মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

কুড়িগ্রামের চাকিরপশার ‘বিল’ না ‘নদী’, বিতর্ক চরমে

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত চাকিরপশার বিলকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। এটি নদী না বিল এ নিয়ে চলছে পক্ষে বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক। পরিবেশবাদী সংগঠন রিভারনাইন পিপলস ও চাকিরপশার সুরক্ষা কমিটি এটিকে নদী ঘোষণার জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের টেকনিক্যাল কমিটি। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল কর্তৃক দখল করা বিলটি যখন উদ্ধার করা যাচ্ছিল না, তখন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তৎপরতায় পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য এটি আশাব্যঞ্জক হলেও চাকিরপশার বিলকে কীভাবে নদ বা নদী বলা যায় তা নিয়ে বিতর্ক থামছেই না।

বিতর্কের মাঝেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের টেকনিক্যাল কমিটি তাদের প্রতিবেদনে চাকিরপশারকে কোথাও নদ বা নদী হিসেবে উল্লেখ করেনি। তারা এটিকে বিল হিসেবে উল্লেখ করে বিলের পানির প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য পরামর্শক হিসেবে ইটাকুড়ি বিল থেকে চাকিরপশার বিল পর্যন্ত প্রতিবন্ধক সড়কগুলোতে সেতু নির্মাণ এবং ব্যক্তি মালিকানায় দখল করা জায়গা রেকর্ড সংশোধনের মাধ্যমে পুকুর পাড় অপসারণ করে পানির প্রবাহ ঠিক রাখার পরামর্শ দিয়েছে। তারপরও কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিলের নাম গোপন করে এটিকে নদ বা নদী হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করছেন। যার আদৌ কোনো সত্যতা, তথ্য-উপাত্ত বা ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

সরেজমিন চাকিরপশার বিলে গিয়ে দেখা যায়, দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা শহরের এক কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত একটি অশ্বখুড়ের মতো গোলাকার বিল বা ছড়া। মাঝখানে কৈলাশকুটি নামে একটি গ্রাম রয়েছে। এই বিল বা ছড়ার সাথে নদীর কোনো সংযোগ নেই। আশির দশকে তৎকালীন জিয়া সরকার খাল খনন কর্মসূচির মাধ্যমে বিলের পানি সহজে নদীতে স্থানান্তর করতে একটি সংযোগ খাল তৈরি করে। যা উলিপুরের বুড়ি তিস্তা খাল হয়ে ব্রহ্মপূত্র নদে গিয়ে পড়ত।

পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড পানি নিষ্কাশন ও খাল খনন প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করে। তারা সেচ কার্যক্রম ও পানির প্রবাহ ধরে রাখার জন্য পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার নামক স্থানে একটি রেগুলেটর স্থাপন করে। পরবর্তীতে অধিগ্রহণ করা খাল বা নালার সংস্কার কাজ না করায় এখন সেটি সরেজমিনে পরিণত হয়েছে। কোথাও নালার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। চাকিরপশার বিল থেকে রেগুলেটরের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। মাঝখানে কোনো খাল বা নালার অস্তিত্ব না থাকায় চাকিরপশারকে কীভাবে নদ বা নদী বলা হচ্ছে এ নিয়ে হতবাক এলাকার মানুষ। তথাকথিত চাকিরপশার নদের উৎপত্তিস্থল বলা হচ্ছে ৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ইটাকুড়ি বিল থেকে। ইটাকুড়িও একটি বদ্ধ জলাশয়, বিল বা নালা। এর সাথে তিস্তা নদীর কোনো সংযোগ নেই। এই বদ্ধ বিল বা জলাশয় থেকে নদ বা নদী কীভাবে উৎপত্তি হলো তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। ফলে রিভারনাইন পিপলসের নদী নিয়ে আন্দোলন কতটা যুক্তিসঙ্গত- তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের টেকনিক্যাল টিমের এক কর্মকর্তা জানান, নদী রক্ষা কমিশন থেকে যে টেকনিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছিল তাদের কর্মকাণ্ড ছিল একপেশে। ফলে টেকনিক্যাল টিমের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে তাতে স্বাক্ষর করেননি কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রাজারহাট উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা।

