গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশন

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে গুম হওয়া নাগরিকদের একাংশকে অবৈধভাবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হতো—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে গুম কমিশনের দ্বিতীয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত পেরিয়ে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে একটি ‘আন্তঃরাষ্ট্রীয় গুমপ্রক্রিয়া’ গড়ে উঠেছিল, যেখানে চাহিদা ও প্রয়োজনে একে অপরকে গুম হওয়া ব্যক্তি হস্তান্তর করত।
গত ৪ জুন গঠিত কমিশন এই প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। প্রতিবেদনে পাঁচজন ভুক্তভোগীর জবানবন্দি তুলে ধরা হয়েছে, যারা গুমের পর ভারতের অভ্যন্তরে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে গুম করে কিছু নাগরিককে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একইভাবে, ভারত থেকে কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে আবার জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করা হয়েছে। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে কোনো আইনি অনুমতি, আদালতের নির্দেশ বা মামলার নথি ছিল না, ফলে পুরো প্রক্রিয়া একেবারে বিচারবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে একটি ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়, একজন ভুক্তভোগীকে চোখ বেঁধে ভারতের গাড়িতে করে সীমান্ত পার করানো হয়। পরে বাংলাদেশে ফেরত এনে তাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই ভুক্তভোগী বলেন, “আমাকে বলা হয়— ‘তুমি মরো, তুমি বাঁচো, আমরা ঠিক করব।’”
একজন অন্য ভুক্তভোগীকে ভারতের একটি এলাকায় নিয়ে গিয়ে ভারতীয় মুসলমানদের বিষয়ে ভিডিও কনটেন্ট তৈরির অভিযোগে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে আবার বাংলাদেশে এনে র্যাবের হেফাজতে রাখা হয়।
কমিশন জানায়, এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে মৌখিক সমঝোতা থাকলেও কোনো লিখিত চুক্তি বা আইনি কাঠামো নেই। ফলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবাররা কোনো ধরনের আইনি প্রতিকার তো দূরের কথা, তাদের খোঁজও পান না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গুম ও বিচারবহির্ভূত হস্তান্তর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের চরম লঙ্ঘন। এতে নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতা, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ও আইনি নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় গুম কার্যক্রমের যথাযথ তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে কমিশন সুপারিশ করেছে। তবে ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক তদন্ত ও জাতিসংঘ পর্যায়ে বিষয়টি উত্থাপনের দাবি উঠেছে।
