দুজন দুবাই থেকে শহিদুলের পাঠানো প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে দিতেন।

সিআইডির প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, এই চক্র দুই ভাগে হুন্ডির কাজ পরিচালনা করে। দুবাইয়ে থাকা চক্রের সদস্যরা প্রবাসীদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। আর দেশে থাকা চক্রের সদস্যরা ওই প্রবাসীর দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনদের এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এতে প্রবাসীদের মাধ্যমে যে রেমিট্যান্স আসত, সেটা ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের কালোটাকার মালিকেরা এই চক্রের মাধ্যমে তাদের অবৈধ উপার্জন বৈধ করছেন। আর এই পুরো কাজটি পরিচালিত হতো জেট রোবোটিকস অ্যাপের মাধ্যমে।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান আরও বলেন, চক্রের সঙ্গে এমএফএস কোম্পানির চট্টগ্রামের তাসনিমা অ্যাসোসিয়েট নামের একটি ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের লোকজন জড়িত। তাদের কাছ থেকে কম লেনদেন হয় এমন এমএফএস এজেন্ট অ্যাকাউন্ট সংগ্রহ করতেন চক্রের সদস্যরা। বিনিময়ে ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের লোকজন হুন্ডির লাভের টাকার একটি ভাগ পেতেন।

সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া। ছবি: সংগৃহীত 

 

মোহাম্মদ আলী বলেন, এই চক্রের মূলহোতা শহিদুল ইসলাম ওরফে মামুন। তিনি ২০২০ সাল থেকে দুবাই বসবাস করেন। মালয়েশিয়ান একটি সফটওয়্যার কোম্পানির মাধ্যমে অ্যাপটি তৈরি করে দুবাই বসে শহিদুল হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই অ্যাপের সঙ্গে একটি এমএফএস কোম্পানির ৪১টি অ্যাকাউন্ট নম্বরের সংযোগ ছিল। গত তিন মাসে ওই ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের প্রায় ১৫০টি এজেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছে চক্রটি।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলী বলেন, একটি ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের অধীন প্রায় ১ হাজার ১০০ এজেন্ট থাকে। যেসব এজেন্ট অ্যাকাউন্টে লেনদেন কম হয়, সেই সব অ্যাকাউন্ট হুন্ডির কাজে ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে এমএফএস কোম্পানির নজরদারির ঘাটতি রয়েছে।

নতুন নতুন অ্যাপসের মাধ্যমে কৌশলে এ ধরনের ডিজিটাল হুন্ডি কার্যক্রম চলতে পারে উল্লেখ করে সিআইডি প্রধান বলেন, এ ধরনের কার্যক্রমরোধে সিআইডিসহ সব দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানকে ইন্টেলিজেন্স, মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে।

তিন মাস ধরে অস্বাভাবিক লেনদেন, রেমিট্যান্স ব্লক হলো অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক টের পেল না? তাদের তো একটা শক্তিশালী মনিটরিং সেল আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা কি-না জানতে চাইলে সিআইডিপ্রধান বলেন, ব্যর্থতা বলবো না, সার্ভিলেন্স সিস্টেমকে কতটা পেট্রলিং করছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের পেট্রলিংয়ে এটা ধরতে পেরেছি। এর দায়িত্ব শুধু সিআইডি’র নয়, ডিবি, র‌্যাব, বাংলাদেশ ব্যাংকেরও।

হুন্ডি তো আগেও হতো, এটাকে ডিজিটাল হুন্ডি বলছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ সিস্টেম আসলেই ডিজিটাল হুন্ডি। আগে ফোন করে বলে দিতো অমুকের টাকা অমুককে দিয়ে দাও। এটা ম্যানুয়াল সিস্টেমে। কিন্তু এখন এসবের দরকার নেই। ফোন বা লোকাল এজেন্ট অথবা ডিস্টিবিশন হাউজ দরকার পড়ে না। অ্যাপস যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দেবে সেভাবে নম্বরে নম্বরে টাকা চলে যায়।

দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু: বিশ্বব্যাংক

ছবি: সংগৃহীত

অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন, হাইজিন, বায়ু ও সীসা দূষণ বছরে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি অকালমৃত্যুর কারণ। এসব পরিবেশগত কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ঘরে ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা ৫৫ শতাংশ অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী এবং যা ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩২ শতাংশের সমপরিমাণ ক্ষতি করেছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ নামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সিসা দূষণ বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যুর কারণ। এর ফলে বছরে ৫.২ বিলিয়ন দিন অসুস্থতায় অতিবাহিত হয়। এসব পরিবেশগত কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির ১৭.৬ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ঘরের এবং বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা ৫৫ শতাংশ অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী এবং যা ২০১৯ সালের জিডিপির ৮.৩২ শতাংশের সমপরিমাণ।

এতে আরও বলা হয়েছে, পরিবেশদূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সিসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিকের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট। গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস এবং তা নারী ও শিশুদের বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাষ্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো এবং জরুরি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) এবং সিসা দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রতি বছর ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকাতে পারে। সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ, রান্নায় সবুজ জ্বালানি ব্যবহার এবং শিল্প-কারখানা থেকে দূষণ রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বায়ুদূষণ কমাতে পারে।