রাজারহাট ভূমি অফিসের রেকর্ড অনুসারে দেখা যাচ্ছে, রাজারহাট ও চাকিরপশার ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত চাকিরপশার বিলটি বদ্ধ জলাশয় হিসেবে তৎকালীন ১৯৪০ সালে ভারত সম্রাটের নামে ‘বিল শ্রেণি’ হিসেবে সিএস রেকর্ডে নথিভুক্ত হয়। ৫টি মৌজায় ৬টি খতিয়ানে মোট ২৫৯.৪৫ একর জমি নথিভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের পক্ষে রংপুর কালেক্টরের নামে ১ নম্বর খাস খতিয়ানে ৫টি মৌজায় ৫টি খতিয়ানে ১৮৪.০৮ একর জমি ‘বিল শ্রেণি’ হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করা হয় ১৯৬২ সালে। এরপর নব্বই দশকের সময় ভূমিখোরদের আগ্রাসনে কমতে থাকে সরকারি নথিভুক্ত জমি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সিএসএ জমি রেকর্ড করা হয় ২৬৫,৩১ একর, এসএ রেকর্ডে ১৮৪.০৮ একর এবং আরএস রেকর্ডে ৩৬.২৮ একর। অসাধু ব্যক্তিরা কতটা বেপরোয়া হলে এমন হতে পারে সেটি এখানকার জমির সর্বশেষ অবস্থান দেখলে বোঝা যায়। দীর্ঘ সময় ধরে বিলগুলো গ্রাস করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে তারা আসলে কার পক্ষে কাজ করেছেন।

নথি ঘেটে ৫টি মৌজায় কীভাবে বিলগুলো গ্রাস হয়েছে তার চিত্র দেখে চমকে উঠার মতো। চাকিরপশার তালুকে সর্বশেষ রেকর্ড করা হয়েছিল ২০.৩৩ একর জমি। এখন সরকারের ভাগে রয়েছে মাত্র ৫.১১ একর জমি। ভূমি দস্যুদের নামে রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে ১৫.২২ একর জমি । নাফাডাঙ্গা বিলের ৮৮.৫৩ একর জমির মধ্যে বন্দোবস্ত ও ব্যক্তিগত মামলায় লোপাট হয়ে গেছে ২,৪০৫ একর জমি। একই অবস্থা চান্দামারী বিলের ৮৩.৭৯ একর জমির। এই বিলের ৪২,৬৭ একর ভূমি সরকারি ফাইল থেকে গায়েব হয়ে ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেছে। সদাগড় বিলের ২৩.৫৩ একর জমির মধ্যে ১৬.৭৩ একর রেকর্ডভুক্ত হয়েছে ব্যক্তি মালিকানায়। সর্বশেষ খালিশা বিলের ৮৩.৭৯ একর জমির মধ্যে বন্দোবস্ত ও ব্যক্তিগত মামলায় লোপাট হয়ে গেছে ৪৯.১৩ একর জমি । এ ব্যাপারে রাজারহাট ভূমি অফিসের ভাষ্য, সরকার থেকে মাঠ পর্যায়ে ব্যক্তির নামে রেকর্ড সংশোধনের জন্য রংপুর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি দায়ের করা হয়েছে এবং আদালতের ডিগ্রির বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

দীর্ঘ সময় ধরে এসএ ও আরএস এর মাধ্যমে কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের খাস করা জমি এখন ১১৬টি হোল্ডিংয়ে পরিণত হয়েছে। অবৈধ কাগজপত্র তৈরি করে তারা ষাটের দশক থেকে এ সব জমি ভোগদখল করে আসছে। আগে বাপ-দাদারা জমি ভোগ করেছে, এখন করছে তাদের সন্তানরা। হচ্ছে হাত বদল। সারা বছর ধরে পানির প্রবাহ থাকা বিলকে তারা শ্রেণি পরিবর্তন করে জলাশয় থেকে কাগজে-কলমে দোলা শ্রেণিতে পরিণত করেছে। এর ফলে উজানের শত শত কৃষকের একরের পর একর ফসলি জমি বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে খালি ফেলে রাখতে হচ্ছে।

