বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক

‘ওটা নাকি আমাদের দেশ নয়! আমাদের গাঁ-গঞ্জ নয়! বাপ দাদো (ঠাকুরদা) তার দাদো তার দাদো যুগযুগ ধরে বাস করে মরে ভূত হয়ে গেল, আর এখন বলছে, ও দেশ নাকি আমাদের নয়!’ ডুকরে উঠলেন হালেমা। তারপর দাঁত কামড়ে খিস্তি দিলেন, ‘ল্যাড়খেকের ব্যাটারা, বিশ্বাস না হয় তো কবর খুঁড়ে দ্যাখ গে।’

নিস্তব্ধ নদীর রাতে এক অভাগিনীর কান্না আকাশ বাতাসকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। নদীও কুলকুল করে উঠছে। নদীও তো মা। সেও তো জীবনের জন্ম দেয়। সেও তো বোঝে ভিটে ছাড়ার যন্ত্রণা। এ তো শুধু শুধু এক ভিটে ছেড়ে অন্য ভিটেই উঠে যাওয়া নয়? এক ঠিকানাহীন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেওয়া। এর শেষ কোথায় কেউ জানে না। আদৌ কোনো ভিটের ছোঁয়া মিলবে না এই নীল কালাপানির ওপর অনাহারে থেকে থেকে আল্লাহর আসমানে উঠে যেতে হবে, একমাত্র সেই আসমানের আল্লাহই জানেন। এই নীল দরিয়া থেকেই রক্ত-মাংসের খোল নিংড়ে আল্লাহর রহম করা রুহুটা হয়ত আল্লাহর ফেরেশতা ছিনিয়ে নেবেন! আরিফা গায়ে একখানা আস্ত কাঁথা, কাঁথার ওপরে একটা ময়লা চ্যাটচেটে চাদর চরিয়ে ধুঁকাতে ধুঁকাতে হালেমার কোলের কাছে এসে ঘাপুস মেরে বসল, ‘মা, আর কাঁদেন না, আমাদের কাঁদন শোনার জন্যে কেউ নেই! আল্লাহ তো কবেই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহর কাছে আমরা মানুষ নই, পোকা-মাকড়।’

‘পোকা-মাকড়েরও দেশ আছে রে মা, আমাদের যে তাও নেই!’ হাউমাউ করে উঠলেন হালেমা। তারপর থুত্থুরে হাত দিয়ে বুক থাবড়াতে থাবড়াতে জিকির তোলার মতো বলতে লাগলেন, ‘ছেলেপিলে জন্ম দেওয়াই আমার পাপ হয়েছে। আগে জানলে, সবকটাকে পেটেই শেষ করে দিতেম। এ পোড়া দেশের মুখ দেখতে দিতেম না। মাথা গোঁজার ঠাঁই যখন দিতে পারব না তখন জনম ক্যানে দেব? তারপর হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে ঠিক বুঝে নিতেম, দেশ দিতে পারবেন না তো জন্ম ক্যানে দিয়েছিলেন? মানুষ না বানিয়ে জিন-পরি ক্যানে বানাননি? গাছে ডালে, হাওয়াই হাওয়াই থাকতেম। কোনো দেশ লাগত না। ‘জ্বর গায়ে আরিফা শাশুড়ির পিঠে আলতো করে হাত দিলেন। মিনমিন করে বললেন, ‘মা, কী আর করবেন, কপালে আল্লাহ এই লিখে দিয়েছেন। নদীতে পড়ে পড়ে না খেয়ে, না নেয়ে মরব। তারপর আল্লাহর দেওয়া এই রক্ত-মাংসের দেহটা নদীর পানিতে পচে পচে পোকামাকড়ের পেটে চলে যাব।’

