রাশিয়ায় যুদ্ধাহত হয়ে প্রাণ হারালেন ‘জুলাই বিপ্লব’-এর যোদ্ধা ইয়াসিন শেখ

ইয়াসিন মিয়া শেখ। ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার এক বীর সন্তানের গল্প আজ শোকগাথা। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর সম্মুখ সারির যোদ্ধা ইয়াসিন মিয়া শেখ রাশিয়ায় যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। ২৭ মার্চ রণক্ষেত্রে তিনি শহিদ হন, আর তার পরিবারের কাছে এই দুঃসংবাদ পৌঁছায় ১ এপ্রিল।
ডৌহাখলা ইউনিয়নের মরিচালী গ্রামের বাসিন্দা, মৃত আব্দুস সাত্তার মীরের পুত্র ইয়াসিন মিয়া শেখ ছিলেন একজন সংগ্রামী তরুণ। কলেজ জীবনেই রাজপথের লড়াকু সৈনিক হয়ে ওঠেন তিনি। কলেজের ক্লাস ছেড়ে ৭ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেড’-এর কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। ‘শহিদ আবু সাঈদ’-এর অংকিত ছবি একহাতে আর অন্যহাতে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে সগৌরবে ঘরে ফিরে ছিলেন এ যোদ্ধা। শহিদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলনের কর্মসূচিও করেন ১০ আগস্ট।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন তার হৃদয়ে যে সংগ্রামের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সেই সাহসেই তিনি পাড়ি জমান রাশিয়ায়। বাবার স্বপ্ন পূরণ আর জীবনের দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি যোগ দেন সে দেশের সেনাবাহিনীতে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—সেই রণাঙ্গনেই মৃত্যু হয় তার।
নিহতের বড় ভাই মো. রুহুল আমিন শেখ জানান, দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর রাশিয়ার রস্তু বন্ধন ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতাল থেকে ইয়াসিনের মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে লাশটি সেখানেই সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন যাতে দ্রুত লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।
এদিকে রাশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসও সক্রিয়ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. মাজেদুর রহমান সরকার জানিয়েছেন, ইয়াসিনের মরদেহ দেশে পাঠানোর লক্ষ্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ চলছে।
নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক করুণ দৃশ্য। মা ফিরোজা বেগম পুত্র শোকে শয্যাশায়ী হলেও ছেলের ছবি এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল করতে পারছেন না। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজলেই তিনি উঠে ছুটে যান আশেপাশে—মনে করেন বুঝি তার সোনা মানিক ফিরেছে।
আবেগবিহ্বল কণ্ঠে তিনি বলেন, “তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও। আমার সোনা মানিকের লাশটা একবার ছুঁয়ে দেখি।” তিনি আরও জানান, “২৬ মার্চ আমার ছেলের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল। বলেছিল, টাকা পাঠাবে, ঘর বানাবে—কত স্বপ্ন, কত কথা ছিল তার। ওটাই ছিল আমাদের শেষ কথা।”
দেশ ও পরিবারের জন্য জীবন উৎসর্গকারী এই সাহসী সন্তানের জন্য আজ কাঁদছে পুরো গ্রাম। সেইসঙ্গে জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে এক অজানা যোদ্ধার আত্মত্যাগ।