এদিকে চাকিরপশার বিলের প্রবাহ বন্ধ করে পুকুরের মতো পাড় দিয়ে ছোট ছোট ডোবায় ভাগ-বাটোয়ারা করে ব্যক্তিগতভাবে মাছ চাষ করছে অবৈধ দখলদাররা। এতে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। এর ফলে উজানের পানি এখন আর এদিক দিয়ে বের হচ্ছে না। নিষ্ঠুরভাবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর দেয়াল তুলে দিয়েছে তারা। সরকারের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের এই বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের ফলে চাকিরপশার বিল হারিয়ে ফেলেছে তার শারীরিক কাঠামো। এতে বৃত্তবানদের কাছ থেকে মালিকানা হারিয়েছে সাধারণ মৎসজীবীরা। পানিতে নামলেই লাঠিয়াল বাহিনী তেড়ে আসছে। ভূমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে উচ্ছেদে যেতেও পারছে না প্রশাসন।

সমাজকর্মী ও হরিশ্বর তালুক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ মোল্লা (৭৪) জানান, আমরা কখনো দেখিনি এটা নদী। জন্মের পর থেকে রাজারহাটবাসী এটাকে বিল হিসেবে দেখে আসছে। জোড় করে বিলকে নদী বলা যায় না। যে বিলের মাছ খেয়েই আমরা বেড়ে উঠেছি।

চাকিরপশার কিশামত পূর্ণকর গ্রামের আবু হানিফ (৭১) বলেন, ‘হামার বাপ-দাদারা বৃটিশ আমল থাকি এটা বিল বলি জানছে। মাঝোত নদী নিয়ে আন্দোলন হইলো। এতে হামার কি লাভ হইল। আগোত হামরা মাছ মারি খাছি। এ্যালা বিলোত নামবেরে দেয় না। বড়লোকেরা বিলটা খায়া ফেলাল বাহে। হামরা সাধারণ মানুষ মাছ খাবার পাই না।’

তথ্যানুসন্ধান করে দেখা যায়, এই বিলের বড় একটি অংশ প্রায় ৬ একর জমি দখল করে আছে সাবেক চেয়ারম্যান পনির উদ্দিন আহমেদের সন্তান মিন্টু ও বাবলুরা। সাবেক ইসমাইল চেয়ারম্যানের নাতি টিটুরা দখল করে আছে ১০ একর জমি এবং আব্দুল্লাহ সরওয়ার্দীর ছেলে বর্তমান রাজারহাট উপজেলা চেয়ারম্যান বাপ্পীরা দখল করে আছে ৬ একর জমি। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা আবু বকর ১২ একর জমি দখলে নিয়ে ফারুক নামে একজনকে লিজ দিয়েছে। অপরদিকে পাঠানপাড়া ঈদগাহ মাঠ এলাকার সরকারি লিজকৃত জমি ভোগ করছে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবুনুর গ্রুপের মোশাররফ, রনিসহ বেশ কয়েকজন। ব্র্যাক অফিস থেকে চান্দামারী রামশিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারি লিজকৃত জমি ভোগদখল করছে বাপ্পী গ্রুপের রিপন, মুন, রাইসুলসহ বেশ কয়েকজন। এখানে বছরের পর বছর যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত তারা এখন মাছবিহীন জীবনযাপন করছে।

মাজাপাড়া গ্রামের নুর ইসলাম (৪৬) জানান, এই চাকিরপশার বিল ও চান্দামারী বিলকে ঘিরে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার। যারা বৃটিশ আমল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। মাছের উপর র্নিভরশীল। এসব মাঝি পরিবার এখন পেশী শক্তির কাছে তাদের পেশা হারাতে বসেছে।

রাজারহাট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিমেষ ও মহসিন জানায়, বিলের উপরে এলজিইডি কর্তৃক পাকা সড়ক করা হয়েছে। যারা জমি দখলে রেখেছেন তারাও তীরে পাড় দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। এসব কারণে শত শত বিঘা আবাদী জমি জলাবদ্ধতায় চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। এখানে ২২ থেকে ২৫টি পরিবারের জন্য শত শত কৃষক চোখের জল ফেলছে। আমাদের আন্দোলন বিলকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে নিয়ে যাওয়া হোক। এটা নদী নয়। জোড় করে এটিকে নদী বানানো যাবে না।