‘আল্লাহর দোহায়, তোমরা একটু থামবে? তোমাদের বকবকানি আর সহ্য হচ্ছে না।’ বিরক্ত হয়ে উঠল নুহু ।
‘আমি তোদের কাছে কিচ্ছু চাই নে, শুধু তোদের এই হতভাগা বাপটা যেন একটু কবরের মাটি পায়। তোরা মাটির পানে নিয়ে চল। আমিও চোখে মাটি দেখে মরতে চাই।’ বুক থাবড়াতে থাকেন হালেমা। তার জুবুথুব শরীরটা ন্যাকড়ার মতো মুচড়ে যাচ্ছে। চোখ টাটিয়ে উঠল নুহু ‘এখন কী করে জান বাঁচাব তাই ভেবেই কূল পাচ্ছি নে, আর মাটির খোঁজ করব?’ নুহু হাড়ে হাড়ে বুঝছে, হিংস্র বার্মিজ সেনাদের হাত থেকে বাঁচতে তার কলিজার জানটা কণ্ঠে এসে ধুকপুক করছে। গতরাতের জাহান্নামি দৃশ্যটার কথা মনে পড়লেই, তার রুহুটা শরীরের হাড়ে মজ্জায় কটমট করছে। মাথার ঘেলুতে আতঙ্কের সূচ পটাম পটাম করে ফুটছে। ওরা কি মানুষ? মানুষের রূপ নিয়ে এত দজ্জাল হতে পারে? কবরের আজাবের সাপের থেকেও ভয়ংকর! ওদের জানে এতটুকুও কি মায়াদয়া নেই? ইনসানের রুহু হলে তো একবারের জন্যেও হাত কাঁপবে। জান টাটাবে। আল্লাহ ওদেরকে কী দিয়ে বানিয়েছেন? পাথরকে ঠুকলেও তো কখনও কখনও জল বের হয়, কিন্তু এরা তো পাথরের থেকেও পিশাচ।

নুহু তার মা হালেমার ওপর চিড়বিড় করে উঠলেও, মনে মনে কাঁদছে। একজন মা কী আর চান? তার সন্তানের জন্যে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই আর একপেট ভাত, ব্যস। কিন্তু হালেমা তো এর কিছুই দিতে পারলেন না! কোনরকমে টেনেটুনে চলা নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও পর হয়ে গেল! ওসব এখন তার কাছে পরদেশ। ওদেশে তার কোনো অধিকার নেই। ওমাটিতে যে শেকড় পোঁতা হয়েছিল, সে শেকড়ের জড় নাকি অন্যদেশের! তাঁরা নাকি বহিরাগত! ভিনদেশের মানুষ! মুখে ঝাঁটা মারতে হয়। মনে একটা গল্প এলো আর সে গল্পটাকে ফাঁদিয়ে রাষ্ট্র করে দিলেই হল? মানুষ কি কাগজের ঠোঙা, যে হাওয়াতে উড়ে চলে এল? আল্লাহ কি আসমান থেকে নেমে এসে আদমকে বলে গেছিলেন, এই আদম তোর এই ছেলের দেশ এটা আর ওই ছেলের দেশ ওটা? আল্লাহ তো এই দুনিয়ার সবকিছুই মানুষের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। সবকিছুর মালিকই তো আল্লাহ। তাহলে মানুষ কেন খামোখা আমার আমার করে? নুহু তার বাপের হাড়জিরজিরে বুকটা ডলে দিতে দিতে মনে মনে ‘লায়লাতুল কদর’ পড়তে পড়তে আল্লাহর কাছে দোয়া মাঙছে, হে পরবরদিগার, হে রহমানের রহিম, হে মাবুদ, যতক্ষণ না কোন মাটির দেখা না পাচ্ছি ততক্ষণ তুমি আমার আব্বার জান কবজ করো না। আব্বার শেষ ইচ্ছে পূরণ না হলে যে আমরা কেউই কোনদিন ভিটেমাটি পাব না। আলি জাফর স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন, তার মৃত লাশ যদি কবরের মাটি না পায়, তাহলে তার বংশধররাও কোনোদিন বাস করার মাটি পাবে না। আজীবন ছিন্নমূল হয়েই থাকতে হবে। আর তিনি যদি কবরের মাটি পান তাহলে, তার স্বজাতিরা এই মংডুতেই দেশ ফিরে পাবে। রাখাইনই হবে তাদের দেশ। শেষ কথাটা শুনে নুহুর মন নেচে উঠেছিল। খিলি পান মুখে হালেমাও মনে মনে খিলখিল করে উঠেছিলেন।

