সুনামগঞ্জে হাসপাতালেও ঢুকে গেছে বন্যার পানি

টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বহু এলাকা এখন পানির নিচে। থেমে গেছে হাজারো মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। একইভাবে বন্যায় সুনামগঞ্জের তিনটি হাসপাতালে পানি ঢুকে গেছে। হাসপাতালগুলো সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী, হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনরা।
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কৈতক ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ও তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। কোথাও চিকিৎসকদের আবাসিক কোয়ার্টারও প্লাবিত হয়ে গেছে।
হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে রোগী ও স্বজনরা বেডগুলোতে উঠে বসে আছেন। তার ঠিক নিচেই পানি। দেখে মনে হচ্ছে, সেগুলো যেন বিছানা নয়, ভেলা। হাসপাতালে পানি উঠে যাওয়ার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েও ব্যাপক আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হাওর অধ্যুষিত এ জেলার সড়ক ও সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে কয়েক জায়গায়। এ ছাড়া বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রাস্তায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভোগান্তি। এরই মধ্যে ঝড়-বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। গত ১০ দিন ধরেই এই অবস্থা চলছে সুনামগঞ্জে।
শনিবার (২১ মে) সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের ছয়টি উপজেলার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বানের পানিতে বসত ঘর হারিয়ে অনেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। এই অবস্থার মধ্যে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। উপজেলাগুলোতে পর্যাপ্ত ওরস্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন।
কৈতক হাসপাতালের রোগীর স্বজন আমির হোসেন বলেন, আমার বাসায় পানি, পানিতে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসছিলাম। এখন সেই পানি হাসপাতালেও। কী মহা মছিবতে পরলাম!
আরেকজন রোগী বলেন, হাসপাতালে আসলাম ভালো হওয়ার আসায় কিন্তু বন্যার পানি হাসপাতালে ডাক্তাররাও ঠিক মতো আসছেন না। আমার মতো অনেকেই এখানে চিকিৎসাবঞ্চিত। বিশ্বাস না হলে আপনি সাথের বেডের রোগীদেরও জিজ্ঞাসা করতে পারেন। গত তিন দিন থেকে আমরা হাসপাতালে এই অবস্থায় আছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, হাসপাতাল এতো নিচু, জেলার মধ্যে যে কয়েকটি হাসপাতাল নিচু অন্তত এই নিচু হাসপাতালগুলোর নিচতলা যেনো দ্রুত উচু করা হয়।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন আব্দুল্লাহ আল বেরুনি খান বলেন, জেলার তিনটি হাসপাতালে পানি উঠেছে। এর মধ্যে দুটি হাসপাতালের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। আর তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কম্পাউন্ডে পানি ঢুকেছে। হাসপাতালের ভেতরে এখনও যায়নি। বৃষ্টি আরও হলে বন্যায় পানি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়বে। সেখানে রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ায় রোগীরা আসতে পারছে না। মানুষের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।
কৈতক ২০ শয্যার হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাইদুর রহমান বলেন, হাসপাতালের নিচতলায় পানি উঠেছে। রোগীদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় রোগীদের আসতেও কষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখানে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এখানে আবাসিক কোয়ার্টারে পানি ঢুকে গেছে। ফলে সেখানকার চিকিৎসকদের পরিবার বিপদে পড়েছে। রোগীদের দোতলায় রাখা হয়েছে। সেবা তো ব্যাহত হচ্ছেই।
এমএসপি