এদিকে চাকিরপশা নদী না বিল এ নিয়ে গত ২০২১ সালের ২ ও ৩ নভেম্বর টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। কমিশনের পরিকল্পনা ও মনিটরিং বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মতলুবুর রহমানকে আহ্বায়ক, সহকারি প্রধান মাহমুদুল হাসানকে সদস্য সচিব, পানি বিশেষজ্ঞ মো. সাজিদুর রহমান, কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সদস্য করা হয়। টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে ছিলেন কুড়িগ্রাম এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, রাজারহাটের উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার এবং রাজারহাটের ভূমি কর্মকর্তা।

পরবর্তীতে চাকিরপশার বিলকে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসে এই কমিটি। তবে দ্বিধাবিভক্ত দেখা দেয়। ফলে প্রতিবেদনে স্বাক্ষরদানে বিরত থাকেন কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসি ল্যান্ড। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনটি সর্বজনিন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ব্যর্থ হলেও তারা ঢাকায় গিয়ে নিজেদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুড়িগ্রাম অফিসকে প্রেরণ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, নদ বা নদীর যে উপসঙ্গগুলো থাকে সেটি এখানে নেই। এখানে কোনো চর পড়ে না, নদী ভাঙন নেই, স্রোতে বা পানির প্রবাহ নেই, তীর বা পাড় নেই। ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত তিস্তা নদীর সঙ্গে কোনো প্রকার সংযোগ নেই। এখানে শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে তদন্ত করা হয়েছে, শুকনো মৌসুমে এর অবস্থান নির্ণয় করা হয়নি। কিছুটা তাড়াহুড়ো ছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পরীক্ষা করা হয়নি। ফলে কমিটি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়লেও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে চাকিরপশার বিলের নাম উল্লেখ না করে পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার বুড়ি তিস্তা বিলের নাম উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পাকিস্তান আমল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের অধিগ্রহনকৃত জমির খাজনা দিয়ে আসছে। আমরা ২০২২-২৩ অর্থবছরে খাল/নালা হিসেবে গত বছরের ২৪ মে ৫ হাজার ৯১২ টাকা খাজনা দিয়েছি। বিল এবং সেচ জমির জন্য রেগুলেটর স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এটিকে নদ বা নদী বলার কোনো অবকাশ নেই।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তাদের চূড়ান্ত রিপোর্টে বলেছেন, গত ১৪/১১/২০২১ তারিখে কমিটি জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে হয়। তৈরি করা প্রতিবেদনে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌখিকভাবে জানান যে প্রেরিত প্রতিবেদনের সাথে কিছু বিষয়ে তাদের মতদ্বৈততা রয়েছে এবং কিছু বিষয়ে পরিবর্তন প্রয়োজন। পরবর্তীতে মতপার্থক্য দূর না হওয়ায় এবং সেটিতে স্বাক্ষর না হওয়ায় কিছু সুপারিশ দিয়ে চাকিরপশারকে বুড়ি তিস্তার অংশ হিসেবে ধরে এটিকে বিল হিসেবে চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের রিপোর্টের ফলাফলে উল্লেখ করা হয়েছে সিএস রেকর্ড অনুযায়ী চাকিরপশার একটি বিল। যা এসএ রেকর্ডে অনেক ব্যক্তির নামে বিল বা দলা শ্রেণি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করা আছে। এ ছাড়া ১ নম্বর খাস খতিয়ানের কৃষি জমি সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী ইজারা প্রদান করা আছে। সিএস জরিপ ও বর্তমান অবস্থান অনুযায়ী চাকিরপশার বিলের অভ্যন্তরে বুড়ি তিস্তা নদীর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ১৯৮০ সালে ব্যক্তির জমি অধিগ্রহণ করে একটি খাল খনন করা হয়। যার মাধ্যমে রাজারহাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলের পানি নিষ্কাশিত হয়। চাকিরপশার বিলের সাথে বুড়ি তিস্তা নদীর কোনো সম্পর্ক নেই।

এ বিষয়ে রাজারহাট মীর ঈসমাইল হোসেন ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাজেদুর রহমান চাঁদ জানান, এর আগে ইটাকুড়ি বিল ভোগদখল করে আসছিল ড. তুহিন ওয়াদুদের বাপ-দাদারা । তার দাদা সাফাতুল্যাহ প্রেসিডেন্ট (সাবেক চেয়ারম্যান) ইটাকুড়ি ও চাকিরপশার বিল সংযোগ স্থান ভোগদখল করে নেন। এরপর তার ছেলে অর্থাৎ ড. তুহিন ওয়াদুদের বাবা আব্দুল কুদ্দুছ ডাক্তার সেই জমিগুলো বিক্রি করে দেন।