এছাড়া পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার জন্য সুশাসন জোরদার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে এই রিপোর্টে পরিবেশগত অগ্রাধিকারসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে, বিভিন্ন পদক্ষেপের মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ, পরিবেশ নীতি পদ্ধতিগুলোর বৈচিত্র্যকরণ ও জোরদারকরণ, সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদারকরণ এবং সবুজ অর্থায়নের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ এর পরিবেশকে রক্ষা করতে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ এবং ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবিলা একই সঙ্গে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার। আমরা পৃথিবীর নানা দেশে দেখেছি যে, পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করতে পারবে না। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং এই রিপোর্টের সহ-প্রণেতা আনা লুইসা গোমেজ লিমা বলেন, সময়মতো এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণের ধারা পাল্টে ফেলতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে পদক্ষেপ এবং রান্নায় সবুজ জ্বালানির জন্য বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রণোদনা, সবুজ অর্থায়ন বাড়ানো, কার্যকর কার্বন মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং সচেতনতা বাড়ানো দূষণ কমাতে পারে এবং এর ফলে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জন হতে পারে।

বরিশালে নামাজ চলাকালে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ

নামাজ চলাকালে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ। ছবি: সংগৃহীত

যোহরের নামাজ চলাকালীন বরিশালে জামে এবায়দুল্লাহ মসজিদে এসি বিস্ফোরণ হয়েছে। বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম সড়ক চকবাজার এলাকার জামে এবায়দুল্লাহ মসজিদের দ্বিতীয় তলায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে দ্রুত আগুন আনে তারা। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

মুসল্লিদের দাবি, এসি বিস্ফোরণ মধ্য দিয়ে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের কথা নিশ্চিত না করলেও এসি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী মুসল্লিরা জানিয়েছেন, বেলা দেড়টার দিকে মুসলিরা জোহরের নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর তখন মসজিদের দোতলার একটি এসি চালুর জন্য মুয়াজ্জিন বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করতেই স্পার্ক করে। পরে তিনি সেটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেন। এরপর সবাই নামাজে দাঁড়ালে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকট শব্দ হয়। পরে পাশের ইমামের কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হলে দেখা যায় সেখানে এসির কাছাকাছি আগুন জ্বলছে। তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিস ও থানায় বিষয়টি জানানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন জানান, হতাহতের ঘটনা ছাড়াই স্থানীয়দের সহযোগিতায় মুসলিরা নিরাপদে মসজিদ থেকে নামিয়ে আনা হয় এবং বরিশাল সদর ফায়ার স্টেশনের চারটি ইউনিট অল্প সময়ের চেষ্টায় আগুন নেভানো হয়। আগুনে ইমাম সাহেবের রুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে কিছু বই ও আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে গেছে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বরিশাল সদর স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার রবিউল আল আমিন জানান, মুসল্লিদের তথ্যানুযায়ী একটি এসি থেকে বিকট শব্দ হওয়ার পরপরই আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তবে এসি থেকেই আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস পাশে থাকায় ব্যস্ততম এই ব্যবসায়িক এলাকাটিতে বড় ধরনের বিপদ ঘটেনি, অল্পতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে।

রাস্তা সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে কিছুটা বেগ পেতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, চকবাজারের সব রাস্তাগুলো সব সময় চালু রাখা উচিত, কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে সেগুলো অপসারণের জন্য আমরা মসজিদ ও ব্যবসায়িক কমিটিকে অনুরোধ জানিয়েছি।

স্থানীয়রা বলছেন, চকবাজারের রাস্তা সরু হওয়ায় এখানে সব সময় যানজট লেগে থাকে, আর যেটুকু জায়গা খালি থাকে তা পার্কিং নয়তো হকরদের দখলে থাকে। এমনকি গোটা চকবাজারের ফুটপাতও দখলে রয়েছে বিভিন্ন পণ্যের পসরায়।

সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি) নাফিছুর রহমান জানান, ফায়ার সার্ভিস তাৎক্ষণিক সারা দেওয়ায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, এমনকি নামাজের সময় হওয়ায় মুসল্লিরা মসজিদের ভেতরে থাকলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ

ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেপ্তার ৫
দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু: বিশ্বব্যাংক
বরিশালে নামাজ চলাকালে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ
নওগাঁয় পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
গুলি করে মারা হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেই সাপটিকে
দুঃসময় অতিক্রম করছি, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: মির্জা ফখরুল
মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় শিক্ষক কারাগারে
বাংলাদেশ থেকে আম-কাঁঠাল-আলু নিতে চায় চীন
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় চার ইউনিটে প্রথম হলেন যারা
বাংলাদেশে আসছেন সংগীতশিল্পী আতিফ আসলাম
চট্টগ্রামে ফিশিং বোটে আগুন, দগ্ধ ৪
ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার ৪ ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯ শতাংশই ফেল
ভারত থেকে ১ হাজার ৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে শুক্রবার!
৮ বছর পর বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা
‘নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলব, এটুক অন্যায় করবোই’
প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে শরফুদ্দৌলা
পাঁচ বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ভারতীয় নাগরিককে হস্তান্তর
কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা ওয়াংচুক
শিগগিরই ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানো হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
রেলমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