ঘোলা চোখদুটো থির হয়ে তাকিয়ে থাকেন আলি জাফর। সেভাবে চোখে দেখতে পান না। ডানদিকের চোখটায় কবেই ঝাপসা নেমে এসেছে। আর যখন ডান দিকের চোখটাই কম দেখতে শুরু করলেন, তখন থেকেই গণ্ডগোলটা হুলুস্থুল পাকল। একেবারে কচুকাটা করে মানুষ কাটতে লাগল ওরা। একের পর এক এলাকা দখল করে নিতে থাকল। রক্তে ধুইয়ে যেতে লাগল বুথিডং, মংডুর বিভিন্ন এলাকা। ফলে চোখের ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার আর ফুরসত থাকল না। আলি জাফর স্বপ্নেও ভাবেননি যে এভাবে চোখের ছানির অন্ধকার জীবনের অন্ধকারে বদলে যাবে। জীবনের বেঁচে থাকাটাই হারাম হয়ে যাবে। নিজভূমে হয়ে যাব পরবাসী। যে বাপ-ঠাকুরদার মাটিতে এতবছর ধরে ফসল ফলিয়ে আসছি, সে মাটি নাকি আমাদের না! যে নদীতে এত্তবছর ধরে মাছ ধরে আসছি সে নদী নাকি আমাদের না! যে মাটির ফসল খেয়ে বংশের পর বংশ ভূত হয়ে গেল, যে নদীর জলে গোসুল করে জীবনের কত বেলা কেটে গেল, সেসব নাকি আমাদের না! আমরা নাকি উড়ে এসে জুড়ে বসেছি!

‘ভাই, বাঁয়ে কাত করো, কী যেন একটা শুসে আসছে!’ নদীতে কী একটা দেখে চমকে উঠল নুহু।
‘কই? কোথায় রে?’ অন্ধকারে খুঁটল দৃষ্টি হাতড়াল মতি। চোখ আরও ফেড়ে উঠল তার। নৌকোর পুব দিকের দক্ষিণ-পূর্ব কোণটা হাত দিয়ে দেখিয়ে নুহু থতমত করে বলল, ওই তো, ওই যে ওদিক থেকে ধেয়ে আসছে!’ পিঠ কুঁজো কিছু একটা দেখে মতি আন্দাজ করল, ‘কুমির মনে হয়!’ ভ্রূ কপালে তুলে নুহু চোখ ঘুলিয়ে বলল, ‘তুমি বল্লমটা পোক্ত করে ধরো। নিশানা যেন মিস না হয়।’ নুহুর কথায় মতি পরনের লুঙ্গিটা নেংটি মেরে পাটাতনের ওপর শুইয়ে রাখা সূচালো বল্লমটা দুই হাতের তালুতে এঁটে ধরল। এক পা পাটাতনের আমকাঠের তক্তায় আর এক পা বাঁশের বাতায় আঙুল খামচে, দুই পা ফাঁক করে চোখ ফেড়ে দাঁড়ালো নুহু। যেন অন্ধকার নদীর বুকে এক বীর কালবাওস ছো মেরে দাঁড়িয়ে আছে! যেন কুমিরটাকে এক কোপে ফেড়ে ফেলবে! নৌকোটা ধিরধির করে এগোতে থাকল। নৌকোটা যেদিকে যাচ্ছে সেদিক থেকেই জিনিসটা ধেয়ে আসছে। নুহু তার ধুকধুক করতে থাকা বাপটার গায়ে আচ্ছা করে কাঁথা মুড়ে দিয়ে, লম্বা পাশনিটা হাতের মুঠোয় জাব্দা করে ধরেছে। নুহু দুই হাঁটু মুড়ে, পেটটাকে হাঁটুতে ঠেকা দিয়ে নৌকোর খোলে ঘাপটি মেরে ফিসফিস করে বলতে থাকল, ‘মা, তোমরা সব টাপার ভেতরে লুকিয়ে পড়ো। কেউ বাইরে বের হবে না।’

‘আর বেঁচে থেকেই বা কী করব? আজ না হয় কাল, ঠিক মরতে হবেই। হয় শয়তানদের হাতে না হয় কুমিরের পেটে।’ বিড়বিড় করে উঠলেন হালেমা। ‘মা ভেতরে চলো তো’ বলেই আরিফা খিটমিট করতে থাকা শাশুড়িটাকে টাপার ভেতরে টেনে ঢোকাল। হালেমার কি আর দেহের সে বল আছে যে ছেলের বৌর ঠেলাকে অগ্রাহ্য করেন? আঠাত্তর বছরের মাজাভাঙা শরীরটা ধনুকের ছিলার মতো বেঁকে কবেই পড়ে গেছে। গালে চহলে বাবলা ছালের ভাঁজ। হাড়ের গাঁটে গাঁটে বাতের ব্যামু। কনকনে যন্ত্রণাটা টনটন করে উঠলে, হালেমা ছিনবিন করে বলে ওঠেন, এই দেখো, আজরাইল এবার হাড়ে বাড়ি দিতে শুরু করেছে। যাওয়ার সময় এল বলে! হালেমা যুবতী বয়সে ‘দেখনাওয়ালি’ ছিলেন। তার গা-গতর থেকে জ্যোৎস্নার মতো রূপ ঝরে ঝরে পড়ত। হলুদবাটা গায়ের রঙ। টিকালো নাক। ফালি চোখ। চেরি ফলের মতো ঠোঁটের রঙ। মাথায় খোঁপা ভরা চুল। সবাই ঠাট্টা করত, তোর মাথায় তো এক পেছে চুল রে! কোমর ছিল ঢেঁকির মতন। খুউব অল্প বয়সেই বুকের কলিগুলো দোপ হয়ে উঠেছিল। সৌন্দর্যের সব রূপকে মিলিয়ে উচ্চতাও ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট। বিহঙ্গের মতো এদিক ওদিক উড়ে বেড়াতে বেড়াতে হুট করে আলি জাফরের হাতে ধরা দিলেন একদিন। জাফর ছিলেন তাদের বাড়ির কিষেন। গরুর লেজ আর লাঙলের ঈশ ধরে তার দিন যেত।

নৌকোর খোল থেকে ফুঁসছে নুহু। সে একেবারে পাশনির কোপ মারার জন্যে ডান হাতটাকে ওপরে তুলে খাড়া করে ধরে আছে। এই মারল বলে! তার ভেতর রাগে কটমট করছে। আবার একটা ভয়ও দানা বাঁধছে। ভয় তো একটা হবেই, কুমির বলে কথা। যদিও সে কতদিন ধারালো চাকু দিয়ে কুরবানির পশু জবেহ করেছে। ছুরি দিয়ে সে পশুর গায়ের চামড়া ছিলেছে। দা দিয়ে চিড়েছে হাড়। তবুও একটা ভয় তার শরীরে দলা পাকিয়ে উঠছে। আসলে একটা জানের ভয় যখন একটা মনকে ভেঙে তচনচ করে দেয়, তখন অন্য চুটকে পুটকে ভয়ও যেন দানব হয়ে ওঠে। বিষ না থাকলেও গোখরোর মতো ছোবল মারে। নুহুদের এখন সেই হাল। ডাঙ্গার বার্মিজ সেনাদের ভয়, জলের তলে এসেও যেন কামড় বসাচ্ছে।