তিনি আরও জানান, রাজারহাটের ছাটমল্লিকবেগ গ্রামের আহমদ উল্যাহর ছেলে লেবু মিয়া ও তার চাচাতো ভাই ফারুক মন্ডল সেই জমি কিনেছেন। আরো অনেকে সেই জমি কিনে নিজ স্বত্বমূলে ভোগদখল করছে। আগে সে আন্দোলন করেনি। এখন তার বাড়ি চাকিরপশার বিলের উজানে। চাকিরপশার বিলের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় তাদের পারিবারিক কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য বিলকে নদী বানাচ্ছেন। নিজেকে সুশীল সমাজের ধারক বাহক হিসেবে পরিচিত করতে তিনি এই হীনচেষ্টা চালাচ্ছেন। যেটা কারো কাম্য নয়।

রাজারহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম জানান, জন্মের পর থেকে বিল হিসেবে দেখে আসছি। চাকিরপশা যদি নদী হয় তাহলে চলনবিলকে এরা মহাসাগর হিসেবে দাবি করবে। জেলার বাইরের মানুষের কাছে আমরা হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদেরকে বলা হচ্ছে এখানে নাকি নদ-নদী গ্রাস করা হচ্ছে। যেখানে ৪০ দশক থেকে বিল হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে সেখানে কোনো বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে কাউকে খুশি করার জন্য এই বিলকে নদী বলা হচ্ছে।বাইরের মানুষ এসে দেখুক চাকিরপশার বদ্ধ জলাশয়, আসলে নদী না বিল।

পরিবেশবাদী সংগঠন রিভারনাইন পিপলস’র পরিচালক ও রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, চাকিরপশার একটি প্রাকৃতিক প্রবাহ আছে। এর বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। কোথাও চাকিরপশার, কোথাও মরাতিস্তা কোথাও বুড়িতিস্তা নামে পরিচিত। কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত বুড়িতিস্তা নদীর উজানের অংশ চাকিরশপার।

তিনি আরও জানান, রাজারহাটের ইটাকুড়ি থেকে উলিপুরের থেতরাইয়ের তিস্তা পর্যন্ত একে বাধাহীন করতে হবে, সিএস নকশা ধরে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে, সাধারণদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করলে চাকিরপশার বাঁচবে। হাজার হাজার একর জমির জলাবদ্ধতা দূর হবে। জেলেরা জীবিকা ফিরে পাবে, জীববৈচিত্র রক্ষা পাবে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে তাসনিম জানান, আমাদের সংগৃহিত রেকর্ডকৃত কাগজপত্র কখনোই বলছে না চাকিরপশার একটি নদ বা নদী। ফলে কমিটির সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করি। বিলের অধিকাংশ জমি বন্দোবস্ত ও ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। তাদেরকে আমি বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ডেকেছিলাম। তারা কাগজপত্র দেখিয়েছে। এখন তাদের দাবি করা কাগজপত্র যে সঠিক নয় এটি প্রমাণ করতে আমাকে আইনগতভাবে এগুতে হচ্ছে। উচ্ছেদ করতে গেলে আমাকে আইন মেনেই এগুতে হবে। ভুলগুলো সংশোধন করতে হবে। যে প্রক্রিয়াটা চলমান রয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, সবগুলো অভিযোগ পেয়েছি। পর্যালোচনা করছি। এটি জটিল আকার ধারণ করেছে। সমন্বিতভাবে সমাধান করতে হবে। ইতোমধ্যে চাকিরপশার বিলের ইজারা স্থগিত করা হয়েছে। বিলগুলো অন্যায়ভাবে ব্যক্তি মালিকানা বলে রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, গেজেট হয়ে থাকলে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে আপিল করা হবে। মামলা করা হবে। যদি না হয়ে থাকে তাহলে জোনাল সেটেলমেন্ট রংপুর জোনে আপত্তি করা হবে। যে কাজগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এসআইএইচ

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন