শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dhaka Prokash

বিশেষ নিবন্ধ

ক্ষতিপূরণ আদায়ে টর্ট আইনের গুরুত্ব অপরিসীম

আমাদের দেশে টর্ট আইনের যথেষ্ট ব্যবহার ও প্রয়োগ না থাকায় অনেকেই টর্ট এবং টর্ট আইনের সঙ্গে পরিচিত নন। অথচ আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এমন গুরুত্বপূর্ণ আইনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম এবং তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

লাতিন শব্দ Tortum থেকে Tort শব্দটি এসেছে–যার অর্থ বাঁকা বা সোজা পথে না চলে বাঁকা পথে চলা। যদিও বাংলা ভাষায় Tort-এর কোনো উপযুক্ত আইনি প্রতিশব্দ ব্যবহার হতে দেখা যায় না। সাধারণত টর্টকে দেওয়ানি ক্ষতি বা নিমচুক্তি কিংবা কখনো ব্যক্তিগত অপকার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। সাধারণ অর্থে টর্ট বলতে বোঝায়, কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান। টর্টের কোনো বিধিবদ্ধ আইন নেই। তথাপি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এ আইনের প্রয়োগ এবং বিস্তার অনেক বেশি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে টর্ট আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ আইনটির যথাযথ ও সুষ্ঠু প্রয়োগ ঘটালে একদিকে যেমন দেশ থেকে অনেক অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব, তেমনি অপরদিকে এই আইনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে সত্যিকারের আইনি প্রতিকার দেওয়াও সম্ভব। তবে এই ক্ষতিপূরণের কোনো নির্দিষ্টতা নেই।

বাংলাদেশে অন্যান্য বিধিবদ্ধ আইনের মতো টর্ট আইন বিধিবদ্ধ নয়। এখানে প্রযোজ্য টর্ট আইন ইংল্যান্ডের সাধারণ আইন অনুসারে গঠিত। টর্টের মামলা বিচারের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও যুক্তিসঙ্গত কারণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। এ দেশে টর্টের যে দু-চারটি মামলা হয়ে থাকে, তা মূলত Defamation বা মানহানি কেন্দ্রিক। টর্টের অন্যান্য বিষয় যেমন-দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, উৎপাত, গণউৎপাত বা Public nuisance, অনধিকার প্রবেশ ইত্যাদি বিষয়ক মামলা আদালতে যেন অজ্ঞাত কারণে দায়ের হতে দেখা যায় না। ফলে আইনের এই গুরুত্বপূর্ণ শাখাটি আমাদের দেশের আইন অঙ্গনে উপেক্ষিত থাকায় এর প্রয়োগ ও প্রতিকার সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। এ দেশের বেশির ভাগ জনগণই জানেন না যে, শারীরিক আঘাতের জন্য দোষী ব্যক্তি কারাবরণের পাশাপাশি বাদির (ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি) চিকিৎসার খরচসহ অন্যান্য ক্ষতির দায়স্বরূপ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। দোষী ব্যক্তিকে জেল বা অর্থদন্ড দিয়ে থাকে আদালত তথা রাষ্ট্র। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাদী কোনো সুবিধা পান না। কিন্তু টর্ট আইনের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তির কাজের জন্য বাদী ব্যক্তিগতভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হন, তা পুষিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। এতে বাদী নিজের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে আইনি প্রতিকার পেয়ে থাকেন।

একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা যেতে পারে। মনে করা যাক, কোনো এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির হাত বা পা কেটে ফেললো বা ভেঙ্গে দিলো। এ ক্ষেত্রে যদি দোষী ব্যক্তিকে আদালত কর্তৃক অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি অনুয়ায়ী আইন মোতাবেক নির্দিষ্ট মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তাহলে এতে বাদীর বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির তেমন কিছু আসে-যায় না। তার চিকিৎসা খরচ ও হাত-পা কাটা বা ভেঙে ফেলার কারণে তিনি যে কতদিন কাজ করতে পারলেন না এবং তার আনুষঙ্গিক ক্ষতির জন্য কেবল টর্টে মামলা করার মাধ্যমেই ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব। টর্টে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকারের বিধান রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে আর্থিক জরিমানাই বেশি দেওয়া হয়ে থাকে। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা (Injunction) জারি বা সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। আধুনিক বিশ্বে টর্ট আইনের মাধ্যমে মানসিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও চালু আছে।