‘থামো, আমিও আসছি’ বলেই হাতে হাঁসুয়াটা নিয়ে তেড়ে এল আরিফা। মতি চোখ উল্টে ধমকে উঠল, ‘তুমি আবার কোথায় আসছ? মেয়ে মানুষে মদ্দানি? একদম টাপার ভেতর থেকে বের হবে না।’ জলের দিকে সতর্ক দৃষ্টির খেজাল ফেলে বিড়বিড় করে উঠল মতি, ‘কুমিরের ঠাপ তো কোনদিন খাওনি। একবার হাঁ করলেই, বাপ চোদ্দ গোষ্ঠীর নাম ভুলিয়ে দেবে। ঘাপটি মেরে বসে থাকো।’ পারলে বৌটার চুলের মুটি ধরে আড়ালে বসিয়ে দেয় মতি।

‘ভাবি, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এ কি আলু-পটল পেয়েছ নাকি? ব্যাটা ছেলের কাজ ব্যাটা ছেলেকে করতে দাও।’ নৌকোর খোল থেকে খিচখিচ করে উঠল নুহু। কোনা কথায় গা করল না আরিফা। ধারালো হাঁসুয়াটা নিয়ে মরদটার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ভাবল, আর লুকিয়ে থেকেই বা কী লাভ। মরতে যখন বসেছি, হয় একসাথে মরব, আর না হয়, একসাথে বাঁচব। নাহ, আর হাতে চুরি বালা পরে বসে থাকব না। যে হামলা করতেই আসুক, সে বার্মিজ সেনাই হোক আর জলের কুমিরই হোক, জানপ্রাণ দিয়ে কোপাব। হয় মরব না হয় মারব। দাঁত খিটমিট করল আরিফা। তার চোখ আগুন হয়ে হলকাচ্ছে। আঁচলটাকে কোমরে ঠেসে গুঁজল। মাথার কুচকুচে কালো গোছা চুল ঘাড়ে ছেড়ে পিঠে থোকা হয়ে ঝুলল। এ কোন আরিফা! কড়াই-কুন্তির নিরীহ আরিফা যেন কোন গ্রিস-রোমান যুদ্ধের রনংদেহি দেবী। মতি বিড়বিড় করলেও এই মুহূর্তে আর কথা বাড়াল না। এখন বৌর সাথে যেচে ঝগড়া করার সময় নয়। আগে ফাড়াটা কাটুক পরে বৌকে দু গাদন দেওয়া যাবে। সে বল্লমটাকে একেবারে নিখুঁত তাক করে গায়ের বল ঠেলল। পিঠ কুঁজো জিনিসটা একেবারে নৌকোর কাণার কাছে চলে আসছে! নুহু সতর্ক করল, ‘সাবধানে বড়ভাই, পা ফসকে যেন না যায়!’

‘আমি আছি তো, তুমি একদম চিন্তা করো না।’ আঁচলের কানা কোমরে গুঁজল আরিফা। স্বামী দেওরকে অভয় দিল। মনে মনে বলল, কোপ দিতে পারলেই হল। কোপে কি আর ব্যাটাছেলে বিটিছেলে আছে?

চলবে...

আগের পর্ব পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

আরএ/

আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি

হিট অ্যালার্ট জারি। ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে চলমান তাপমাত্রার পারদে উঠতি গতার খুব একটা হেরফের না হওয়ায় এখনও অস্বস্তি কমেনি। মাথার ওপর গনগনে সূর্যকে সঙ্গী করেই প্রচণ্ড দাবদাহে নাজেহাল পরিস্থিতি পার করছে মানুষ। যদিও কয়েকদিনের তুলনায় কিছুটা বাতাসের উপস্থিতি থাকলেও পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান এ তথ্য জানান।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, আমরা এর আগে তিন দিনের যে হিট অ্যালার্ট জারি করেছিলাম তার মেয়াদ আজ শেষ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) থেকে আরও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করা হবে। কারণ, আপাতত বড় পরিসরে বৃষ্টি হয়ে তাপপ্রবাহ দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা হিট অ্যালার্ট জারি করে সরকারকে জানিয়ে দিই। সরকার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্টরা তাদের করণীয় যা সেটা করবে।

তিনি বলেন, সারাদেশের তাপমাত্রা গতকালের থেকে আজ কিছুটা বেড়েছে। চলতি এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ পুরোপুরি দূর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা দেখছি যে এটা মে মাসের ২ থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এরপর হয়তো বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এর আগে পর্যন্ত বড় পরিসরে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। স্থানীয়ভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে।

মো. আজিজুর রহমান বলেন, আপাতত দিনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তাপমাত্রা আর খুব বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় দেওয়া পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিবিরাজ করতে পারে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প আসছে বাংলাদেশের পর্দায়

ডকুফিল্ম ‘মুচাচোস’ এর পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের কাছে হেরে অঘটন দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল আলবিসেলেস্তারা। তবে শেষমেশ লিওনেল মেসির হাতেই ওঠে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি, এমন বিশ্ব আসরকে সেরা বলতে বাধ্য যে কেউ।

অবিস্মরণীয় এই বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ নিয়ে এরইমধ্যে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু ডকুফিল্ম। যার মধ্যে আলোচিত একটি স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত ডকুফিল্ম ‘মুচাচোস’।

স্প্যানিশ পরিচালক জেসাস ব্র্যাসেরাস নির্মাণ করেছেন ১০০ মিনিটের এই ডকুফিল্ম। গত ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনায় মুক্তি পাওয়া ‘মুচাচোস’ সেখানকার দর্শকদের মধ্যে দারুণ সাড়া তুলেছিল।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্টার সিনেপ্লেক্স জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার ‘মুচাচোস’ মুক্তি পাবে এই মাল্টিপ্লেক্সের সবগুলো শাখায়।

বাংলাদেশে ডকুফিল্মটি মুক্তি নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার বিপুলসংখ্যক সমর্থক রয়েছে। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার খেলা উপভোগ করেছে কোটি মানুষ। বিশ্বকাপ জয়ের পর ঢাকাসহ সারাদেশ উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের সমর্থকদের উন্মাদনা দেখে রীতিমত অবাক হয়েছেন আর্জেন্টিনার মানুষও।

“লিওনেল মেসির হাত ধরে বিশ্বকাপ জয়ের এই মুহূর্ত নিয়ে ভক্তদের উৎসাহ ফুরাবে না সহজে। এই ভক্ত-সমর্থকদের জন্যই ‘মুচাচোস’ নিয়ে এসেছি আমরা। আশা করি এই ছবি দেখাটা চমৎকার একটা ব্যাপার হবে দর্শকদের জন্য।’’

‘মুচাচোস’এ অভিনয় করেছেন জেসুস ব্র্যাসেরাস, বসসি অগাস্টিন বসি, হার্নান ক্যাসশিয়ারি, ম্যাক্সিমিলিয়ানো লাসানস্কিসহ আরও অনেকে।

শরীয়তপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ৫

হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তি। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের জাজিরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে দফায় দফায় উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের সারেংকান্দি এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়।

