এন্ড্রু কিশোরের জন্য শিষ্য রবি কিশোরের নিরব কান্না
“আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনে ছিলাম গান, সেদিন থেকে গানই জীবন-গানই আমার প্রাণ” গানটি গেয়ে ছিলেন প্লে-ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। এন্ড্রু কিশোরের এমন গানের সুরে আকৃষ্ট হয়ে জীবনে গানকেই বেছে নিয়েছেন টাঙ্গাইলের রবিউল ইসলাম। তবে তিনি রবি কিশোর নামেই পরিচিত এলাকায়। তার গানে মুগ্ম হয়ে এই নাম দিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর নিজেই।
গান ভালোবেসে জীবনের অনেক কিছুই হারিয়েছেন রবি কিশোর। গানের পেছনে ছুটে অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে নানা সংকটে পড়ে এখন মানববেতর জীবনযাপন করছেন। তবুও থেমে নেই সংগীতের জন্য সংগ্রাম।
২১ বছর ধরে এন্ড্রু কিশোরের গেয়ে যাওয়া গানকে আগলে রেখে জীবিকার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলছেন। কিন্তু অভাব-অনটনে অনেকটা দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। সংগীত আঁকড়ে ধরে জীবনের লম্বা সময় পাড়ি দিয়েছেন গানপ্রেমী রবি কিশোর। কিন্তু আজও পাননি কোনো প্লাটফর্ম বা পৃষ্ঠপোষকের দেখা। বর্তমানে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গান করছেন। তার কণ্ঠেই এন্ড্রু কিশোরকে খুঁজে পান ভক্তরা।
রবি কিশোরের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের উত্তর মান্দিয়া গ্রামে। তার পুরো নাম রবিউল ইসলাম। তার পারিবারিক পেশা কৃষি। রবি কিশোর প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের গান গেয়ে এরই মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ২০১৯ সালে ১২ এপ্রিল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এন্ড্রু কিশোর গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে রবি কিশোরকে শিষ্য হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি। এটাই ছিল এন্ড্রু কিশোরের জীবনের শেষ গানের অনুষ্ঠান।
রবি কিশোর বলেন, ২০০১ সালে সিনেমা হলের রুপালী পর্দায় বাংলা ছবিতে গাওয়া এন্ড্রু কিশোরের গান শুনে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গান নিয়ে চর্চা শুরু করি। ওই বছরই শিশু কিশোরদের নিয়ে কাজ করা একটি প্রজেক্ট সেভ দ্যা চিলড্রেন অস্ট্রোলিয়া ‘জানতে চাই, জানাতে চাই’ নামে একটি অনুষ্ঠান করে। অনুষ্ঠানটি বিটিভিতে প্রচার হয়। সেই অনুষ্ঠানে ৫টি গান পরিবেশন করি। ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই গুরু এন্ড্র কিশোরের ঠিকানা পাই। তারপর থেকে গুরু এন্ড্রু কিশোরের অফিসে নিয়মিত আসা-যাওয়া ও নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়।
রবি কিশোর বলেন, আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। পরিবারের দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমি বড়। গানের জৎগতে গুরু এন্ড্রু কিশোর ছিলেন আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। ছোট থেকেই তার গান ভালো লাগত। সেই থেকেই আমার গুরুর গানের সুরে আমি গান করতাম। ২০১৩ সালের বাংলাদেশ আইডল রিয়ালিটি শো নামে একটি প্রোগামে গুরু এন্ড্রু কিশোর আমাকে তার স্বাক্ষরিত একটি মগ পুরস্কার দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘গুরু এন্ড্রু কিশোর আমাকে খুব আদর করতেন। তার বিভিন্ন প্রোগামে নিয়মিত যোগ দিতাম। গুরু আমাকে ভালোবেসে ডাকতেন রবি কিশোর। সে থেকেই নামের উপাধি হয় রবি কিশোর। গুরুর জীবনের শেষ প্রোগামটা ছিল আমার পাশের উপজেলার ভূঞাপুর ইবরাহীম সরকারি খাঁ কলেজ মাঠে। ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল আমার ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি ছুটে আসেন ওই অনুষ্ঠানে।
রবি বলেন, ওই প্রোগামে গুরু আমাকে শিষ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। বলে ছিলেন, রবি কিশোর আমার শিষ্য। আমার গাওয়া গানগুলো তার কণ্ঠে পাবেন। রবিকে এজন্য আমি সহযোগিতা করব। এরপর প্রোগাম শেষে তিনি রাতেই তার ঢাকার মিরপুরে বাসায় চলে যান। তার কিছু দিন পর থেকেই গুরু অসুস্থ হয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। গুরু আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার গানগুলো বেঁচে থাকবে। তিনি থাকবেন ভক্তদের হৃদয়ে।
এসএন