আমাদের দেশে টর্ট আইনের প্রয়োজনীয়তা কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, এ দেশে প্রতিনিয়ত আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে। যেমন–মানুষের জীবন রক্ষাকারী ঔষধ ও খাদ্য-দ্রব্যে ভেজাল মেশানেো; হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হওয়া; ভুল চিকিৎসায় রোগীর জীবন কেড়ে নেওয়া বা জীবন বিপন্ন করে তোলা; বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মসূচির কারণে জনগণের ক্ষতি সাধিত হওয়া, বিশেষ করে রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ করার ফলে জনগণের ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হওয়া; মক্কেলের সঙ্গে আইনজীবীর অসদাচারণ; অকারণে মানুষকে হেনস্তা বা হয়রানি করা, বিশেষ করে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক); বিনা বিচারে আটক রাখা; একই নামের ভুল ব্যক্তিকে আটক করা ও কারাগারে পাঠানো; অকারণে জেল খাটানো; ডাক বিভাগের পিয়ন কর্তৃক প্রাপকের ঠিকানায় চিঠিপত্র সময়মতো না পৌঁছানো; চালকের অসাবধানতার জন্য প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটা; মালিকের অবহেলাজনিত কারণে শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা, যেমন–সাভারের রানা প্লাজার ঘটনা; পণ্য কিনে প্রতারিত হওয়া ইত্যাদির ন্যায় নানা অন্যায়-অপরাধ, ঘটনা-দুর্ঘটনাসমূহ আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে।

টর্ট আইনের ব্যাপক প্রয়োগ থাকলে উক্ত আইনের মাধ্যমে এসব ঘটনা-দুর্ঘটনা ও অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। যেমন–খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান টর্টের মাধ্যমে সফলতা আনা সম্ভব। খাদ্য মানুষের প্রথম ও প্রধান মৌলিক চাহিদা। তাই খাদ্যের ব্যাপারে মানুষ সর্বদাই সতর্ক ও সচেষ্ট থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে জনগণের তথা ক্রেতার বিশ্বাসকে ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বা বিক্রেতা অধিক মুনাফার লোভে প্রতিনিয়ত খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। শুধু খাদ্যে ভেজাল নয়, প্রায় সময়ই আমরা পত্রিকায় চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে রোগী মারা যাওয়া বা রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার খবর পড়ে থাকি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পক্ষে কেউ পূর্ব থেকে চিকিৎসক বা হাসপাতালের সঙ্গে করে রাখা একটি চুক্তির জন্য কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন না। কিংবা নেওয়ার সাহস করেন কিংবা এ ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না। অথচ এ ক্ষেত্রে যদি ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলার বিষয়টি প্রমাণ করা যায়, তাহলে সহজেই ভুক্তভোগী রোগী বা রোগীর পরিবার কিছুটা হলেও সহায়তা পেতে পারেন। আমাদের দেশের সড়ক মহাসড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা দুর্ঘটনা যেন ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতিনিয়ত অসখ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও প্রতিটি দুর্ঘটনার পর দোষী ব্যক্তিরা যেন ‘দাদা ভাই’ বা ‘গড ফাদার’-এর ন্যায় পর্দার অন্তরালেই থেকে যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে যদি টর্ট আইনে মামলা (অসাবধানতার জন্য ক্ষতি হলে) হতো, তাহলে দোষী ব্যক্তিদের বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। তাই জনগণের উচিৎ হবে, এ ধরণের ঘটনার ক্ষেত্রে আদালতে গিয়ে টর্ট আইনের অধীনে মামলা করা। আর এ জাতীয় মামলা সরকারের পক্ষ থেকে নয়; বরং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকেই করতে হবে। এসব ঘটনায় মামলা না হওয়ার কারণে দোষী ব্যক্তিরা বারবার রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে টর্টের মামলা করলে অসাধু ব্যবসায়ী বা দায়িত্বে অবহেলাকারী চিকিৎসক কিংবা অসতর্ক গাড়ি চালক কেউ তাদের দায় এড়াতে পারবে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আইনের উপযুক্ত ও যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিকার ও সুফল পেতে পারেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, একবার কেউ ফৌজদারী অপরাধের জন্য জেল খাটলে, জরিমানা দিলে এবং এসবের পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিলে সে আর দ্বিতীয়বার ওই ধরনের অন্যায়-অপরাধ করতে চাইবে না। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলাসমূহের বেলায় আদালত কর্তৃক দায়ী ব্যক্তির কৃত অপরাধের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার রেওয়াজ প্রবল মাত্রায় বাড়ালে এবং অপরাধের সাথে জড়িত কাউকে কোনোভাবেই ছাড় না দিলে দেশ থেকে এ ধরনের অপরাধসমূহ সহজেই হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে, অসাবধানতার জন্য ক্ষতি হলে অবৈধ মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হলো সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ উপার্জনের বর্তমান মূল্য বা ডিসকাউন্টেড ভ্যালু অব ফিউচার ফ্লো অব আর্নিংস পদ্ধতি। এ পদ্ধতি অনুসারে, মৃত ব্যক্তি বেঁচে থাকলে বাকি কর্মক্ষম জীবনে তিনি যে আয় করতে পারতেন, তার বর্তমান বাজার মূল্যই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ডিসকাউন্টিং পদ্ধতিতে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ মূলত: তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তা হচ্ছে; মৃত ব্যক্তির বয়স, তাঁর ভবিষ্যৎ উপার্জনের ক্ষমতা এবং সুদের হার বা ডিসকাউন্ট রেট। মৃত ব্যক্তির বয়স অল্প হলে তাঁদের বেশি দিন বেঁচে থাকার এবং উপার্জন করার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতার ওপর আয় ক্ষমতা নির্ভর করে। সুদের হার বেশি হলে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ আয়ের বর্তমান মূল্য কম হবে। সুদের হার কম হলে ভবিষ্যৎ আয়ের বর্তমান মূল্য বেশি হবে। সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে বা তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকান্ডেরে পর নিহত শ্রমিকদের জন্য ডিসকাউন্টিং পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ নিরূপণের হিসাব করলে তার সার্বিক যোগফল কত হবে তা কি সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টস মালিকপক্ষ একবারও ভেবে দেখেছেন? এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদেরই এ বিষয়ে মামলা করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এ সকল ক্ষেত্রে না ক্ষতিগ্রস্ত, না সরকার কোনো পক্ষকেই এই আইনের আশ্রয় নিতে দেখা যায়নি।