আহতরা হলেন- শাহাবুদ্দিন সারেং (৩০), মো. আরশাদুল (১১), সৈকত সরদার (১৯), হাজেরা বেগম (৭৫) ও আকাশ হাওলাদার (২৮)।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী এবং তার নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আব্দুল জলিল মাদবরের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গত ২৭ মার্চ দুপক্ষের সংঘর্ষে বোমার আঘাতে সজীব মুন্সী নামের এক যুবক গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সেই ঘটনার সূত্র ধরে আজ আবারও দুপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ায়। সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এসময় তারা সারেংকান্দি এলাকায় ফসলি জমিতে নেমে একে–অপরকে লক্ষ্য করে হাতবোমা (ককটেল) ছুঁড়তে থাকে। ককটেলের মুহুর্মুহু শব্দে ভারী হয়ে উঠে আশপাশ। এই ঘটনায় শাহাবুদ্দিন, আরশাদুল, সৈকত, আকাশ ও হাজেরা নামে ৫ জন গুরুতর আহত হয়। পরে তাঁদের উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহাবুদ্দিন, আরশাদুল, সৈকত ও আকাশকে ঢাকায় পাঠান। এছাড়া দুপক্ষের বেশকিছু বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আব্দুল জলিল মাদবর অভিযোগ করে বলেন, ‘কুদ্দুস বেপারীর লোকজন গতকাল মঙ্গলবার আমাকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে বলেন, ‘‘বাবার জন্মে হয়ে থাকলে সবার সামনে গিয়ে মারামারি করিস। পোলাপান সামনে দিয়ে মারামারি করিস না। আগামীকাল সকালে শুরু হবে।’’ এ বিষয়ে আমি পুলিশকে জানিয়েছি। পরে আজ কুদ্দুস বেপারীর লোকজন আমার লোকজনের বাড়িঘর ভাংচুর করে ও আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়।’

তবে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুস বেপারী বলেন, ‘জলিল মাদবর মারামারি করার জন্য কয়েক গ্রাম থেকে লোকজন এনে আমার লোকজনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আমার একজন লোক মুমূর্ষু অবস্থায় আছে।’

এ বিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক বছর যাবত বিলাসপুর ইউনিয়নে দুইটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব, হামলা-মামলা চলছে। তারই জেরে আজ দুই পক্ষ সংঘর্ষে জরায়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষ থামাতে চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা পৌঁছানোর আগেই দুপক্ষের অন্তত চারজন লোক আহত হয়। তারা বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। যারা এসব ঘটিয়েছে তাদের আটকের চেষ্টা চলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ সংবাদ

আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প আসছে বাংলাদেশের পর্দায়
শরীয়তপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ৫
মুক্তি পেল ইমতু রাতিশ ও অলংকার এর 'বরিশাইল্লা সং'
জরুরি সাংগঠনিক নির্দেশনা দিলো ছাত্রলীগ
সাহিত্য চর্চার আড়ালে শিশু পর্নোগ্রাফি বানাতেন টিপু কিবরিয়া
সাজেকে শ্রমিকবাহী ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ৬
ধাওয়া খেয়ে গরু ও গাড়ি রেখে পালালো চোর, গাড়িতে আগুন দিল জনতা
আর্জেন্টাইন ফুটবলার কার্লোস তেভেজ হাসপাতালে ভর্তি
সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এফডিসিতে মানববন্ধন
রাজবাড়ীতে হিটস্ট্রোকে স্কু‌লশিক্ষকের মৃত্যু
প্রসূতির পেটে গজ ও ফুল রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন
তাপদাহ কমে গেলে লোডশেডিং থাকবে না: বিদ্যুৎ সচিব
ইন্টারনেট ছাড়াই হোয়াটসঅ্যাপে ছবি-ভিডিও পাঠাবেন যেভাবে
ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশি নারী বক্সার জিন্নাত ফেরদৌস
নিজে না মেরেও সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন রিয়াজ
নারী কর্মীদের বোরকা ও নেকাব পরা নিষিদ্ধ করল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল
ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
কালশী উড়ালসেতুর নাম বদলে হলো শেখ তামিম মহাসড়ক
ক্যান্সারে না ফেরার দেশে পেপার রাইম ব্যান্ডের সাদ