বিমান প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ: শেখ হাসিনাকে দুদকে তলব

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে আগামী বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এই বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলামের সই করা চিঠি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির সুধাসদন এবং গোপালগঞ্জের পারিবারিক ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, সামরিক উপদেষ্টা, সচিব ও বেসরকারি ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ বছরে বিমানবন্দর উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলো মূলত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা), শাহ আমানত বিমানবন্দর (চট্টগ্রাম) এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (সিলেট)-কে ঘিরে ছিল।
একই অভিযোগে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এবং সাবেক সচিব মোকাম্মেল হোসেনকেও একই দিন দুদকে হাজির হওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি দুদক এসব অভিযোগের ভিত্তিতে চারটি পৃথক মামলা দায়ের করে। মামলাগুলোর আসামির তালিকায় আছেন সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান এবং বিমান মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মুহিবুল হকসহ মোট ১৯ জন।
দুদকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “শেখ হাসিনা যদি জিজ্ঞাসাবাদে উপস্থিত না হন, তবে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারাবেন। মামলার বিচারিক কার্যক্রম তখন তার অনুপস্থিতিতেই এগিয়ে যাবে।”
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে। এরপর থেকেই তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে অবস্থান করছেন। তার দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার হলেও অনেকে এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার সরকারের সময় চালানো দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে একটি ‘কূটনৈতিক পত্র’ পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত ভারত সরকার এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এরপর চলতি বছরের ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক বৈঠকে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেন।
এমনকি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেন, “শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে—তা তিনি দেশে থাকুন বা বিদেশে। তার অনুপস্থিতিতেও বিচার চলবে।”