আমাদের মতো একটি দেশে যেখানে প্রতিনিয়ত-প্রতি মুহুর্তে-প্রতিদিন আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে নানাভাবে; যেখানে সাধারণ মানুষ নিত্য হেনস্তা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন; যেখানে প্রতারণা প্রবলমাত্রায় বিরাজমান, সেখানে টর্টের মতো কার্যকর একটি আইন কেন যে আজও উপেক্ষিত রয়েছে তা বোধগম্য নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, টর্ট আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ হলে তা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ধরণ পাল্টে দিতে পারে। টর্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সাধারণ মানুষের আইনি অধিকার। পাশাপাশি এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটলে সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা উল্লেখযোগ্যহারে কমে যাবে।

সর্বোপরি দেশের সব মানুষকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে টর্ট আইন এক অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং টর্ট আইনের প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখেই এই আইনটির ব্যাপক প্রচার দরকার। সেইসঙ্গে এর সুষ্ঠু প্রয়োগ ও ব্যবহারের লক্ষ্যে সাধারণ জনগণ, বিভিন্ন গণমাধ্যম, সরকার, আইন সংশ্লিষ্টসহ সবাই একযোগে এগিয়ে এসে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশে টর্ট আইনের গণ্ডি কেবল মানহানির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তা মানুষের নানামুখী প্রয়োজনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে পারবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
kekbabu@yahoo.com

এসএ/

Header Ad

মসজিদে ভোজের আয়োজন করলেন ডিআইজি বাতেন, ইসিতে অভিযোগ

অভিযুক্ত মো. আব্দুল বাতেনের আয়োজনে মসজিদে ভোজ। ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জে গিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে রংপুর রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাইদুর রহমান।

শুক্রবার (১৭ মে) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হোসাইন মুহাম্মদ আল–মুজাহিদের কাছে এই অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমানের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও তার ছেলে আরিফুর রহমান ঝিনুক সশরীরে গিয়ে অভিযোগ জমা দেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধি ২০১৬–এর ধারা ২২ (১) অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন–পূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণা বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ ছাড়া ধারা ২০ অনুযায়ী কোনো প্রার্থী মসজিদ বা কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না। কিন্তু রংপুর রেঞ্জ পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. আব্দুল বাতেন এসব বিধি লঙ্ঘন করেছেন। তিনি উপজেলার দাতিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং মধ্যনগর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. আব্দুর রাজ্জাক ভূঁইয়ার ছোট ভাই।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন গ্রামের বাড়িতে এসে পারিবারিক মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং নামাজ শেষে উপজেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বাসিন্দাদের নিয়ে মসজিদের ভেতরেই মধ্যাহ্নভোজ করেন।

এ সময় আব্দুল বাতেনের বড় ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন। বাতেন আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মধ্যনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতীশ দর্শী চাকমাকে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ করেননি।

তবে তার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুদ্দোহা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমানের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও তার ছেলে ঝিনুক একটি অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা রিসিভ করে রেখেছি। স্যার একটু অন্য একটি কাজে ব্যস্ত।

এ বিষয়ে সাইদুর রহমানের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আরিফুর রহমান ঝিনুক বলেন, আমরা চাই প্রভাবমুক্ত, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাই একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন অবস্থায় ওনার স্বজনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমরা আশা করব, রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রভাবমুক্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ ব্যাপারে মধ্যনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, লিখিত বা মৌখিকভাবে বিষয়টি আমাকে এখনও কেউ জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে রংপুর রেঞ্জ পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন বলেন, আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাড়িতে এসেছি। মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ ছাড়া বাড়ির বাইরে যাইনি। মসজিদে মিলাদ শেষে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে সবার সঙ্গে খেয়েছি। বাড়িতে এলে অনেকেই দেখা করতে আসে। আমি নির্বাচনী কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিনি।

ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আগুন নিয়ন্ত্রণে

ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আগুন নিয়ন্ত্রণে। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের সোয়া এক ঘণ্টার বেশি সময় চেষ্টায় শনিবার (১৮ মে) বেলা ১১টা ৫৭ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এর আগে শনিবার সকাল পৌনে ১১টায় খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, চারতলা ভবনটির দ্বিতীয় তলায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শাখায় আগুন লাগে।

সূত্রাপুর ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের পাঁচটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। কোনো হতাহতেরও খবর পাওয়া যায়নি।

টাঙ্গাইলে ধান কাটতে এসে বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন দুই ভাই

বজ্রপাতে নিহত দুই ভাই। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে মাঠে ধান কাটতে এসে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৮ মে) সকাল ৯ টার দিকে উপজেলার বীর বাসিন্দা ইউনিয়নের নোয়াবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- আফজাল হোসেন ও আমির হোসেন। তারা রংপুর জেলার উপজেলার চকদফরপুর গ্রামের বাসিন্দা। তারা সম্পর্কে আপন খালাতো ভাই।

স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার আউলিয়াবাদ বাজারে ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে থেকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটার কাজ করতো। শনিবার (১৮ মে) ভোরে বীরবাসিন্দা ইউনিয়নের নোয়াবাড়ী গ্রামের হযরত আলীর ধান ক্ষেতে তারা ৬ জন শ্রমিক ধান কাটছিল। এসময় বৃষ্টি শুরু হলে ধান ক্ষেত থেকে দৌড়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় আফজাল ও আমীরের ওপর বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে তাদের মৃত্যু হয়।

বীরবাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন জানান, সকালে কয়েকজন শ্রমিক হযরত আলীর ক্ষেতে ধান কাটতে যান। এসময় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি সাথে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরো চারজন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

কালিহাতী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজীব জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহাদাত হুসাইন জানান, ওই দুই শ্রমিকের মৃত্যুর খবর জেনেছি। তাদের আর্থিক সহযোগিতা করাসহ মরদেহ স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ সংবাদ

মসজিদে ভোজের আয়োজন করলেন ডিআইজি বাতেন, ইসিতে অভিযোগ
ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আগুন নিয়ন্ত্রণে
টাঙ্গাইলে ধান কাটতে এসে বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন দুই ভাই
মেসি-বার্সা চুক্তির সেই ন্যাপকিন বিক্রি হলো ১১ কোটি টাকায়
এবার রাজধানীর ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন
কারওয়ান বাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি-বাতাসে রাজধানীতে স্বস্তি
সাতক্ষীরায় ট্রাক উল্টে প্রাণ গেল দুই শ্রমিকের, আহত ১১
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট
ভাঙা হাত নিয়েই ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’ মাতালেন ঐশ্বরিয়া
ঢাকাসহ ৬ বিভাগে ঝড়-শিলাবৃষ্টির আভাস, কমবে তাপপ্রবাহ
আচরণবিধি লঙ্ঘন: আ.লীগ নেতাকে জরিমানা, ৭ ডেগ খিচুড়ি জব্দ
সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু
যমজ ২ বোনকে হাতুড়ি দিয়ে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা
যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হামাস
কেএনএফের নারী শাখার সমন্বয়ক আকিম বম গ্রেপ্তার
সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের
দুধ দিয়ে গোসল করানো হলো মুক্ত নাবিক সাব্বিরকে, পরিবারে বইছে খুশির জোয়ার
ট্যুরিস্ট ভিসায় ৩ দিন ভারত ভ্রমণ করতে পারবেন না বাংলাদেশীরা